শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদেশে উচ্চশিক্ষার যতকথা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থাকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। সঠিক তথ্যের অভাব থাকলে বহুদিনের লালিত স্বপ্নও মাঝপথে এসে ব্যাহত হয়। স্বপ্ন বাস্তবায়ন তখন সুদূরপরাহত হয়। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলে প্রথমেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার উচিত স্বচ্ছ ধারণা রাখা। উচ্চশিক্ষার জন্য কোন দেশ ভালো হবে, স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে কিনা, ছাত্রত্বকালীন কাজের সুযোগ আছে কিনা,

যে কোর্সটি করার জন্য বিদেশে যেতে চাইছেন সেই কোর্সটি দেশে কোথাও করা যায় কিনা, করা গেলেও দেশে ও বিদেশে আপনি কী কী সুবিধা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন সেসব বিষয়ে তুলনামূলক

ধারণা রাখতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন সেটিই আপনার জন্য মঙ্গলকর হবে। বিদেশে পড়তে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

বিদেশে উচ্চশিক্ষা

শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্র কখনই নির্দিষ্ট সীমায় বন্দী থাকেনি। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত যেমন শিক্ষার শেষ নেই, তেমনি শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও বিস্তৃতি ঘটেছে দূর-দূরান্তে। মানুষকে বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সক্ষম। বিদেশে পড়া ছাত্রদের বুদ্ধিমত্তা ও মননশীলতা অধিকতর সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। নিজের গণ্ডি টপকিয়ে সামগ্রিক ও সাবলীল দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখায়। স্বাধীনভাবে জীবনযাপন, অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষমতা অর্জিত হয়। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সম্পর্কেও ধারণা অর্জন সম্ভব হয়। তাই দেখা যায়, বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান, এমনকি কখনো কখনো তা ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

আগে গড়ুন নিজেকে

চ্যালেঞ্জিং পেশায় সফল হওয়ার জন্য জরুরি সৃষ্টিশীল গুণ। আর সেই গুণ কমবেশি সবার মাঝেই থাকে। দরকার হয় গুণগুলোকে শানিত করার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলা। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দরকার হয় তেমনি কিছু গুণের। এক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তুতি হতে পারে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা। আপনি যে কোর্সের জন্যই বিদেশে যান না কেন, আপনার সিজিপিএ যত ভালো হবে ভর্তির সুযোগ এবং স্কলারশিপের সুযোগ ততই সহজে মিলে যাবে। শুধু পড়াশোনাই নয়, ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির সঙ্গেও জড়িত থাকা প্রয়োজন। সেটা হতে পারে ডিবেট, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া।  স্বেচ্ছাসেবকের কাজও হতে পারে। তাছাড়া নাচ, গান, খেলায় পারদর্শী হওয়া, ছবি তোলা, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারা বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য সহায়ক। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করার অভিজ্ঞতাও একটা ভালো কোয়ালিফিকেশন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজিতে দক্ষতার পাশাপাশি অবশ্যই অপর ভাষা জানতে হবে। সেটি হতে পারে, জার্মান, ফ্রেঞ্চ কিংবা চাইনিজ। ভাষা জানা থাকলে এই দেশগুলোতে বৃত্তি পাওয়া অনেক সহজ। আর সত্যিকারের শিক্ষাটা কাজে আসবে এখানেই। সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ইংরেজিতে করিয়ে নিতে হবে। পাসপোর্টে যাতে কোনো সমস্যা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হওয়া দরকার। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাইছে তার খরচ বহন করা তার পক্ষে সম্ভব কিনা সেটা আগে থেকেই যাচাই করা উচিত। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে ব্যয়ভার বহন করা শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে ভিসা মিলবে না। GRE, SAT, GMAT, IELTS I TOFEL-এ ভালো স্কোর না থাকলে বিদেশে পড়াশোনার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিশেষ করে বৃত্তি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। আপনার বিদেশ যাওয়ার পুরো ব্যাপারটিই যদি কোনো এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান তার আগে অবশ্যই তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া উচিত। যে দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেই দেশের কালচার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি, জব মার্কেট, অন্য দেশে তাদের গ্রহণযোগ্যতা, সামাজিকতা, জীবনমানের ব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিতে হবে। পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোন ধরনের পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত তা খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেই পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে তাত্পর্যপূর্ণ।

