রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কত দামি গিফট

ঘরোয়া, সামাজিক উৎসবে প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার রীতি বহু পুরনো। রাজা-রানীদের সময় দামি, দুর্লভ রত্ন পাথরের হার দেওয়ার প্রচলন ছিল। দেওয়া হতো রাজ্য, জমিদারি, বিপুল সংখ্যক হাতি-ঘোড়া। সেই উপহার দেওয়ার রীতি এখন আরও বিলাসী, আরও চমকপ্রদ হয়ে উঠেছে। বাড়ি-গাড়ি ছাড়াও দ্বীপ, মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট দিয়ে প্রিয়জনের মনে আনন্দের ঢেউ তুলতে অনেকেই খরচ করে বসেন শত শত কোটি টাকা। এমন উপহার নিয়ে লিখেছেন— তানভীর আহমেদ

 

৮০০ কোটি টাকার বিয়ে!

রাশিয়ান ধনকুবের মিখাইল গুতসেরিভ। তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে খরচ করেছিলেন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। আর এই টাকা মোটেই বিয়ের খরচ নয়— বরং ছেলেকে উপহার দিয়েছেন নানা বাহানায়। সে অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন ছেলের পছন্দের শিল্পী জেনিফার লোপেজ। ছেলেকে দিয়েছেন ৮০ কোটি টাকা দামের ‘এলি সাব’ ব্র্যান্ডের কাস্টমাইজ স্যুট। ছেলেকে বিয়ের উপহার বলেই এত আয়োজন ছিল বাবার।

 

হাজার কোটি টাকার পেইন্টিং

আরেক রাশিয়ান রোমান ইবরাহিমোভিচ তার স্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পেইন্টিং, স্কাপচার। এই বিপুল অঙ্কের টাকায় কেনা হয়েছিল গিয়াকোমেত্তির কিছু দুর্লভ ভাস্কর্য, রাশিয়ান চিত্রশিল্পী ইয়া কাভাকোবের ৪০টি পেইন্টিং। ফ্রান্সিস বেকন ও লুসিয়ান ফ্রঁয়েদের দুর্লভ পেইন্টিংও এখানে রয়েছে। স্ত্রীকে চমকে দিতেই এই উপহার রোমানের।

 

কুকুরের গলায় কোটি কোটি টাকার হীরার হার

পোষা প্রাণীকে যারা ভালোবাসেন তাদের কাছেও শিরোনামটি হয়তো চমকে দেবে। কুকুরপ্রেমীদের জন্য অ্যামর ব্র্যান্ডের কুকুরের কলারের দাম সত্যি বলতে চমকে দেওয়ার মতোই। ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা দামি এই কলার বেশ জনপ্রিয়। ধনীদের কুকুরের গলায় শোভা পাওয়া এই কলারে কুমিরের চামড়া ও গলার হারে ৭ ক্যারেটের ১ হাজার ৬০০ টুকরা স্বচ্ছ হীরা বসানো রয়েছে।

 

প্রিয়জনের জন্য ১ কোটি ৭০ লাখের হাইহিল

 গোপন চুক্তিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল কিছু জুতা। হীরা বসানো সেই জুতা এক ধনকুবেরের মন জয় করে। সে খবর আর গোপন থাকেনি। স্ত্রীকে দামি জুতা যারা উপহার দিতে চান তারা খোঁজ করেন ক্রিস্টোফার মাইকেলকে। হাইহিলের এই জুতার দাম ১ কোটি ৭০ লাখ টাকারও বেশি। ৩০ ক্যারেটের ২ হাজার ২০০ হীরা বসানো এই জুতা হাইহিল প্রেমীদের কাছে জুতার চেয়ে বরং জুয়েলারি বলেই পরিচিত।

 

ঝর্ণার নাচ দেখে ৮ কোটি টাকা

একটু বৈচিত্র্য যোগ করতে অনেকেই ছুটে যান সাংহাই, দুবাই, লাস ভেগাসসহ বিশ্বের বড় শহরগুলোর ঝর্ণা নাচ দেখতে। প্রিয়জনকে চমকে দেওয়ার মতো এই ঝর্ণাগুলো রঙিন আলোতে প্রিয় সুরের তালে তালে নাচতে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এই নাচ দেখতে গুনতে হয় কোটি কোটি টাকা। অবশ্য স্ত্রী কিংবা প্রেমিকার মন জুড়াতে গিয়ে যারা কার্পণ্য করেন না তাদের কাছে টাকার হিসাবটা না করলেও চলবে। ধনকুবের প্রেমিকদের জন্য এমনই গিফটের ব্যবস্থা করেছে বিশ্বের প্রথম সারির ঝর্ণা নাচ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশাল জায়গাজুড়ে এই ঝর্ণাগুলো তৈরি করা হয়। ফার্মহাউস বা ব্যক্তিগত জমিদারি থাকলে তো হলোই।  না থাকলেও সমস্যা নেই। প্রিয়জনের জন্য শুধু একটি দিনের কয়েকঘণ্টার আলোর নাচ উপহার হিসেবেও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে একদিনেই খরচ করতে হবে ৮ কোটি টাকা। শীর্ষ ধনীরা প্রায়ই প্রিয়জনকে এ ধরনের গিফট দিয়ে থাকেন।

 

স্ত্রীর জন্য অনিল আম্বানির ৬৭০ কোটি টাকার ইয়ট

ইয়টের নাম তিয়ান। ভারতীয় আম্বানি পরিবারের ধনকুবের অনিল আম্বানি ও তার স্ত্রী তিনার নামের শুরুর অংশ যোগ করে এই ইয়টের নাম রাখা হয়েছে। দাম ৬৭০ কোটি টাকারও বেশি। স্ত্রীকে চমকে দিতেই এই গিফটের আয়োজন করেন অনিল আম্বানি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দামি ব্যক্তিগত ইয়ট হিসেবে এটি বিশ্বের নানা প্রান্তে বেশ আলোচিত। এ ধরনের ইয়ট উপহার দেওয়া মোটেই নতুন কিছু নয়। শীর্ষ ধনী ব্যবসায়ীদের অনেকেই এ ধরনের ইয়ট প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে থাকেন। একেকটি ইয়টের দাম পড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মতো। বিলাসবহুল এই ইয়টগুলোতে রয়েছে সিনেমা হল, রেস্টুরেন্ট, সেভেন স্টার মানের হোটেল, টেনিসকোর্ট, সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, পার্ক। এ ধরনের ইয়ট পরিচালনার জন্য প্রায় ২০০ জন কর্মীকে উচ্চ পারিশ্রমিক দিতে হয়।

 

উপহার যখন কোটি টাকার দ্বীপ

২০১৩ সালের দিকে পুরো দ্বীপ স্বামীকে উপহার দিয়ে বিশ্ববাসী ও ভক্তদের কাছে আলোচিত ছিলেন হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তার সাবেক স্বামী হলিউড তারকা ব্রাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি জুটির বিয়ে, বিচ্ছেদ, সন্তান দত্তক নেওয়া— সব কিছু নিয়েই হৈচৈ হয়েছে অনেক। তবে সাবেক স্বামীকে ৯৬০ কোটি টাকার দ্বীপ উপহার দিয়ে দামি ভালোবাসার দামি উপহারটাই দিয়েছিলেন স্ত্রী জোলি। বিশ্বের শীর্ষ পারিশ্রমিক পাওয়া এই অভিনেত্রী ২০১১ সালে হৃদয় আকৃতির একটি দ্বীপ কিনেছিলেন। দ্বীপে থাকা একটি ঝর্ণা পছন্দ হওয়ায় তিনি ভেবেছিলেন তার তৎকালীন ছেলেবন্ধু ব্রাড পিট হয়তো এখানে বাড়ি করে অবসর কাটাতে পারবেন। সে ভাবনা থেকেই তিনি হার্ট আকৃতির এই দ্বীপ স্বামীকে উপহার দেন। ব্যক্তিগত দ্বীপ কেনা মোটেই বিস্ময় জাগানোর মতো কিছু নয় ধনকুবেরদের কাছে। কিন্তু উপহার দেওয়ার কথা উঠলে জোলির এই দ্বীপ উপহার অনেকের কাছেই উদাহরণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর