মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদে ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা প্রস্তুতি

আলী আজম

ঈদে ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তা প্রস্তুতি

ছবি : জয়ীতা রায়

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছেন রাজধানীবাসী। প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছাড়েন এক কোটির বেশি মানুষ। এবারও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে অন্তত সোয়া কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। এরই মধ্যে ঢাকা ছেড়ে গেছেন লাখ লাখ মানুষ। বাসা-বাড়িগুলোয় তালা ঝুললেও শঙ্কা রয়েছে চুরি-ডাকাতির। ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীরা। সক্রিয় হয়ে ওঠে আন্তজেলা চোর ও ডাকাত চক্র। তারা বাসা-বাড়ি টার্গেট করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। সব মিলিয়ে স্বস্তির ঈদেও নগরবাসীর মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।

ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস আজ মঙ্গলবার। এর আগেই রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কই ফাঁকা এবং যানজটমুক্ত। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, ঈদের ছুটিতে রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সড়কগুলোয় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা থাকলেও পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে। এ ছাড়া ঈদে ঘরমুখো মানষের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজে খুতবার আগে মসজিদে মসজিদে এসব নির্দেশনার কথা মুসল্লিদের জানানো হয়েছে।

এদিকে ফাঁকা ঢাকায় এক শ্রেণির তরুণ বেপরোয়া যানবাহন চালনা ও দুর্ঘটনা রোধেও বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে জানা গেছে। প্রতি বছরই ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে বাইক ও গাড়ির রেসে মেতে ওঠে এক শ্রেণির তরুণ। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার বিষয়টি নজরে রাখা হবে। 

নৌ, সড়ক ও রেল পথ রক্ষা জাতীয় কমিটি বলছে, ঈদে বৃহত্তর ঢাকার প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্বজনদের কাছে যাবে। এসব মানুষ ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বসবাস করে। এই বিপুলসংখ্যক ঈদযাত্রীর ৬০ শতাংশ যাবে সড়কপথে। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ মানুষ নৌ ও রেলপথে ঢাকা ছাড়বে।

শনিরআখড়ায় অবস্থান করা রহমত উল্লাহ প্রিন্স নামে একজন বলছেন, তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে। তার বাসা পাঁচতলা একটি বাড়ির চিলেকোঠায়। পরিবার নিয়ে ঈদে বাড়িতে যাচ্ছেন। বাসায় তালা দিয়ে এলেও কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে। কারণ, চুরি-ডাকাতির ঘটনা অহরহই ঘটছে।

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ বলছেন, এই শহরে যারা বসবাস করেন তাদের সর্বোচ্চ ৩০ ভাগের ঢাকা শহরে বাড়ি, ফ্ল্যাট বা নিজস্ব থাকার জায়গা আছে। অন্যরা ভাড়া থাকেন। তারা এই শহরকে নিজেদের মনে করতে পারেন না। তাদের পরিবারের একটি অংশ গ্রামে থাকেন। ফলে উৎসব আয়োজনে যতই কষ্ট হোক শহরের মানুষ গ্রামে ফিরে যান। আর এতে করেই বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে ফাঁকা হয়ে যায় ঢাকা।

ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে শুধু রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে অন্তত ১ হাজার, আর চুরির ঘটনায় হাজারের অধিক মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালে রাজধানীতে ছিনতাই মামলা হয়েছে ১৯৯টি, চুরির মামলা হয়েছে ১ হাজার ৫১১টি। ২০২২ সালে ছিনতাই মামলা ৩১০টি এবং চুরির মামলা ১ হাজার ৬০৩টি। ২০২১ সালে ছিনতাই মামলা হয় ১৬৬টি এবং চুরির মামলা হয় ১ হাজার ৩৪৩টি। ২০২০ সালে ছিনতাই মামলা ১৭৬টি এবং চুরির মামলা ১ হাজার ২১৭টি।

তবে সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনা কমেছে বলে দাবি করছে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ঈদকে ঘিরে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় স্পেশাল পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করবে। চুরি-ছিনতাইরোধে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ডিবি, থানা পুলিশ এবং সাদা পোশাকে পুলিশ একসঙ্গে কাজ করবে। ফলে আগের মতো এখন আর ছিনতাই হওয়ার শঙ্কা নেই।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। এই সুযোগে ছিনতাই ও চোরচক্রের সদস্যরা যাতে সক্রিয় হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য আমরা তৎপর। র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম, চেকপোস্ট, রোবাট পেট্রোল ও টহল টিমের পাশাপাশি কিছু এলাকায় স্পেশাল টিম কাজ করবে। ছিনতাই রোধে প্রত্যেক সড়কে আমাদের মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম ২৪ ঘণ্টা টহলে থাকবে।

 

 

সর্বশেষ খবর