রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
সবচেয়ে দামি

কোটি ডলারের বিলাসিতা

তানভীর আহমেদ

বিলাসিতার শেষ নেই। যার যত টাকা আছে সে সেভাবেই টাকা উড়ায়। কেউ একবেলা খেয়ে বিল তোলেন ৪০ লাখ টাকা। কেউ সুগন্ধী মাখান কোটি টাকার। কারও শখ, পোষা কুকুরের গলায় পরাবেন শত কোটি টাকার হীরার হার। কেউ কেউ শরীর ম্যাসাজ করান হীরা দিয়ে। কোটি টাকা পার্লারে বিল মিটিয়ে বাড়ি ফেরেন খালি হাতে...

 

 

এক গ্লাস বাতাস ৬০ হাজার টাকা

পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হয় বিশ্বব্যাপী। তবু প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সম্প্রতি চীন পড়েছে তেমনই এক পরিবেশ বিপর্যয়ে। যে কারণে বাতাস হয়ে উঠেছে বিষাক্ত। আর এই ফাঁকেই একদল ব্যবসায়ী খুলে বসেছেন বাতাস বিক্রির ব্যবসা। সম্প্রতি কানাডার একটি কোম্পানি রকি পাহাড়ের বাতাস বোতলে ভর্তি করে রপ্তানি করেছে চীনে। বাজার কিন্তু মন্দ নয়। মাত্র চার দিনের মধ্যে বাতাসভর্তি সব বোতল বিক্রি হয়ে যায় চীনের বাজারে। চীনের বেইজিং শহরের বাতাসের এ করুণ দশা সামলাতে বাতাস কেনা ছাড়া কীইবা করার আছে! চীনের বাজারে কানাডার রকি পাহাড়ের বাতাস প্রতি বোতল বিক্রি হয় প্রায় দশ ডলারে। দেশটির বাজারে এক বোতল পানির তুলনায় এই এক বোতল বাতাসের দাম প্রায় পঞ্চাশ গুণ বেশি। এ বোতলজাত বাতাসের অধিকাংশ ক্রেতাই হলো চীনের বড় শহরগুলোর বাসিন্দা। কানাডাই যে এই প্রথম চীনের বাজারে বোতলজাত বাতাস বিক্রি করেছে তা কিন্তু নয়। এর আগে বেইজিংভিত্তিক শিল্পী লিয়াং কেগ্যাঙ্গ এক গ্লাস বাতাস বিক্রি করেছিলেন ৫১২ পাউন্ডে। আর ওই বাতাস তিনি ভর্তি করে এনেছিলেন দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে একটি ব্যবসায়িক কাজে যাওয়ার সময়।

তবে কানাডার এই ব্যবসা থেকে পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্য। সেখানকার এক ব্যবসায়ী ‘বিশুদ্ধ বাতাস’ বিক্রি করে অল্প দিনেই কামিয়েছেন হাজার হাজার পাউন্ড।

তার এই বাতাসের ক্রেতা চীনের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। লিও ডি ওয়াটস (২৭) নামের ওই ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের সমারসেট, ওয়েলস ও ডরসেটের গ্রামীণ এলাকা থেকে বাতাস সংগ্রহ করেন। প্রতিটি এলাকার বাতাস গুণমানে আলাদা। এরপর তা বোতলে ভরে তিনি পাঠিয়ে দেন চীনের সাংহাই ও বেইজিংয়ের মতো দূষিত শহরগুলোতে। প্রতি বোতল বাতাস বিক্রি হয় ৮০ পাউন্ড করে, বাংলাদেশি টাকায় যা ৯ হাজারের বেশি।

 

