শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাদ্দাম পতন

তানভীর আহমেদ

সাদ্দাম পতন

 

ট্র্যাজেডির মধ্যমণি

সাদ্দাম হোসেন। ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি। এ পরিচয়ের চেয়ে বড় ছিল- তিনি পশ্চিমাদের ত্রাস। বলা হয়ে থাকে, পশ্চিমাবিশ্বের পাতানো ফাঁদে প্রাণপ্রদীপ নিভেছে তার। সাদ্দাম জুলাই ১৬, ১৯৭৯ থেকে এপ্রিল ৯, ২০০৩ পর্যন্ত ইরাকের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ইরাকের রাষ্ট্রপতি ও বাথ পার্টির প্রধান হিসেবে সাদ্দাম হোসেন আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্ম নিরপেক্ষ ও আধুনিক ইরাক গড়ে তোলার পথে পা বাড়ান। সাদ্দাম একদলীয় শাসন কায়েম করেন। যা ভালোভাবে নেয়নি সভ্যরাষ্ট্রগুলো। সাদ্দাম ইরানের সঙ্গে ৯ বছরের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

এরপর ১৯৯১ সালে সাদ্দাম উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। সাদ্দাম ইরাকের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধের সব পক্ষকে নির্মূল করার উদ্যোগ নেন। ইরাকি শিয়া মুসলমান, কুর্দি ও ইরাকি তুর্কি জনগণের বিরোধিতা করে স্বাধীনতা দাবি করে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। সাদ্দাম ব্যাপক ধ্বংসাÍক জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছেন এই অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইরাকে আগ্রাসন ঘটায়। কিন্তু তাদের এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন ছিল। ‘যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এমন কোনো অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

১৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেন আমেরিকান সেনাদের কাছে ধরা পড়েন। পরবর্তীতে আমেরিকা ইরাকি সরকারের হাতে সাদ্দাম হোসেনের বিচার করে। সাদ্দামের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করা হয়। তিনি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হন। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইরাকি সময় সকাল ৬.০৬ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

 

 

এখনো শূন্য ফিরদৌস চত্বর

২০০৩ সালে ইরাকে একনায়কের পতন ঘটে। তবে এখনো ইরাক অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাগদাদের ফিরদৌস চত্বরে সাদ্দামের ব্রোঞ্জ মূর্তিটি যে কংক্রিটের স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে ছিল, সেটি আজও খালি পড়ে রয়েছে। যেন সাদ্দাম ট্র্যাজেডির সাক্ষী হয়ে রয়েছে এটি। অথচ এই মূর্তিটিকে উল্লাসের ধ্বনিতে টেনে মাটিতে নামানো হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের পর থেকে ইরাকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার যে সুমিষ্ট গান পশ্চিমাবিশ্ব গেয়ে চলেছে সেটা অলীক রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো যখন সাধারণ ইরাকিদের বর্তমান চিত্র তুলে আনতে ছোটেন তখনো পুরনো প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরে আসে। এখনো বহু ইরাকি জানেন না দশ বছর আগের মার্কিন অভিযান তাদের কতটা শান্তি এনে দিতে পেরেছে।  ইরাক এখনো দাঁড়াতে পারেনি বলেই মত দেন অনেকে। ‘ইরাকের জন্য স্বাধীনতা’ নামধারী সামরিক অভিযানটিকে ইরাকের ‘লিবারেশন’ বা মুক্তি বলে গণ্য করেন না অনেকে। ইরাকের বর্তমান সমস্যাগুলোর জন্যও মার্কিনিদের তৈরি শাসন ও আইনগুলোকেই দায়ী করা হয়। মার্কিন ইশারায় ইরাকের শাসনতন্ত্র নিয়ে জনগণের অভিযোগের অন্ত নেই। রাজনীতিকদের উচ্চ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। জনগণের স্বার্থকে পেছনে ফেলে এ ধরনের নীতি রাষ্ট্র পরিচালকদের আরও উদাসী হতেই সাহায্য করছে। এই বিরূপ পরিস্থিতি সামলে নিয়ে ইরাকিদের নিত্য জীবন চলছে। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষভাবে সুরক্ষিত সরকারি ‘গ্রিন জোন’ রয়েছে। সাধারণ মানুয়ের জন্য গ্রিন জোন নেই। কিন্তু বাস্তবতা এর থেকে বহু দূরে রয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশে। নিরাপত্তা হুমকি মাথায় নিয়ে পথ চলতে হয়। তবু বাগদাদের মানুষদের এসব সয়ে গেছে বলেই মনে হয়। সাদ্দাম যুগের পর শুধু ইরাকে চিত্র বদলে যায়নি। সারা বিশ্বের রাজনৈতিক হালচালও বদলে গেছে। ইরাক এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা ভুলে মানুষ ফিরদৌস চত্বরের চারপাশে রাত-দুপুর  ভিড় করতে শুরু করেছে। নাটক, গানের জলসাতে ছুটছে তারা। খাবারের রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারছে তারা। সাদ্দামের আমলে টেলিভিশনের জন্য ডিশ অ্যান্টেনা লাগানোও নিষিদ্ধ ছিল। একনায়কের বাড়াবাড়ির কথা ভুলে যায়নি মানুষ। আমেরিকানদের হাতে ভাগ্য সঁপে দিয়ে যদিও নিশ্চিন্ত নয় তারা। তবু পরিস্থিতি এখন এটাই। ইরাকের মন্ত্রিপরিষদের এক সীমিত জরিপ অনুযায়ী ২৫ বছরের কম বয়সী ইরাকিরা দশ বছর আগের মার্কিন-ব্রিটিশ অভিযানকে ‘লিবারেশন’ বলেই মনে করে।

 

 

ইরাক জ্বালিয়ে কী পেল যুক্তরাষ্ট্র

 

মধ্যপ্রাচ্যে তেল জাতীয়তকরণের পেছনে সাদ্দামের অবদান অনেক। তিনিই প্রথম তেল জাতীয়করণ করেছিলেন এবং একই পথ ধরে বাকি আরব রাষ্ট্রগুলোও তেল জাতীয়করণ করে। ফলাফলে তেল থেকে প্রাপ্ত মুনাফা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই ব্যবহার করতে পারছে এবং অবকাঠামো গড়ে তুলছে। তবে তেলের এই রমরমা বাজারের প্রথম সারির ক্রেতা পশ্চিমারা। যে কারণে তেলের বাজারে হস্তক্ষেপ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। মধ্যপ্রাচ্যের এই দামি তেলের দখল নেওয়া ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানো, দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে যায়। সে বাজার দখলে পথে অন্যতম বাধা ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। তবে তেলই শেষকথা নয়। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে মার্কিনিদের পদক্ষেপ ও সাফল্যের স্বাদ উৎসাহিত করে ইরাকের দিকে নজর দেওয়ার। ইরাক যুদ্ধে নামার পর লাভক্ষতির হিসাব কষেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে হিসাব বলছে, ইরাক আক্রমণের পর আমেরিকা হারিয়েছে সাড়ে চার হাজার উচ্চ প্রশিক্ষিত সেনাসদস্য। আহত হয়েছে ৩২ হাজার সেনা। এই যুদ্ধে বেসামরিক ইরাকি নিহত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১ লাখ ২০ হাজার ইরাকি নিহত হয় মার্কিন হামলায়। শেষ পর্যন্ত ইরাকের কাছে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের সন্ধান না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণের জন্য নিজ দেশে তো বটেই সারা বিশ্বে সমালোচিত হয়। ইরাকিদের প্রাণের বিনিময়ে মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও রাজনৈতিক প্রভাব দুটিই হাসিল করে তারা।

 

 

নন্দিত ও নিন্দিত রাষ্ট্রনায়ক

 

ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জন্ম উত্তর-ইরাকের তিকরিত প্রদেশের আউজা গ্রামে। তার শৈশব খুব সাজানো ছিল না। জন্মের পর বাবা নিরুদ্দেশ হলেন। তার মা আবার বিয়ে করেন। সৎ বাবার ঘরে সাদ্দামের জীবন সুখকর ছিল না। সাদ্দাম এরপর বাগদাদে তার মামার বাড়িতে বেড়ে ওঠেন। রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় হন তার মামার সূত্র ধরে। সাদ্দামের মামা বাথ পার্টির সক্রিয় নেতা ছিলেন। ১৯৫৭ সালের কথা। তখন সাদ্দামের বয়স মাত্র ২০ বছর। এই তরুণ বয়সেই তিনি বাথ পার্টির সদস্য হন। দলে তার অংশগ্রহণ ও কর্মপরিধি বাড়তে থাকে। ১৯৬৩ সালে বাথ পার্টি সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৬৮ সালে বাথ পার্টি আবার ক্ষমতা দখল করে। এটি সাদ্দামের জন্য মাইলফলক ছিল। কারণ  সেবার সাদ্দামকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে সাদ্দাম প্রেসিডেন্টের কার্যভার গ্রহণ করেন। ইরাকের ভাগ্য লেখার মানসে ক্ষমতায় বসেন তিনি। তার শাসনামলে ইরাকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সাদ্দামের নেতৃত্বে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। ইরানের বিরুদ্ধে প্রায় নয় বছর দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধে উভয় দেশের অর্থনীতি মারাÍকভাবে বিপর্যস্ত হয়। এই যুদ্ধে কোনো দেশই চূড়ান্ত সফলতা পায়নি। ইরাক-ইরান যুদ্ধে ইরাককে পেছন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব  ইন্ধন জুগিয়েছিল। এই যুদ্ধে সাদ্দামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি ছিল ১৯৮৮ সালে কুর্দি শহর হালাফজায় অভিযান পরিচালনা করে কুর্দিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে পাঁচ হাজার কুর্দির মৃত্যু ঘটান। এরপর সময়ের পালাবদলে সাদ্দাম ১৯৯০ সালে কুয়েত দখল করে নেন। এবার দাবার দান উল্টে যায়।  যুক্তরাষ্ট্র কুয়েতের পক্ষ নেয়। কারণ আর কিছুই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে সামরিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিল। যুক্তরাষ্ট্রের জমজমাট অস্ত্রবাণিজ্যের কথা কে না জানে। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী কুয়েতের পক্ষে প্রত্যক্ষ অংশ নিলে ইরাক পরাজিত হয়। এ যুদ্ধ-পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশ কুয়েত সফরে এলে তাকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং বিপুল অঙ্কের অর্থের উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। ইরাকের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা সবার সামনে চলে আসে। ইরাকের কাছে ব্যাপক মানববিধ্বংসী রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র রয়েছে এমন মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাদের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে সাদ্দামের বাহিনী পরাজিত হয়। সাদ্দাম আÍগোপনে চলে যান। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন সেনারা সাদ্দামের জন্মস্থান তিকরিত থেকে তাকে আটক করে। সাদ্দামকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। প্রহসনের শামিল এই বিচারে তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল,  তিনি ১৯৮২ সালে হত্যার মাধ্যমে উৎখাত ও তার ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িত সন্দেহে দুজাইলের ১৪৮ নাগরিককে ফাঁসি দিয়েছিলেন। বিচারপতি রউফ আবদুর রহমানের জন্ম হালাফজায়। এ শহরটিতে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে পাঁচ হাজার কুর্দি হত্যার ব্যাপারে সাদ্দামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, দাবি করা হয় সে হত্যাকাণ্ডে এ বিচারপতির বেশ কিছু আত্মীয় প্রাণ হারান। দেশি ও বিদেশি চক্রান্ত জোরদার হয়। বিশ্লেষকরা বলেন, প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে সাদ্দামকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

 

 

ভিন্নস্বাদ

 

পুরোটাই সাজানো নাটক!

 

ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী দেখিয়েছে তারা একটি গর্ত থেকে বিধ্বস্ত সাদ্দামকে আটক করছে। কিন্তু আল-আরাবি আল জাদিদ নামক মধ্যপ্রাচ্যের এক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য আলোড়ন সৃষ্টি করে। ৪১ বছর বয়সী ফিরাস আহমেদ নামের ইরাকের এক দোভাষীর বরাত দিয়ে ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, সাদ্দাম হোসেনকে একটি শক্তিশালী ভূ-গর্ভস্থ বাঙ্কার থেকে ধরা হয়েছিল, গর্ত থেকে নয়। সাদ্দামকে আটকের দুই দিন পর মার্কিন কমান্ডাররা এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আমি সেখানে অংশগ্রহণকারী ইরাকি রাজনীতিবিদদের দোভাষী হিসেবে ছিলাম। সেখানে আমি জানতে পারি যে, সাদ্দামকে গর্ত থেকে আটক করা হয়নি।

 

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণের পরিকল্পনা

 

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন। ইরাকের পারমাণবিক চুল্লিতে ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধস্বরূপ দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে অপহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। স্পর্শকাতর এই তথ্যটি ফাঁস করেন তৎকালীন সাদ্দাম সরকারের অ্যাটর্নি বাদি আরেফ। আল কুদস আল অ্যারাবি নামের আরবি ভার্সনের একটি পত্রিকা এ তথ্য সংগ্রহ করে। বাদি আরেফের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, তিনি (আরেফ) ইরাকের তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধানের কাছ থেকে ওই পরিকল্পনার কথা শুনেছিলেন। প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালের ৭ জুন ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ইরাকের নির্মাণাধীন ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালায়। তেলআবিবের ওই অপারেশনের নাম ছিল অপারেশন অপেরা কিংবা অপারেশন ব্যাবিলন। এতে প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।

 

 

সাদ্দাম-কন্যার আইএসকে সমর্থন

ইরাকের সাবেক একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের পতন হয়েছে ২০০৩ সালে। কিন্তু এখনো সাদ্দাম ও তার পরিবারের সদস্যরা সংবাদের শিরোনাম হন। এবার উগ্রপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়ে ফের খবরে এলেন জর্ডানে নির্বাসিত থাকা সাদ্দাম হোসেনের কন্যা রাঘাদ হোসেন।

রাঘাদ বেশ ফ্যাশন-দুরস্ত।

সৌন্দর্য ধরে রাখতে অসংখ্য কসমেটিক সার্জারি করিয়েছেন। গয়নাসম্ভার নিয়ে তার সম্পর্কে বিস্তর গল্প শোনা যায়। পাশ্চাত্যের সাজসজ্জাতেও বেশ পটু তিনি। এহেন ফ্যাশন-দুরস্ত শৌখিন মেজাজের রাঘাদ আচমকা আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

 

 

সাদ্দামের শেষ কৈফিয়ত

 

সাদ্দাম হোসেন বিভিন্ন সময় বিচারকের সামনে যেসব জবাব দিয়েছিলেন তারই কিছু অংশ-

আমি সাদ্দাম হোসেন আল মাজিদ, প্রেসিডেন্ট অব ইরাক। আপনাকে (বিচারককে) একজন ইরাকি ধরে আমি কথা বলছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি ইরাকের প্রেসিডেন্ট ছিলাম যখন কুয়েতে আক্রমণ চালানো হয়। দুঃখজনকভাবে, একজন ইরাকির থেকেই আমার ওপর এই অভিযোগ আসল, এটা কি ন্যায়বিচার হলো? সেই কুয়েত যারা বলেছিল, সব ইরাকি মেয়েদের রাস্তার দশ দিনারের পতিতা বানাবে। আমি ইরাকের সম্মান রক্ষা করেছি, এবং কুয়েতের ওপর ইরাকের ঐতিহাসিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি।

 

...কোন সংবিধান দ্বারা আমার বিচার হবে, যে সংবিধান সাদ্দাম হোসেন সাইন করেছিল, নাকি সেই সংবিধান যা আমেরিকানদের দ্বারা লিখিত?

... তারা মিথ্যাবাদী। তারা ঘোষণা দিল, আমাদের দেশে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। এখন বলছে তারা পায়নি। কিন্তু সাদ্দাম মিথ্যা বলে নাই, আমি এখনো আমাকে করা আঘাতের চিহ্ন দেখাতে পারি। ইরাক কখনই মিথ্যাবাদীদের গ্রহণ করেনি, আজও করব না। আমেরিকান গণতন্ত্র এইখানে লজ্জা নিয়ে এসেছে, তারা আমার হাত ঘড়িটা পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে।

 

 

 

সাদ্দামের পতন আইএসের উত্থান

সাদ্দামের পতন ঘটাতে কোমর বেঁধে নেমেছিল পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নাম সে ক্ষেত্রে সবার আগে আসে। সাদ্দামের একনায়কতন্ত্র, ইরাকে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র আছে, এই অভিযোগের ধোঁয়া তুলে ইরাকে অনুপ্রবেশ করে মার্কিনিরা। শান্তি প্রতিষ্ঠার শিরোনামে সাদ্দামকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তারা। মার্কিনিদের যুদ্ধাস্ত্রের আঘাতে ইরাকের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিধ্বস্ত হয়। নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষ মারা পড়ে এই যুদ্ধে। অর্থনীতি পুরোমাত্রায় ভেঙে পড়ে। সাদ্দামকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও আমেরিকানদের ইরাক হামলার বিশ্লেষণ এখনো অসমাপ্ত। কারণ আর কিছুই নয়। সাদ্দামের ইরাকে যে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের সন্ধানে আমেরিকার এই হামলা সেটি অজুহাত ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ইরাকে এমন কোনো অস্ত্রের সন্ধান পায়নি মার্কিনিরা। তাই যুদ্ধের এত বছর পরও মার্কিনিদের বিপক্ষে আঙ্গুল তুলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ, সাধারণ বিবেকবান মানুষে। এ নিয়ে সমালোচনার তোড়ে প্রায়শই আমেরিকান ইমেজে কালি পড়ে যায়। সেই কালিমার পুরুত্ব কমাতে নেতৃস্থানীয়রা ভুল স্বীকার করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সেই দলে নাম লিখিয়েছেন টনি ব্লেয়ার। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, যিনি সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে জর্জ বুশের প্রধান সঙ্গী ছিলেন, স্বীকার করেছেন ইরাকে সামরিক হামলার কারণেই ইসলামিক স্টেটের উদয় হয়েছে। সাক্ষাৎকারে ব্লেয়ার বলেছেন, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যারা জড়িত ছিলেন ইরাকের আজকের পরিস্থিতির জন্য তাদেরও কিছু দায়ভার আছে। কারণ যুদ্ধ শেষে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে সে বিষয়ে তাদের বোঝার কিছু ভুল হয়েছিল। ইরাক যুদ্ধের কারণে ইসলামিক স্টেটের উত্থান ঘটেছে বলে যে ধারণা করা হয় তার মধ্যে কিছু সত্যতা আছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। নিত্য নতুন পর্যালোচনায় উঠে আসতে শুরু করেছে সাদ্দাম আমলের শতাধিক সেনা কর্মকর্তা এখন আইএসের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তেমনই একজন আল-আনি। বর্তমানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর কমান্ডার। আইএস সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। অথচ একসময় তিনি ইরাকি সেনাবাহিনীরই মেজর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন আইএসের পঞ্চম ডিভিশনের কমান্ডার। আইএসবিরোধী লড়াই করছেন। ইরাকি বাহিনীর এমন বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়েছেন। আরও অনেক ইরাকি সাবেক সেনা কর্মকর্তা আইএসে যোগ দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর