আধুনিক আয়োজন
ফিনল্যান্ডের হেলসিনকি। পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে খ্যাতি রয়েছে এটির। শহর পরিষ্কার রাখতে এখানকার নিবাসীদের আন্তরিকতা রোল মডেল হিসেবে মানা হয়।
![](/assets/archive/images/Print-Edition/2016/June/02-06-2016/1.jpg)
পরিবেশ যত সুস্থ মানুষ তত সুস্থ— এই সহজ সমীকরণটাই মেনে চলে কানাডা। আর কানাডার ক্যালগেরি তো বিশ্বের সেরা পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে খ্যাত। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে ক্যালগেরিকে এই খেতাবটি জুড়ে দিয়েছে বিশ্লেষকরা। বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও পরিষ্কার শহর হতে কানাডার ক্যালগেরি শুরু থেকেই মেনে চলেছে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যদিও এই শহরে তেল ও গ্যাস কোম্পানির বড় বড় কারখানা রয়েছে তবু পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে তারা এতটাই সচেষ্ট যে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শহরের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো শহর পরিচ্ছন্ন রাখার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে বলেই ক্যালগেরি এতটা পরিষ্কার। এখানে যোগাযোগ, বর্জ্য ব্যবস্থা ও বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠান একযোগে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার মিশনে কাজ করে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর বলে সুনাম রয়েছে হনুলুলুর। হাওয়াই দ্বীপের এই গোছানো শহর প্রাকৃতিকভাবেই বেশ সুন্দর। পর্যটকদের আনাগোনাও বেশি এখানে। শহরবিদরা তাই প্রাকৃতিক দ্বীপের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে পরিকল্পনামাফিক গুছিয়ে রাখেন গোটা শহর। এখানকা ট্রানজিট সিস্টেমে আধুনিকায়ন ঘটিয়ে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ ছাড়া বাস ভ্রমণ আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হয়। তাই শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও আরও সহজ হয়ে ওঠে। পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে অনেকেই ফিনল্যান্ডের হেলসিনকিকে এগিয়ে রাখেন। ফিনল্যান্ডের অন্যতম সুন্দর ও পরিষ্কার শহর এটি। এটি কিন্তু মোটেই ছোট কোনো শহর নয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস এখানে যা ফিনল্যান্ডের বড় শহরের খেতাব জুটিয়ে দেয়। তবুুও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে খ্যাতি রয়েছে এর। এখানে কমিউটার রেল যোগাযোগ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে। এ ছাড়া শহর পরিষ্কার রাখতে এখানকার নিবাসীদের আন্তরিকতা রোল মডেল হিসেবে মানা হয়। সুইডেনের স্টকহোম ও সুইজারল্যান্ডের জুরিখও বেশ পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে পরিচিত।
বিপর্যস্ত পরিকল্পনা
বাতাস এখন আর ফুসফুসে পাঠানোর মতো নেই— এই স্লোগানটাই লিনফিনের জন্য প্রযোজ্য। কলকারখানার ধোঁয়া ও মোটর কোম্পানির বর্জ্য এই শহরের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় বারবার উপরের দিকে নাম এসেছে চীনের লিনফিনের। চীন বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম একটি শহর। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে লিনফেন চীনের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক বছরে লিনফেন রীতিমতো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাতাস এখন আর ফুসফুসে পাঠানোর মতো নেই— এই স্লোগানটাই লিনফিনের জন্য প্রযোজ্য। কলকারখানার ধোঁয়া ও মোটর কোম্পানির বর্জ্য এই শহরের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়া কয়লা কোম্পানিগুলো নিজেদের মতো করেই দূষিত করে চলেছে পরিবেশকে। আর এই গতি ত্বরান্বিত হয়েছে একাধিক কয়লাখনি থাকার কারণে। একই দুরবস্থা তিয়ানইং শহরের। চীনের অন্যতম দূষিত শহর এটি। এই শহরের প্রধান প্রাকৃতিক দূষণ শুরু হয় ধাতব কলকারখানার বর্জ্য থেকে। এই শহর থেকেই চীনের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ধাতব বর্জ্য প্রকৃতিতে ছড়ানো হয়। এ ছাড়া লেড জাতীয় ধাতব বর্জ্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে যা এই শহরের নানা প্রান্ত থেকে প্রকৃতিতে মিশছে। ভারতের বেশ কয়েকটি শহর পরিবেশ দূষণের জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ। তারই একটি সুকিন্দা। এখানে বিভিন্ন পণ্যের ক্রোমিয়ামের উৎস প্রকৃতিতে মিশে দূষণ ঘটাচ্ছে। ক্রোমাইটের খনি থেকে এই দূষণের যাত্রা শুরু। এ ছাড়া স্টিল কোম্পানিগুলোও ছড়াচ্ছে নানা ধাতব দূষণকারী পদার্থ। বলা হয় দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, প্রকৃতিতে ক্রোমিয়াম ছড়ানোর যে ভয়ঙ্কর মাত্রা রয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রায় ক্রোমিয়াম ছড়ায় এই শহরে। দুরবস্থা রয়েছে ভাপি এলাকারও। ভারতের আরেকটি নোংরা শহর ভাপি। এখানে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দূষণের প্রধান কারণ। শহরের পানির মাত্রা এতটাই নিচে নেমে গেছে যা বিস্ময়কর। কারণ সাধারণ মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে ১০০ গুণ দ্রুত পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া পৃথিবীতে একেবারেই নতুন সংকটজনক ঘটনা। পেরুর লা ওরোয়াও দূষিত শহর হিসেবে কুখ্যাত। এখানে দূষণ ছড়াচ্ছে লেড, কপার ও জিংক।