বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেয়ামতের মিশনে আইএস

যেভাবে আইএসের উত্থান

তানভীর আহমেদ

কেয়ামতের মিশনে আইএস

আইএস বা ইসলামিক স্টেট বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউরোপ সর্বত্র চলছে তাদের সন্ত্রাসী হামলা। বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্টেটের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মুসলিম উম্মাহ। তাদের এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ড প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্র তো বটেই, গোটা বিশ্বকেই নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। যে কোনো মূল্যে চালানো হচ্ছে আইএস নির্মূল অভিযান। আইএসের নানাদিক নিয়ে লিখেছেন - তানভীর আহমেদ

 

যেভাবে আইএসের উত্থান

আইএস বা ইসলামিক স্টেট একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। কীভাবে গড়ে উঠল আইএস? কীভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠল তারা? আইএস নির্মূলে বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিধর দেশগুলো চালাচ্ছে সামরিক অভিযান। আইএসের উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইরাকে সাদ্দামের পতন।  আইএসের উত্থানের পেছনে নিজেদের পরোক্ষ ভ‚মিকার কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দেন, ২০০৩ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানের সময়ই সশস্ত্র গোষ্ঠী আইএসের উদ্ভব হয়েছে।

 

 

এর আগে নোয়াম চমস্কিসহ বেশ কিছু মার্কিন বুদ্ধিজীবী একই যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। মার্কিন অভিযানের অজুহাত হিসেবে বলা হয়েছিল, ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে। কিন্তু ইরাকে সাদ্দামের পতনের পর এ ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত টনি ব্লেয়ারও ‘ইরাক যুদ্ধ ভুল হয়েছিল’ বলে স্বীকার করে নেন। আল-কায়েদা থেকে আইএসের উত্থান কীভাবে হলো সেটা নিয়ে বহু বিশ্লেষণ হয়েছে। সিরিয়া-ইরাকের বিশাল এলাকা দখল করে বৈশ্বিক জিহাদি আন্দোলনের নামে আইএসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে বেশ কিছু দেশ, রাজনৈতিক নেতা ও আর্থিক সংগঠনের প্রশ্নবিদ্ধ ভ‚মিকা রয়েছে। আইএসের বেড়ে ওঠার পেছনে যোগসূত্র আছে ‘আল-কায়েদা ইন মেসোপটেমিয়ারও। এরা আল-কায়েদা ইরাক (একিউআই) নামেই পরিচিত। ২০০৩ সালে হামলা চালালে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে। ইরাক দখল করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী। পরবর্তীতে বিশ্লেষকরা দেখেছেন, সাদ্দাম পতন ও ইরাক দখল করতে গিয়ে আল-কায়েদাকে ব্যাপক অস্ত্র ও ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। ২০০৬ সালে সালাফি জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে সুন্নি নেতাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। স্থানীয় উপজাতি এবং আমেরিকানদের মধ্যে সহযোগিতার কারণে ইরাকে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এরই মধ্যে মার্কিন হামলায় নিহত হন একিউআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান আবু মুসাব আল-জারকাভি। তার মৃত্যু এই জঙ্গি সংগঠনের পতনের একটি ইশারা ছিল। ইরাক ও এই অঞ্চলে নতুন জঙ্গি সংগঠন উঠে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়। ২০১০ সালে আবু বাকার আল-বাগদাদিকে নেতা নির্বাচনের পর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইরাকের ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যে ক্ষমতা নেন বাগদাদি। ক্ষমতাচ্যুত সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনী থেকে অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ সদস্যদের দলে টানেন বাগদাদি। বিশেষ করে সাদ্দামের রিপাবলিকান গার্ডের সদস্যরা আইএসের পেশাদার যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করে এবং মানুষ হত্যার একটি শক্তিশালী যন্ত্রে রূপ নেয়। সুন্নি পদাতিক সৈনিক হিসেবে ২০০৪ ও ২০০৫ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে দুবার আটক হয়েছিলেন বাগদাদি। উমা কুসারের ক্যাম্প বুক্কা কারাগারে বন্দীও ছিলেন বেশ কিছুদিন। বন্দী থাকা অবস্থায় জেলেই অনেক জিহাদির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। জেলে বসেই ধর্মীয় মতবাদের অনেককে নিয়ে এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গঠন করেন। ক্যাম্প বুক্কায় বাগদাদির সঙ্গে দেখা হয় সাদ্দাম হোসেনের বিশ্বস্ত সেনা অফিসারদের।

সেখানে জিহাদি আর সাবেক সেনা সদস্যদের মধ্যে এক কোয়ালিশন গঠন হয়। ২০১১ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল আইএস। অবিশ্বাস্যভাবে  রাতারাতি তাদের সদস্য সংখ্যা ১৭ হাজার থেকে ৩২ হাজারে উন্নীত হয়। ধীরে ধীরে ডালপালা মেলে এটি। ধর্মকে পুঁজি করে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে আইএস। কয়েকবছরের ব্যবধানে আইএসের হাতে আসে উন্নত অস্ত্র। আর্থিক ভিত্তিও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর