মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতিতে দুর্ভোগ

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতিতে দুর্ভোগ

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চলা সমন্বয়হীন বিআরটি প্রকল্পের কাজে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। প্রকল্পের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। সড়কের বিভিন্ন অংশে চলছে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, বিআরটি স্টেশন নির্মাণ এবং সড়ক মেরামতের কাজ। একদিকে চলছে সড়কের উন্নয়নকাজ, আবার যানবাহনও চলাচল অব্যাহত আছে। এ অংশের নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে তীব্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই পথের যাত্রী ও চালকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের কিছু স্থানে উড়াল সেতুর স্প্যান বসানো, কোথাও উড়াল সেতুর গার্ডার বসানোর কাজ, কোথাও সড়ক মেরামত, আবার কোথাও চলছে বিআরটি স্টেশন স্থাপনের কাজ। কোথাও চলছে ড্রেন পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ। মহাসড়কের মাঝে, কোথাও এক পাশে নির্মাণসামগ্রী রেখেই কাজ চলছে।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে ২৫টি স্টেশন হবে। সড়কের টঙ্গী হোসেন মার্কেট, গাছা, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি, বোর্ডবাজার, ছয়দানা, বড়বাড়ি, ভোগড়াসহ বেশ কিছু স্থানে রাস্তার মাঝখানে ১৮টি স্টেশন নির্মাণকাজ চলছে। স্টেশন তৈরির কাজ চলতে থাকায় সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় উড়াল সেতুসহ নানা উন্নয়নকাজ চলছে। বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ।  যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের দুই দিকে যানবাহ থেমে থেমে চলতে হচ্ছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই মহাসড়কে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটে। প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের চালকের সহকারী কাইয়ুম বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলেই মহাসড়কের অনেক স্থানের গর্ত ও খানাখন্দে পানি জমে। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল ধীর হয়ে পড়ে। যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে।

সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী বলেন, বিআরটি প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতার কারণে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। চার বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ১১ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ভোগড়া বাইপাস থেকে উত্তর দিকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বামদিকের লেনটি বন্ধ করে দেওয়ায় ঢাকা থেকে চলাচলকারী যানবাহন, কাভার্ডভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে নাওজোড় হয়ে চান্দনা হয়ে চলাচল করছে। ফলে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অসহনীয় যানজট লেগেই থাকে। যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা এ দুর্ভোগের অবসান চান। বিআরটি রাস্তার দুই পাশে লোকাল ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের জন্য যে রাস্তা নির্মাণাধীন আছে সেটাও অত্যন্ত অপ্রশস্ত। কোনো যানবাহন বিকল হলে পেছনের গাড়িগুলো ওভারটেক করে সামনে এগোতে পারে না। প্রকল্পটি আংশিক চালু হলেও বাকি কাজ শেষ করে জনদুর্ভোগ লাঘব করার জন্য গাজীপুরবাসীর প্রত্যাশা। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তাকেন্দ্রিক কাজ এখনো বাকি আছে। যার কারণে চান্দনা চৌরাস্তায় গাড়ির ধীরগতি সৃষ্টি হয়। ব্যস্ত সময়ে এই ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়। এখানে কাজ দ্রুত শেষ করলে এ ভোগান্তি থেকে জনগণ রেহাই পাবেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক এ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বিআরটি প্রকল্প এবং সড়ক বিভাগের সঙ্গে একযোগে কাজ হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হয়। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এরপর আরও দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। পরে আবারও তা বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়। এ বছরের জুনে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তাতেও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

সার্বিক বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের এমডি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। আগামী মার্চের মধ্যে কিছু অংশ চালু করার চেষ্টায় আছি। তিনি বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতিতে নির্মাণকাজে বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে আর্থিক দুর্বলতা এবং একই সঙ্গে কর্মী সংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজের গতি কিছুটা কমেছে। তিনি আরও বলেন, আশা করি আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে। চালু হলে এ সড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

সর্বশেষ খবর