বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউসের কথা

তানভীর আহমেদ

হোয়াইট হাউসের কথা

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছে হোয়াইট হাউস। ধবধবে সাদা এ বাড়িটি একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিস ও তার পরিবারের বাসস্থান। হোয়াইট হাউসের ভিতরকার ছবি ও খবর নিয়ে মানুষের কৌতূহল কম নয়। দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও বেড়াতে আসেন এখানে। বিশ্বনেতা ও তারকাদের আপ্যায়ন অনুষ্ঠানেও জমে উঠে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের ভিতরে ভূতের উৎপাত রীতিমতো বিশ্বজুড়ে আলোচিত। ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসবে হোয়াইট হাউসের চিত্র একেবারেই পাল্টে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিসের ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রেখেই এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করা হয়। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে হোয়াইট হাউস বিশ্ববাসীর কৌতূহলে সব সময়ই ভিন্ন আবেদন রাখে—

 

টার্গেট যখন হোয়াইট হাউস

বিভিন্ন সময় আন্দোলনকারী, সন্ত্রাসীদের টার্গেট হয়েছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিস ও তার পরিবারের বাসভবন বলেই কঠোর নিরাপত্তায় মোড়ানো থাকে হোয়াইট হাউস। তবু নানা সময় নিরাপত্তার ফাঁক গলে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে এখানে। ১৮৪০ সালে এক নেশাগ্রস্ত লোক প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন। ১৯১২ সালে মাইকেল উইন্টার হামলা করেছিলেন এখানে। প্রথমবার নিরাপত্তা গেট অতিক্রম করার সময় রক্ষীরা ছেড়ে দিলেও কয়েক মিনিট পরই লোকটি আবারও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। এবার আর ছাড় দেওয়া হয়নি। গ্রেফতার করা হয় এবং তার পকেট থেকে ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। ছুরি নিয়ে প্রবেশের সময় ধরা পড়ার পর বড় ঘটনা ঘটে ১৯৭৬ সালে। হোয়াইট হাউসে অনুপ্রবেশের সময় প্রথম গুলি বিদ্ধের ঘটনাটি ঘটে সে বছর। চেস্টার প্লাম্মার নামে এক ট্যাক্সিচালক হোয়াইট হাউসের ৮ ফুট দেয়াল টপকানোর চেষ্টা করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের গুপ্তচর তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। মার্কিন মুদ্রা থেকে ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’ কথাটি মুছে ফেলতে অ্যান্থনি হেনরি নামে এক ব্যক্তি কারাতে স্যুট পরিহিত অবস্থায় হাতে বাইবেল নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সিসকো মার্টিন ডুরান ভবনটি লক্ষ্য করে ২৯ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ সময় তিনিও গ্রেফতার হন। তার ৪০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তখন ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে কয়েক ফুট দূরে ছিলেন। রবার্ট পিকেট নামে আইআরএসের সাবেক অ্যাকাউন্ট্যান্ট হোয়াইট হাউস লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দশ মিনিটের মাথায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের হাতে তিনি গ্রেফতার হন।  ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে খ্রিস্টবিরোধী বলে ৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান অস্কার রামেরিও নামের এক ব্যক্তি। ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় পেনসিলভেনিয়ার এক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২৫ বছরের জেল দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৯ জুনের ঘটনা, জোসেফ ক্রিফোর্ড নামের এক ব্যক্তি অদ্ভুত ঘটনা ঘটান। একটি চালকবিহীন জিপ দিয়ে হোয়াইট হাউসের সিকিউরিটি গেটে আঘাত করেন। পরে অবশ্য তিনি নিজেকে বায়োপোলার ডিস অর্ডার রোগী বলে দাবি করেন। তবে সেটা ধোপে টেকেনি। তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 

হোয়াইট হাউস সামলানো চাট্টিখানি কথা নয়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর নতুন করে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের অন্যতম সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পালাবদল হলেও গত দশকেও অবস্থা ছিল ভিন্ন। বারাক ওবামা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন থেকেই শান্তিপ্রিয় একটি পরিবেশের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের দায়ভার নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে পৌঁছানোর চিত্রগুলো লোকের চোখে পড়ে। তবে হয়রানি এলো কোথা থেকে— এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বুশের আগমনের ইতিহাসটা তবে জানা যাক। ২০০০ সালে সামান্য ব্যবধানে রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ জয়লাভ করেন। হোয়াইট হাউসে তিনি এলেন। এসে রীতিমতো ভিরমি খেলেন তিনি। পুরো হোয়াইট হাউসের ভিতরে নানা ধরনের ফাঁদ পাতা রয়েছে, পা দিলেই বোকার মতো ফেঁসে যেতে হবে। এ ছাড়া মজা করার নামে হেনস্তা হতে হবে, সে আয়োজনও ভালো মতোই করা আছে। জিনিসপত্র ভেঙেচুরে রাখা হয়েছে। অভিযোগের তীর ছিল ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্টাফদের দিকে। হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার আগে এই কাণ্ড করে গেছেন তারা। হোয়াইট হাউসে পুরুষদের বাথরুমে দেখা গেছে কারা যেন দেয়ালে নানা ধরনের কথা লিখে রেখে গেছেন। আক্রমণাত্মক এবং অশ্লীল কথাবার্তায় ভরা ছিল সেসব। অফিসের ডেস্কগুলোরও বেহাল দশা। তৈলাক্ত এবং আঠালো কিছু একটা জিনিস ঢেলে সব নষ্ট করে রেখে গেছেন। বাদ যায়নি টেলিফোনের অ্যানসারিং মেশিনও। সেখানেও রেকর্ড করে রাখা হয়েছে অশ্লীল বার্তা। হয়রানির এখানেই শেষ নয়। বেশকিছু কম্পিউটারের কিবোর্ড থেকে ডব্লিউ অক্ষরটা খুলে নেওয়া হয়েছে। যেগুলোতে ডব্লিউ অক্ষরটি ছিল ওটাকে চেপে উল্টো করে আটকে দেওয়া হয়েছে। একটি বিশেষ ঘরে টেলিফোন এক্সটেনশন কাজ করছিল না। শুধু জর্জ ডব্লিউ বুশই নন, হোয়াইট হাউসে প্রথম প্রথম সব প্রেসিডেন্টকেই এ ধরনের হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। সর্বোচ্চ স্তরে ফেডারেল সরকারের যে ২ হাজার পদ আছে— একজন নতুন প্রেসিডেন্ট এসেই এতে পরিবর্তন আনেন। হোয়াইট হাউস সামলানো যে চাট্টিখানি কথা নয়, সেটা বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় নিশ্চয়ই।

 

ভূতের উৎপাত

নির্জন, প্রায় ধ্বংসের মুখে থাকা জঙ্গলবাড়িতে ভূতের উৎপাতের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। ভূতের হাঁটাচলা, নাকি কান্না, গান আর ছোটাছুটির গল্প মুখে মুখে ছড়িয়েছে বিভিন্ন সময়। কখনো প্রমাণ না মিললেও ভূতের দেখা পেয়েছেন এমন দাবি করা মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তাই বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে ভূতের উৎপাত! এ তো একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেল। তবে এ কথা আমেরিকানদের বোঝাতে আসবেন না। ভূতের ব্যাপারে তারা মজা করতেও আগ্রহী নয়। আর সেটা যদি হয় হোয়াইট হাউসের ভূত তাহলে কথা ওখানেই থাক। হ্যাঁ, হোয়াইট হাউসে ভূতের বাড়াবাড়ি রকমের উৎপাতের গুজব এখন আর গুজব নয়। স্রেফ ভয় দেখানো আর ভয় পাওয়ার উপসঙ্গও নয়। সত্যি সত্যি হোয়াইট হাউসে ভূতের উৎপাতের কথা জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত গহিনে ভূতের আনাগোনা বাড়ে এখানে। বিশাল প্রাসাদের বাড়িটা রাতের আঁধারে গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করে। মানুষের ব্যস্ততা কমে গেলে বাড়ির ভিতরে গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়। সামান্য শব্দেই গায়ে কাঁটা দেয়। হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে জনপ্রিয় অথবা ভয় জাগানিয়া ভূত আর কেউ নন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। আব্রাহাম লিংকন ঘোড়ায় চড়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করেন মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেই। তারপর নাকি ঘুরে বেড়ান বাগান আর বাড়ির অলিগলি। ভূতের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে আরেক প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান তার স্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর এক জঘন্য জায়গায় থাকি’। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়কের এ চিঠি নিয়ে পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করে অনেকেই মনে করেছেন, হয়তো ভূতের যন্ত্রণায় কাবু তিনি। হোয়াইট হাউসের ভূতের গল্প এখানকার কর্মচারীদের মুখে মুখে। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন এখনো হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বসে আছেন! এটা কোনো কথা? কে না জানে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অফিসেই মারা গিয়েছিলেন। এ কথা শুনে, সবাই ছুটে যান চিলেকোঠায়। কিন্তু সেখানে এবার তাকে দেখা গেল না। ছায়ামানুষের উৎপাত হোয়াইট হাউসে তাই বলে থামেনি। আরেকটা ঘটনা বলা যেতে পারে। ১৯৭০ সাল। হঠাৎই প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানের দেহরক্ষী হঠাৎ ছুটতে শুরু করলেন। তিনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন কেউ একজন বার বার চিৎকার করে বলছেন, ‘আই অ্যাম ডেভিড বার্ন’। কে এই ডেভিড বার্ন? কেউ জানে না, তাকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। হোয়াইট হাউসের জমির মালিক ছিলেন এই ডেভিড বার্ন। মরে গিয়েও বেচারা হোয়াইট হাউসের মায়া ছাড়েননি। যেখানে প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স হয় সেখানের ছবি অনেকেরই চেনা। জায়গাটার নাম রোজ গার্ডেন। ১৮ শতকের ফার্স্ট লেডি রোজ গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক শতক পর ফার্স্ট লেডি ইলেন উইলসন গার্ডেনটি উত্খাতের নির্দেশ দেন। সে বাগানে যারা কাজ করেন, তারা বলাবলি করতে লাগলেন ডলি মেডিসনের আত্মা নাকি গার্ডেনে ঘুরে বেড়ায়। হোয়াইট হাউসের বেজমেন্টেও অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ানোর বদনাম রয়েছে। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসের বেজমেন্ট পুনর্নির্মাণের সময় সেখানে বিশাল আকৃতির বিড়াল দেখা যায়। অনেকে আবার ছোট বিড়াল ছানা দেখতে পান। প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান একবার বলেছিলেন, আব্রাহাম লিংকন নাকি তার দরজায় কড়া নেড়েছিলেন। ২০০২ সালের একটি ঘটনায় সাড়া পড়ে যায়। সেবার হোয়াইট হাউসে আগত অতিথিরা দোতলার পশ্চিম দিকের রুমেও অ্যাডামসের স্ত্রী এবিগেইলকে দেখেন। আরেকবার দেখা গেছে এক ব্রিটিশ সেনাকে। ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় এই ব্রিটিশ সেনা যে ঘরে আগুন দিতে চেয়েছিলেন, সে ঘরেই তাকে দেখা যায়। আরেকবার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের মেয়ে লিন্ডার দাবি, তিনি নাকি প্রেসিডেন্ট লিংকনের ছেলে উইলিকে দেখেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, উইলি মাস্টার বেডরুমটিতে বেশি সময় থাকতেন এবং এখানেই মারা যান। দ্য ইয়েলো ওভাল রুমটি প্রেসিডেন্ট লিংকনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। অনেকে বলেন, রুমটির জানালায় প্রায়ই লিংকন দাঁড়িয়ে থাকেন। ফার্স্ট লেডি গ্রেস ক্লোজিও একই দাবি করেছিলেন। ভৌতিক রহস্য থেকে হোয়াইট হাউসের সদর দরজাটিও বাদ যায়নি। অনেকে বলেন, ব্রিটিশ সেনারা নাকি এখনো তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন!

 

গোপন টানেল

১৯৫০ সালের দিকে ট্রুম্যানের আদেশে গোপন টানেল নির্মাণে মনোযোগী হয়। নতুন করে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয় সে সময়। এজন্য বড় ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। যেটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তাতে মাটির নিচে হোয়াইট হাউসের গোপন অংশ ছিল রীতিমতো কল্পকথার মতো। হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের সঙ্গে এই গোপন টানেলের যোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেছেন অনেকে। কংক্রিট ও ইস্পাতের বিম দিয়ে মাটির নিচে এই নির্মাণযজ্ঞ চলে। হোয়াইট হাউসের পূর্ব ও পশ্চিমের দালানগুলোর সঙ্গেও নতুন করে গোপন করিডর তৈরি করা হয় বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয় বোম্ব শেল্টার। ভয়াবহ পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণেও এই সুরক্ষিত ঘর প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রীয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশ্রয় দেবে। ১৯৮৭ সালে আরও কিছু গোপন টানেল নির্মাণের দাবি করেছেন অনেকে। সেবার ওভাল অফিসের যেখানে প্রেসিডেন্ট বসেন তার পায়ের নিচেই এই গোপন টানেল নির্মাণের কথা জানা যায়।

 

হোয়াইট হাউস সাদা কেন?

হোয়াইট হাউসের নাম কিন্তু প্রথমে হোয়াইট হাউস ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও সরকারি অফিস বলে একে প্রেসিডেন্টস প্যালেস, প্রেসিডেন্টস হাউস এক্সিকিউটিভ ম্যানশন... এমন বহু নামেই ডাকা হতো। ১৭৯২ সালে এই প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। শেষ হয় ১৮০০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রাসাদ হিসেবে একে আখ্যায়িত করা হতো তখন। সে সময়ই হোয়াইট হাউসের নির্মাণ ব্যয় ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ডলারেরও বেশি। জন্মসূত্রে আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী জেমস হোবান এর নকশা তৈরি করেন। তখন বিল্ডিংটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিল ধূসর রঙের পাথর। তাই হোয়াইট হাউস যে সাদা রঙের ছিল না, এ কথা স্পষ্ট। অবশ্য শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার ১২ বছর পরের কথা। ১৮১২ সালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ চলাকালে ১৮১৪ সালের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সেনাবাহিনী হোয়াইট হাউস জ্বালিয়ে দেয়। বেশ ভালোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভবনটি।  জেমস হোবানের পরামর্শ মতো আবার এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৮১৭ সালে। পোড়া দাগে ভবনটিকে চেনাই দায় ছিল। যে কারণে নির্মাণ কাজের শেষ পর্যায়ে নতুন রং লাগানো হয়। বিল্ডিংটির বিভিন্ন জায়গায় তখন আগুন ও ধোঁয়ার দাগ ঢাকতে এর দেয়ালে সাদা রং দেওয়া হয়। ধবধবে সাদা এই বাড়িকে তখন থেকেই ‘হোয়াইট হাউস’ বা সাদা বাড়ি বলে ডাকেন অনেকে। অবশ্য সরকারিভাবে হোয়াইট হাউস নামের প্রবর্তন হয় আরও পরে। প্রায় ৮৫ বছর। ১৯০১ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থিয়েডোর রুজভেল্ট সরকারিভাবে বিভিন্ন কাগজপত্রে এই নামটি ব্যবহার করেন।

 

সাদা বাড়িতে কত কী!

►  হোয়াইট হাউসে ১৩২টি কক্ষের পাশাপাশি ১৬টি পরিবার থাকার আয়োজন রয়েছে। রান্নাঘরেরও রয়েছে নানা ভাগ। একটি মূল রান্নাঘর, একটি ডায়েট কিচেন ও অন্যটি পারিবারিক রান্নাঘর।

►  হোয়াইট হাউসে ১৩২টি কক্ষ, ৩৫টি গোসলখানা রয়েছে।

►   ছয়তলা উঁচু হোয়াইট হাউসে ৪১২টি দরজা, ১৪৭টি জানালা, ২৮টি ফায়ারপ্লেস, ৮টি সিঁড়ি এবং ৩টি লিফট রয়েছে। এখানে কাজ করেন ১৭ হাজার কর্মী ও কর্মকর্তা।

►   প্রেসিডেন্ট জেমস পোলক হোয়াইট হাউসে প্রথম ছবি তোলেন। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট প্রথম হোয়াইট হাউসে মোটরগাড়ি চালিয়ে আসেন। তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টও আরেকটি প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি বিমানে চড়েন।

►   হোয়াইট হাউসে সুবিশাল একটি রান্নাঘর রয়েছে। প্রতিবার এই রান্নাঘর থেকে ১৪০ জন অতিথিকে রাতের খাবার আপ্যায়নের সমপরিমাণ সক্ষমতা রয়েছে। একবারে ১ হাজার জন অতিথিকে নাস্তা করানোর ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে।

►   পুরো হোয়াইট হাউসের বাইরের দেয়ালে রং করতে ৫৭০ গ্যালন রঙের প্রয়োজন হয়।

►   প্রতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ৩০ হাজারের বেশি দর্শনার্থী যান। এ ছাড়া সপ্তাহব্যাপী ৬৫ হাজার চিঠি, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফোনকল, ১ লাখ ই-মেইল এবং ১ হাজার ফ্যাক্স হোয়াইট হাউসের ঠিকানায় আসে।

►   ভবনটিতে একটি সিনেমা থিয়েটার, বোলিং খেলার ব্যবস্থা, ইনডোর এবং আউটডোর পুল, বিলিয়ার্ড এবং পিংপং টেবিলসহ একটি খেলার রুম, জগিং ট্র্যাক এবং টেনিস কোর্ট রয়েছে।

 

অন্যরকম

►   এ বছরের শুরুতে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, হোয়াইট হাউসের পশ্চিম বিল্ডিংয়ে ইঁদুরের উৎপাতে থাকা দায়। এ ছাড়া হোয়াইট হাউস নেভি কক্ষেও পেস্ট কন্ট্রোলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

►   হোয়াইট হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তাই রয়েছেন যিনি প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় টিভি অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রাখেন। অফিশিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় কোনো অনুষ্ঠান মিস করলে সেটি পরে দেখে নেন তারা।

►   হোয়াইট হাউসের বেজমেন্টে প্রেসিডেন্ট পরিবারের দাঁতের চিকিৎসায় ব্যক্তিগত ডেন্টিস্টের জন্য রয়েছে অফিস।

►   হোয়াইট হাউসের ক্ষমতার পালাবদলে প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে সময় লাগে মাত্র ৬ ঘণ্টা। ৯৩ জন্য কর্মী মালপত্র গুটিয়ে নিতে সাহায্য করেন।

 

►   দুনিয়া কাঁপানো ছবিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই ছবিটিকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও রক গায়ক এলভিস প্রিসলি হাত মিলিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের ঘটনা। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়ক, রক অ্যান্ড রোলের জনক এলভিস প্রিসলির বয়স তখন ৩৫। তিনি হাজির হন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়কার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বাসভবন হোয়াইট হাউসে। পরবর্তীতে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল তাকে। ইউএসএ ন্যাশনাল আর্কাইভ হিস্টোরিতে এই ছবিটিকে মোস্ট রিকুয়েস্টেড ফটোগ্রাফ হিসেবে সম্মান জানানো হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর