বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছবি : লাকমিনা জেসমিন সোমা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ঘুরে আসুন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

নির্মল আনন্দের কারণে ভিড় বাড়ছে ঢাকার উপকণ্ঠের আকর্ষণ গাজীপুর জেলার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। রাজধানী ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর উপজেলার বাঘের বাজারে এ পার্কের অবস্থান। ভিন্ন স্বাদের এ পার্কে সাধারণ দিনগুলোতে সকাল থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে বেড়াতে আসেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শীতের আগমনে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ছুটে আসছেন। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখানে বাড়তে থাকে উৎসুক মানুষের উপস্থিতি। পার্কে দেখা যায়, কেউ সপরিবারে অথবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসছেন। এ সাফারি পার্কের আয়তন ৩৬৯০ একর। এর মধ্যে ৫৫০ একর জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। ২০১০ সালে সাফারি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফারি পার্কের উদ্বোধন করেন। এ পার্কের উদ্দেশ্য হলো, শালবনের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণীকে নিজ আবাসস্থল এবং আবাসস্থলের বাইরে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন করা। রাজধানী ঢাকার অতি নিকটে এই ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আরও রয়েছে চিত্তবিনোদন, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ। বর্তমানে এ পার্কের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বনের রাজা সিংহের সদ্য জন্ম নেওয়া চার শাবক। পার্কটিতে সকাল থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী রোদ উপেক্ষা করে আসতে থাকেন। পার্কে ঢোকার পর পাখির কিচিরমিচির শব্দে সবার মন ভরে যায়। পুরো পার্ক এলাকাকে নয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, প্রজাপতি পার্ক, হাতির পিঠে চড়ার এলাকা, জলাধার ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এলাকা। এ পার্কে আরও রয়েছে ভাওয়ালগড়ের ছোট ছোট টিলা ও নিচু ভূমিসমৃদ্ধ শালবন, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, কড়ই, পলাশ, চাপালিশসহ নানা গাছগাছালি আর হরেক লতাগুল্ম। এ ছাড়া একটু বনের ভিতরে গেলেই যতদূর চোখ যায় দেখা যাবে ছোট  ছোট টিলাজুড়ে শাল বাগান। বনভোজনের  জন্য আদর্শ জায়গা। পার্কে তিনটি ভিআইপি রেস্টহাউস-কটেজ রয়েছে। আধুনিক সুবিধাসংবলিত এসব কটেজে ভালো সুযোগ-সুবিধা চাইলে রেস্টহাউসের একটি ভাড়া নিতে পারেন। এখানে অবশ্য রাতযাপনের সুযোগ নেই। এখানে রয়েছে দুটি লেক, ওয়াচ টাওয়ার ও শিশুপার্ক। আছে বাঘ, সিংহ, জিরাফ, হরিণ, বুনো মোষ, হাতি, ক্যাঙ্গারু, আলপাকা, ওয়ালাবি, স্প্রিংবক, অরিক্স ও ওয়াইল্ডবিস্টের অবাধ বিচরণ, যা দেখে মুগ্ধ হন সবাই।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মানুষ খাঁচায়, পশুরা উন্মুক্ত

সাফারি পার্কের উন্মুক্ত রাজ্যে ঘুরে বেড়ায় বনের রাজা সিংহ। আছে বাঘ, ভাল্লুক, জেবরা কিংবা হরিণের পাল। মাংসাশী ও তৃণভোজী এই প্রাণীদের উন্মুক্ত রাজ্য দেখতে হলে মানুষকেই খাঁচায় বন্দী হতে হয়। পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় সাইটসিং বাস কিংবা জিপে করে ঘুরে দেখানো হয় সেই বিশাল সাম্রাজ্য। গাড়িগুলো এমনভাবে তৈরি যে, ইচ্ছা করলেই কেউ এর দরজা-জানালা খুলতে পারবেন না। পশুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকটা উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তার মতো পিচঢালা রাস্তা চলে গেছে শালবনের ভিতরে। সেই রাস্তা ধরেই এগোতে থাকে জিপ। প্রাণীর রাজ্যে প্রথমেই দেখা মেলে কয়েক জাতের হরিণ। উন্মুক্ত মনে হলেও কাঁটাতারে ঘেরা হরিণেরা অধিকাংশ সময়ই ঝোপের মধ্যে তৃণলতা চিবায়। এরপর একটু এগোলেই দেখা মেলে জিরাফের। পাল ধরে শালগাছের ছায়ায় যেন গল্প-গুজবে মত্ত এই জিরাফগুলো। এমনও ঘটে, যখন পথে চলতে চলতে হঠাৎ গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় বিশাল শিংওয়ালা হরিণ। এরপর ভাল্লুুক দেখার পালা। আলাদা আলাদা বনে রাখা হয়েছে কালো ও সাদা ১৪টি ভাল্লুক। এখানে একটু বেশি হিংস্র প্রাণীর ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। যেমন বাঘ, ভাল্লুক ও সিংহের রাজ্য দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সেখানে প্রবেশ করতে হয় অটোমেশন বা সেন্সর গেট ব্যবহার করে। যদিও এই প্রাণীগুলোর জন্য বরাদ্দ জায়গা এতটাই বিস্তৃত যে দেয়ালগুলো খুব একটা চোখে পড়ে না। মনে হবে, উন্মুক্ত বনেই তো ঘুরছি! যাই হোক, বন্য প্রাণী দেখার যাত্রায় ভাল্লুকের পরই দেখা মেলে সিংহের। সিংহের রাজ্যে এখন সদস্য সংখ্যা ১২। এরপরই আছে বাঘ। ১০ সদস্য নিয়ে বেশ ভালোই আছে বাঘ মামার পরিবার। তবে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার। জিপ বা বাসে চড়ে এই রাস্তা দিয়ে গেলেই যে এগুলো দেখতে পাবেন, এমনটি নয়। মাঝেমধ্যে প্রাণীগুলো বনের কোথায় হারিয়ে যায় কিংবা লুকিয়ে থাকে, বোঝা মুশকিল। তবে বাঘ এবং সিংহকে দেখার আর একটা উপায় আছে। সেটি আরও মজার। পার্কের মধ্যেই ভিন্ন পথে এই প্রাণী জগতে প্রবেশের একটি সুযোগ আছে। আর তা হলো টাইগার পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ এবং লাইয়ন পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। এই দুই রেস্তোরাঁয় ঢুকে খাওয়ার সময় বাঘ-সিংহ দেখার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ এই রেস্তোরাঁর পাশেই কৃত্রিম খাল বা জলাশয়ে প্রায়ই গোসল করতে বা মাছ ধরতে আসে তারা। তখন খেতে খেতেই এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক দৃশ্যটি চোখে পড়ে। বন্য প্রাণীকে এভাবে কাছ থেকে দেখে একটু জানালা খুলতে ইচ্ছা করতেই পারে। কিন্তু না, কোনোভাবেই উপায় নেই। পার্ক কর্তৃপক্ষ এখনে যেমন সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক পরিবেশ দিতে পেরেছে, তেমনি পেরেছে অপ্রাকৃতিক তথা মনুষ্যসৃষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এ যেন ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ে পড়া সেই শহুরে ইঁদুর ও গেঁও ইঁদুরের গল্প

 

খাঁচার প্রাণীকে সঙ্গ দেয় বন্যপ্রাণী

সাফারি পার্কে খাঁচার প্রাণীকে সঙ্গ দেয় বনের প্রাণী। বিশেষ করে বানরের খাঁচার কাছে গেলে দেখা যায় বন্ধুত্বের এই চমৎকার নিদর্শন। সেখানে খাঁচয় বন্দী বানর আর শালবনের উন্মুক্ত বানর যেন একই বন্ধনে আবদ্ধ। খাঁচার আশপাশেই সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে বন্য বানর।

সঙ্গ দেয় বন্দীদের। বন্দী বানররাও কলা-পাউরুটি বা ফলমূল ছুড়ে দেয় বন্য বন্ধুদের উদ্দেশ্যে। এ যেন ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ে পড়া সেই শহুরে ইঁদুর ও গেঁও ইঁদুরের গল্প। মাঝখানে লোহার তারে তৈরি খাঁচা বা দেয়াল থাকলেও পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে গল্প করে এই বানররা। কেবল বানরই না, পাখি ও প্রজাপতিদের ক্ষেত্রেও এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ডিম আগে না মুরগি

ডিম আগে না মুরগি আগে- এমন একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েই ঢুকতে হয় সাফারি পার্কের ‘এগ ওয়ার্ল্ড’-এ। এখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের পাখি ও প্রাণীর ডিম। ডিমের এই বিশেষ সংগ্রহশালায় গেলে তাক লেগে যায় দর্শনার্থীদের। এখানে হাঁস-মুরগি কিংবা কাকের ডিম থেকে শুরু করে আছে অজগরের ডিমও। আরও দেখা যাবে- মাছরাঙা, উটপাখি, পেঁচা, কোয়েল, শকুন, ময়ূর, লাভ বার্ড, গুইসাপ, কুমির, কোবরা, কবুতর, ঘুঘু ও হিরণের ডিম। বিভিন্ন আকার-আকৃতি, রং ও ডিজাইনের এই ডিমগুলো দেখলে মনে হয় যেন মানুষের তৈরি। কিন্তু, না। অনবদ্য সৌন্দর্য ও রহস্যে ঘেরা এই বিশ্ব প্রকৃতিরই একটি অংশ এগুলো। কাচের ভিতরে সংরক্ষিত ডিমগুলোর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্যও এখানে সংযোজিত হয়েছে।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দেশে-বিদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে প্রেমের নজির স্থাপন করেছে এই অপূর্ব সুন্দর ম্যাকাও পাখিটি

 

প্রেমপ্রিয় ম্যাকাও

সঙ্গী ছাড়া এক মুহূর্তও কাটে না প্রেমপ্রিয় ম্যাকাও পাখির। পছন্দের সঙ্গীকে নিয়ে জীবনে তারা ঘর বাঁধে একবারই। এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে প্রেমের এমনই নজির স্থাপন করেছে এই অপূর্ব সুন্দর ম্যাকাও পাখিটি। দেখতে চাইলে যেতে হবে সাফারি পার্কে। রঙের দিক থেকে অনেকটা মাছরাঙার মতো হলেও আকারে কিন্তু মাছরাঙার চেয়ে অনেক বড়। এর গায়ের উপরাংশে আকাশি এবং বুক-পেটের নিচের অংশ বাসন্তী রঙে আঁকা। ঠোঁট দুটির আকার আবার টিয়া পাখির মতোই। অত্যন্ত বন্ধুসুলভ এই পাখিটিকে একটু খাবার দিলে, আদর করলেই হাতের ওপর এসে বসে। সাফারি পার্কে বর্তমানে বেশ কিছু ম্যাকাও পাখি রয়েছে যেগুলো দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে ভিড় জমায়।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শালবনের রোমাঞ্চকর বাংলো

চারদিকে সুউচ্চ শালবন। গাছে গাছে সবুজ পাতা, পাখি-কুলির উৎসব। বনের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে আঁকা-বাঁকা ও সরু পথ। সাফারি পার্কের শেষ প্রান্তের এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার বা বাংলো। এর নামটিও বেশ! বনবিলাস। বনবিলাসটি আপাতত নিস্তব্ধ। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে দর্শনার্থীদের জন্য এটি এখনো পুরোপুরি খুলে না দেওয়ায় সেখানে বর্তমানে বসবাস করছেন একজন কুমিরবিশেষজ্ঞ। বাংলোর পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ছোট্ট খাল। খালের ওপর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ঝুলন্ত ব্রিজ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই খালটি গিয়ে মিশেছে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ পল্লীর লিলাবতী লেকে। যেখানে লেখক আনন্দলোকে জোছনা-যাপন করতেন। বনবিলাস ছাড়াও সাফারি পার্কে ‘ময়ূরী’ এবং ‘ঐরাবত’ নামে আরও দুটি বাংলো রয়েছে যেগুলোতে পার্কসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকছেন।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 পেখম মেলে মন

আকাশে মেঘ দেখলেই প্রেম জাগে ময়ূরের। সঙ্গী হয় ময়ূরী। তখন আনন্দে পেখম মেলে ময়ূর। সেই সঙ্গে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। বৃষ্টির ছন্দে নাচতে থাকে এই অপরূপ সুন্দর জুটি। কেবল কল্পনা নয়, বাস্তবেও সাফারি পার্কে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। যে দৃশ্য দেখলে একজন সাধারণ মানুষেরও পেখম মেলে মন। এখানে সবুজ ঘাসে ঘুরে বেড়ায় ময়ূর-ময়ূরী। সংখ্যায় এক দেড়শর কম নয়। আছে সাদা রঙের ময়ূরও। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে এই ময়ূরীর অভয়ারণ্যে মানুষের প্রবেশের জন্য বেশ উঁচু করে সাঁকোর মতো বানানো হয়েছে। যাতে, দর্শনার্থীদের কারণে সাঁকোর নিচে ঘুরে বেড়ানো ময়ূর-ময়ূরী কোনো অস্বস্তিবোধ না হয়। এই উঁচু ব্রিজটির ওপর দাঁড়িয়ে দেখা যায় ময়ূর-ময়ূরীর ঘর-সংসার। কেউ কাঠের ঘরে বসে জানালায় উঁকি দিচ্ছে, কেউ সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখছে। আবার কেউ বা মেঘ না হতেই পেখম মেলেছে। সবচেয়ে, মজার বিষয় হলো, মেঘ না থাকলেও অনেক সময় হাতের তালুতে ছন্দ তৈরি করতে পারলেও ময়ূর পেখম মেলে।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দুর্লভ টাট্টু ঘোড়া

সাফারি পার্কের দক্ষিণ পাশে বিশাল বেষ্টনীর সামনে দেখা গেল চারটি ছোট আকৃতির ঘোড়া আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুটি পুরুষ প্রজাতির অপর দুটি স্ত্রী প্রজাতির। ঘোড়া শেডের কেয়ারটেকার আরমান হোসেন বলেন, এ তিন ঘোড়া অতি বিপন্ন প্রজাতির টাট্টু ঘোড়া। বাংলাদেশ থেকে এ প্রজাতি হারিয়ে গেছে। আমরা এ ঘোড়ার জাত রক্ষায় চেষ্টা করছি। দেড় বছর আগে দরপত্রের মাধ্যমে এ পার্কে তিন ঘোড়া কেনা হয়। বর্তমানে পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানে পাওয়া যায়। এ ঘোড়ার উচ্চতা সাড়ে তিন থেকে চার ফুট হয়ে থাকে। সুঠাম দেহের অধিকারী এ ঘোড়া বেশ শক্তিশালী হয়। মরুভূমিতে এসব ঘোড়া দিয়ে মালামাল বহন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এ ঘোড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। হিটলার সমর্থিত সেনাবাহিনী এ ঘোড়া যুদ্ধের সময় ব্যবহার করে। এ ছাড়া সার্কাসের প্রধান উপকরণ এ ঘোড়া দিয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়া হয়। তৃণভোজী এ প্রাণী চীন ও জাপানের সেনাবাহিনীতে বেশ কদর রয়েছে। পাশাপাশি নেপালের সেনাবাহিনী এ ঘোড়া দিয়ে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় মালামাল বহনে প্রধান বাহন হিসেবে কাজে লাগিয়ে থাকে। গর্ভধারণের আট মাস পর এ ঘোড়া এক সঙ্গে দুটি বাচ্চার জন্ম দেয়। বর্তমানে এক জোড়া টাট্টু ঘোড়ার দাম তিন লাখ টাকা। এ শীত ও গ্রীষ্মের সময় ঠাণ্ডা এবং উত্তাপ সমভাবে সহ্য করতে পারে।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রজাপতির ওড়াওড়ি

প্রজাপতি পার্কের অভ্যন্তরে নানা বর্ণের প্রজাপতি যখন তখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় রাঙা মেঘের মতো। বসে প্রকৃতির কোলজুড়ে। অনিন্দ্য সুন্দর এসব প্রজাপতির ওড়াওড়ি দেখতে কার না ভালো লাগে। স্বচ্ছ পাখায় এত বর্ণিল রং, এত বৈচিত্র্যবর্ণ নকশা সহজেই নজর কাড়ে শিশু-কিশোরদের। বাদ যায় না প্রেমিক মনও। কিন্তু ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দী নগর জীবনে প্রজাপতির দেখা পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। এ অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ পার্কের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি পার্ক। দেশে শুধু প্রজাপতিকে ঘিরে অন্যতম পার্ক এটি। পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে দৃষ্টিনন্দন অসাধারণ এ প্রজাপতি পার্কটি যাত্রা শুরু করেছিল ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর। যেখানে জালের খাঁচায় এখন ১১ প্রজাতির ২১৩ প্রজাপতি ওড়াওড়ি করে। মুগ্ধ করে দেশি-বিদেশি দর্শকদের। পার্কে সারা দিন প্রজাপতি দেখতে ভিড় করেন নানা বয়সী মানুষ। এ ভিড় ছুটির দিনগুলোতে বেড়ে যায়।

এখানে আছে জীবন্ত প্রজাতির বাইরে দর্শকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে বিশাল সংগ্রহশালা। শত শত মৃত প্রজাপতি বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আছে দুর্লভ প্রজাপতির ছবি। রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও ইরানের দুর্লভ প্রজাপতি। এ ছাড়া এখানে এলে প্রজাপতির মজার মজার সব তথ্য আপনাকে জানাতে প্রস্তুত পার্কের কর্মকর্তারা। প্রজাপতি দেখতে দেখতে ক্লান্তিবোধ করলে আছে হালকা রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা। হাঁটাহাঁটির পর্যাপ্ত জায়গা। আছে শালবন। ফুল ও ফলের বাগান। চাইলে সেরে ফেলতে পারেন সহকর্মী, সহমর্মীদের নিয়ে ছোটখাটো সভার কাজটিও। প্রজাপতি পার্কের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা দুর্লভ প্রজাপতির জাত রক্ষায় কাজ করছি। এ ছাড়া এ পার্কে প্রজাপতি দেখতে প্রতিদিন কয়েকশ দর্শনার্থী আসছেন। শুকনো পাতা নামের প্রজাপতি দেখে অনেকে মুগ্ধ হন।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিঃসঙ্গ মরুভূমির আলপাকা

প্রিয়তম সাথীকে হারিয়ে নিঃসঙ্গতায় দিন কাটছে মরুভূমির প্রাণী আলপাকার। আড়াই বছর আগে এক জোড়া আলপাকা দুবাই থেকে দরপত্রের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় কেনা হয়। একটি পুরুষ ও অন্যটি স্ত্রী প্রজাতির ছিল। প্রায় দু-বছর সাফারি পার্কে এক সঙ্গে একই বেষ্টনীতে থাকার ফলে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের দুজনের দিন কাটছিল পরম আনন্দে। তারা দুজন এক সঙ্গে খেত। ঘুমাতও এক সঙ্গে। চোখের আড়াল হলেই একে অপরকে খুঁজে বেড়াত। ছয় মাস আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী প্রজাতির আলপাকা মারা যায়। এরপর থেকে একা হয়ে পড়ে পুরুষ প্রজাতির মরুভূমির একমাত্র প্রাণীটি। এ প্রাণীর দৈহিক গঠন অনেকটা উটের মতো। শরীর পশম সমৃদ্ধ। এ প্রাণীটি দেখতে ছাই রঙের হয়।

পার্কের বন্যপ্রাণী সুপারভাইজার আনিসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রিয় সঙ্গীকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে আলপাকা নামের মরুভূমির প্রাণী। তৃণভোজী এ প্রাণী নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পার্কে আসা দর্শনার্থীদের দেখলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সবুজ ঘাস, ভুসি, গাছের পাতা প্রধান ধাদ্য। এ প্রাণী এক দিন পর পর পানি পান করে থাকে। এ প্রাণীর গড় আয়ুষ্কাল ১৫/১৬ বছর। গর্ভধারণের সাত মাস পর এক থেকে দুটি বাচ্চা দেয়। বাংলাদেশে আলপাকা নামে একটি প্রাণী রয়েছে। শিগগির এ প্রাণীর সঙ্গী হিসেবে আরেকটি প্রাণী আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান, পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা শিব প্রদাস ভট্টাচার্য। এ প্রাণীটি সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, আরব-আমিরাত ও কুয়েতের মরুভূমিতে দেখতে পাওয়া যায়।


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সবাইকে সতর্ক করে হর্নবিল

সাফারি পার্কের বার্ড এভিয়েরিতে গিয়ে দেখা যাবে মালয়েশিয়ার জাতীয় পাখি হর্নবিল। দৃষ্টিনন্দন এ পাখিকে দূর থেকে সহজেই চেনা যায়। সহজে পোষ মানে এ পাখি। পাখিটি কেবল নিজের প্রাণ বাঁচাতেই নয়, স্বজাতিদের শিকারির হাত থেকে রক্ষা করতেও সংকেত দেয়। ভয় পেলে এরা বিভিন্ন পাখির স্বর নকল করে সংকেত দেয় শিকারি প্রাণী আসছে। ঘর ছেড়ে বাইরে অথবা নিরাপদ স্থানে যেতে হবে।

শিকারি পাখিকে বিভ্রান্ত করতে এরা বিভিন্ন পাখির ডাক নকল করে। তখন শিকারি পাখি মনে করে আশপাশে ওর চেয়ে বড় কোনো পাখি রয়েছে। ফলে পালিয়ে যাওয়ার মতো সময় পায় হর্নবিল। এ পাখি বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি হিসেবে পরিচিত। সাফারি পার্কে এখন এক ডজন হর্নবিল ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর শেডের ভিতরে খনন করা হয়েছে লেক। লেকের পানিতে রয়েছে মাছ। লেকের পাড়ে বুনন করা হয়েছে চিকন সবুজ ঘাস। সরেজমিন দেখা যায়, দুটি হর্নবিল লেকের পানির ভিতর থেকে জ্যান্ত মাছ ধরে খাচ্ছে। কয়েকটি লেকের পাড়ের সবুজ ঘাস খাচ্ছে। এ ছাড়া পার্ক কর্তৃপক্ষ, কচি পাতা কপি, শসা ও পাকা কলা খাদ্য হিসেবে দিয়ে থাকে। পরিচর্যাকারী আবদুল বাতেন বলেন, হর্নবিল দেখতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ দর্শনার্থী ভিড় করেন। পাখিটি উচ্চতায় আড়াই থেকে তিন ফুট হয়ে থাকে। এর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ১৫ বছর। একসঙ্গে ৮ থেকে ১০টি ডিম পাড়ে। ১০ সপ্তাহ তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। হর্নবিলের বৈশিষ্ট্য অন্য পরিযায়ী পাখির চেয়ে একেবারেই আলাদা। এক গবেষণা থেকে জানা যায়, হর্নবিল শিকারি পাখি। কিন্তু শিকারি বাজপাখি এলে এরা কখনোই বাজপাখির ডাক নকল করে না। কেননা হর্নবিলের তুলনায় বাজপাখি ৭৫ গুণ বড় হওয়ায় ৬০০ গ্রাম ওজনের পাখির পক্ষে বাজপাখির ডাক নকল করা কঠিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর