শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
অমিতাভ বচ্চন

বলিউডের শাহেনশাহ্ বিগ বি

সাইফ ইমন

বলিউডের শাহেনশাহ্ বিগ বি

অমিতাভ বচ্চনকে বলা হয় সুপারস্টার অব দ্য মিলিনিয়াম। বলিউডে প্রবেশের আগে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল এই মহাতারকাকে। একসময় কলকাতার শিপিং কোম্পানিতে কাজ করেছেন। এমনকি কসমেটিক আইটেম বিক্রি করতে গিয়ে সেলসম্যানের কাজও করেছেন। অভিনয়ে সফলতা অর্জনের পর ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখা গেছে তাকে। বলিউডের এই শাহেনশাহেক নিয়ে আজকের রকমারি—

 

অমিতাভ বচ্চন ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তিনি বিগ বি এবং শাহেনশাহ্ নামেও পরিচিত। ১৯৭০-এর প্রথম দিকে তিনি বলিউড সিনেমা জগতে অ্যাংরি ইয়ং ম্যান হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের এক হিন্দু-শিখ পরিবারে অমিতাভ বচ্চনের জন্ম হয়। তার পিতা হরিবংশ রাই বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। তার মা তেজি বচ্চন ছিলেন ফৈসলাবাদের এক শিখ-পাঞ্জাবি। কবি হরিবংশ রাই বচ্চনের দুই ছেলের মধ্যে অমিতাভ বড়। তার ছোট ছেলের নাম অজিতাভ রাই। হরিবংশ রাইয়ের পদবি ছিল শ্রীবাস্তব কিন্তু নিজের লেখা প্রকাশ করার সময় তিনি ছদ্ম-পদবি ‘বচ্চন’ ব্যবহার করতেন। অমিতাভ বচ্চনের মায়ের অভিনয়ে খুব উৎসাহ ছিল। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পান। কিন্তু সাংসারিক কর্তব্যের চাপে তিনি সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অমিতাভ বচ্চনের প্রথম নামকরণ হয়েছিল ইনকিলাব। পরে নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ অর্থাৎ যে আলোর শেষ নেই। অমিতাভ এলাহাবাদের জ্ঞান প্রোবোধিনি এবং বয়েজ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে নৈনিতালের শেরউড কলেজে কলা বিভাগে পড়াশোনা করেন। এর পরে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কিরোরিমল কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। অভিনেতা হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০ বছর বয়সেই তিনি কলকাতার ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোং নামে জাহাজ কোম্পানির কাজে ইস্তফা দেন। পরে মুম্বাইতে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যান। 

বচ্চন নিজের কর্মজীবনে চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বারোটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন।

 

চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু

১৯৬৯ সালে অমিতাভ বচ্চন চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন ‘সাত হিন্দুস্তানি’ নামক একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রে সাতটি প্রধান চরিত্রের একটিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। খোয়াজা আহমেদ আব্বাস নির্দেশিত এই ছবিটিতে অন্য ভূমিকায় ছিলেন উৎপল দত্ত, মধু এবং জালাল আগা। তবে ছবিটি বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি। বচ্চন ঠিকই নিজের জাঁক চিনিয়ে ছিলেন। এই ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে শ্রেষ্ঠ নতুন অভিনেতা হিসেবে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

অর্জন করেন। অমিতাভ বচ্চনকে রাজেশ খান্নার সঙ্গে দেখা যায় ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রে। এটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসাও আদায় করতে সক্ষম হয়। এই চলচ্চিত্রে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এক ডাক্তারের ভূমিকায় অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। এর মধ্য দিয়ে ফিল্মফেয়ার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার পুরস্কার পান তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় পরওয়ানা চলচ্চিত্রটি। এতে অমিতাভ একজন প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সঙ্গে ছিলেন যোগিতা বালি এবং ওমপ্রকাশ। এই চলচ্চিত্রে বচ্চন খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর অমিতাভ বচ্চন অভিনীত বেশ কতগুলো ছবি বক্স অফিসে বাণিজ্যিকভাবে বিফল হয়। তিনি অতিথি শিল্পী হিসেবে গুড্ডি ছবিতে কাজ করেন। এই ছবিতে ধর্মেন্দ্রর বিপরীতে তার ভাবী স্ত্রী জয়া ভাদুড়ি অভিনয় করেছিলেন। কণ্ঠস্বরের জন্য অমিতাভ বচ্চন বেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন। বাওয়ার্চি ছবির কিছু অংশে ভাষ্যকারের কাজ করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে এস রামানাথনের নির্দেশনায় কাজ করেন অমিতাভ। এবার চলচ্চিত্রের নাম বম্বে টু গোয়া। এই ছবিতে তাকে অরুণা ইরানি, মেহমুদ, আনোয়ার আলি এবং নাসির হোসেনের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এভাবেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন অমিতাভ বচ্চন। 

 

তারকা হয়ে ওঠা

১৯৭৩ সালে বচ্চনের চলচ্চিত্র জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসে। পরিচালক প্রকাশ মেহেরা তার জানজির ছবির মুখ্য ভূমিকায় অমিতাভ বচ্চনকে কাস্ট করেন।

ইন্সপেক্টর বিজয় খান্নার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। এই ছবিটি আগের সব রোম্যান্টিক ছবি থেকে পুরোপুরি অন্য ঘরানার হওয়ায় অমিতাভ অ্যাংরি ইয়ং ম্যান হিসেবে নিজেকে বলিউডে প্রতিষ্ঠিত করেন। এর পরের ছবিগুলোতে তার অভিনীত চরিত্রের মধ্যে এই নতুন আঙ্গিক প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে তিনি জয়া ভাদুরিকে বিয়ে করার পর একসঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ‘অভিমান’ নামক চলচ্চিত্রটি তাদের বিয়ের এক মাস পরেই মুক্তি পেয়েছিল।

এরপর বচ্চন বীরেশ চ্যাটার্জির চিত্রনাট্যে হৃষিকেশ মুখার্জি পরিচালিত সামাজিক ছবিতে অভিনয় করেন। এ  চলচ্চিত্রে বিক্রমের চরিত্রে তার অভিনয় ছিল অনবদ্য। যার মূল বিষয় ছিল বন্ধুত্ব। রাজেশ খান্না এবং রেখার সঙ্গে অমিতাভের অভিনয় প্রশংসিত হয়। বিক্রম চরিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।

মনোজ কুমার, শশী কাপুর এবং জিনাত আমানের বিপরীতে অমিতাভের অভিনয় বাণিজ্যিক সাফল্য এবং সমালোচকদের প্রশংসা এনে দেয় ১৯৭৪ সালে ‘রোটি, কাপড়া অর মকান’। এতে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অমিতাভকে। চলচ্চিত্রটির গল্প এবং নির্দেশনা ছিল মনোজ কুমারের। অত্যাচার, দারিদ্র্য এবং মানসিক টানাপড়েনের সঙ্গে সততার লড়াই ছিল এই চলচ্চিত্রের বিষয়। ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্রে তাকে সাফল্য পেতে দেখা গেছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল মজার ছবি চুপকে চুপকে, অপরাধমূলক নাটকীয় গল্পের ভিত্তিতে তৈরি ফারার এবং রোম্যান্টিক ছবি মিলি। ১৯৭৫ সালেই তাকে দুটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল, যা হিন্দি ছবির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর তা হলো যশ চোপড়া পরিচালিত ছবি দিওয়ার। এতে অমিতাভকে মুখ্য ভূমিকায় দেখা যায়। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। ১৯৭৫-এ ছবিটি বক্স অফিসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায় এবং চতুর্থ স্থান লাভ করে। ইন্ডিয়া টাইমস মুভিস-এর তালিকা অনুযায়ী দিওয়ার প্রথম ২৫টি অবিস্মরণীয় বলিউড চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি। তবে একই নামে তিনি অপর একটি চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন ২০০৪ সালে। ১৯৭৫ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শোলে’ যার অর্থ অগ্নিশিখা ভারতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্র হিসেবে অভিহিত হয়েছিল।  এই একটি চলচ্চিত্র উল্টে দেয় আগের সব হিসাব-নিকাশ। মদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করেও এই ছবির রোজগার হয় প্রায় ২৩৬ কোটি ৪৫ লাখ রুপি। এই ছবিতে জয়দেবের ভূমিকায় ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। তার সঙ্গে ছিলেন চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা তারকারা যেমন— ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, সঞ্জীব কুমার, জয়া ভাদুড়ি এবং আমজাদ খান। ১৯৯৯ সালে বিবিসি ইন্ডিয়া এই ছবিটিকে সহস্রাব্দের সেরা চলচ্চিত্র বলে ঘোষণা দেয়। ইন্ডিয়া টাইমস মুভিস দিওয়ার চলচ্চিত্রের মতো শোলেকেও প্রথম ২৫টি অবিস্মরণীয় বলিউড ছবির তালিকায় রেখেছে। একই বছরে ৫০তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের বিচারকরা এই ছবিটিকে ফিল্মফেয়ার পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি বলে অভিহিত করে। বক্স অফিসে শোলের অভাবনীয় সাফল্যর পর বচ্চন মুম্বাই ফিল্ম জগতে তার জায়গা পাকা করে নেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারসহ অজস্র সম্মাননা এবং মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ সময় অমিতাভ বচ্চনের সাফল্য একের পর এক ধরা দিতে থাকে। ১৯৭৬ সালে পরিচালক যশ চোপড়া তার ২য় ছবি কভি কভি এর জন্য অমিতাভকেই বেছে নেন। এটি একটি আদ্যন্ত প্রেমের গল্প যেখানে বচ্চনকে এক কবি অমিত মালহোত্রার চরিত্রে দেখা যায়। যে একজন সুন্দরী তরুণীর প্রেমে পাগল। অভিনেত্রী রাখি গুলজারের বিপরীতে অমিতাভ আবারও দুর্দান্ত অভিনয় করেন। আবেগপূর্ণ সংলাপ এবং বিষয়বস্তুর ভিন্নতা অমিতাভ বচ্চনকে অন্য অ্যাকশনধর্মী চরিত্রের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র করে তোলে। এই ছবিতে অভিনয়ের বদৌলতে তিনি আরও একবার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। বলাই বাহুল্য, ছবিটি আর্থিকভাবেও সাফল্য লাভ করেছিল। ১৯৭৭ সালে অমর আকবর অ্যান্থনি ছবিতে তার অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। এই ছবিতে তিনি তৃতীয় নায়ক অ্যান্থনি গনসালেসের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথম দুজন নায়ক ছিলেন যথাক্রমে বিনোদ খান্না ও ঋষি কাপুর। ১৯৭৮ সালে বোধহয় তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় বছর কারণ বছরের চারটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবিতেই তিনি অভিনয় করেছিলেন। এরপর তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। কসমে ওয়াদে ছবিতে তার চরিত্রদ্বয়ের নাম ছিল অমিত এবং শঙ্কর। ডন ছবিতে তার ভূমিকা ছিল অপরাধজগতের নেতা ডন এবং ঠিক তার মতো দেখতে অন্য এক ব্যক্তি বিজয়ের। এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। সমালোচকরাও তার অভিনয়ের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। ত্রিশূল এবং মুকাদ্দার কা সিকান্দার ছবি দুটির জন্যও তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার মনোনয়ন এবং প্রশংসা পেয়েছিলেন। কর্মজীবনের এই পর্যায়ে তার অনায়াস সাফল্য দেখে ফরাসি পরিচালক ফ্রাসোয়া ত্রুফো তাকে ওয়ান ম্যান ইন্ডাস্ট্রি খেতাব দিয়েছিলেন।

 

অমিতাভ-জয়া প্রেম কাহিনী

বলিউডে অন্যতম প্রভাবশালী জুটি অমিতাভ-জয়া। বাঙালি মেয়ে জয়া ভাদুড়ির প্রেমে পড়ার সময় অভিতাভ বচ্চন ছিলেন উঠতি নায়ক। আর জয়া ভাদুড়ি তখন সুপারস্টার নায়িকা। ১৯৭৩ সালের ৩ জুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অমিতাভ ও জয়া। তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর দীর্ঘ সময় পর দুজনের আবার দেখা হয়েছিল ‘গুড্ডি’ চলচ্চিত্রের সেটে। অতঃপর অমিতাভ-জয়া অভিনীত ‘জাঞ্জির’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। দারুণ ব্যবসাসফল হয়। সাফল্য সেলিব্রেট করতে দুজন ঠিক করেন লন্ডন যাবেন। কিন্তু বাধা আসে অমিতাভের পরিবার থেকে। শর্ত দেওয়া হয় একসঙ্গে বিদেশ যেতে চাইলে বিয়ে করে যেতে হবে। তারপর বাকিটা ইতিহাস। ১৯৭৩ সালে জয়াকে বিয়ে করেন অমিতাভ বচ্চন।

 

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

১৯৮২ সালে কুলি ছবির কাজ চলাকালীন একটি মারামারির দৃশ্যে অভিনয়ের সময় অমিতাভ বচ্চন অন্ত্রে মারাত্মক আঘাত পান। কোনো স্টান্টম্যান ছাড়াই বিপজ্জনক দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করছিলেন অমিতাভ। এ সময় একটি দৃশ্যে টেবিলের ওপর ঝাঁপ দিলে তখন টেবিলের কোণ শরীরের নিম্নাংশে লেগে অমিতাভের প্লিহা ফুটো হয়ে যায়। অনবরত রক্তপাত হতে থাকে। তখন অপারেশন করে তার প্লিহা কেটে বাদ দেওয়া হয়। অনেক মাস ধরে তিনি হাসপাতালে সাংঘাতিক শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভর্তি ছিলেন। এমনকি ডাক্তাররা মাঝে মাঝে মৃত্যুর আশঙ্কাও জানিয়েছিলেন। প্রাণ বাঁচানোর জন্য অমিতাভ ভক্তরা মন্দিরে মন্দিরে প্রার্থনা করেন। এই দুর্ঘটনার কারণে পরিচালক ‘কুলি’ চলচ্চিত্রের শেষাংশটি বদলে দিয়েছিলেন। আগের চিত্রনাট্যে ছিল অমিতাভ বচ্চন মারা যাবে কিন্তু তা বদল করে তাকে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়।

 

রাজনীতিতে সরব

অমিতাভ বচ্চনের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন রাজীব গান্ধী। ১৯৮৪ সালে রাজীব গান্ধীর সমর্থনে অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি অভিনয় থেকে বিরতি নেন। তিনি এলাহাবাদ লোকসভা আসনের জন্য উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ এন বহুগুনার বিরুদ্ধে নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (৬৮.২% ভোট পেয়ে) ভোটে জয়লাভ করেন। এর ঠিক তিন বছরের মাথায় অমিতাভ বচ্চন রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় একে নর্দমা বলে আখ্যা দেন তিনি।

 

কণ্ঠস্বর

অমিতাভ বচ্চন তার গম্ভীর ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরের জন্য বিখ্যাত। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে কণ্ঠস্বরের জন্য কটূক্তি শুনতে হয়। চলচ্চিত্র জগতে আশার আগে অমিতাভ বচ্চন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঘোষকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। অথচ সেই অমিতাভকেই অজস্র অনুষ্ঠানে সূত্রধর, নেপথ্য গায়ক এবং উপস্থাপকের ভূমিকায় দেখা গেছে।

 

ব্যক্তিজীবন

অমিতাভ বচ্চন ব্যক্তিজীবনে খুবই বিনয়ী একজন। অমিতাভ-জয়া দম্পতির দুই সন্তান। মেয়ে শ্বেতা নন্দা এবং ছেলে অভিষেক বচ্চন। অভিষেক বচ্চনও জনপ্রিয় অভিনেতা এবং তিনি আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির রয়েছে একজন মেয়ে সন্তান।

 

 

এক  নজরে

পুরো নাম : অমিতাভ হরিবংশ বচ্চন

ডাক নাম : বিগ বি, অ্যাংরি ইয়ং ম্যান, বলিউডের শাহেনশাহ্, অমিত, এবি সিনিয়র, ওয়ানম্যান ইন্ডাস্ট্রি, সুপারস্টার অব দ্য মিলিনিয়াম, মহানায়ক অমিতজি

জন্ম : অক্টোবর ১১, ১৯৪২

রাশি : তুলা রাশি

উচ্চতা : ৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার)

জন্মস্থান : এলাহাবাদ, উত্তর প্রদেশ, ভারত

জাতীয়তা : ভারতীয়

পেশা : অভিনেতা, উপস্থাপক, প্রযোজক, গায়ক

বাবার নাম : হরিবংশ রাই বচ্চন

মায়ের নাম : তেজি বচ্চন

বৈবাহিক অবস্থা : ১৯৭৩ সালে অভিনেত্রী জয়া বচ্চনকে বিয়ে

ধর্ম : হিন্দু

বাসস্থান : প্রতীক্ষা, মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত

প্রথম চলচ্চিত্র : ভুবন সোম, কণ্ঠশিল্পী, ১৯৬৯

হোমটাউন : মুম্বাই

পারিবারিক সদস্য : অভিষেক বচ্চন (ছেলে), অজিতাভ বচ্চন (ভাই), ঐশ্বরিয়া বচ্চন (পুত্রবধূ), নিখিল নন্দ (নাতি), অরাধ্য বচ্চন (নাতনি)

প্রথম সফলতা : জাঞ্জির

প্রথম অ্যাওয়ার্ড : সেরা নবাগতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 

প্রথম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড : ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রে সেরা পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে

প্রথম সেরা অভিনেতা ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড : ১৯৭৬ সালে ‘কাভি কাভি’

চলচ্চিত্রের জন্য

ইনজুরি : ১৯৮২ সালে ‘কুলি’ চলচ্চিত্রে কাজ করার সময় মারাত্মকভাবে অহত হন 

খণ্ডকালীন অবসর : তিনি ১৯৯২ সালে খণ্ডকালীন অবসর নেন

প্রথম প্রযোজনা : ১৯৯৬ সালে ‘তেরা মেরা স্বপ্নে’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রথম প্রযোজনায় আত্মপ্রকাশ

প্রত্যাবর্তন : ২০০০ সালে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ কুইজ শো-এর মধ্য দিয়ে সফল প্রত্যাবর্তন  

 

অজানা দশ

♦ অমিতাভ দুই হাতেই ভালো লিখতে পারেন।

♦  জীবন-সংগ্রামের দিনগুলোতে মুম্বাইয়ে রাস্তায় বেঞ্চিতে বেশ কয়েকটি রাত কাটিয়েছেন তিনি।

♦  অমিতাভের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। প্রতি জন্মদিনে প্রিয় মানুষেরা কীভাবে শুভেচ্ছা জানায় তা তিনি হুবহু মনে রাখতে পারেন।

♦  তিনিই প্রথম এশিয়ান অভিনেতা, যার মোমের প্রতিকৃতি লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামে স্থান পায়।

♦  বলিউডের এই শাহেনশাহ্  অমিতাভের প্রথম বেতন ছিল ৩০০ রুপি।

♦  ঘড়ি এবং কলম সংগ্রহ করা এই তারকার অন্যতম শখের কাজ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১টি গাড়িও তার সংগ্রহে আছে।

♦  বলিউডের অন্য যে কোনো তারকার চেয়ে অমিতাভ বচ্চন অধিকবার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একসঙ্গে তিনটি চরিত্রে দেখা গেছে তাকে ‘মহান’ চলচ্চিত্রে।

♦  প্রথম হিট ছবি ‘জাঞ্জির’-এর আগে পরপর অনেকগুলো ছবি ফ্লপ হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের।

♦  পর্দায় অমিতাভ বচ্চনের প্রিয় নাম হলো বিজয়। বিশটিরও বেশি ছবিতে এই নামে দেখা গেছে তাকে।

♦ একবার মাত্র ৫ ঘণ্টায় ২৩টি দৃশ্যের ডাবিং করেছেন অমিতাভ, যা বলিউডের চলচ্চিত্র ইতিহাসে রেকর্ড।

সর্বশেষ খবর