বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমেরিকার যত আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি

আমেরিকার যত আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি

তারা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি আমেরিকান প্রেসিডেন্টের স্ত্রী। জনসাধারণের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন শক্তি, সম্মান আর জনপ্রিয়তা নিয়ে। তারা হোয়াইট হাউসে দৌড়েছেন, চ্যারিটি ইভেন্ট করেছেন, স্টেট ডিনারের হোস্টও হয়েছেন। তারপরও নিজেকে রেখেছেন আবেদনময়তার শীর্ষে। এমন কিছু ফার্স্ট লেডি নিয়ে লিখেছেন — তানিয়া তুষ্টি

 

সুপার মডেল থেকে হোয়াইট হাউসে মেলানিয়া ট্রাম্প

[বর্তমান ফার্স্ট লেডি]

মেলানিয়া ট্রাম্প বা মেলানিয়া নাউস বর্তমান আমেরিকান ফার্স্ট লেডি। আমেরিকার ইতিহাসে তিনি অন্যতম আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি হিসেবে নিজের নাম লেখালেন। তার সঙ্গে বর্তমান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৯৮ সালে। উপলক্ষ ছিল নিউইয়র্কের একটি ফ্যাশন উইক পার্টি। আবেদনময়ী এই নারী নজর কেড়ে নেন ২০ বছরের বড় ট্রাম্পের। যদিও ট্রাম্প বরাবরই সুন্দরীদের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন। সে সময় ট্রাম্প দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলের সঙ্গে বিচ্ছেদে চলে গিয়েছিলেন। মেলানিয়া ১৯৭০ সালে জন্মেছিলেন স্লোভেনিয়ার শহর সেভনিকায়। তার বাবা মেয়র দফতরের কর্মী ও সফল গাড়ি ব্যবসায়ী ছিলেন। মেলানিয়ার মা ছিলেন পোশাকের নকশাকার। মেলানিয়ার পেশাগত ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি লুবিয়ানায় নকশা ও স্থাপত্যবিদ্যা বিষয়ের ওপর ডিগ্রিধারী। ১৮ বছর বয়সে ইতালির একটি মডেলিং এজেন্সির সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।

মেলানিয়া আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ২০০১ সাল থেকে। কিন্তু নাগরিকত্ব পান ২০০৬ সালে। দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক চলার পর তাদের বাগদান সম্পন্ন হয় ২০০৪ সালে। তারপর মেলানিয়া ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিয়ে সম্পন্ন হয় ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি। এরপর ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডির ভূমিকা পালন করছেন। প্রথম স্ত্রী ইভানা জেলনিকভাকে প্রিয় হিসেবে ঘোষণা করলেও ট্রাম্প কিন্তু দারুণ সময় পার করছেন আবেদনময়ী মডেল মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে।


হিলারি ক্লিনটন

[১৯৯৩-২০০১]

কে কার থেকে কম বা বেশি তা নির্ধারণ করা অনেকটাই মুশকিল হবে যখন আপনি আমেরিকান ফার্স্ট লেডিদের মোহনীয়তার আপেক্ষিকতা বিচারে যাবেন। সবাই যেন আবেদনময়তার শীর্ষে। রূপে গুণে কেউ কারও থেকে কম নন। উপরন্তু তাদের চরিত্রে থাকে বিশেষ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আকর্ষণীয় রূপের পাশাপাশি যদি যোগ হয় নির্ভীক, মহান ও নিজেকে আলাদা সম্মানে ভূষিত করার প্রচেষ্টাকারীর গুণ, তবে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। সে হিসেবে অবশ্যই নাম আসবে হিলারি ক্লিনটনের। সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী তিনি। গুণী এই নারীকে বর্ণনায় আনতে গেলে উঠে আসবে হিলারি একজন আলোচিত মার্কিন রাজনীতিবিদ। ফার্স্ট লেডির সময়কাল পরে তিনি দেশটির নারী প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী লড়াই করেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে হিলারি ক্লিনটন আইন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।


মিশেল ওবামা

[২০০৯-২০১৭]