কোন দেশে পড়তে যাবেন

বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে যান। কেউ স্নাতক পড়ার সময়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করেন। কেউ স্নাতকোত্তর অথবা কেউ পিএইচডি করতে যান। অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যান। নিজেকে স্ট্যান্ডার্ড মানে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। তবে শুধু বিদেশ হলেই হলো না, শিক্ষার মানের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। সেখানে এশীয় দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে ফিনল্যান্ড অনেক বেশি সুনামের অংশীদার। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানি, কানাডা, সুইডেন, কোরিয়া মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অনেকে ডেনমার্ক, ইতালি, নরওয়ে, আয়ারন্যান্ড এবং পাশের দেশ ভারতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান।

কোথায় কেমন সুবিধা

বিদেশে পড়াশোনার জন্য দেশ নির্বাচন করাটা বড় ধরনের সিদ্ধান্তের পর্যায়ে পড়ে। কারণ একটি দেশে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে অন্য দেশের মিলবে না। কোনো দেশে টিউশন ফি বেশি, কোনো দেশে কম। কোথাও আবার টিউশন ফি লাগেই না। কোনো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই মানের কোর্সের মেয়াদ কম, কোনো দেশে বেশি। তাই সবকিছু বিবেচনায় রাখতে হবে। এর মধ্যে আবার কোনো দেশে পার্টটাইম জব করা যায়, আবার কোথাও সে সুযোগই থাকে না। দেখতে হবে কোন দেশে সহজেই স্কলারশিপ পাওয়া যায়, আবার কোথায় স্কলারশিপ পাওয়া জটিল। একটি দেশে যাওয়ার আগে ভাবতে তার আবহাওয়া কেমন। বিশ্বে এমনও অনেক দেশ আছে যেখানে পড়াশোনাকালীনই নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকে। সুতরাং সব বিষয় সুন্দরভাবে বিবেচনা করে পড়াশোনার জন্য দেশ নির্বাচন করতে হবে। যে দেশে যেতে চাচ্ছেন সেই দেশে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজন, দেশটির জার্নাল অথবা ইন্টারনেট ঘেঁটেও যাবতীয় তথ্য পেতে পারেন। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে। সেখান থেকে চলতি শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খরচ, স্কলারশিপ তথ্য, আবাসনব্যবস্থা, জীবনধারা, আবহাওয়া, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে উপযুক্ত দেশ নির্বাচন করুন। এক্ষত্রে দু-তিনটি দেশ নির্বাচন করা ভালো। কারণ একটি মাত্র দেশ পছন্দ করলে অনেক সময় ভিসা আটকে যায়। সেক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষের জন্য পিছিয়ে যায়। একাধিক দেশ পছন্দের তালিকায় থাকলে যে কোনো একটিতে সফলকাম হওয়া সহজ হয়। নির্ধারিত দেশেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করুন।

খরচ ও স্কলারশিপ

উন্নত জীবনমান ও মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেলেই হয়তো লুফে নিতে চাইবেন। কিন্তু তার আগে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে খরচের ব্যাপারটি। এক্ষেত্রে যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবেন তাদের বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে স্কলারশিপের মেয়াদ কত। সেটি নবায়ন করা যাবে কিনা। স্কলারশিপ যদি নবায়ন করাও যায় তবে তা কী ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে তা জানতে হবে। স্কলারশিপের অর্থে কী কী খরচ করা যাবে তা জেনে রাখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেখানকার জীবনযাত্রা কেমন ব্যয়বহুল এবং আপনার পক্ষে স্কলারশিপের অর্থে সবকিছু নির্বাহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না তা ভাবতে হবে ভালো করে। তবে অনেকেই আবার নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে পড়তেও পিছপা হন না। তাদের ক্ষেত্রে পছন্দের কোর্সটি সম্পন্ন করতে সর্বমোট কত খরচ হতে পারে এবং কীভাবে পরিশোধ করতে হবে সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে।

এক্ষেত্রে সহজ একটি উপায় হতে পারে উল্লিখিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করা। তারা ফিরতি মেইলে মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জানিয়ে দেবে। হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইন্সু্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি। খরচ কমানোর বিকল্প ব্যবস্থা অথবা সেমিস্টারের টিউশন ফিতে কিছুটা কমিশন পাওয়া যায় কিনা সেটার খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে না থেকে অনেকে আলাদা পরিবারের সঙ্গে থাকেন। এতে নির্ধারিত খরচের অনেকটায় কমে আসে। দেশটির জীবনযাত্রা কেমন ব্যয়বহুল এবং আপনার পক্ষে তা নির্বাহ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না জেনে নিতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি

আপনি যখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দেশের বাইরে পড়তে যাবেন, তখনই মাথায় রাখতে হবে এ যাবৎকাল পর্যন্ত আপনার অর্জিত সব সার্টিফিকেট আপনাকে শো করতে হবে। তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে প্রথমেই একাডেমিক কাগজপত্রসহ যাবতীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করতে হবে। এক্ষেত্রে সব ধরনের কাগজপত্র ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হতে হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে বোর্ড বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার সনদপত্র বা নম্বরপত্রগুলো ইংরেজিতে প্রদান করা হয়। তবে এর মাঝেও যদি কোনো কাগজপত্র বাংলায় থাকে সেগুলো অবশ্যই ইংরেজিতে অনূদিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কাগজপত্রগুলো দুভাবে অনুবাদ করা যায়। বোর্ডের একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদপত্র ও নম্বরপত্রের অনুবাদ কপি তোলা যায়। এক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের মূলকপি বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এটাই হচ্ছে সনদপত্র ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের উত্তম পদ্ধতি। তবে একটু সময় বেশি লাগলেও আপনি নোটারি পাবলিক থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনুবাদ করাতে পারেন। এক্ষেত্রে পূর্বের মূলকপি এবং অনুবাদকৃত কপি একসঙ্গে রাখতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে যে ছবি এবং প্রয়োজনীয় সব ফটোকপি দেওয়া হবে তা অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন সত্যায়িত ছাড়া এ ধরনের কাগজের কোনো মূল্যায়ন হয় না। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সব কাগজপত্রের মূলকপি দেখানো সাপেক্ষে বিনামূল্যে সত্যায়িত করা যায়। এ ছাড়া নোটারি পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে, দরকারি এসব কাগজের একটিও বাদ গেলে চলবে না।

চাই সহায়ক কোর্স

বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে ভেবে দেখুন আপনি কেন যেতে চান। নিজেকে বাছাই করা কিছু প্রশ্ন করে তার উপযুক্ত উত্তর দিন। তাতে কিছুটা সময় লাগলেও লাগতে পারে। মনে রাখা জরুরি, এই কারণগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। নতুন একটি সংস্কৃতি, নতুন ভাষা শেখা, নতুন জীবিকা নির্বাহ পদ্ধতি, নতুন জীবন পদ্ধতি কিংবা দেশের প্রচলিত  পড়ালেখার বাইরে নিজেকে ভিন্নমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে আগ্রহী। অথবা চাকরির বাজারে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি ডিগ্রি নিয়ে নিজের কদর বাড়াতে চান। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, সবকিছুই একটি নোট বইয়ে লিখে ফেলুন। তবে হ্যাঁ, উদ্দেশ্যগুলো অবশ্যই যেন সার্থক ও ইতিবাচক হয়। নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য যত বেশি সচেতন ও উদ্যোগী হবে, বাস্তব জীবনে তত বেশি লাভবান হবেন। এ ধরনের মানবিকচর্চাও বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিচ্ছু একজন ছাত্রের জন্য নিজেকে সমৃদ্ধ করার  পদ্ধতি হতে পারে। এ ছাড়াও রয়েছে বেশকিছু কোর্স গ্রহণ। পেশাগত উন্নতির জন্য সহায়ক কোর্সের কোনো বিকল্প নেই। আপনি যে ধরনের পড়াশোনা করতে চাচ্ছেন সে ধরনের কিছু শর্ট কোর্সও করে নিতে পারেন আগেভাগে। কোন ধরনের পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত তা খুঁজে বের করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পেশাগত সফলতা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সেই পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণও কম তাত্পর্যপূর্ণ নয়। তাই বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে উচ্চশিক্ষার অনেক কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটি সঠিক কোর্স বেছে নিতে হবে যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি একেবারে একটি নতুন বিষয়ও বেছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এবং চাহিদাসম্পন্ন এরকম কোনো বিষয়কেও আপনি পছন্দ করতে পারেন। তবে বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও যথেষ্ট চাহিদা আছে এরকম কোনো কোর্সকে উচ্চশিক্ষায় নির্বাচন করাই শ্রেয়। আপনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিতে পারেন। এ ছাড়া ওই কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এরকম কোনো বিদেশি বা দেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন।

সহায়ক আরও সংযুক্তি

বিদেশে পড়ালেখার জন্য যখন আবেদন করবেন তখন অনেক ধরনের কাগজপত্র সোপর্দ করতে হবে তা মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। একাডেমিক সনদপত্রের পাশাপাশি আপনাকে আরও কিছু সহায়ক সংযুক্তি রাখতে হবে। যেমন ভাষাগত দক্ষতার জন্য প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। আপনার পছন্দনীয় দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী যে ভাষার দক্ষতা থাকতে বলা হবে সে ভাষায় দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ ভাষা শিক্ষা কোর্সের সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিন। ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ IELTS ও TOFEL-এর সনদপত্রের সত্যায়িত কপি উপযুক্ত হবে। তবে সব দেশের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার সনদপত্র লাগে না। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ যার ওপর নির্ভর করবে তার অঙ্গীকারপত্র, আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হয়। নিজ খরচে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণস্বরূপ স্পন্সরের নামে দেশভেদে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং অনেক ক্ষেত্রে এ সলভেন্সি সার্টিফিকেটের বৈধতার পক্ষে বিগত ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেন রিপোর্টের সত্যায়িত কপিও সংযুক্তিতে রাখতে হয়। আবেদন ফি-এর ব্যাংক ড্রাফট বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাঠাতে হয়। এরপর ভর্তির অনুমতিপত্র পেলে অফার লেটার বা প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত টিউশন ফির সমপরিমাণ অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে। এই ড্রাফটের কপি ভিসা ইন্টারভিউর সময় দূতাবাসে দেখাতে হয়। ভিসা পেলে পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু টিউশন-এর অর্থ ব্যাংক ড্রাফট করতে হলে ব্যাংকে নিজের নামে একটি স্টুডেন্ট ফাইল চালু করতে হবে।

ভিসা প্রসেসিং

বিদেশে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ভর্তির অনুমতিপত্রে উল্লিখিত ডেডলাইনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে হবে। পৌঁছতে ব্যর্থ হলে ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট তারিখের আগেই সে দেশের ভিসা সংগ্রহ করা জরুরি। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেই শিক্ষার্থীর ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। এ ধরনের সুযোগ না থাকলে নির্দিষ্ট দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর নির্ভুলভাবে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা এবং নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউর মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সংযুক্তি হলো

— শিক্ষাগত সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূলকপি।

— পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে এবং পেশা, জন্ম তারিখ ও অন্যান্য সব তথ্যের সঙ্গে শিক্ষাগত কাগজপত্রের মিল থাকতে হবে।

— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার।

— আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র হিসেবে আবেদনপত্র।

— সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে পরিষ্কার মার্জিত পোশাকে তোলা রঙিন ছবি।

— টিউশন ফির ব্যাংক ড্রাফট।

— ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র।

— নিজ থানার পুলিশের ছাড়পত্র।

দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি

অনেক দিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলেছে। ভর্তি প্রক্রিয়াও শেষ। এখন কাঙ্ক্ষিত দেশে যাওয়ার পালা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান অথবা ভিসার ডেডলাইন অনুযায়ী আপনার হাতেও পর্যাপ্ত সময় আছে। তবে যাই হোক, হাতে সময় থাকা সত্ত্বেও দ্রুত দেশত্যাগ করা ভালো। অনেক সময় দেখা যায়, দুর্যোগ আবহাওয়া বা অন্যান্য কারণে যাত্রাপথে বিলম্ব হতে পারে। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ভিসা অন্যান্য কাগজ ইত্যাদি যথাযথ অবস্থায় আছে কিনা দেখে নিতে হবে। আপনি কোন পথে বিদেশে যেতে চান তা নির্ধারণ করার সময়ও অনেকগুলো বিকল্প পথ নির্ধারণের সুযোগ থাকে। বিমানে ভ্রমণ করতে চাইলে অনেক এয়ারলাইনস ছাত্রদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধার ব্যবস্থা রাখে, সেগুলো নিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য ডিসকাউন্ট রেটে টিকিট কেনার সুযোগ থাকে। আপনি নির্ধারিত দিনের টিকিট যদি বেশ কয়েক মাস আগে করেন এক্ষেত্রে অনেক এয়ারলাইনসে আপনি ছাড় পাবেন। সেখানে গিয়ে কোথায় থাকবেন এবং আপনার আবাসনের বিষয়টি কেমন হবে সে সম্পর্কেও আগেই সব ঠিক করতে হবে। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, যোগাযোগ, সেদেশের আইন সম্পর্কে ধারণা থাকাটা জরুরি। আর্থিক দিকগুলো সম্পর্কেও আপনার সচেতন থাকাটা জরুরি। পেমেন্ট করার সঠিক সময়টা কবে হবে, আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকলে সেই টাকা হাতে পাওয়ার ব্যাপারে কী কী করণীয় ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে নিন। সর্বোপরি আপনি যে দেশে যাচ্ছেন তার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে পর্যাপ্ত জেনে নিন। সম্ভব হলে দেশে থাকা অবস্থায় রান্না-খাওয়াসহ নিজের অন্যান্য কাজের অভ্যাস করুন। এতে হঠাৎ করে বিদেশের বুকে নিজেকে অসহায় লাগবে না।

বিদেশ যাত্রা

সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর ইমিগ্রেশনে আপনাকে অনেক ধরনের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। সে দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য অবস্থানের সময়কাল সম্পর্কে তাদের উত্তর দিতে হবে। ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, স্বাস্থ্য ও প্রতিষেধক সনদসহ অন্যান্য পেপার পরীক্ষা করবেন। তাদের কাছে সবকিছু ঠিক মনে হলে সে দেশে ঢোকার জন্য অনুমতি দেবেন। সে দেশের নিয়ম অনুসারে বা বিভিন্ন সময়ের বা ঋতুর চাপ অনুসারে ইমিগ্রেশনের আইনকানুনে কিছুটা জটিলতা থাকতে পারে। ধারণার চেয়ে কিছুটা বেশি সময়ও লাগতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে ইমিগ্রেশন অফিসারের সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। তারপর থাকবে কাস্টমস। সঙ্গে থাকা জিনিসের তালিকা আপনাকে কাগজে লিখতে হতে পারে। এরপর দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের ফলে আপনি কিছু শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। হঠাৎ ঘুমাবেন আবার জেগে উঠবেন, শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করবেন এবং কিছুটা অস্থিরতায় ভুগবেন। কিন্তু কয়েক দিন কেটে গেলে এ অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। তবে নতুন দেশে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর হালকা ব্যায়াম করে নিলে শরীর অনেকটাই ঝরঝরে হয়ে যাবে। তারপর সে দেশের সময় অনুযায়ী খাওয়া ঘুমের একটি রুটিন তৈরি করে নিন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আগত ছাত্রদের জন্য অভ্যর্থনার বিশেষ ব্যবস্থা রাখে। বিমানবন্দরে পৌঁছেই সে ক্ষেত্রে আপনি একজন গাইড পেতে পারেন। সেই গাইডই আপনাকে নতুন দেশের পরিবেশ, নিয়মনীতি, খাবার-দাবার এবং যাবতীয় করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবেন।

ক্রেডিট ট্রান্সফার

দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্সে পড়াকালীন সময়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ নিতে আগ্রহী হতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে আপনাকে চলতি কোর্সটি বাদ দিতে হবে না। একই কোর্সে বিদেশের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দেশে সম্পন্নকৃত কোর্সটির ক্রেডিটসমূহ গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। আপনার চলমান কোর্সটির জন্য কতটুকু ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারণ করবে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আপনাকে কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার করা কোর্স স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং এই বিষয়সমূহ বিদেশের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের অনুরূপ। ক্রেডিট ট্রান্সফারের সাধারণত একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন হয়। কোর্সের আউটলাইন এবং পাঠ্যতালিকা উপস্থাপন করতে হয়। কোর্স লেভেল সম্পর্কিত তথ্যাদি উপস্থাপন করবেন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কতৃক সুপারিশনামা থাকবে সেই সংযুক্তিতে। কোর্স অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতি যেমন পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি থাকবে। একই সঙ্গে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন জরুরি। কোর্সের মেয়াদ, লেকচার-ঘণ্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘণ্টা, ফিল্ডওয়ার্ক, এক্সট্রা কার্যাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা জরুরি।

কোন দেশ কেন সেরা

মালয়েশিয়া

কম খরচে বিদেশ থেকে উচ্চমানের শিক্ষা অর্জন পাশাপাশি পার্টটাইম জব করে খরচ বহনের উদ্দেশ্য থাকলে পর্যটনকেন্দ্রিক দেশ মালয়েশিয়া প্রথম পছন্দ হওয়ার কথা। তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও খাদ্যগত মিল রয়েছে। এখানে স্টুডেন্ট ফাউন্ডেশন, ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া যায়। ভালো মানের প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা কোর্সে এক বছরে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। কিছু পাবলিক ইউনিভার্সিটি বাদে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য ব্যাংক স্পন্সর প্রয়োজন হয় না। এইচএসসি বা এ-লেভেলে ন্যূনতম ২ পয়েন্ট প্রয়োজন।

ব্রিটেন

বার অ্যাট ল কোর্সটি ইংল্যান্ডের লিনকনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পলের যে কোনো একটি থেকেই করতে হয়। সনদ ইন থেকে দিলেও পড়াশোনার জন্য নির্ধারিত ৯টি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশেও বেশকিছু একাডেমিতে এই পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আইন পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্রিটিশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একই সময়ে পরীক্ষায় অংশ নেন। উত্তরপত্রের মূল্যায়নও হয় ইংল্যান্ডে। এসব স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে আইনে অনার্স পাসের পর সরাসরি ইংল্যান্ডে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়।

ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ডের ডিগ্রির মান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ক্যাটাগরিতে পড়ানো হয়। স্কলারশিপ বাবদ প্রায় ৫০০ ইউরো পাওয়ার সুযোগ আছে, তবে সব প্রোগামে নয়। খাবার, আবাসন ও অন্যান্য খরচ হিসেবে মাসে প্রায় ৪০০-৫০০ ইউরো লাগতে পারে। ফিনল্যান্ডে ইউরোপের বাইরের ছাত্র-ছাত্রীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে সামারে পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ থাকে। নরওয়েজিয়ান, ফিনিশ, রাশিয়ান ও সুইডিশ ভাষা জানা থাকলে কাজ করা সহজ। পড়াশোনা শেষে এক বছরের ভিসা দেওয়া হবে জব খোঁজার জন্য।

চীন

চীনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমান বৈশ্বিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং শিল্পায়নের বিশেষ ক্ষেত্রকে বিবেচনায় এনে কোর্স প্রণয়ন করা হয়। সে কারণে এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদের আহ্বান করে। উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে প্রচুর বৃত্তিও পাওয়া যায়। নিয়মিত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যুরো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ, রকফেলার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা বৃত্তি দেয়। পড়ার জন্য পেইচিং, সিংহুয়া, ফুদান, পেইচিং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়, নান্টং আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় সুনামে সমৃদ্ধ।

আমেরিকা

বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের শিক্ষার্থীর কাছে আমেরিকা উচ্চশিক্ষার প্রধান গন্তব্য। দেশটির হার্ভার্ড, স্টানফোর্ড, এমআইটি থেকে অর্জিত ডিগ্রির তুলনা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হয় না। তবে আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি সচ্ছল আর্থিক অবস্থাও জরুরি। তবে শক্তিশালী একাডেমিক রেকর্ড থাকলে দেশটির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া অনেকটাই সহজ। একই সঙ্গে এখানকার আকর্ষণীয় স্কলারশিপও শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণের বিষয়।

সর্বশেষ খবর