রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪ ০০:০০ টা

রংবাহারি নারী রেফারি

তানভীর আহমেদ

রংবাহারি নারী রেফারি

গ্ল্যামারাস রেফারিং

খেলার মাঠে পিছিয়ে নেই নারীরা। প্রায় সব ধরনের খেলাতেই মাঠে নামছেন তারা। ক্যারিয়ার গড়ছেন খেলায়। ফুটবল মাঠে ফ্ল্যাগ হাতে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন, ঠোঁটে বাঁশির ফুঁ জানান দিচ্ছে ফাউল কিংবা অফসাইডের। গোল হলে নিশ্চিত করছেন বাঁশি বাজিয়ে। ফাউল বুঝে কার্ড দেখাতেও পিছু পা হচ্ছেন না। হলুদ কার্ড নয়তো লাল কার্ড পকেট থেকে বের করে খেলোয়াড়দের সতর্ক করছেন, মাঠ থেকে বের করে দিচ্ছেন। এই দশকেই এ দৃশ্যগুলো নারী রেফারিদের হাতে ঘটতে দেখছে বিশ্ব। ফুটবল মাঠে বাড়তি আকর্ষণ যেমন যোগ করেন তারকা ফুটবলাররা, তেমনি দক্ষ আর গ্ল্যামারাস নারী রেফারিদের নিয়েও তৈরি হয়েছে মিডিয়ার আগ্রহ। ফলাও করে তাদের ক্যারিয়ারের গল্প ছাপা হচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়ায়। অনলাইন মিডিয়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন পাঠকরা। নারী রেফারিদের নিয়ে বাহারি খবর রয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে। তেমনই কিছু খবর চমকে দেবে আপনাকে। নারী রেফারিদের পারফরম্যান্স মন্দ নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা পুরুষের চেয়েও ভালো করছেন। ফুটবলের বড় আসরগুলো অদূর ভবিষ্যতে হয়তো নারী রেফারিদের দেখা মিলতে পারে।

 

নারী রেফারিকে উত্ত্যক্ত

নারী রেফারিং সহজ কাজ নয়। অনেক সময়ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মাঠে ফুটবলারদের মেজাজ সহ্য করে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সাইডলাইনের ফুটবলার, ম্যানেজারদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু ম্যাচ হারের ক্ষত সইতে না পেরে ম্যানেজারই রেফারিকে গালাগাল দিয়ে বসেন। ফুটবল মাঠে এ দৃশ্য নতুন নয়। নারী রেফারিদেরও এমন বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তবে লাইন্সম্যানকে উদ্দেশ করে যৌন-উত্তেজক মন্তব্য করার ঘটনাও রয়েছে। আর এমন কাণ্ড করেছেন ব্রাজিলীয় কোচ সেলসো টেক্সইরো। ঘটনাটা ঘটেছে ইতালির তৃতীয় বিভাগের একটি ম্যাচে। জুভেন্তাস দলের ব্রাজিলীয় কোচ টেক্সইরো নারী লাইন্সম্যান মারিয়া আমেরিকানো লাবেসকে বলেছেন 'হট চিক'। তবে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন মারিয়া। খেলা চলাকালে আমেরিকানো এ মন্তব্য শুনেও তখন কিছু বলেননি।

খেলা শেষে টেক্সইরোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন তিনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর জুভেন্তাস দলের কোচের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে ৫৩ বছর বয়সী এই কোচ বলেন, 'মাঠে ইউনিফর্ম পরে নামার পর থেকেই তাকে উদ্দেশ করে কটুক্তি ভেসে আসছিল। গ্যালারি থেকে উড়ে আসছিল হট চিক। আমি কোনো মন্তব্য করিনি। আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।' তবে নারী রেফারিদের বেলায় এমন ঘটনা একেবারেই কম নয়। এমন কিছু প্রতিকূলতার বিপরীতে থেকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছেন ভালোভাবেই।

 

ছেলেদের ম্যাচে মেয়ে রেফারি

ব্রাজিলিয়ান মহিলা ফুটবল রেফারি ফার্নান্দে কলম্বো ইউলিয়েনা। রেফারি হিসেবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে চলেছেন কয়েক বছর ধরেই। তারই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি ছেলেদের ফুটবল ম্যাচে রেফারিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তার কাঁধেই দেওয়া হয়েছে। সেটাও পালন করেছেন তিনি। এবার ছেলেদের ফুটবলে নারী রেফারিংয়ের ঘটনা আলোচিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। রীতিমতো তারকা বনে গেছেন ইউলিয়েনা। ২৫ বছর বয়সী ইউলিয়েনা সাও পাওলোতে ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগের ম্যাচে রেফারিং করেছেন। ওই ম্যাচে কোপা দো ব্রাজিল ৩-০ গোলে হারায় সিআরবিকে। পরবর্তী সময়ে ক্রুজিরোর সঙ্গে অ্যাতলেটিকো মিনেইরোর ম্যাচে রেফারির ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। উত্তেজনাপূর্ণ সে ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স করেন তিনি। ম্যাচে বেশ কয়েকবার তর্ক-বিতর্ক তৈরি হলে ভালোই সামলান ফুটবলারদের।

কলকাতায় নারী রেফারি

পাশের দেশ ভারতের কলকাতায় নারী রেফারির সফলভাবে ম্যাচ পরিচালনার খবর এখন আর অজানা নেই। ইস্টবেঙ্গল মাঠে ইস্টবেঙ্গল-রেলওয়ে এফসি ম্যাচ শেষ হতেই টিভি ক্যামেরা-বুম তাড়া করেছে এক তরুণীর পেছনে। তার হাত ধরেই কলকাতা ফুটবল নতুন ইতিহাস গড়ল। এই প্রথমবার কলকাতার বড় দলের খেলায় কোনও মেয়ে রেফারি মুখে বাঁশি নিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করলেন। অবিশ্বাস্য কাজ করে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিলেন তার নাম কণিকা বর্মণ। শিলিগুড়ির শালুগাড়ার এই মেয়ে নারী রেফারিংয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখালেন এই মহাদেশে। ম্যাচ শেষ করে উঠে কণিকা বললেন, 'এত তাড়াতাড়ি বড় দলের ম্যাচ পাব ভাবিনি।

রেফারি সংস্থার তরফ থেকে আমায় বলা হয়, ম্যাচটা পরিচালনার জন্য। তখন একটু টেনশন হলেও ভালো লাগছিল এই ভেবে যে, সুযোগটা এসে গেছে।

 

 

সর্বশেষ খবর