কালোই জগতের আলো, অপার সৌন্দর্যের আধার। কথাটি কখনো কখনো পরম সত্য। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল ২০ জানুয়ারি মেয়াদের আমেরিকান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি যেন উদাহরণ হয়েছেন ব্লাক বিউটি হিসেবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সহধর্মিণী মিশেল পেশাজীবনে আইনজীবী ও একজন লেখক। সৌন্দর্যের দিক থেকে তিনি কোনো অংশেই পিছিয়ে নন। বরং কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও তিনি অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী হিসেবেই সারা বিশ্বে বিবেচিত। এমনকি, আমেরিকার ইতিহাসে তিনি আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন। তার ফ্যাশন সচেতনতা সবাইকে মুগ্ধ করে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার ফ্যাশন শৈলী শীর্ষে অবস্থান করেছে। সবাই তার সাবলীল ফ্যাশন বৈচিত্র্যতার জন্য নিজেদের অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব ভাবেন।


বারবারা বুশ

[১৯৮৯-১৯৯৩]

বারবারা বুশ ছিলেন আমেরিকান ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী। বারবারা ও সিনিয়র বুশের বিয়ে হয় তরুণ বয়সেই। তাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয় কলেজ প্রাঙ্গণে। বারবারা বলেন, শুধু সেই ছেলেটিই চুমু দিতে পারবে যে আমাকে বিয়ে করবে। সুন্দরী বারবারার সেই চ্যালেঞ্জ অকপটে নিয়ে নেন সিনিয়র বুশ। বিয়ে হয় তাদের, স্বামী হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ভাগ্য ফিরলে এমনই অভাবনীয় কিছু হতে পারে। এমনকি ভাগ্য পক্ষে থাকলে আপনিও হতে পারেন অভাবনীয় প্রাপ্তির অধিকারী। বারবারা শুধু ভাগ্যবতীই নন, তিনি আমেরিকার ইতিহাসে আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি হিসেবেও অগ্রগণ্য।


রোজালিন কার্টার

[১৯৭৭-১৯৮১]

আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডির তালিকায় অন্যতম নাম রোজালিন কার্টার। তিনি আমেরিকার ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী। সুন্দরী রোজালিন শুধু নিজের রূপচর্চায় দিনপার করেননি। সক্রিয় ছিলেন রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগে কাজ করে। রোজালিন ল্যাটিন আমেরিকাতে বিদেশি রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেন। তা ছাড়া নিয়মিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও করতেন। তিনি মানসিক রোগীদের কল্যাণে আবেগপ্রবণভাবে লড়াই ও গবেষণা করে গেছেন। বলা বাহুল্য, রোজালিন পোশাকের ব্যাপারে খুব মার্জিত রুচির পরিচয় দিতেন। সবমিলে তিনি সবার পছন্দের জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন।


লরা বুশ

[২০০১-২০০৯]

আমেরিকার ৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী লরা বুশ। তিনি অন্যতম জনপ্রিয় ও আবেদনময়ী ফার্স্ট লেডি হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। স্বামীর সঙ্গে তিনি অনেক কাজে প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্ব করেছেন। জর্জ বুশের গভর্নরটারিয়াল রেস ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি মূল বক্তব্যও প্রদান করতেন। তাতে আশ্বস্ত হয়ে অসংখ্য অনুসারী ও সমর্থক হয় বুশের। ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়ে অগ্রগামী বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন। রূপবতী এই নারীর গুণ থেকে হেঁসেল ঘরের দক্ষতাও বাদ যায়নি। তিনি নতুন রেসিপি দিতে পছন্দ করতেন। পরবর্তীতে তা আমেরিকার বহু পরিবারের প্রিয় খাদ্যের রেসিপি হয়।


গ্রেস কুলিজ

[১৯২৩-১৯২৯]

মোহময় সৌন্দর্যের অধিকারী গ্রেস কুলিজ। আমেরিকার ৩০তম প্রেসিডেন্ট গ্রেস কুলিজের স্ত্রী। গ্রেস কুলিজের চেহারায় কেমন যেন মাদকতা ছিল। তার মায়া হরিণ নয়ন যুগল ছিল সবচেয়ে আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল। রূপের বৈচিত্র্যে গ্রেসের হাসি ছিল আলাদা দ্যোতনা। সে হাসিতে খেলে যেত অজানা রহস্যময়তা। প্রতিক্ষণে রচিত হতো নতুন কোনো কাব্য। আকর্ষণীয় দেহগড়নেও গ্রেস কুলিজে মুগ্ধ হতো সবাই। তার পোশাক নির্বাচন ছিল মার্জিত রুচির। আলাদা শিষ্ঠাচার গ্রেস কুলিজের ব্যক্তিত্বে দিয়েছিল শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান। কোনো ফার্স্ট লেডি এতো রূপের অধিকারী হতে পারে তার প্রমাণ গ্রেস নিজেই।


ন্যান্সি রিগ্যান

[১৯৮১-১৯৮৯]

সুন্দরের অন্যতম উদাহরণ ন্যান্সি রিগ্যান। তিনি ৪০তম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের স্ত্রী। ফার্স্ট লেডি হিসেবে প্রথমেই তিনি নিজেকে সুন্দর দেখানোয় সচেষ্ট ছিলেন। দ্বিতীয়ত আমেরিকার ইতিহাসে তিনি নিজেকে সবচেয়ে বেশি আবেদনময়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেও আগ্রহী ছিলেন। এ কারণে তিনি রূপ, পোশাক ও শারীরিক ফিটনেসের ব্যাপারে সচেতন থাকতেন। বলা বাহুল্য তিনি দেখতেও অনেক আকর্ষণীয় ছিলেন। বিয়ের আগে ন্যান্সি একজন নামকরা অভিনেত্রী ছিলেন। থিয়েটার ও নাটক ছিল তার প্রাণ। আমেরিকার ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরও এসবের প্রতি ন্যান্সির প্রচণ্ড ভালোবাসা কাজ করত। তিনি বিভিন্ন নাটক এবং বাদ্যযন্ত্রের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। এমনকি হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত ডিনার পার্টিতে ন্যান্সির পারফরম্যান্স দেখেছে সবাই। বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়নের সময়ও তিনি নানা রকম পারফর্মে সবাইকে মুগ্ধ রাখতেন। তার স্টাইল সেন্স ছিল প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য। ন্যান্সির পরিহিত পোশাকের বর্ণনাও ছিল মনোমুগ্ধকর। এসব পোশাক তৈরি করত দেশের নামকরা সব পোশাক নকশাকাররা। এজন্য অবশ্য তাকে মাঝে মাঝেই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবু তিনি নিজের রুচি থেকে সরে আসতে রাজি ছিলেন না একচুল।


ফ্রান্সিস ক্লিবল্যান্ড

[১৮৯৩-১৮৯৭]

এ পর্যন্ত আমেরিকাতে যত ফার্স্ট লেডি এসেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে কম বয়স্ক ছিলেন ফ্রান্সিস ক্লিবল্যান্ড। তার পুরো নাম ফ্রান্সিস ক্লারা ফ্লোসোম ক্লিবল্যান্ড প্রিস্টন। তার জন্ম নিউইয়র্কের বাফেলোতে। তার বাবা অস্কার ফ্লোসোম পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ফার্স্ট লেডির খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৮৬ সালের ২ জুন ৪৯ বছর বয়সী গ্রোভার ক্লিবল্যান্ডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ সূত্রে ফ্রান্সিস হয়ে যান আমেরিকার ২৪তম প্রেসিডেন্ট গ্রোভারের স্ত্রী ও হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা। এটিই প্রথমবার যখন কেউ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিয়ে করেন এবং ফ্রান্সিসই প্রথম যিনি হোয়াইট হাউসে বউ হয়ে আসেন। অসাধারণ রূপবতী ফ্রান্সিস ছিলেন প্রেসিডেন্টের খুশি থাকার অন্যতম কারণ। আমরা সবাই জানি, তরুণীরা সবসময় আবেদনময়তায় শীর্ষে থাকে। এর সঙ্গে যদি কারও নজরকাড়া পোশাক নির্বাচনের দক্ষতা থাকে তবে তো আর কথাই থাকে না। ফ্রান্সিসেরও সে গুণটি ছিল প্রশংসনীয়। প্রেসিডেন্ট গ্রোভার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন এমন এক আবেদনময়ী নারীকে। আর সে কারণেই হয়তো প্রেসিডেন্ট গ্রোভার সব সময় প্রফুল্ল থাকতেন। রাষ্ট্র শাসনকালে দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তাও বেড়ে চলে। আমেরিকাবাসীর কাছে প্রেসিডেন্ট হন প্রশংসিত।

সর্বশেষ খবর