চাঁদ-সূর্য কিংবা মঙ্গলগ্রহে জমি ক্রয়

চাঁদে জমি বিক্রির ঘটনা মোটেই নতুন নয়। এরই মধ্যে দেদার যে যার মতো করে চাঁদে জমি বিক্রি করে চলেছেন। আমেরিকান সংবাদপত্র ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ বলছে, গার্ডনারভিলের ব্যবসায়ী ডেনিস হোপ ইতিমধ্যে চাঁদ, মঙ্গল এবং সৌরজগতের অন্য কয়েকটি গ্রহের মিলিয়ন মিলিয়ন একর জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি সেই ১৯৬৮ সাল থেকে চাঁদের জায়গা বিক্রি করে আসছেন। চাঁদে ১ একর জমির মূল্য পড়ছে মাত্র ১৯.৯৯ ডলার আর মঙ্গলের ক্ষেত্রে সেটা ২২.৪৯ ডলার। সঙ্গে অবশ্য ট্যাক্স, শিপিং, হ্যান্ডলিং খরচও আছে। হোপ দাবি করছেন, তার প্রতিষ্ঠান ‘লুনার অ্যাম্বাসি করপোরেশন’-এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনি চাঁদের ৭.৫ অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন। চাঁদের পর মানুষের নজরে পড়েছে সূর্য। এক স্প্যানিশ মহিলা ই-কমার্স সাইটে সূর্যে জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে হতম্ভব করে দিয়েছেন। স্পেনের অধিবাসী ৫৪ বছর বয়সী মারিয়া। ২০১০ সাল থেকেই তিনি দাবি করে আসছেন সূর্যের একটি নির্দিষ্ট জায়গা নাকি তার। সম্প্রতি ইবে নামক এক ই-কমার্স সাইটে তিনি সূর্যের সেই জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। তার চেয়ে কম যায়নি  মহাকাশ গবেষণায় বৃত্তিদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘উইংগুর। তারা মঙ্গল গ্রহে প্লট বিক্রি করছে। ‘উইংগু তাদের ওয়েবসাইটে মঙ্গল গ্রহে জমি কেনার সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করে রেখেছে। মঙ্গলে মহাশূন্য থেকে যে বৃত্তাকার খাদগুলো দেখা যায়, সেগুলোই শুধু আপনি কিনতে পারেন। এ জন্য গুনতে হবে মাত্র ৫ মার্কিন ডলার। মূল্য পরিশোধের পর প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণাদির কাগজপত্র আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।

 

বিলাসী বাড়ি গাড়ি শাড়ি

বাড়ি

ভারতের সেরা ধনী তিনি। নাম মুকেশ আম্বানি। এশিয়ার সেরা ধনী ব্যক্তি তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ির একটি। অতিকায় এ বাসভবনটিকে মুকেশ প্রাসাদ বলা যায়। বাড়িটির নাম আন্তিলা। ‘আন্তিলা’ ভবনটি মোট চার লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায়। আম্বানি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। এ ছয়জন সদস্যের জন্য গোটা বাড়ি বানানো হয়েছে। আন্তিলায় ফ্লোর সংখ্যা ২৭। ২০০২ সালে মুকেশ আম্বানি মুম্বাই নগরীতে ৪৯ হাজার বর্গফুট জায়গা কিনে নেন। সাত বছরের নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। বাড়িটির উচ্চতা ১৭৩.১২ মিটার, যা একটি সাধারণ ৬০ তলা দালানের উচ্চতার সমান। প্রথম ৬ তলা নির্ধারণ করা হয়েছে কার পার্কিং স্পেস হিসেবে। আমদানি করা ১৬৮টি লাক্সারি গাড়ি ব্যবহার হয় শুধু পরিবারের প্রয়োজনে। সপ্তম তলা রাখা হয়েছে গাড়ির সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ হিসেবে। অষ্টম তলায় রয়েছে একটি বিশাল বিনোদন কেন্দ্র, এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৫০ জনের আসনক্ষমতা নিয়ে একটি মিনি থিয়েটার। নবম তলা রিফিউজ ফ্লোর, জরুরি প্রয়োজনে উদ্ধার কাজের জন্য এটি ব্যবহার হবে। তার উপরের দুটি ফ্লোর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। একটিতে রয়েছে সুইমিং পুলসহ খেলাধুলার সব সরঞ্জাম। অপরটিতে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সব উপকরণ নিয়ে তৈরি সুবিশাল হেলথ জিম। তিনটি ফ্লোরজুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম ঝুলন্ত বাগান। নানা জাতের গাছ ও ফুলে শোভিত হয়েছে এই সুবিশাল বাগান। দুটি ফ্লোর রাখা হয়েছে আম্বানি পরিবারের আত্মীয়স্বজন তথা অতিথিশালা হিসেবে। বাড়ির উপরের দিকে চারটি ফ্লোর, যেখান থেকে আরব সাগর ও আকাশের মিলনরেখার অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, নির্ধারিত হয়েছে মুকেশ, তার স্ত্রী নিতা, তিন সন্তান এবং মুকেশের মা কোকিয়াবেনের জন্য। বাড়ির শীর্ষে দুটি ফ্লোরের মধ্যে একটি পরিবারের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং তার পরেরটি হ্যালিপেডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হবে। বাড়ির শীর্ষে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি হ্যালিপেড। ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গৃহপ্রবেশ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাড়িটিতে বসবাস করা শুরু করেছে মুকেশ আম্বানি পরিবার। এই বাড়ি ও বাড়ির মানুষজনের দেখাশোনার জন্য রয়েছে ৬০০ কর্মী।

গাড়ি

বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি বাজারে আনল ল্যাম্বরগিনি। ভেনেনো রোডস্টার নামের এ গাড়ি ঘণ্টায় ২২১ মাইল গতিতে ছুটতে পারে আর এর দাম ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার। মাত্র তিন সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে ভেনেনো রোডস্টার গাড়িটি।

শাড়ি

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি শাড়ি চেন্নাই সিল্কের তৈরি। এই শাড়িকে ২০০৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামি শাড়ির স্বীকৃতি দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। সোনা, হীরা, প্লাটিনাম, রুপা কী নেই এতে। এর দাম ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৬২৭ রুপি! অর্থাৎ, প্রায় ৫৭ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা।

 

শখের তোলা কোটি ডলার

টাকা থাকলে যা খুশি তাই করা যায়। আর সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি সফটওয়্যার নির্মাতা চার্লস সিমোনি। মাইক্রোসফটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সিমোনি অবকাশ যাপনের জন্য পৃথিবীর বাইরে থেকে ঘুরে আসাটাকেই শ্রেয় মনে করলেন। ছুটি কাটাতে মহাকাশ ভ্রমণে তার ব্যয় ধরা হয় ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু এ টাকা তার জন্য খুব বেশি কিছু ছিল না। অ্যাডভেঞ্জার ও উত্তেজনাপ্রিয় এই মানুষটি ছুটি কাটাতে মহাকাশ বেছে নিয়েছিলেন এ কারণেই। পৃথিবীর বাইরে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে একনজর দেখা ও তারার মেলা দেখার ইচ্ছা তার রয়েছে। আর সেটা পূরণ করতেই এই মহাকাশ যাত্রার প্রস্তুতি। ভ্রমণের জন্য মহাকাশ যে সহস্র কোটিপতির পছন্দের জায়গা হয়ে উঠছে সেটাই প্রমাণ মিলল এখান থেকে। বিভিন্ন ভ্রমণ কোম্পানি সেই থেকে বিজ্ঞাপন করে এলো মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে। ২০০১ সালে রাশিয়ান নভোচারীদের পর শুধু বেড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক স্পেস টার্মিনালে কেউ যায়নি। চার্লস সিমোনি সেই রেকর্ড ভেঙে দিতে চান। মাইক্রোসফটের ওয়ার্ড ও এক্সেলের দেখভাল করা এই সফটওয়্যার নির্মাতা মহাকাশ ভ্রমণের জন্য সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকার চুক্তিতে যাওয়ার পর থেকে একজন দক্ষ নভোচারী হওয়ার জন্য অনুশীলন করেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশ থেকে ঘুরে আসেন।

এ তো গেল ভ্রমণের জন্য ব্যয়। খরচ করার জন্য শোবার বিছানাও হতে পারে লাখ লাখ ডলারের। বাংলাদেশি টাকায় কোটি টাকারও বেশি। তেমনই একটি বিছানা ‘ম্যাগনেটিক ফ্লোটিং বেড’। এটি মূলত চুম্বকের তৈরি একটি বিছানা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটি বাতাসে ভাসছে। ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই বিছানাটি চাইলে ডানে বামে ইচ্ছা মতো সরিয়ে নিতে পারবেন। রিমোটের চাপেই এটি জায়গা বদল করতে পারবে। মাটি থেকে দেড় ফুট উঁচুতে এটি দিব্যি ভেসে থাকতে পারবে। জাদুর পাটির মতো এটি ভেসে থাকত বলে এটিকে ভাসমান বিছানা বলেও ডাকা হয়। এই বিছানায় তিনজন অনায়াসে শুয়ে থাকতে পারবেন। কেউ চাইলে এই বিছানায় ভেসে ভেসে সরে আসতে পারবেন কয়েক ফুট দূরত্ব পর্যন্ত। বিলাসিতার এটাই শেষ নয়। অনেকে শখের বশে সংগ্রহ করেন পাখির পালক। তেমনই একটি পাখির পালক হুয়া পাখির। এই পাখির একটি মাত্র পালকের দাম ১০ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি। বিলুপ্তপ্রায় এই পাখির পালক খুবই দুর্লভ। এই পাখির পালক দিয়ে প্রাচীনকালে রাজারা রাজকীয় দলিল স্বাক্ষরের কাজ করে থাকতেন।

 

প্রেম বিলাসে এক সন্ধ্যায় খরচ ৪০ কোটি টাকা

প্রেম সর্বজনীন। প্রেমের জন্য যুগে যুগে মানুষ কী না করেছে। কেউ ঘর ছেড়েছে। কেউ ছেড়েছে রাজত্ব। প্রেমে নাকি মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। তাই বলে পছন্দের মানুষটির সঙ্গে প্রেমবিলাসে এক সন্ধ্যা সময় কাটাতে যদি খরচ হয় ৪০ কোটি টাকার বেশি, তাহলে টাকা একটু বেশি হয়ে গেল মনে হচ্ছে। আমাদের কাছে একটু বেশি শোনালেও হলিউডের তুমুল জনপ্রিয় সুন্দরী মডেল ও অভিনেত্রী কিম কার্দেশিয়ানের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে ৪০ কোটি টাকা ঢেলে দিতে একটুও কার্পণ্য বোধ করেননি রিচার্ড লাগনার। অস্ট্রেলিয়ান এই বিলিয়নিয়ারের আজব বাতিক রয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায় একজন সেলিব্রেটির সঙ্গে একটু নাস্তা করা, নাচ-গান না করলে তার চলেই না। কিম আমন্ত্রণ পাওয়ার পরই জানিয়ে দেন এ ধরনের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাকে কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা দিতে হবে, নইলে তার আশা ছাড়তে হবে। এ কথা শুনে পিছিয়ে থাকার লোক নন রিচার্ড। সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। কিম কার্দেশিয়ান তার  অনুষ্ঠানে এলেন। এক সন্ধ্যা প্রেমবিলাসের জন্য ৪০ কোটি টাকা খরচ করেও তাই রিচার্ড বললেন, নাচ হলো না। সময়টা বিরক্তিকর কেটেছে।

 

১ হাজার ৬০০ হীরা খোঁচিত কুকুরের গলার হার

টাকা হলে মানুষ কি না করে। নিজের জন্য তো করেই, নিজের পছন্দের কুকুরের জন্যও করে। তেমনই সৌভাগ্যবান কুকুরদের জন্য রয়েছে গলার হার। এই হারের দাম ৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ধরনের গলার হার শুধু অর্ডার পেলেই বানিয়ে দেবে ‘আমর ডগ কলার’ প্রতিষ্ঠানটি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কুকুরের গলার হার বলেও স্বীকৃত। একমাত্র অভিজাত বংশের কুকুরের জন্যই এটি তৈরি করা সম্ভব। আপনার যত টাকাই থাকুক না কেন যেনতেন কুকুরের জন্য আপনি এটি বানাতে পারবেন না। এই গলার হারে ব্যবহার করা হয় প্লাটিনিয়াম, আঠারো ক্যারেটের ডায়মন্ড ও সাদা সোনা। কুমিরের চামড়া দিয়ে এটির বেল্ট বানানো হয়। একটি কুকুরের গলার হার বানাতে অনন্ত ১ হাজার ৬০০ টুকরো হীরা লাগানো হয় এটিতে।

 

কোটি ডলারের পেইন্টিং

৮১ বছর বয়সী বিশ্বের সবচেয়ে দামি শিল্পী থাকেন জার্মানির কোলোন শহরে। টানা দুই বছর ধরে তার শিল্পকর্ম বিক্রি হয়েছে রেকর্ড দামে। তার উল্লেখযোগ্য শিল্প কর্মগুলোর তালিকায় রয়েছে ক্যারেস (মোমবাতি), আটলাস, সিরিজ-আবস্ট্রাকটেস বিল্ড, সিরিজ- বাডের-মাইনহোফ ইত্যাদি। ১৯৯৪ সালে আঁকা বিশাল তেলচিত্রটি বিক্রি হয়েছিল ৩৪ মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি ৪০ লাখ ডলারে। ক্ল্যাপটন ২০০১ সালে রিশটারের এই ছবিসহ আরও দুটি ছবি একসঙ্গে কিনেছিলেন ২৬ লাখ ইউরোয়। তার আগে ২০১০ সালে মার্কিন শিল্পী জেস্পার  জোনসের ষাটের দশকে আঁকা তেলচিত্র ‘ফ্ল্যাগ’ (পতাকা) বিক্রি হয়েছিল ২২ মিলিয়ন বা ২ কোটি বিশ লাখ ইউরোয়। নিউইয়র্কের ‘মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টস-এ তার স্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে।

 

হীরা দিয়ে শরীর ম্যাসাজ

শরীর ম্যাসাজ করার দেশে দেশে নানা পদ্ধতি রয়েছে। রয়েছে বিচিত্র সব খরুচে হাত। তেমনই একটি খরচ হীরা দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করা। বিলাসিতার চূড়ান্ত ধরা হয় এটিকে। কারণ হীরা আপনি সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন না। পার্লারেই রেখে আসতে হবে। এ ধরনের শরীর ম্যাসাজে হীরা বিছিয়ে তারপর আপনার শরীরের মাংসপেশিগুলো ম্যাসাজ করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে এ ধরনের ম্যাসাজ চালু হয়। তারপর থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। দেশে দেশে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করলে হীরার রীতিমতো সংকট দেখা দেয়। একমাত্র শীর্ষ ধনীরাই হীরার ম্যাসাজ নিতে পারেন এমন একটি অঙ্কের বিল চেয়ে বসেন পার্লার কর্তৃপক্ষ। ১.৫ ক্যারেট হীরার প্রয়োজন হয় শরীর ম্যাসাজ করার জন্য। ম্যাসাজের সময় সারা শরীর হীরা দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়।

 

ব্লাক ডায়মন্ড মোবাইল

দামি মোবাইলের কথা উঠলে বেশ কয়েকটি মোবাইলের নাম উঠে আসে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোবাইল ফোনটি তৈরি করেছে সুইস ইন্টারনেট ফোন কোম্পানি ভিআইপিএন। দশমিক ২৫ ক্যারেটের ডায়মন্ডের কন্ট্রোল বাটনসহ ‘দি ব্লাক ডায়মন্ড’ নামের এ মোবাইলটির দাম ২ লাখ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি টাকায় ২  কোটি ৫৬ লাখ। এই মোবাইল সেটটির ডিজাইন করেছেন বিখ্যাত সেট ডিজাইনার জ্যারেন গুহ। সেটটির বডি তৈরি করা হয়েছে মূল্যবান টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে। এতে সেনসিটিভ টাচ কি-প্যাড, ক্যামেরা ও মোমোরি কার্ড স্লট, মিরর ফিনিস সেল প্রভৃতি বিদ্যমান। এই মোবাইল ফোন সেটটির শুধু কন্ট্রোল বাটনেই নয়, আরও অনেক স্থানে ডায়মন্ডের প্রলেপ রয়েছে।

 

হাজার ডলারের টিকিট

বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামি টিকিটের দাম উঠেছে ৯৯০ ডলার। আর টিকিটটি খুব পুরনো দিনেরও নয়। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ব্রাজিল বিশ্বকাপের টিকিটের দাম ঘোষণা করে। এতে সবচেয়ে দামি টিকিটের দাম রাখা হয়েছে ৯৯০ ডলার। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবলের এই দাম দামি টিকিটের কাতারে নাম লিখিয়েছে। ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকিটের দাম আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য রাখা হয়েছে ৪৪০ থেকে ৯৯০ ডলার। বোদ্ধারা বলেছেন, টিকিট কালোবাজারিতে আরও অনেক গুণ বেশি দামে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে কিন্তু অফিশিয়াল দামের সঙ্গে সে দামের তুলনায় আনা হয় না। কালোবাজারিতে এই টিকিটের দাম গোপন রেখেছে কুচক্রী মহল।

 

দামি শহর আরব আমিরাত

বিশ্বের সবচেয়ে দামি শহর আরব আমিরাত। ২০১৪ সালের মধ্যে শহরটির নতুন করে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। লন্ডনের হাইড পার্কের চেয়েও অনেক বড় একটি পার্ক নির্মাণের ঘোষণা আসার পরই এটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সেরা শহর। আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাশ যাপন ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে এই শহরকে। মধ্যপ্রাচ্যের এই নতুন শহর বিশ্বের নতুন বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে ধীরে ধীরে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত সবসময়ই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত। বুর্জ আল খলিফা নামে বিশ্বের দীর্ঘতম ভবনটি গড়ে উঠেছে এখানে। তেলনির্ভর অর্থনীতির পরিবর্তে সিঙ্গাপুরের মতো বাণিজ্যকেন্দ্র ও বিশ্বখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দুবাই, আবুধাবির খ্যাতি এনে দিয়েছে।

 

 

অবিশ্বাস্য খরচ

৫০০ কোটি টাকার বিয়ে

সামাজিক উৎসবের মধ্যে একটি হলো বিয়ে। বিয়ের উৎসব আয়োজনে কম বেশি সবাই অতিথি আপ্যায়ন, আলোকসজ্জা ও আনুষঙ্গিক খরচ করে থাকেন। তবে সেই খরচের পরিমাণ যদি হয় ৫০০ কোটি টাকার বেশি তবে নিশ্চয়ই বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে এমনই বিশাল খরচ করে ভারতীয় ধনকুবের লক্ষ্মী মিত্তাল তার মেয়ের বিয়েতে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ভারতের স্টিল ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তাল পরিবার। এ পরিবারের বিয়ে মানেই জাঁকজমক আর বর্ণাঢ্য আয়োজনের সমাহার। ২০০৪ সালে লক্ষ্মী মিত্তালের কন্যা ভানিশার বিয়ের সময় প্যারিসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন কাইলি মিনোগ। রাতে ভাড়া করা হয় পুরো আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার থেকে আতশবাজি ছোড়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেন তিনি। এ ছাড়া মাত্র ১ হাজার অতিথির খাবারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সতেজ খাদ্যপণ্য নিজস্ব বিমানে সেখানে পৌঁছানো হয়। শুধু খাবারই ছিল কয়েকশ কোটি টাকার। অনুষ্ঠানের জন্য পুরো ফ্রান্সের বিখ্যাত ভার্সেলিস প্রাসাদটি ভাড়া নেন তিনি। বিয়ের জন্য সোনালি রং বাছাই করা কারণে পুরো প্রাসাদ ও আসবাব মুড়ে দেওয়া হয় সোনালি রঙে। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার হয় খাঁটি সোনা।

এক বেলা খাবারেই ৪০ লাখ

মধ্যবিত্ত জীবনে খাবার খেতে গিয়ে আগপিছ কত কিছু ভেবে নিতে হয়। তারচেয়েও যাদের টাকা টান তারা একটু দামি কিছু খেতে চাইলে দশবার মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে তারপর রেস্টুরেন্টে খেতে বসে। কিন্তু একটু দামি হোটেলে যারা খাবার খান তাদের সে চিন্তা না করলেও চলে যদি ব্যাংকে সহস্র কোটি টাকা থাকে। রাশিয়ান ব্যবসায়ী সহস্র কোটিপতি রোমান আব্রাহিমভিচ রেস্টুরেন্টে খেতে বসে কী চিন্তা করেন তা জানতে চাইবেন অনেকেই। তবে এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন টাকার কথা ভাবেন না একদম। ম্যানহাটনের এক রেস্টুরেন্টে অল্প কিছুক্ষণের জন্য বসেছিলেন। উদ্দেশ সামান্য নাস্তা করা। রেস্টুরেন্টে বসে তিনি খাবার অর্ডার করা শুরু করলেন আর রেস্টুরেন্ট বেয়ারাদের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল। হাইপ্রোফাইল এই ব্যবসায়ীকে কে ছাড়তে চায়। যা চাইলেন তাই এনে টেবিলে হাজির করল তারা। খাবার শেষে ছোট্ট বিলের কাগজটি হাতে নিয়ে কোনো ভাবান্তর হলো না রোমান আব্রাহিমভিচের। প্রায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি বিল হয়েছিল তার। পুরো টাকা শোধ করে বেরিয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু বিলের কাগজটি আর গোপন রইল না। মিডিয়াকর্মীদের বদৌলতে পৃথিবীর মানুষ জানল এই লোকের এক বেলা খেতে কত টাকা লাগে।

১২৫ কোটি টাকার নাম

খ্যাতি কে না চায়। নাম কামানোর বহু উপায় রয়েছে। আর সেই নাম পৃথিবীর বুকে খোদাই করে রাখার কথা ভাববার আগে পকেটে থাকা চাই ১২৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ টাকাও খুব বেশি নয় অনেকের জন্য। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ও নগদ অর্থ যাদের রয়েছে তাদেরই একজন দুবাইয়ের শেখ হামাদ বিন হামদান আল নাইয়ান। প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এক দ্বীপজুড়ে খোদাই করেছেন নিজের নাম। এ খবর বিশ্বের প্রথম সারির সব মিডিয়াতেই এসেছে গুরুত্ব সহকারে। গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই কারণ তার নাম এতটাই সুবিশাল যে সেটি চাঁদ থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। তার উদ্দেশ্য সফল এ কারণেই। দ্বীপজুড়ে এই নামের দৈর্ঘ্য শুধু ২ মাইল পর্যন্ত। ৬৩ বছর বয়সী এই ধনকুবের নিজের নাম পৃথিবীর বাইরে থেকেও স্পষ্ট দেখতে চান এই অভিপ্রায় জানানোর পর বিশ্বের নামিদামি আর্কিটেক্ট ও ডিজাইনারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর