শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গাড়ি বিচিত্রা

রণক ইকরাম

গাড়ি বিচিত্রা

মানুষের বিলাসিতার সবচেয়ে বড় পরিচয় মেলে সম্ভবত বাড়ি আর গাড়ির ক্ষেত্রে। আর সে কারণেই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার জন্য প্রতি বছরই বিশ্বের খ্যাতনামা গাড়ি নির্মাতারা নতুন নতুন চমক নিয়ে হাজির হন। কদিন পরপরই হাতছাড়া হয়ে যায় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। বিচিত্র সব গাড়ি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। তালিকায় ফোর্বস, বিজনেস ইনসাইডার এবং সুপার কারস ওয়েবসাইটগুলো অনুসরণ করা হয়েছে।

 

সবচেয়ে দামি গাড়ি ল্যাম্বোরগিনি ভেনেনো

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বা বিলাসবহুল গাড়িটির দাম শুনলেই চোখ কপালে উঠবে।

দাম মাত্র ৪৫ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। এমন দামের ল্যাম্বোরগিনি ভেনেনো গাড়িটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি।

কিছুদিন আগে এটি দুবাই পুলিশের গাড়ি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই গাড়িটির ঘণ্টায় ০ থেকে ৬০ মাইল গতি পেতে সময় লাগে মাত্র ২.৮ সেকেন্ড। আর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২২১ মাইল।

ল্যাম্বোরগিনি গাড়িটির বডি সম্পূর্ণ কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যার দরুন এটি হয়েছে অনেক হালকা গড়নের। এটি ইতালিয়ান একটি কোম্পানি, যারা শুরু থেকে সুপার কার তৈরি করে আসছে। 

ল্যাম্বোরগিনি ভেনেনোর ইঞ্জিন ৭৫০ হর্স পাওয়ার, ৬.৫ লিটার, সঙ্গে ১২টি সিলিন্ডার। যদি আপনি গাড়িটি কিনতে চান তবে আপনাকে অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়াতে হবে। কেননা প্রতি বছর মাত্র তিনটি গাড়ি বাজারে ছাড়া হয়। আর সেই তিনটি গাড়ির জন্য আগে থেকেই অর্ডার নিয়ে রাখে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

 

ফোর্বসের দৃষ্টিতে সেরা গাড়িগুলো

 

লাইকান হাইপার স্পোর্ট

‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিনেমার ৭ম সিকুয়েল ‘ফিউরিয়াস ৭’-এ অল্প সময়ের জন্য দেখতে পাওয়া লাল-কালো গাড়িটি, যা তিনটি আকাশচুম্বী দালান ভেঙে শেষ পর্যন্ত মাটি চুম্বন করেছে, সেই গাড়িটিই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়ির তালিকায় থাকা লাইকান হাইওয়ে স্পোর্ট।

৭৫০ হর্স পাওয়ারের একটি ৬-টুইন টার্বো ইঞ্জিনসমৃদ্ধ এ গাড়িটির দাম ৩৪ লাখ ডলার বা ২৭ কোটি টাকা। দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ডব্লিউ মোটরস প্রতি বছর সাতটি করে গাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে। মাত্র ২.৮ সেকেন্ডে ০ থেকে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম গাড়িটি। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫৪ মাইল।

বুগাটি ভেয়রন সুপার স্পোর্টস

এটির সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব এর গতি। মাত্র আড়াই সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতিবেগ তুলতে সক্ষম। এ গাড়ির দাম ২৪ লাখ ডলার বা ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।

অ্যাস্টন মার্টিন ওয়ান-৭৭ 

৭৫০ হর্স পাওয়ারের অ্যাস্টন মার্টিন ওয়ান-৭৭ মাত্র সাড়ে তিন সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ মাইল। দাম ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার বা ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

 

পাগানি জোন্ডা সিংক রোডস্টার

এটিকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় গাড়ি মানা হয়। এটি মাত্র সাড়ে তিন সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১৭ মাইল। এ গাড়ির দাম ১৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

জেনোভো এসটি-১

মাত্র ২.৯ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম এই গাড়িটির দাম  ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ২৫ কোটি টাকা। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৩৩ মাইল। বছরে এসটি-১ মডেলের মাত্র ১৫টি গাড়ি তৈরি করা হয়।

ল্যাম্বোরগিনি রেভেন্টন

এই গাড়িটি মাত্র ৩.৩ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১১ মাইল। প্রতি বছর মাত্র ২০টি ল্যাম্বোরগিনি রেভেন্টন গাড়ি বাজারে আসে।

কোয়েনিগসেগ আগেরা আর

মাত্র ২.৮ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৬০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম এই গাড়িটি কিনতে আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ১৬ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো! এই সুপার কার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৭০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম।

 

ওবামার গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সে হিসেবে অবশ্যই বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। সেই মানুষটি যে গাড়ি ব্যবহার করেন তার নাম দ্য বিস্ট। দ্য বিস্টকে শুধু গাড়ি হিসেবে ধরলে ভুল হবে। নিরাপত্তার জন্য কী নেই এতে। এমনিতেই নিরাপত্তা ও যোগাযোগ-ব্যবস্থা অত্যাধুনিক হওয়ার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত গাড়ি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় বিস্টকে।

কালো রঙের লিমুজিন বিস্টকে নির্মাণ করেছে বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি জেনারেল মোটরস। সবাই এটিকে ‘দ্য বিস্ট’ বলে ডাকলেও ‘ক্যাডিলাক ওয়ান’ বা ‘লিমো ওয়ান’ বলেও ডাকনাম আছে এটির।

সম্ভবত ‘দ্য বিস্ট’-ই বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ গাড়ি। গাড়িটির বডি স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম এবং সিরামিক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ওয়ার ট্যাংকের মতো এটির দরজায় রয়েছে পুরু আট ইঞ্চি স্টিল প্লেটের বর্ম, যা ভিতরের আরোহীকে রকেট ও আইইডি হামলা থেকে বাঁচাবে।

বিস্টের জানালার কাচও একেবারে পাঁচ ইঞ্চি পুরু। যে কোনো অস্ত্রের জন্য জানালা ভেদ করা অসম্ভব। স্টিল আর এত ভারী কাচ মিলিয়ে বিস্টের একটি দরজার ওজন বোয়িং ৭৫৭ বিমানের দরজার সমানই!

গাড়িটির ড্রাইভারের পাশের আসনের জানালা ছাড়া আর কোনো জানালাই খোলা যায় না। ফলে ভিতরে থাকা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রাসায়নিক ও জৈবিক হামলা থেকেও অক্ষত থাকবেন। বোমা বা গুলি করে গাড়ির তেলের ট্যাংক ফুটো করে দেওয়া হবে সে উপায়ও নেই। কারণ গাড়ির তেলের ট্যাংকও আর্মার দিয়ে মোড়ানো। এ ছাড়া বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে একটি ফোমের জ্যাকেট দিয়ে ফুয়েল ট্যাংককে মুড়ে রাখা হয়েছে। যাতে আগুন লাগলেও তেলের ট্যাংক অক্ষত থাকে। সঙ্গে আছে গাড়ির নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।

বিস্টের চাকা কোনোভাবেই ফুটো করা যাবে না। দ্য বিস্টে রয়েছে টিয়ার গ্যাস। আরও ভয়ঙ্কর শত্রুর জন্য রয়েছে শটগান। প্রেসিডেন্টের যে কোনো অসুস্থতার জন্য গাড়িতেই রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, রক্তের ব্যবস্থা। গাড়িতে বসেই প্রেসিডেন্ট যোগাযোগ করতে পারবেন পৃথিবীর যে কারও সঙ্গে। তবে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতি তুলতে বিস্ট অপারগ। আর প্রতি এক কিলোমিটার যেতে খরচ হয় তিন লিটারের মতো তেল।

 

স্বর্ণে মোড়ানো

 বিলাসবহুল গাড়ি

২০১৪ সালে দুবাইয়ে একটি গাড়ি বিক্রি হয়। সেটিকে বিশ্বের অন্যতম বিলাসী গাড়ি বলে মানা হয়। ২ মিলিয়ন ডলারের এই গাড়িটি আগাগোড়া স্বর্ণে মোড়ানো। দস্পেইস এইজ প্লাজ্জোদ নামের এই গাড়িটি তৈরি করেছে জাপানের মারচি কোম্পানি । মরুভূমি ও তুষারের ওপর দিয়ে অনায়াসে চলতে সক্ষম এ গাড়িটি চলার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার হতে পারে। এতে রয়েছে একটি ফায়ার প্লেস, ৪০ ইঞ্চি টেলিভিশনসহ মাস্টার বেডরুম। কিন্তু এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে এর লাউঞ্জ। বোতাম চাপার সঙ্গে সঙ্গে ৪০ ফুট গাড়িটির ছাদ পরিণত হয় চমৎকার এক ককটেইল বার-এ। যেখানে আন্ডার ফ্লোর হিটিং থেকে শুরু করে মার্বেল আলোর চোখ ধাঁধানো ঝলকানি অন্য এক জগতের সৃষ্টি করে।

 

মুকেশ আম্বানির

নিরাপদ গাড়ি

বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় অন্যতম শীর্ষ নাম মুকেশ আম্বানি। মুকেশের সম্পত্তি ও বিলাসবহুল জীবনযাপন ঘিরে আলোচনার শেষ নেই। ওবামার গাড়ি দ্য বিস্ট এর মতোই নিরাপদ মার্সিডিজ বেঞ্জ এস৬০০ লেভেল ৯ গাড়ি কিনছেন মুকেশ। শক্তিশালী গ্রেনেড হামলাতেও অক্ষত থাকবেন গাড়ির যাত্রী। মুকেশ আম্বানির জন্য মার্সিডিজ বেঞ্জ এস৬০০ লেভেল ৯ এর ২০১৫ এর হাল মডেলটিই কিনছে রিলায়েন্স। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই বিলাসবহুল গাড়িটি আসছে জার্মানি থেকে। আম্বানির জন্য কেনা মার্সিডিজ বেঞ্জ এস৬০০ লেভেল ৯ এর ২০১৫ এর মডেলটির দাম পড়েছে ১১ কোটি টাকা। নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে দাম বেড়ে গেছে। মার্সিডিজের এই মডেলটি ভারতে প্রথম কিনছেন মুকেশ আম্বানিই।

ওয়ার্ল্ড কার অফদ্য ইয়ার ২০১৫

মার্সিডিজ বেঞ্জ

২০টি দেশের সাংবাদিকের ভোটে প্রতি বছর সেরা গাড়ি নির্বাচন করা হয়। দেওয়া হয় ওয়ার্ল্ড কার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার। আর ২০১৫ সালে এই পুরস্কারটি জিতেছে মার্সিডিজ বেঞ্জ। তাদের ‘সি’ ক্লাস মডেলটি এই ‘সেরার সেরা’ শিরোপাটি জয়লাভ করে। নিউইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল অটো শোর মঞ্চে তাদের এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পাশাপাশি তাদের আরেকটি মডেল সেরা বিলাসবহুল গাড়ি নির্বাচিত হয়।

ফোক্সওয়াগন, ফোর্ড, অডির মতো বহুজাতিক সংস্থাকে পেছনে ফেলে তারা এ সেরার তকমা পায়। পয়েন্টের হিসাবে মার্সিডিজ সি ক্লাস পেয়েছে ৮০৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে ফোর্ডের গাড়িটি পেয়েছে ৭৫৩ পয়েন্ট। ২০টি দেশের সাংবাদিক এই নির্বাচন করে থাকেন।

 

সবচেয়ে ছোট গাড়ি

উইন্ড আপ

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গাড়ি নিয়ে নানা সময় নানা খবর বের হয়। তবে এযাবৎকালে সবচেয়ে আলোচিত ছোট গাড়িটির নাম উইন্ড আপ। এ গাড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গাড়ি হিসেবে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে।

লোকটির নাম পেরিওয়াট কিংস। ৪৭ বছর বয়সী মানুষটির বসবাস ব্রিটেনের বাকিংহাম শায়ারে। তার বিচিত্র আবিষ্কারটির আগ পর্যন্ত তাকে কেউ চিনত না। কিন্তু সেই মানুষটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গাড়ি বানিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। কিংস তার গাড়িটির নাম রেখেছেন উইন্ড আপ। গাড়িটির উচ্চতা ৪১ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ৫১ আর প্রস্থ ২৬ ইঞ্চি।

শুধু বিশ্ব রেকর্ডই নয়, গাড়িটি রাস্তায় চলার অনুমতিও পেয়েছে। পেরি ওয়াটকিংস ছোট এই গাড়ির বাইরের অংশের জন্য পয়সা দিয়ে চালানো বাচ্চাদের খেলনা গাড়ির মডেল অনুকরণ করেছেন। গাড়ির চাকা হিসেবে লাগানো হয় হোন্ডা মানকি মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত চাকা। গাড়িটির জন্য পেরি ব্যবহার করেছেন ১৫০ সিসি ইঞ্জিন। ক্ষুদ্র এই গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩৭ মাইল বেগে চলতে পারে। অন্য সব গাড়ির মতো এই গাড়িতে রয়েছে আয়না, হেডলাইট, স্টিবেল্টের মতো আরও প্রয়োজনীয় জিনিস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর