শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
প্রিন্সেস ডায়ানা

শুধুই প্রেম নয়...

শুধুই প্রেম নয়...

ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূদের মধ্যে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন কেবল একজন। প্রিন্সেস ডায়ানা ও চার্লসের প্রেম ছিল সেরা রোমাঞ্চকর কাহিনী। ডায়ানার পুরো নাম ছিল ডায়ানা স্পেন্সার। তাকে দেখেই তার রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস। চার্লসের দৃষ্টিতে ডায়ানা পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। আর ডায়ানার দৃষ্টিতেও প্রিন্স চার্লসই সবচেয়ে আরাধ্য পুরুষ। দুজন দুজনের প্রেমে মজে গেলেন। সারা বিশ্বে ঝড় উঠল। রানী এলিজাবেথ প্রথমে এ বিয়েতে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যান।

ডায়ানার জন্ম ১৯৬১ সালের ১ জুলাই। তার পিতা ছিলেন এডওয়ার্ড জন স্পেন্সার। ডায়ানার বড় দুই বোন ও একজন ছোট ভাই ছিল। মাত্র ছয় বছর বয়সে তার মা-বাবার ডিভোর্স হয়। পরে আইনি সাহায্য নিয়ে ডায়ানার পিতা তার ছেলেমেয়েদের নিজের কাছে রেখে দেন। ১৯৭৫ সালে ডায়ানার বাবা ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে 'আর্ল' উপাধিতে ভূষিত হন। ওই বছরই তিনি উপন্যাসিক বারবারা কার্টল্যান্ডের মেয়ে রাইনিকে বিয়ে করেন। ডায়ানার প্রথম স্কুল ছিল রিডেলসওয়ার্থ হল প্রিপেরেটরি হাইস্কুল। পরে তিনি কেন্ট ওয়েস্ট হেথ গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন। লেখাপড়ায় খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না ডায়ানা। ১৯৭৭ সালে ও লেভেল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। এ বছরই প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। ডায়ানার বোনের বন্ধু হিসেবেই তাদের পরিচয় হয় একটি পার্টিতে। ১৯৭৮ সালে স্কুলের বাকি পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে লন্ডনে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে তিন বান্ধবীসহ থাকতেন ডায়ানা। এর মাঝে ইয়ং ইংল্যান্ড কিন্ডার গার্টেনে পার্টটাইম শিক্ষকতা করারও সুযোগ পেয়ে যান তিনি।

১৯৮০ সালে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হয় ডায়ানার। ৩১ বছর বয়স্ক প্রিন্স চার্লস বিয়ের জন্য মনের মতো পাত্রীর সন্ধান করছিলেন। ডায়ানাকে তার পছন্দ হয়ে যায় এবং শুরু হয় তাদের দুজনের রাজকীয় প্রেমকাহিনী।

১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ধুমধামের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করল সত্যিকারের এক রাজকীয় বিয়ে। সে সময় প্রিন্স চার্লসের বয়স ছিল ৩২ আর প্রিন্সেস ডায়ানার ২০। চরম উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দের জোয়ারে শুরু হলো প্রিন্স চার্লস আর প্রিন্সেস ডায়ানার নতুন জীবন। রাজকীয় জাহাজ ব্রিটানিয়াতে চড়ে হানিমুন করলেন তারা।

১৯৮২ সালের ২১ জুন ডায়ানার প্রথম সন্তান উইলিয়ামের জন্ম হয়। দুই বছর পর ১৯৮৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হ্যারির জন্ম হয়। এত কিছুর পরও বিবাহিত জীবনে সুখে ছিলেন না প্রিন্সেস ডায়ানা। বিয়ের পরও সাবেক বান্ধবী ক্যামিলার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন প্রিন্স চার্লস। তাছাড়া রাজপরিবারের নিয়মের কড়াকড়ি ভালো লাগত না তার। অনেকবারই রাজপরিবারের নিয়ম ভেঙে সমালোচিত হয়েছেন তিনি।

এসব নানা কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ডায়ানা। দাম্পত্য অশান্তি ভুলে থাকতে নিজেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতব্যসংস্থার কাজকর্মে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি। সারা বিশ্বের অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করেছেন। সংসারের তীব্র অশান্তি থেকে বাঁচার জন্য বেশ কয়েকবার

মূলত বিয়ের এক বছরের মাথায় ডায়ানা প্রথম অনুভব করলেন চার্লস তাকে আগের মতো আর ভালোবাসেন না। একান্তে সময় দিতে চান না। একটু যেন বেশিই ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। চাইলেই এড়িয়ে যায়। বিষয়টি এক দিন-দুই দিন করে বেশ কয়দিন ধরে খেয়াল করলেন ডায়ানা। এরপর প্রিন্সকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন এই অবহেলার কী মানে। প্রিন্স তখন এড়িয়ে গেলেন। ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে তার ব্যস্ততার কথা বলে স্ত্রীর ভালোবাসাকে চেপে রাখলেন। আর এসব নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। দুজনই দুজনকে সন্দেহ করতে থাকলেন। প্রিন্স চার্লসও ডায়ানাকে নিয়ে নানা ঘটনা-রটনার খবর জানলেন। প্রায়ই এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হতো। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়ে গেল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের সাত বছর পর ঘটল মারাত্দক ঘটনাটি। ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে প্রিন্স চার্লসের হাতে এলো একটি টেপ রেকর্ড ক্যাসেট। তাতে দুটি কণ্ঠের সংলাপ। একটি নারীকণ্ঠ, অন্যটি পুরুষ। নারীকণ্ঠটি প্রিন্সেস ডায়ানার। পুরুষ কণ্ঠটি জেমস গিলাবের। চার্লস অনুসন্ধান করে জানলেন গিলাব ছিলেন ডায়ানার বিয়ে-পূর্ব জীবনের বয়ফ্রেন্ড। আর এ কথোপকথনটি ওই সময়ের। সাইরিল রিনান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং জেন নরগোভ নামে আরেকজন মিলে গোপনে আড়ি পেতে ডায়ানা ও জেমস গিলাবের কণ্ঠ ধারণ করেন। এরপর সেটি এক সময় প্রিন্স চার্লসের হাতে আসে। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যাসেটের বিষয়টি সবার নজরে চলে আসে। প্রকাশিত হয়ে পড়ে এই আলোচিত অডিও টেপটি। ক্যাসেট প্রকাশের পর সারা বিশ্বে আলোড়ন ওঠে। এর ছোঁয়া লেগেছিল রাজপ্রাসাদেও। সংসারে ভাঙনের সুর উঠল। ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মিসরীয় ধনকুবের ডোডি আল ফাহাদের সঙ্গে জড়ান ডায়ানা। কিন্তু খুব বেশিদিন দুনিয়ার বুকে টিকতে পারেননি সুন্দরী ডায়ানা। তার ৩৬তম জন্মদিনের মাত্র এক মাস পরই ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসের একটি টানেলে তার গাড়ি ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ সময় গাড়ির ড্রাইভার ও ডোডি আল ফাহাদ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। ডায়ানাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ডায়ানা-ডোডির মৃত্যুর ব্যাপারে প্রচার করা হয় যে প্যারিসের রিজ হোটেল থেকে বের হওয়ার পর পাপারাজ্জিরা ছবি তোলার জন্য ডায়ানার গাড়িকে অনুসরণ করে। পাপারাজ্জিদের এড়াতে গাড়ির গতি বাড়ানো হয়। আর ১৯৬ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাতে গিয়ে এক সময় ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় গাড়িটি টানেলের দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং চুরমার হয়ে যায়। তবে ডোডির পিতা আল ফাহাদসহ অনেকের মতে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

মৃত্যুর ষষ্ঠ দিন পর ১৯৯৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ডায়ানার লাশের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। শেষকৃত্যের দিন অন্তত ১০ লাখ মানুষ ডায়ানাকে শেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে এসেছিল। ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিল তার কফিন। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথসহ রাজপরিবারের অন্যরাও যোগ দিয়েছিলেন এ অনুষ্ঠানে। টেলিভিশনে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি দেখে চোখের পানি ফেলেছিল বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ।

 

 

সর্বশেষ খবর