শিরোনাম
বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর মানব পাচার

সবচেয়ে বড় রুট বঙ্গোপসাগর

ভয়ঙ্কর মানব পাচার

মানব পাচারে সবচেয়ে বড় রুট হিসেবে বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে বঙ্গোপসাগর। এ পথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দেয় হাজার হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। যাত্রাপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধিবাসীরা রওনা করে। বারবার দুর্ঘটনায় অবৈধ অভিবাসীদের মৃত্যুর খবর এলেও অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রার হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ সমুদ্রপথে অবৈধভাবে যাত্রা করে। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে গিয়ে নির্যাতন ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫৪০ জন। অনেকে বঙ্গোপসাগরকে ফাঁকি দিয়ে দুই দেশ অতিক্রম করে দক্ষিণে ভারত সাগর ধরে আরও এগিয়ে যায়। পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মানব পাচারের দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগর একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় রুটে পরিণত হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে মানব পাচার হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর দিয়ে বিদেশ যাত্রার হার অক্টোবর-নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ বর্ষাকাল শেষে বছরের এই সময়ে সমুদ্র তুলনামূলক শান্ত থাকে। আর প্রতারক চক্র ও জলদস্যুদের সহায়তায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ভাগ্যগুণে বেঁচে থাকা শ্রমিকদের অবৈধভাবে কম মজুরিতে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ফিশিং ট্রলারে কাজ দেওয়া হয়। সমুদ্রপথে বিদেশ যাত্রার খরচ হিসেবে দালালরা প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ ডলার নিয়ে থাকে। বেশির ভাগ মানুষই সমুদ্রপথে বিদেশ যাওয়ার জন্য দালালদের স্বেচ্ছায় অর্থ দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক, এমনকি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লোকজনকে সমুদ্রপথে পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া উখিয়া টেকনাফ উপকূলকে মানব পাচারের অন্যতম নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানে পাচারকারীদের অন্যতম টার্গেট মিয়ানমার থেকে এ দেশে অনুপ্রবেশ করে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা। এসব রোহিঙ্গা বিদেশে অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্দেশে অনুপ্রবেশ করলেও পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে গভীর সমুদ্রে অনেকের সলিল সমাধি হচ্ছে। এ ছাড়া মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে গত দুই বছরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যে নৌকা বা ট্রলারে তারা সমুদ্র পাড়ি দেয় সেগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। একই সঙ্গে দীর্ঘ যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় পানি ও খাবারের তীব্র সংকট রয়েছে। উপকূল থেকে অতিরিক্ত আরোহী নৌকায় উঠানোর জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদম পাচারকারীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। তাতে কয়েক সপ্তাহও পার হয়ে যায়। বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সমুদ্রপথে অনেক যাত্রী মারা যায়। অনেকে ক্রুদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে, খাদ্য-পানির অভাবে, আবার অনেকে বেপরোয়া হয়ে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে। গন্তব্যে পৌঁছানোর পরও অনেক কিছু তাদের জন্য সুখকর হয় না। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পর শত শত মানুষকে গ্রেফতার করে কর্তৃপক্ষ।

 

সর্বশেষ খবর