রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুখী তারকাদের অসুখ

তানভীর আহমেদ

দিন দিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছেই

অস্কারজয়ী অভিনেত্রী হলি বেরিকে কে না চেনে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না এই দুর্দান্ত অভিনেত্রীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নাজুক। যে কারণে খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হন তিনি। এ অবস্থায় কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছেন। অসুখের পেছনের প্রভাবকের নাম ডায়াবেটিস। তখন তার মাত্র ২২ বছর বয়স। ‘লিভিং ডলস’-এ কাজ করছেন। সেই টিভিশোতে কাজ করার সময় তার টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ধরা পড়ল। প্রায় দুই বছর পর, ২০০৭ সালে বিষয়টি জানা যায়। তখন থেকে ইনসুলিন নিতে থাকেন তিনি। হঠাৎ বিশেষজ্ঞরা টের পেলেন এটি আসলে টাইপ টু ডায়াবেটিস। পঁয়তাল্লিশ ছাড়ানো এই অভিনেত্রী এখন ইনসুলিন ছেড়ে ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থতার পর খুঁজে পেয়েছেন।


 

 

ফেস ব্লাইন্ডনেস জীবন করেছে দুর্বিষহ

হলিউড কাঁপানো অভিনেতা ব্রাড পিটের ভক্ত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, তিনি খুব কম মানুষকেই চিনেন। তার ব্যক্তি জীবনেও পরিচিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুদের হাতেগোনা কয়েকজনের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। কারণটা জানায় এসকোয়ার ম্যাগাজিন। ব্রাড পিট এক সাক্ষাৎকারে সেখানেই প্রথম স্বীকার করেন তিনি মানুষের চেহারা ভুলে যান। তাই পূর্ব পরিচিত কাউকে দেখে তিনি চিনতে পারেন না। এই অসুখের নাম ফেস ব্লাইন্ডনেস। এই অসুখ তার জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শেষ পর্যন্ত তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে বাধ্য হন। তার অসুখটি নির্ণয়ের পর চিকিৎসাও দেওয়া হয়। কিন্তু এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়। কিছু মেডিটেশনের মাধ্যমে জটিলতা কমানো হলেও ব্রাড পিট এখনো ফেস ব্লাইন্ড।


 

 

ত্বকে বয়ে বেড়াচ্ছেন সোরাইসিস

২০১১ সালের ঘটনা। এক টিভিশোতে উপস্থিত হন কিম কার্দেশিয়ান। তখনই টের পান তার পায়ে গুটি গুটি লালচে দানা বেড়ে উঠেছে। চিকিৎসকরা জানাল, এটি এক ধরনের সোরাইসিস। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোগবহনকারী জীবাণুকে আক্রমণ না করে তার নিজ শরীরের কোষগুলোকেই উল্টো আক্রমণ করছে। ত্বকের এই মারাত্মক রোগের কথা তিনি গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু অবস্থা বেগতিক। লালচে দানাগুলো ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি ত্বকে তামাটে রাশ দেখা গেল। কোনো চিকিৎসাই এতে কাজ দেয় না। কয়েক সপ্তাহ পর এটি একাই সেরে যায়। আবার দেখা দেয়।

এখনো এ রোগ বয়েই চলছেন তিনি। অ্যালকোহল, ধূপমান, মানসিক চাপ এ রোগের অন্যতম কারণ। এসব থেকে আদৌ তিনি মুক্তি পাবেন কিনা সে নিয়ে সন্দিহান তিনি নিজেই।


 

 

দুরারোগ্য ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া

সালমান খান। দাবাং-খ্যাত সালমান বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাচেলর। বজরঙ্গি বাইজান দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছেন দর্শকদের। নায়ক হিসেবে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও দারুণ সফল সালমান প্রোসোপালজিয়া নামক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া মস্তিষ্কের অসুখ। পৃথিবীতে খুব কম মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই রোগের চিকিৎসাও নেই। এ রোগে আক্রান্ত রোগী মস্তিষ্ক, মুখমণ্ডল ও চোয়ালে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। ব্যথা শুরু হলে ধীরে ধীরে সেটি বাড়তে থাকে। বিশ্লেষকরা এই রোগের তীব্রতার পরিমাণ বোঝাতে বলে থাকেন, করাত দিয়ে সচেতন কারও মাথার খুলি কেটে ফেলার অনুভূতি এটি। এ রোগের ভয়ঙ্কর দিক হলো, আক্রান্তরা ব্যথা সইতে না পেরে বেশির ভাগই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।


 

 

এডিলির পিছু ছাড়েনি উদ্বিগ্নতা

বিশ্বকাঁপানো সংগীতশিল্পী এডিলি। তার কণ্ঠজাদুতে মুগ্ধ হতেই হয়। অঢেল সম্পদ আর জনপ্রিয়তা তাকে ছেয়ে রয়েছে। খ্যাতির পাহাড়ের চূড়ায় উঠেও কিন্তু অসুখ তাকে চাড়েনি। কিন্তু আপনি কি জানেন, এডিলি মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্নতা রোগে আক্রান্ত? উদ্বিগ্নতা তাকে গিলে খাচ্ছে, এ উক্তি বারবার করেছেন এডিলি। বেশ কয়েকবার লাইভ পারফর্মেন্স ছেড়ে আসেন তিনি। এখনো লাইভ পারফর্মেন্সের আগে তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার জন্য ‘সাইকোথেরাপি’ নিতে হয়। এ নিয়ে যতটুকুক্ষু সম্ভব ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। তবুও এই রোগ হঠাৎই আক্রমণ করে তাকে। মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করেন। দমবন্ধ হয়ে আসে, বুক ধড়ফড় করে, মাথা ঘোরায় ও প্রচণ্ড বমি ভাব হয়। শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে মনের যুদ্ধ চালিয়ে এডিলি সুস্থতার পথ খুঁজছেন।


 

 

অসুখ পুষে রেখেছিলেন বছরের পর বছর

ফক্স টিভির টিন ড্রামা শো বেভারলি হিলস দিয়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলেন শেনন ডোর্টি। সারা পৃথিবীতেই তার ভক্তের দেখা মিলবে। তারকাখ্যাতি যতই বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অসুখ। যে অসুখে ভেবেছেন তার সামাজিক খ্যাতি নষ্ট হবে। কোলনে নানা জটিলতা দেখা দিলেও তিনি চিকিৎসকের কাছে যেতে চাননি। কোলনে একের পর এক অসুখ তাকে যন্ত্রণার চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে গেছে। মিডিয়াকে ফাঁকি দিতে অসুখ পুষেছেন নিজের ভেতরেই। যে কারণে অসুখ সুযোগ পেয়ে বাসা বেঁধে বসে তার ভেতরে। ১৯৯৯ সালে কোলন অসুস্থতার কথা জানতে পারলেও সেটি প্রকাশ করেননি। তবে সে বছরই স্টার ম্যাগাজিনে শেষ পর্যন্ত অসুখের কথা স্বীকার করেন। এই অসুখ নিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবেন বলেই দীর্ঘদিন গোপন রেখেছিলেন সেটাও জানান তিনি। হলিউড পাড়ায় অনেকেই কোলন অসুস্থতার কথা গোপনেই রেখে দেন বলেই জানান তিনি। সে তালিকা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে।


 

 

‘পারকিনসন্স’ থমকে দিয়েছিল সব

মাইকেল জে ফক্স। তাকে বলা হয় মেগা টিভি স্টার। একই সঙ্গে তকমা জুটেছে মুভি স্টার হিসেবেও। কিন্তু এই জনপ্রিয় তারকার দেহের ভেতরে পারকিনসন্স অসুখটি দানা বেঁধে রয়েছে। এটি খুবই জটিল ধরনের মস্তিষ্কের একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সাধারণ নড়াচড়া ও হাঁটাচলা করতে পারে না। অসুখের তীব্রতায় শরীরের মাংসপেশিতে টান পড়ে। মুখ বেঁকে যায়। দাঁড়াতে গেলেই শরীর কাঁপে এবং খাবার গিলতে পারে না। গোপনে এই ভয়ঙ্কর রোগ বয়ে বেড়ান ফক্স। সাত বছর এই রোগ সবার কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। শেষতক জানা যায়, মাত্র ৩০ বছর বয়সেই এ রোগ তার শরীরে আশ্রয় নিয়েছিল।


 

 

মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় কাঁদেন মারসিয়া

‘ডেসপারেট হাউজওয়াইফ’ দিয়ে দর্শকদের মন ভুলিয়েছিলেন মারসিয়া ক্রস। ২০০৫ সালে পিপল ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার তার একান্ত কষ্টের কথা প্রকাশ করে সবাইকে চমকে দেয়। রোগের নাম মাইগ্রেন। সবাই কমবেশি মাইগ্রেন বা মাথাব্যথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন। কিন্তু মারসিয়ার মাইগ্রেন যেন সেই স্বাভাবিকত্বকে ছাড়িয়ে গেছে। থেকে থেকে প্রচণ্ড মাথাব্যথায় তিনি কাতর হয়ে পড়েন। ব্যথার তীব্রতা সইতে না পেরে ঘরে বসে কাঁদতেন তিনি। এই ব্যথা নিয়ে একের পর এক কাজ চালিয়ে গেছেন। খারাপ সময়ও এসেছে তার জীবনে।

বিশেষ করে কাজের ফাঁকে মাতা ব্যথা শুরু হলেও কাউকে সেটা বুঝতে না দিয়ে আড়ালে বসে কাঁদতেন। বছরের পর বছর এটি বয়ে চলেন তিনি। তীব্র মাথাব্যথার সঙ্গে ছিল ঝাপসা দেখা। চিকিৎসকরা বহু ওষুধ দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। যে কারণে হতাশা থেকে বারবার বেরিয়ে আসার আকুলতা জানিয়েছেন তিনি।


 

 

হৃদযন্ত্র মাইকেলের যন্ত্রণার কারণ

রিয়েলিটি টিভি স্টার ব্রেট মাইকেল মাদকাসক্ত। ধূমপান করতেন নিয়মিত। ফলশ্রুতিতে তার হৃদযন্ত্রে রোগ বাসা বাঁধে। এ নিয়ে চলেছেন বহুদিন। কিন্তু ২০১০ সালে এসে প্রথমবারের মতো হৃদযন্ত্রের রোগে নাকাল হয়ে পড়েন তিনি। বাধ্য হয়ে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপ্রচার করা হয়। তবু ঠিকমতো রক্তসঞ্চালন হচ্ছিল না তার দেহে। ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি গোপন রাখেন তিনি। যে কারণে জটিলতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে রক্তনালি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে ও হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই অসুখ বুকে রেখেই অসহনীয় যন্ত্রণায় দিনযাপন করেন তিনি। প্রায়ই জ্ঞান হারানো, বুক ব্যথা নিয়ে চলছেন। এই অসুখ গোপনে রেখে কাজও চালিয়ে যান তিনি।


 

 

বিষণ্নতায় ডুবে থাকেন সেলেনা

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে খবর হয়েছেন বারবার। মিডিয়ার সামনে কেঁদেছেন। এক সময় হঠাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে সরে গেছেন। আবার ফিরেও এসেছেন। কী হয়েছিল, জানতে চেয়েছে সবাই। তখনই প্রকাশ পেল অটোইমিউন ডিজিজ লুপাসের কথা। বিষণ্নতা ঝেঁকে বসেছিল তার। সব কিছুতেই নেতিবাচক ভাবনা ও হেরে যাওয়ার মানসিকতা তাকে কুরে কুরে খায়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। ২০১৩ সালের সব স্টেজ শো বাতিল করে দেন। রিহ্যাবে পাঠানো হয় তাকে। চিকিৎসকরাও তার অসুখের মাত্রা দেখে ঘাবড়ে যান। এ ধরনের অসুখে খুব দ্রুত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজের দেহ কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে। এর প্রভাবে মৃত্যুর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শরীরের জয়েন্ট, রক্ত, মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, লিভার সবই এতে আক্রান্ত হতে পারে। পুরোপুরি সুস্থতা না পেলেও এর মাত্রা কমাতে পেরেছেন তিনি। বিষণ্নতার তীব্রতায় মিডিয়াকে আক্রমণ করেছেন, আত্মহত্যার পথেও হেঁটেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর