বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

বিবর্তনের ধারায়...

বিবর্তনের ধারায়...

শুধু বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবেই নয়, প্রাচীন নগরে সভ্যতার পরিচিতি ঢাকার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এ শহরের আজকের এই ঝলমলে রূপের বিবর্তনের গল্প তাই রঙিন। প্রায় ৪০০ বছরের কালের পরিক্রমায় ঢাকা আজ মেগাসিটি হিসেবে গণ্য। দীর্ঘ সময়ে এই শহরের বুকে লেখা হয়েছে বহু উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাত, বিপ্লব-সংগ্রামের ইতিহাস।

ঢাকার ইতিহাসকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় :

ক. মোগল আমল ১৬০৮-১৭৬৫ সাল

খ. ব্রিটিশ আমল ১৭৬৫-১৯৪৭ সাল

গ. পাকিস্তান আমল ১৯৪৭-১৯৭১ সাল

ঘ. বাংলাদেশ আমল ১৯৭১-

মোগল আমল : ঘোঘলদের প্রভাব বেশি রয়েছে ঢাকার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, আচার-ঐতিহ্যে। ১৬০৮ সালে ইসলাম খান চিশতী ৫০,০০০ যোদ্ধা নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন এবং রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় সরিয়ে আনেন। শায়েস্তা খানের সুবাদারির সময় (১৬৭৭-১৬৮৯) মোগল ঢাকার অধিকাংশ উন্নয়ন হয়। আর এ শাসনামলে ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক সমৃদ্ধি লাভ করে। ১৬৬৬ সালে মোগল ঢাকার বিস্তৃতি ছিল প্রায় ৪০ মাইলের মতো। স্থাপত্যের উন্নয়নেও এই সময় শায়েস্তা খান ও মোগল অন্যান্য কর্মকর্তাদের আগ্রহ ছিল। তখনই মীর জুমলা মোগলদের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য ঢাকার উত্তরে একটি ফটক স্থাপন করেছিলেন, যা মীর জুমলা গেট নামে পরিচিত ছিল। এই গেটের অবশিষ্টাংশ বর্তমানে কার্জন হলের সামনে রয়েছে। এ ছাড়াও মীর আবুল কাশিম ঢাকার মোগল স্থাপত্যের এক অনন্য নাম। তিনি ঢাকার দিওয়ান হয়ে আসার পর ১৬৪৫ সালে বড় কাটরা নির্মাণ করেন। তার শাসনামলে নির্মিত হয় সাতমসজিদ। ঢাকার প্রথম ঈদগাহ স্থাপন করেন তিনি।

ব্রিটিশ আমল : ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলা স্বাধীনতা হারায়। শুরু হয় ব্রিটিশ শাসন। ব্রিটিশরা আসার পরপরই প্রাদেশিক রাজধানী সরিয়ে নেওয়া হয় কলকাতায়। তখন প্রশাসনিক ভবন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের থাকার জায়গা মূল শহর থেকে দূরে স্থাপন করা হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের কারণে ঢাকাতেও স্থাপিত হতে থাকে অসংখ্য কলকারখানা। এ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল (১৮৩৫), ঢাকা কলেজ (১৮৪১), ঢাকা মেডিকেল স্কুল (পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ), ইডেন কলেজ ইত্যাদি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে গঠিত নতুন প্রদেশের রাজধানী হয় এবং এরপরই ঢাকার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

পাকিস্তান আমল : ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান এই দুটি আলাদা রাষ্ট্র। পাকস্তিান আমলে ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক লোক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করতে থাকে। এতে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ১০.৩% বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে ইস্পাহানি কলোনি, জাতীয় কলোনি তৈরি করা হয়। রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও হলি ফ্যামিলিও সে আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমলে আমেরিকান স্থপতিদের কাজ বেশি হয়েছে। মোগল প্রভাবিত ধারার বাইরে প্রথমবারের মতো আমেরিকান ধারার কাজ ঢাকায় শুরু হয়। আমাদের সংসদ ভবনের কাজও এ সময়ে শুরু হয়। সেই সময়ে ঢাকা শহরের একটা সামগ্রিক মাস্টার প্ল্যান করা হয়।

বাংলাদেশ আমল : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলার স্বাধীনতার সূর্য আবার উদিত হয়। শুরু হয় বাংলাদেশের পথচলা। এরপর ঢাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে মর্যাদায় ও উন্নয়নে বড় বড় বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকার জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে ঢাকার আশপাশের যত নিচু জায়গা আছে সব জায়গায় মানুষ বসতি গড়তে থাকে। ঢাকা এভাবেই বাংলাদেশের প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠে। বাংলাদেশ আমলে ঢাকার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে সর্বোচ্চ মানে।

 

 

সর্বশেষ খবর