শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অগ্নিঝুঁঁকিতে রাজশাহীর চার মার্কেট

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

অগ্নিঝুঁঁকিতে রাজশাহীর চার মার্কেট

রাজশাহীর চারটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অগ্নিঝুঁকির ব্যাপারে বারবার সতর্ক করা হলেও তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে চলছেন। অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধ ও করণীয় সম্পর্কিত সভায় এসব ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা জেনে-বুঝে অনুপস্থিত থাকছেন। মার্কেটগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এই চারটি মার্কেটের মধ্যে আছে রাজশাহী আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, সমবায় মার্কেট ও হড়গ্রাম বাজার মার্কেট। এসব মার্কেটে নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। দুর্বল অবকাঠামো ও আশপাশে সরু রাস্তা মার্কেটগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কয়েক দিন আগে আরডিএ মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী মহানগরীর পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। নগরীতে পুকুরের সংখ্যা এখন খুবই কম। যেসব পুকুর আছে সেগুলোও ছোট করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় নগরীতে অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে ওয়াসা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার এলাকায় অবস্থিত আরডিএ মার্কেটে মুদি পণ্য থেকে শুরু করে কাপড়, কসমেটিক্স, ক্রোকারিজসহ প্রায় সব পণ্যই মেলে এক ছাদের নিচে। যে কোনো উৎসবেই নগরীর মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রথম পছন্দ আরডিএ মার্কেট। এই বাজারে ক্রেতা আসেন রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য জেলা থেকেও। উৎসবের আগে ক্রেতাদের ভিড়ে মার্কেটের ভিতরে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

১৯৮৮ সালের দিকে নগরীর সাহেববাজার এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণের কারণে ১৩৭ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার জন্য অনুমতি দেয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। বিশাল পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয় মার্কেটটি। ২০০৬ সালে মার্কেটের সংস্কার ও বর্ধিতকরণের পর ব্যবসায়ীদের কাছে দোকানঘর হস্তান্তর করা হয়। এটিই রাজশাহী নগরীর সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম বাণিজ্যকেন্দ্র। তবে মার্কেটটি এখন ঘিঞ্জি ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদেরও জন্য।

আরডিএ মার্কেটের চারদিকে সরু রাস্তা। এসব রাস্তাও দখল করে পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের দেয়ালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অপরিকল্পিত বিদ্যুতের তার অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এসব রাস্তায় দমকল বাহিনীর গাড়ি প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আশপাশে নেই জলাধার।

২০১৯ সালের এপ্রিলে এই মার্কেটকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এর পরের বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকে আরডিএ মার্কেট ভেঙে নতুন মার্কেট নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। এজন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আরডিএকে আলোচনা করতে বলা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বিরোধিতায় ও রাজনৈতিক কারণে সেই সুপারিশ এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

একই চিত্র নগরীর সাহেববাজার এলাকায় অবস্থিত সমবায় মার্কেটর। পুরনো এই মার্কেটটি বই-খাতা ও কাগজের জন্য বিখ্যাত। মার্কেটের কলাম ও দেয়ালের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। নেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত হরগ্রাম বাজারের চিত্রও একই। ঘিঞ্জি এই মার্কেটের ভিতরে পরিবেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন ও সরু গলিপথ।

সর্বশেষ খবর