রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ আয়ের ক্রীড়াবিদ

মেজবাহ্-উল-হক

সর্বোচ্চ আয়ের ক্রীড়াবিদ

পৃথিবীতে হাজারও রকমের খেলা রয়েছে। দেশ-কাল-স্থানভেদে জনপ্রিয়তার ধরনও ভিন্ন। যেমন দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় ক্রিকেট, ইউরোপে ফুটবল-টেনিস-গলফ, আমেরিকায় বক্সিং-বাস্কেটবল-বেসবল, অস্ট্রেলিয়ায় বেসবল-ক্রিকেট-ফুটবল। তবে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ক্রীড়াবিদদের আলাদা কদর রয়েছে। তারকা ক্রীড়াবিদদের আয়-ব্যয়, জীবনাচরণ নিয়েও ভক্তদের জানার আগ্রহ রয়েছে। পাঠকদের আগ্রহের কথা চিন্তা করেই বিভিন্ন ইভেন্টে সর্বোচ্চ আয়ের ক্রীড়াবিদদের নিয়ে এই আয়োজন।

 

ক্রিকেট : মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারতীয় ক্রিকেটার)

মোট আয় : ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৬ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ২৩ মিলিয়ন (বার্ষিক)

মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্যারিয়ারে এখন পড়ন্ত বিকাল। ইতিমধ্যে ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে বার্ষিক আয়ের দিক দিয়ে এখনো ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার ওপরে তার নাম।

টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেও ধোনি এখনো ভারতীয় দলের ওয়ানডে ও টি-২০ দলের অধিনায়ক। জাদুকরী নেতৃত্বের কারণে সবার কাছেই সমীহ আদায় করে নিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ২৮ বছর অপেক্ষার পর ভারতকে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে নিজেও অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। 

যশ-খ্যাতির পাশাপাশি ক্রিকেট থেকে প্রতিপত্তিও কম পাননি ধোনি। এখন তার বার্ষিক আয় ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মোট আয়ের মধ্যে ৬ মিলিয়ন আসে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি অনুযায়ী বেতন ও আইপিএল থেকে। এ ছাড়া বছরে বিজ্ঞাপন থেকে ধোনি আয় করেন ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রিবোক, সনি, পেপসির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি। এ ছাড়া স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে তার। বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের ১০ ক্রীড়াবিদের মধ্যে রয়েছে ধোনির নাম। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার, যার আয় বছরে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তা ছাড়া এর আগে কোনো ক্রিকেটারের নাম শীর্ষ ১০ ধোনি ক্রীড়াবিদের তালিকায় ছিল না।

 

ক্রিকেট : বিরাট কোহলি (ভারতীয় ক্রিকেটার)

মোট আয় : ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৭ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ১৮ মিলিয়ন (বার্ষিক)

ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার অবসরের পর এক টিভি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তার অনন্য রেকর্ডগুলোও এক দিন ভেঙে যাবে। আর বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে তার রেকর্ড ভাঙার মতো দুজন ব্যাটসম্যান রয়েছেন। প্রথম যার নাম উচ্চারণ করেছিলেন তিনি আর কেউ নন, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শচীন টেন্ডুলকার যে ভুল কিছু বলেননি, এখন তা বুঝতে পারছেন সবাই। কী আন্তর্জাতিক ম্যাচ, কী ঘরোয়া লিগ— প্রতিটি ম্যাচেই একের পর এক বিস্ময়কর ব্যাটিং উপহার দিয়ে চলেছেন বিরাট কোহলি। ২২ গজে নামলেই তার ব্যাট থেকে যেন আগুনের ফুলকি বেরিয়ে পড়ছে। শুধু পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে নয়, আয়ের দিক দিয়েও বিরাট সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। যদিও বার্ষিক আয়ের দিক থেকে ক্রিকেটারদের মধ্যে কোহলির অবস্থান দ্বিতীয়। তবে এ মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ক্রিকেটার কিন্তু কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি ও আইপিএল থেকে তার বার্ষিক আয় ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনের ক্রিকেটার এখন কোহলি। তবে তিনি পিছিয়ে আছেন বিজ্ঞাপনের আয়ের ক্ষেত্রে। এখানে তার বার্ষিক আয় ১৮ মার্কিন ডলার। ধোনির চেয়ে ৫ মিলিয়ন কম। সব মিলিয়ে কোহলির বার্ষিক আয় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেটা যে কোনো ক্রীড়াবিদের জন্য ঈর্ষণীয়। তবে কোহলি যেভাবে একের পর বিস্ময়কর পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছেন, হয়তো খুব শিগগিরই ছাড়িয়ে যাবেন ধোনিকেও।

 

ফুটবল : ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (পর্তুগিজ ফুটবলার)

মোট আয় : ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৫৩ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ২৯ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিশ্বে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ কে! কেউ বলবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, কেউবা বলবেন লিওনেল মেসির কথা। অন্য কোনো ক্রীড়াবিদের নামও আসতে পারে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই পর্তুগিজ তারকা রোনালদো সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফলোয়ার সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ফেসবুকে তার ফলোয়ার সংখ্যা ১১১.৪ মিলিয়ন, টুইটারে ৪২.১ মিলিয়ন, ইনস্ট্রাগ্রামে ৫৭.৩ মিলিয়ন। শুধু জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে নয়, বার্ষিক আয়ের দিক দিয়েও এখন ফুটবলারদের মধ্যে সবার ওপরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। রিয়াল মাদ্রিদের এ তারকার বার্ষিক আয় আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ও বার্সেলোনার সুপারস্টার লিওনেল মেসির চেয়েও বেশি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের সব শেষ তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে রোনালদো মোট আয় করেছেন ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এসেছে বিজ্ঞাপন থেকে। আর ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন রিয়াল মাদ্রিদে তার বেতন ও বোনাস থেকে। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সি-আর সেভেন হচ্ছেন ‘হট কেক’। রোনালদো তিন তিনবার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৯ সালের পর ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। গত বছর বর্ষসেরা ফুটবলারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকলেও মেসির কাছে হেরে গেছেন। তবে বর্ষসেরা হতে না পারলেও বিজ্ঞাপনে ঠিকই বাজিমাত করে দিয়েছেন। মেসির চেয়েও তার আয় বেশি।

 

ফুটবল : লিওনেল মেসি (আর্জেন্টাইন ফুটবলার)

মোট আয় : ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৫১ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ২৬ মিলিয়ন (বার্ষিক)

লিওনেল মেসি বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি পাঁচ-পাঁচবার ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা চারবার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন। এ রেকর্ডও এর আগে কোনো ফুটবলার করতে পারেননি। ২০১৫ সালেও আবার বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন। ২৮ বছরেই মেসি যতগুলো পুরস্কার জিতেছেন তা পুরো ক্যারিয়ারেও অন্য কোনো ফুটবলার জিততে পারেননি। মেসির জাদুকরী ফুটবলে মোহিত গোটা বিশ্ব। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের বার্ষিক আয়ও আকাশছোঁয়া! ফোর্বস ম্যাগাজিনের সব শেষ তথ্য অনুসারে গত এক বছরে মেসি আয় করেছেন মোট ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৫১ মিলিয়ন আয় করেছেন বার্সেলোনায় পাওয়া বেতন ও বোনাস থেকে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন থেকে এসেছে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মেসি অ্যাডিডাস, গ্যাটোরেইড, লেস, ইএ স্পোর্টসের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে রয়েছেন। বার্ষিক আয়ের দিক থেকে ফুটবলারদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মেসি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পরেই তার অবস্থান। তবে আর্জেন্টাইন তারকা চাইলেই পারফরম্যান্সের মতো আয়ের দিক দিয়েও রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন। মেসির জন্য অনেক বড় বড় অফার নিয়ে হাজির হয় বিশ্বসেরা ক্লাবগুলো। অনেকে আবার মেসিকে ফাঁকা চেক অফার করেছিলেন। অর্থের অঙ্কটা যেন মেসি তার পছন্দ মতো বসিয়ে নেন। এমন সুযোগ পাওয়ার পরও মেসি কখনো বার্সেলোনা ছাড়েননি। এ বার্সেলোনাই তাকে ছোটবেলায় চিকিৎসা দিয়ে আজকের মেসি বানিয়েছে, তাই মেসিও তার প্রতিদান দিয়ে চলেছেন।

 

 টেনিস : রজার ফেদেরার (সুইস টেনিস খেলোয়াড়)

মোট আয় : ৫৪.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৯.৩ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ৪৫ মিলিয়ন (বার্ষিক)

টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার। রেকর্ড ১৭টি গ্রান্ডস্লাম জিতে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। রজার ফেদেরার উইম্বলডন ওপেন জিতেছেন সাতবার— ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১২ সালে। ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতেছেন পাঁচবার— ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতেছেন চারবার— ২০০৪, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০১০ সালে। ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জিতেছেন মাত্র একবারই— ২০০৯ সালে। রজার ফেদেরারকে বলা হয় টেনিসে রেকর্ডের বরপুত্র। ক্যারিয়ারে এত বেশি রেকর্ড করেছেন যে তা অকল্পনীয়। ১৭ বার গ্রান্ডস্লাম তো জিতেছেনই সুইস তারকা পুরুষ এককে মোট ২৭ বার ফাইনালে উঠেছিলেন। ৩৯ বার সেমিফাইনাল খেলেছেন। ৪৭ বার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছেন। গ্রান্ডস্লাম লড়াইয়ে তিনি মোট ৩০২টি ম্যাচ জয়ের অনন্য এক রেকর্ডের মালিক। গ্রান্ডস্লাম লড়াইয়ে টানা ৬৫টি ম্যাচ জয়ের আরেকটি বিরল রেকর্ড রয়েছে। দীর্ঘদিন টেনিসের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর অবস্থানে ছিলেন ফেদেরার। বর্তমানে সুইস তারকা রয়েছেন তিনে। তবে বার্ষিক আয়ের দিক থেকে এখনো ফেদেরারকে টপকাতে পারেননি অন্য কোনো টেনিস খেলোয়াড়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে গত বছর সব মিলে ৫৪.৩ মার্কিন ডলার আয় করেছেন। যার মধ্যে ৪৫ মার্কিন ডলারই এসেছে বিজ্ঞাপন থেকে। বর্তমানে জিলেট, মার্সিডিস-বেঞ্চ, নাইক, রোলেক্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন রজার ফেদেরার।

 

মহিলা ক্রীড়াবিদ : মারিয়া শারাপোভা (রুশ টেনিসকন্যা)

মোট আয় : ২৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৬.৭ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ২৩ মিলিয়ন (বার্ষিক)

রাশিয়ার গ্লামার টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভা। পাঁচটি গ্রান্ডস্লাম জিতেছেন তিনি। একটি করে উইম্বলডন, ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা এবং ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জিতেছেন দুটি। তবে মোট ১০ বার গ্রান্ডস্লাম লড়াইয়ের ফাইনালে উঠেছিলেন। অনেক দিন মেয়েদের এককে শীর্ষে ছিলেন। তবে রাশিয়ার তরুণী টেনিস কোর্টের পারদর্শিতার চেয়েও রূপের কারণে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিজ্ঞাপনদাতারাও ঝুঁকে পড়েছেন শারাপোভার দিকে। সে কারণেই বিশ্বে মহিলা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি আয় রাশিয়ার এই টেনিসকন্যার। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে মারিয়া শারাপোভার বার্ষিক আয় ২৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মারিয়া শারাপোভা ২০০৪ সালে প্রথম গ্রান্ডস্লাম জয় করেন।

শুরুটা করেছিলেন উইম্বলডন দিয়ে। এরপর ২০০৬ সালে জিতেছেন ইউএস ওপেনের শিরোপা। ২০০৮ সালে জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। তারপর ইনজুরি ও নানা কারণে চার বছর কোনো গ্রান্ডস্লাম জিততে পারেননি। তবে ২০১২ সালে ফের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয় করেন। ২০১৪ সালে আবারও ফ্রেঞ্চ ওপেনের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেন। এরপর আর কোনো গ্রান্ডস্লাম জয় করতে পারেননি। তারপরও বাজারমূল্য কিন্তু কমেনি শারাপোভার। এখনো বিজ্ঞাপনদাতারা শারাপোভার পেছনে যেন লাইন ধরেই রয়েছেন। ডোপ টেস্ট উত্রাতে না পেরে গত জানুয়ারিতে টেনিসে নিষিদ্ধ হয়েছেন এই রাশিয়ান সুন্দরী।

 

গলফ : টাইগার উডস (মার্কিন গলফার)

মোট আয় : ৫০.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ০.৬ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ৫০ মিলিয়ন (বার্ষিক)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের জরিপে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ আয় করা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে মার্কিন কিংবদন্তি গলফার টাইগার উডস রয়েছেন ৯ নম্বরে। ৩৯ বছর বয়সী এই তারকা গলফার প্রাইজমানি এবং বোনাস থেকে পান মাত্র ০.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বিজ্ঞাপন থেকে তার আয় হয় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে গত বছর টাইগার উডস আয় করেছেন ৫০.৬ মিলিয়ন। সাম্প্রতিক গলফে সুবিধা করতে না পারলেও নাইক, টিটলিয়েস্ট, ইলেক্ট্রনিক আর্টস ও জিলেটের মতো বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে টাইগার উডসের। মার্কিন এই গলফার তার ক্যারিয়ারে অনেক রেকর্ড গড়েছেন। ইউরোপিয়ান ওপেনের ৪০টি শিরোপা রয়েছে তার ঝুলিতে। পিজিএ ট্যুরের শিরোপা জিতেছেন ৭৯ বার। শুধু তাই নয়, ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছরে প্রতিবারই শীর্ষ ধনী ক্রীড়াবিদদের তালিকায় ছিল টাইগার উডসের নাম। ২০০৯ সালে বেরিয়ে আসে টাইগার উডসের অন্ধকার জগতের খবর। এক নাইট ক্লাবের মহিলা ম্যানেজারের সঙ্গে অভিসারে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন উডস। তারপর এক এক করে বেরিয়ে আসতে থাকে তার অন্ধকার জগতের খবর। স্ত্রী নর্ডিগেনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর গলফেও সে প্রভাব পড়তে থাকে। তবে গলফ কোর্টে সুবিধা করতে না পারলেও বিজ্ঞাপন থেকে ঠিকই মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন এই মার্কিন গলফার।

 

বক্সিং : ফ্লোয়েডমেওয়েথার (মার্কিন বক্সার)

মোট আয় : ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ২৮৫ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ১৫ মিলিয়ন (বার্ষিক)।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুসারে ২০১৬ সালে বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াবিদ মার্কিন বক্সার ফ্লোয়েড মেওয়েথার। তার বার্ষিক আয় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এর মধ্যে বছরে ২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হচ্ছে মেওয়েথারের বার্ষিক বেতন। আর ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পান বিজ্ঞাপন থেকে। মেওয়েথারকে তুলনা করা হয় কিংবদন্তি বক্সার মাইক টাইসনের সঙ্গে। তার খেলার ধরনও একই রকম। টাইসনের সঙ্গে মেওয়েথারের আচার-আচরণেও অনেক মিল রয়েছে। 

৩৯ বছর বয়সী এই মার্কিন বক্সার অ্যামেচার পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জেতেন ১৯৯৩ সালে।

জাতীয় গোল্ডেন গ্লোভস চ্যাম্পিয়নশিপে বাজিমাৎ করে দেন। ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক পান।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মেওয়েথারকে। একের পর এক শিরোপা এসে গড়াগড়ি খেয়েছে তার পায়ের কাছে। শুধু আমেরিকায় নন, গোটা বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াবিদ তিনি।

 

বাস্কেটবল : লেবরন জেমস (মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড়)

মোট আয় : ৬০.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ২০.৮ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন : ৪০ মিলিয়ন (বার্ষিক)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেবরন জেমস। তার উচ্চতা ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। বেশি লম্বা হওয়ার কারণেই বাস্কেটবলে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন।

লেবরন কোর্টে নামলে গ্যালারিতে তার নামে যেন কম্পন ওঠে। শুধু পারফরম্যান্স কিংবা জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে নয়, বার্ষিক আয়ের দিক দিয়েও বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে সবার ওপরে তার নাম। বিশ্বের সেরা ধনী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে করা ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় ছয় নম্বরে রয়েছেন লেবরন জেমস। তার বার্ষিক আয় ৬০.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তবে এর মধ্যে মাত্র ২০.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আসে তার বেতন, বোনাস ও অন্যান্য ভাতা থেকে। বাকি ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তিনি আয় করেন বিজ্ঞাপন থেকে। লেবরন জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড, নাইক, স্যামসাং ও কোকাকোলার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এ ছাড়া আমেরিকার স্থানীয় আরও বেশকিছু কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ আছেন মার্কিন এই বাস্কেটবল খেলোয়াড়।

 

বেসবল : জন লেস্টার (মার্কিন বেসবল খেলোয়াড়)

মোট আয় : ৩৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বার্ষিক)

বেতন ও বোনাস : ৩৩.৭ মিলিয়ন (বার্ষিক)

বিজ্ঞাপন :  ০.৪ মিলিয়ন (বার্ষিক)

ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৫ সালের র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বেসবল খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে ধনী যুক্তরাষ্ট্রের জন লেস্টার। তার বার্ষিক আয় ৩৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের অ্যাথলেটদের তালিকায় লেস্টার রয়েছেন ১৯তম অবস্থানে।

বেতন ও বোনাস মিলে বছরে তার আয় ৩৩.৭ মার্কিন ডলার। বিজ্ঞাপন থেকে খুব বেশি আয় হয় না মার্কিন এই বেসবল খেলোয়াড়ের। এক বছরে তিনি মাত্র ০.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেন। তবে বর্তমানে জন লেস্টারের আয় আরও অনেক বেশি। বিজ্ঞাপনদাতারাও এখন লেস্টারের দিকে ঝুঁকছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার বেসবল টুর্নামেন্ট মেজর লিগ বেসবলে জন লেস্টার শিকাগো কাবসের হয়ে খেলেন।

এর আগে তিনি খেলেছেন বোস্টন রেড সকসের হয়ে। এই ক্লাবের হয়েই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান লেস্টার। বোস্টন রেড সকসের হয়ে তিনি ২০০৭ সালে মেজর লিগ বেসবলের শিরোপা জয় করেন।

এই ক্লাবের হয়ে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত খেলেছেন। দীর্ঘ আট বছরে সকসকে অনেক শিরোপা এনে দিয়েছেন। লেস্টার নিজেও খ্যাতি ও প্রতিপত্তির চূড়ায় পৌঁছে গেছেন।

আমেরিকার তরুণদের কাছে ৩২ বছর বয়সী এই বেসবল খেলোয়াড় যেন ‘রোল মডেল’ হয়ে গেছেন। জন লেস্টারকে অনুসরণ করে উঠতি বেসবল খেলোয়াড়রা তাদের লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনছেন।

টিন-এজাররা তো লেস্টার বলতে পাগলপ্রায়! তবে লেস্টারের ভক্তদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যাই বেশি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর