বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
নবজাতকের খাবার

কেমন হবে শিশুর পুষ্টিকর খাবার

সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু, কিংবা বয়স পেরিয়েছে ৬ মাস। প্রত্যেক বাবা-মা-ই তাদের নাজুক সন্তানের খাবার-দাবার নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কেমন খাবারে শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে? আবার সঠিক জ্ঞানের অভাবে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়নি তো! আরও কত কী! নিচে শিশুদের পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

 

জন্মের পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত বয়সী শিশুকে নবজাতক বলা হয়। এ সময় থেকে শিশুর ৬ মাস বয়স হওয়া পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর একমাত্র খাবার। শিশু জন্মের সময় মায়ের বুকে যে হলদে আঠালো ও স্বচ্ছ দুধ নিঃসৃত হয় তাকে কলস্ট্রাম বলা হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত এই দুধে রয়েছে অনেক রকম রোগ প্রতিরোধক উপাদান। যা শিশুকে নানারকম সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

অনেকেই চিন্তা করেন কতটুকু দুধ খাওয়াতে হবে, তা কতক্ষণ পর পর?

শিশুর উপযুক্ত বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালরি দরকার। শিশুর জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত যে পরিমাণ ক্যালরি প্রয়োজন তা হলো- প্রতি কিলোগ্রাম দেহের ওজনের জন্য প্রতিদিন ১২০ কিলোক্যালরি। পরবর্তী ৭ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত প্রতি কিলোগ্রাম  ওজনের জন্য প্রতিদিন ১০০ কিলোক্যালরির প্রয়োজন হয়। দেহের ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যালরির চাহিদাও বাড়তে থাকে, যদিও তখন প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ক্যালরির চাহিদা কমতে থাকে। জন্মের পর থেকে শিশুর খাদ্য চাহিদা ৩৫০ থেকে ৫০০ কিলোক্যালরি থাকে। এক বছর বয়স পার হওয়ার পর তা ৮০০ থেকে ১২০০ কিলোক্যালরি হয়। ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুর প্রধান খাবার মায়ের বুকের দুধ তো খাবেই, এ সময় থেকে অন্য খাবারও তাকে দিতে হবে। অন্যথায় শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। এর কারণ হলো, দুধের চাহিদা পূরণ না হওয়া। শিশুর দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি দুধে ওই সময় না পাওয়া। যেমন- দুধে ভিটামিন ‘সি’ এবং আয়রন কম থাকার কারণে শিশুর খাদ্য চাহিদা পূরণ হয় না।

 

জন্মের সময় শিশু মাতৃগর্ভ থেকে যে পরিমাণ আয়রন নিজের দেহে সঞ্চিত করে নিয়ে আসে, তা দিয়ে তার প্রয়োজন ৫-৬ মাস মিটতে পারে। পরবর্তী সময় থেকে শিশুর এই দুটি পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিলে শিশুর এনিমিয়া (রক্ত স্বল্পতা) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ সময় শিশুর দেহে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’র চাহিদা বেশি থাকে, যা শুধু দুধ থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই জন্মের ৭ মাস বয়স থেকে শিশুর দেহে ভিটামিন ‘সি’-এর চাহিদা পূরণে ফলের রস, আয়রনের চাহিদা পূরণে ডিমের কুসুম খাওয়াতে পারেন। একইভাবে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’র ঘাটতি পূরণে কডলিভার তেল খাওয়াতে পারেন। এই তেল পাওয়া না গেলে সবুজ শাক-সবজি ও গাজর ভালোভাবে সেদ্ধ করে ছেঁকে আঁশ বাদ দিয়ে খাওয়াতে পারবেন। এ ছাড়া শিশুকে সকালের রোদে কিছুক্ষণ শুইয়ে রাখলে শিশুর ত্বকের নিচে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়, যা শিশুর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘ডি’-এর চাহিদা পূরণে সক্ষম।

 

আমাদের দেশে সাধারণত একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্মের সময় ওজন হয় ৩-৩.৫ কিলোগ্রাম। পুষ্টি চাহিদা ঠিকভাবে পালন হলে পরবর্তী ৫ মাসে তার ওজন হয় প্রায় দ্বিগুণ এবং এক বছরে হয় ৩ গুণ। এই ধারা অব্যাহত রাখতে ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে প্রতিদিন সুষম খাবার দিতে হবে। ভাত, ডাল ও শাক-সবজি সেদ্ধ করে ছেঁকে একসঙ্গে মিশিয়ে সেই নরম খাদ্য ২/১ চামচ করে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। অনেকের ধারণা, ভাত শিশুর জন্য ভালো নয়। ধারণাটি ভুল। ভাত অত্যন্ত সহজপাচ্য খাবার, যা শিশুর জন্য খুব উপযোগী। এর সঙ্গে ডাল ও সেদ্ধ সবজি যেমন- পেঁপে, গাজর, আলু, ফুলকপি ও তেলহীন মাছ একসঙ্গে মিশিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে সুজিও খাওয়াতে পারেন। যা ভাতের মতো সহজপাচ্য। প্রিম্যাচিউরড শিশুদের দেহের গঠন যথাযথরূপে হয় না। এদের ওজন কম থাকে। এসব শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এদের ক্যালরি চাহিদা একটু বেশি থাকে। এ সময়ও মায়ের দুধই শিশুর সর্বাপেক্ষা উত্তম খাদ্য, তবে বিশেষ ফর্মুলায় খাবার দিলে চাহিদা পূরণ সম্ভব। অপরিণত শিশুর প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন প্রতিদিন খাওয়াতে পারলে শিশুর ওজন দ্রুত বাড়বে। এভাবে প্রত্যেক শিশুর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার দিলে শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে। মনে রাখতে হবে, এই বয়সটা শিশুর আসল সময়। এখন যদি শিশু সঠিক পুষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে, তাহলে বড় হয়ে সেসব শিশু সুস্থ ও নীরোগ থাকতে পারবে।

 

লেখক-

সামিয়া তাসনিম,

পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড পল্লবী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর