বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আইএসকে অর্থ ও অস্ত্র দিচ্ছে কারা?

আইএসকে অর্থ ও অস্ত্র দিচ্ছে কারা?

আমেরিকায় নাইন-ইলেভেন হামলার পরপরই সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে অনেক দেশই সে গলায় সুর মিলিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় উঠে আসে আল-কায়েদার নাম। ইরাকের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে ও ইরাক সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এমন শক্ত অভিযোগ এনে ইরাক আক্রমণ করে বসে যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবিরোধী মার্কিন হামলার সময়ই অভিযোগ ওঠে ইরাকে সাদ্দামবিরোধীদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উন্নত অস্ত্র ও অর্থ সহযোগিতারও অভিযোগ ওঠে। এক সময় ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে। কিন্তু অনেকেই ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পারেননি। সাদ্দাম হোসেনের অনুগত প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য ও মানবতাবিরোধী একটি পক্ষ বরাবরই পা গেড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আসছিল। আর সে সুযোগটি বুমেরাং করে কাজে লাগাতে চেয়েছে বিপক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে মোসাদ ও সিআইএ। বিশ্লেষকরা দাবি করেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার ইশারাতেই আইএস শক্তিশালী হতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর দাবি, বৃহৎ অর্থে আইএস নিজেই নিজের অর্থের জোগানদাতা। ইরাক ও সিরিয়া দখলে থাকা তেলক্ষেত্র থেকে তেল বিক্রি, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, চোরাকারবারি, ট্যাক্স আদায়, লুটতরাজ, ব্যাংক ডাকাতি ইত্যাদির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচ্ছে তারা। যখন জঙ্গি গোষ্ঠীটি আÍপ্রকাশ করে তখন বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতের অনেক ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পায় আইএস। শুরুতে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজপরিবারগুলো আইএসসহ সিরীয় প্রেসিডেন্টের বিরোধী পক্ষগুলোকে প্রকাশ্যেই অর্থসহায়তা দিয়েছে।

জ্বালানিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা আইএইচএসের ধারণা, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আইএস ৬০ হাজার ব্যারেল পর্যন্ত তেল উৎপাদন করছে। এর মূল্য ১০ লাখ পাউন্ড। নিউজউইকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইএস নানাভাবে গত দুই বছরে কমবেশি চার কোটি ডলার জোগাড় করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের হিসাবে ২০১৪ সালেই মুক্তিপণ বাবদ হাতিয়ে নিয়েছে তারা কমপক্ষে দুই কোটি ডলার। সব মিলিয়ে প্রতি বছর আইএসের বার্ষিক আয় ২০০ কোটি ডলার।

অর্থের জোগানের এই হিসাব নিঃসন্দেহে যে কাউকে চমকে দেবে। কিন্তু অস্ত্র আসছে কোথা থেকে? প্রশ্ন জাগতেই পারে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যে দেশগুলো নেতৃত্ব দিয়ে থাকে তারাই মূলত অস্ত্র তৈরি ও রপ্তানি করে আর্থিকভাবে মুনাফা অর্জন করে থাকে। আইএসের কাছে যে মানের আধুনিক অস্ত্র রয়েছে তাতে বিশ্লেষকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এ বছর জানুয়ারিতে প্যারিসে ফরাসি বিদ্রƒপাÍক পত্রিকা শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলার পর অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখেন হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর বেশির ভাগই ইউরোপের বলকান অঞ্চল থেকে চোরাই পথে আনা। এগুলো সাবেক যুগোশ্লাভিয়া যুদ্ধের (১৯৯১-৯৫) সময়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহƒত হতো। কিছু কিছু গণমাধ্যম জানায়, ইউরোপে ৫০০ থেকে এক হাজার ইউরোর বিনিময়ে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক কিনতে পাওয়া যায়। আর কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ গ্রুপের গত বছরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের হাতে থাকা অস্ত্রভাণ্ডারের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার তৈরি। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ইরাকের অনেক জায়গা দখলের পর তারা সরকারি অস্ত্র নিজেদের করে নেয়। আর সৌদি আরব, ইরাক, সিরিয়া ও পশ্চিম ইউরোপ থেকে চোরাই পথে অস্ত্র আইএসের হাতে যাচ্ছে। অর্থ ও অস্ত্র হাতে পেয়ে আইএস আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে এখন ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলার দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে আইএস। আইএস হামলা থেকে এখন কোনো দেশই ঝুঁকিমুক্ত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর