বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বর্ষায় ত্বকের বাড়তি যত্ন

বর্ষায় ত্বকের বাড়তি যত্ন

♦ মডেল : মৌসুমী তাকশীর মিমি ♦ ছবি : হাদী

এই মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতার তারতম্যের ভিত্তিতে ত্বকে বাড়তি তেলতেলেভাব থেকে শুরু করে অতিরিক্ত শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকে মলিনভাব, ব্রন, ‘ব্ল্যাক হেডস’, ‘হোয়াইট হেডস’, চুলকানি, ‘র‌্যাশ’ এমনকি সংক্রমণের সমস্যাও দেখা দেয়। বৃষ্টির পানি বাতাসের দূষণ ধুয়ে নামায় তাই  এ সময় বৃষ্টিতে ভেজাও ত্বকের ক্ষতির অন্যতম কারণ।

 

জানালার বাইরে ধূসর আকাশ আর যখন-তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। বর্ষার এই রোমান্টিক আবেদনে মন একটু উদাস করে দেয়। কিন্তু বর্ষা মানেই স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, নোংরা জল, কাদা আর ঘরের ভিতর ভিজেভাব- যা  নিত্যদিনের সমস্যা। আর এই মৌসুমেই নানারকম সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। সেই সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে ত্বকের একাধিক সংক্রমণ। দেখা গেছে, বর্ষায় ত্বকে নানারকম রোগ হওয়ার প্রবণতাও অনেক বেশি। তাই ত্বকের যত্ন নিতে কিছু ছোট ছোট অভ্যাস না মেনে চললেই নয়।

 

কেন ত্বকের সমস্যা হয়?

বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন রোগ জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর্দ্র পরিবেশে জীবাণু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়। তা থেকেই সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।

 

ত্বক ভালো রাখতে করণীয়

বর্ষায় ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা বিশেষভাবে জরুরি। এর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কিছু কাজ না করলেই নয়। গুলশানের নিকেতনের শোভন মেকওভারের কসমোলজিস্ট শোভন শাহা বলেন, ‘ত্বকে ব্রন, অ্যালার্জির সমস্যা অনেকেরই আছে। যাদের বর্ষাকাল এলে এ সমস্যা আরও দ্বিগুণ রূপে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে তাদের বর্ষা শুরুর আগে থেকেই নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নেওয়া দরকার। তাই বর্ষাকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে মেনে চলুন কয়েকটি নিয়ম।’

 

ত্বকের সুরক্ষা : আর্দ্রতার ফলে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ছত্রাক সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ত্বক শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখা জরুরি। নিয়মিত ত্বক শুষ্ক ও পরিষ্কার থাকলে অ্যাথলেটস ফুটের মতো বড়সড় রোগও এড়ানো যায়। এ ছাড়াও রিংওয়ার্মের থেকে মুক্তি মেলে। বিশেষ করে বগল, কুঁচকি যেখানে বেশি ঘাম জমে, সেখানেই সংক্রমণের হার বেশি।

সঠিক উপায়ে পরিষ্কার

বাতাসের আর্দ্রতা এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকের ক্ষতি হয়। তাই ত্বক পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। এ সময় আবহাওয়া রুক্ষ থাকে তাই ত্বকে সাবানহীন ‘ফেসওয়াশ’ ব্যবহার করা উচিত। সেই ‘ফেসওয়াশ’ও হওয়া চাই ত্বকের সঙ্গে মানানসই। যেমন, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ‘অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ’। আবার যাদের ত্বকে প্রায়ই ব্রন হয় তাদের দরকার ভিটামিন ও স্ট্রবেরি, পেঁপে, নিম, তুলসী ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ ‘ফেসওয়াশ’ ব্যবহার করা।

নিয়মিত টোনার ব্যবহার :

টোনার ব্যবহার ত্বক পরিচর্যার অন্যতম একটা ধাপ আর বর্ষাকালে তাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। টোনার ত্বকের লোমকূপ সংকুচিত করে, ত্বকে অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। রাসায়নিক উপাদান মুক্ত প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি টোনার ব্যবহার করা উচিত। শসা, গোলাপ ইত্যাদির নির্যাসে তৈরি টোনার ব্যবহার ত্বকের জন্য আরামদায়ক ও উপকারী।

সূর্যের থেকে রক্ষা : ত্বকের সুরক্ষার জন্য সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা জরুরি। কারণ, ‘বর্ষাকালে সূর্যের তাপ কম থাকলেও অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই এই মৌসুমেও সানস্ক্রিন ব্যবহার এড়ানো যাবে না। তাই নিয়মিত সানস্ক্রিন লোশন মাখা জরুরি। অ্যালোভেরা ও গাজর সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য উপকারী।

এক্সফোলিয়েশন : ত্বকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মৃত কোশ জমা হয়। এই কোশগুলি বের করতেই নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন করা জরুরি। এক্সফোলিয়েশন মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ম করে করুন। তাহলে আর সমস্যা হবে না ত্বকের।

কম মেকআপ ব্যবহার : আর্দ্রতা, তাপ, ঘাম ও বৃষ্টি ইত্যাদি একসঙ্গে ত্বকের ক্ষতি করে। এর মধ্যে ত্বকে ভারী মেকআপ ব্যবহার ও দীর্ঘক্ষণ ত্বকে মেকআপ রাখা ত্বকের শ্বাস গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এ সময়ে হালকা মেকআপ করা বা বিবি ক্রিম ব্যবহার করলে সতেজ অনুভূত হবে।

 

নিয়মিত ত্বক পরিচর্যার পাশাপাশি আবহাওয়ার প্রকোপ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে মাঝে মধ্যে বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন। ত্বকের প্রয়োজন বুঝে চার কোলের ফেসপ্যাক, মধু, পেঁপের স্ক্রাব প্যাক, ল্যাকোরিচ মাড প্যাক, ডি-ট্যান ফেসপ্যাক বা মাস্ক ব্যবহার ত্বককে সতেজ ও টানটান রাখে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। ফলে ত্বক হয় কোমল ও সতেজ।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

সর্বশেষ খবর