রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দা

দুর্ধর্ষ নারী  গোয়েন্দা

দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দাদের মারাত্মক সব অভিযানের কথা অজানা নেই কারও। আসল পরিচয় গোপন করে তথ্য সংগ্রহের এই কাজ তাদের নেশা ও পেশা দুটোই। প্রতি পদে পদে রয়েছে জীবননাশের ঝুঁকি। নারী গোয়েন্দাদের রোমাঞ্চ জাগানো কর্মকাণ্ড নিয়ে লিখেছেন— তানভীর আহমেদ ও সাইফ ইমন

 

নারী গোয়েন্দাদের ফাঁদ

যে কোনো দেশের গোপন তথ্যগুলো বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার হাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকে। পূর্বানুমতি ছাড়া টপসিক্রেট তথ্যগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও অফিসার ছাড়া অন্য কারও কাছে প্রকাশ করা হয় না। এ ধরনের গোপনীয় তথ্য বিশেষ গুরুত্ব পায় গোয়েন্দাদের কাছে। তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হলো নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের আসল পরিচয় গোপন করে তথ্য সংগ্রহে নামানো। নারী গোয়েন্দাদেরও মূল কাজটি এর থেকে একটু ব্যতিক্রম নয়। সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখার প্রয়াস হিসেবেই নারী গোয়েন্দাদের বিশেষ সফলতা রয়েছে। নারী গোয়েন্দারা গোপনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ছদ্মবেশ নিতে দক্ষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা আসল পরিচয় লুকাতে অন্য একটি কাজ জোগাড় করে তথ্য হাসিলের পথে হাঁটেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সূত্র থেকে গোপনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি সে পথেই হাঁটেন তারা।

এসব ব্যাপারে তাদের বিশেষ অনুশীলনী রয়েছে। নারী গোয়েন্দাদের পাতা ফাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা থেকে শুরু করে বিয়ে করার মতো ঘটনাও ইতিহাসে রয়েছে। নারী গোয়েন্দারা টার্গেট খুঁজে পাওয়ার পর তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

প্রেম না জমাতে পারলে কাজের সূত্র ধরে বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ করেন তারা। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংস্থার হয়ে গোয়েন্দাগিরিতে এসেছে এমন সংখ্যা বেশি হলেও ব্যক্তিগত কারও ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও নারী গোয়েন্দা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে। নারী গোয়েন্দাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, তাদের প্রধান অস্ত্র রূপ-সৌন্দর্য এবং তারা সহজেই যে কারও সন্দেহের বাইরে থাকতে পারে। বাস্তবতায় আবেগ ফুটিয়ে তুলতেও তারা বিশেষভাবে দক্ষতার পরিচয় দেন। একজন সেরা নারী গোয়েন্দার এসব গুণাবলি ছাড়াও খালি হাতে মারামারি ও বন্দুক চালনায় বিশেষভাবে দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। নারী গোয়েন্দারা টপসিক্রেট তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চলমান পদক্ষেপ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে বা কী করতে যাচ্ছে এমন সম্ভাবনার খবরগুলোও পাচার করে থাকেন। সাধারণভাবে এরা সরাসরি নিজে তথ্য পাচার করেন না। বিভিন্ন সূত্র ধরে এরা খবর গোপনে সরিয়ে ফেলেন।

পরিচয় লুকানো ও ছদ্মবেশ ধরার জন্য এলিট শ্রেণির নারী গোয়েন্দা প্রয়োজনে বছরের পর বছর নিজ পরিবার, দেশ ও কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে সরে থাকেন। বিভিন্ন বড় বড় মিশনে নারী গোয়েন্দাদের সম্পৃক্ত করা হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। বিচ্ছিন্নভাবে ও বিচ্ছিন্ন জায়গা থেকে এরা একযোগে কাজ করেন। নারী গোয়েন্দারা শুধু যে শত্রুপক্ষের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেন তা নয়, শত্রুপক্ষের কাছে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতেও তাদের জুড়ি নেই। প্রায়শই সূত্র হিসেবে এই নারী গোয়েন্দারা ভুল তথ্য সরবরাহ করে শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করে থাকেন। নারী গোয়েন্দাদের আসল পরিচয় কখনই জনসম্মুখে আসে না। তারা কোথায় থাকেন, কি করেন বা তার পরিবার সম্পর্কে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা সংরক্ষণ করা হয়। বিভিন্ন দেশের নারী গোয়েন্দারা একেকজন গোয়েন্দা সংস্থার ‘সিক্রেট এজেন্ট’ হিসেবে গুরুত্ব লাভ করায় তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিন্দু পরিমাণে ছাড় দেয় না বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন এমন অনেক নারী গোয়েন্দাও রয়েছেন।

 

বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে আলোচনায় ছিলেন তিনি

মাটা হ্যারি

নারী গোয়েন্দাদের তালিকা করলেই উঠে আসে মাটা হ্যারির নাম। নেদারল্যান্ডসে জন্মগ্রহণকারী এ গোয়েন্দা রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সরিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে পাচার করা কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না। শুধু গোয়েন্দা পরিচয় ঢাকার জন্য তিনি এক বৃদ্ধ লোককে বিয়ে করে ইন্দোনেশিয়া চলে আসেন। সেখানে নাচে, গানে তিনি সেলিব্রেটি হয়ে ওঠেন খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে। কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি নারী গোয়েন্দা। ইউরোপ, প্যারিসে ছুটে চলেন বিভিন্ন সময়। বহু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে আলোচনায় ছিলেন তিনি। তাকে ঘিরে অসংখ্য স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছে বিভিন্ন সময়। তবে এত কিছুর আড়ালে তার গোয়েন্দাগিরির কথা কখনই উঠে আসেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। জার্মানদের হয়ে ইউরোপ ঘুরে ঘুরে অসংখ্য গোপন যুদ্ধতথ্য সংগ্রহ করে পাচার করতে থাকেন এই দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দা। যদিও তিনি এক সময় দাবি করেন তিনি আসলে ফ্রান্সের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করেছেন, তবে সেটা প্রমাণিত নয়। পরবর্তীতে তাকে জার্মান ফায়ারিং স্কোয়াড গ্রেফতার করে হত্যা করে।

 

গোয়েন্দা হিসেবে ঘুণাক্ষরেও কেউ সন্দেহ করেনি তাকে

নুর ইনায়াত খান

প্রত্যেক গোয়েন্দারই নকল পরিচয় থাকে। তাদের আসল নাম লুকানো থাকে। এমনই একজন নারী গোয়েন্দা নুর ইনায়াত খান। তার কোড নাম ছিল মেডিলিন। রাশিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে দাবি করা হয়ে থাকে।

তার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি শৈশবেই লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন কিন্তু সেখান থেকে ফ্রান্সে চলে যান।

ফ্রান্সের রেডিওতে প্রচারের জন্য তিনি গল্প লিখতেন। লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। গোয়েন্দা হিসেবে তাকে ঘুণাক্ষরেও কেউ সন্দেহ করেনি। বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে গেলে তিনি প্রথমে ওমেনস অক্সিলারি এয়ার ফোর্স এবং পরবর্তীতে স্পেশাল অপারেশনসে যোগ দেন। তার গুপ্তচর বৃত্তির খবর জার্মানির নাজি বাহিনীর হাতে পৌঁছে যাওয়ার পর তিনি গোয়েন্দা কার্যক্রম থামিয়ে দেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সুচতুরভাবে ফাঁকি দেন সবাইকে। এবং এক সময় তিনি সব গোপন তথ্য নিজের কাছে জমা করতে শুরু করেন। তার কাছে অসংখ্য গোপনীয় যুদ্ধতথ্য থাকায় ৩০ বছর বয়সেই তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করা হয়।

 

২০০ ইংরেজ, ফরাসি ও বেলজিয়ান সৈন্যকে জার্মানদের হাত থেকে পালাতে সাহায্য করেন

এডিথ শাভেল

এডিথ শাভেলের জন্ম ইংল্যান্ডে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বেলজিয়ামের একটি নার্সিং স্কুলে কাজ করতেন। নিজ দায়িত্ব সূচারুরূপে পালন করার পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত গোপনে আরও একটি কাজ করতেন। কমপক্ষে ২০০ ইংরেজ, ফরাসি ও বেলজিয়ান সৈন্যকে জার্মানদের হাত থেকে পালাতে সাহায্য করেন। দখলদার বাহিনী এক সময় এডিথের এই গোপন কার্যক্রমের খবরটি জেনে যায়। পরে তারা তাকে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করে। শত্রুপক্ষের সৈন্যদের সহযোগী হিসেবে তার ওপর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। বিচারে এডিথ শাভেলের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় হয়। তৎকালীন নিরপেক্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেন তাকে ক্ষমা প্রদর্শনের আবেদন জানায়। কিন্তু জার্মানরা তাতে কর্ণপাত করেনি। তারা ১৯১৫ সালের অক্টোবরে ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

কিন্তু ব্রিটেন তাকে ভুলে যায়নি। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে তার দেহাবশেষ ইংল্যান্ডে এনে শেষকৃত্যের আয়োজন করে।

 

একজন সেলিব্রেটি বলে তার ওপর কোনো সন্দেহ পড়েনি নাজিদের

জোসেফাইন ব্যাকার

নৃত্যশিল্পী ও গায়িকা হিসেবে সুখ্যাত জোসেফাইন ব্যাকার যে একজন দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দা ছিলেন, সেটা অনেকেই জানতেন না। ফ্রান্সের যুদ্ধদল কৌশলে তার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে নারী গোয়েন্দা হিসেবে তাকে ব্যবহার করে। একজন সেলিব্রেটি বলে তার ওপর কোনো সন্দেহ পড়েনি নাজিদের। তাকে সহজেই নাজি বাহিনী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আর সেই বিভ্রান্তিকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধতথ্য হাতিয়ে নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ তুলে নেন জোসেফাইন। তার অপরূপ সৌন্দর্য অনেক উচ্চপদস্থ যুদ্ধ সেনাকেও বোকা বানিয়ে দিয়েছিল। তার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ দিয়ে আড়ালে গোপনতথ্য চুরি করতেন তিনি। সেন্ট লুইসের রূপবতী এই নৃত্যশিল্পী প্রায়শ নাচে-গানে মাতিয়ে রাখতেন আর কৌতুকের আড়ালে আসল খবর বের করে নিতেন তিনি। কিন্তু বেশি দিন তিনি গোয়েন্দা কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো চুরি হওয়ার পর তার ওপর সন্দেহ এসে পড়ায় তিনি সরে আসেন।

 

ক্রিস্টিনা স্কারবেক

ব্রিটিশ স্পেশাল অপারেশন্সের হয়ে যুদ্ধমাঠে সক্রিয় ছিলেন বিখ্যাত নারী গোয়েন্দা ক্রিস্টিনা স্কারবেক। বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ড আক্রান্ত হওয়ার পর এই নারী গোয়েন্দা যুদ্ধতথ্য চুরির কাজ শুরু করেন। তার বিশেষত্ব ছিল কোন পথে সেনা সদস্যরা কখন পার হবে সে সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য চুরি করে পাঠানো। তার দেওয়া তথ্য ধরেই হামলা পরিচালনা করা হতো। ক্রিস্টিনা স্কারবেকের তথ্য ছিল নির্ভুল। এ কারণেই আস্থার অপর নাম ছিলেন তিনি। তথ্য চুরি করে তিনি নিজেই ছুটে যেতেন তা পৌঁছে দিতে। একসময় তথ্য নিয়ে পালাতে গিয়ে তিনি শত্রুপক্ষের নজরে পড়েন। সে সময় তিনি পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নাজিদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তার ওপর কারাগারে নির্মম অত্যাচার চালানো হতো। কিন্তু সাহসী ও বুদ্ধিমান গোয়েন্দা ক্রিস্টিনা ঠিকই বোকা বানায় নাজিদের এবং কারাগার থেকে পালিয়ে আসেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাকে নাকি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা তথ্যবহুল নয়। ১৯৫২ সালে একটি ক্রুজশিপে ভ্রমণের সময় তাকে হত্যা করা হয়।

 

আন্না চ্যাপম্যান

একই সঙ্গে দুর্দান্ত মেধাবী, অনিন্দ্যসুন্দরী ও অপ্রতিরোধ্য নারী গোয়েন্দা আন্না চ্যাপম্যান। তার জন্ম স্ট্যালিনগ্রাদে। পড়াশোনা শেষে লন্ডনে গিয়ে বিয়ে করেন অ্যালেক্স চ্যাপমানকে। পেয়ে যান ব্রিটিশ নাগরিকত্ব। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে একটি অনলাইন আন্তর্জাতিক আবাসন সংস্থার প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১০ সালে এফবিআই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, তিনি একটি গুপ্তচর চক্রের প্রধান। গ্রেফতার করা হয় আন্নাকে। নিজের পরিচয় গোপন করে এতদিন গুপ্তচর বৃত্তির কাজ করে আসছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু তার পরিবর্তে বন্দী-বিনিময়ের আওতায় আন্না মুক্তি পেয়ে রাশিয়ায় চলে আসেন। নিজ দেশে ফিরে আন্না তার পেশাগত দক্ষতার জন্য পেয়ে যান বীরোচিত সংবর্ধনা। রাশিয়ার সর্বোচ্চ পদক তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়। সব ম্যাগাজিনের কভারে তার রঙিন ছবি। সব মিলিয়ে মহা-সেলিব্রেটি বনে যান আন্না চ্যাপম্যান। রাশিয়ান সরকারের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে দেখা যায় আন্নাকে।

 

ভয়ঙ্কর গুপ্তচর!

ভয়ঙ্কর গুপ্তচর হিসেবে নারী গোয়েন্দাদের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। উল্লেখযোগ্যদের তালিকায় নাজিদের বিভ্রান্ত করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া গোয়েন্দা ন্যান্সি ওয়েকের নামটি চলে আসে শুরুতেই। এই ভয়ঙ্কর নারী গোয়েন্দা ১৯১২ সালের ৩০ আগস্ট নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। এই নারী গোয়েন্দা ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু বিবাহ পরবর্তী জীবনে সাংবাদিকতাকে বিদায় জানান তিনি। এক ফরাসি শিল্পপতিকে বিয়ের পর পুরনো পেশা সাংবাদিকতাকে বিদায় জানিয়েছিলেন। ১৯৩৩ সালে ভিয়েনায় হিটলারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এই নারী গোয়েন্দা। এই প্রতিবেদন তৈরি তাকে নারী গোয়েন্দা হিসেবে নাজি বাহিনীর কাছে সহজে পৌঁছার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সেই সুযোগ বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান তিনি। বিয়ের পর যোগ দেন ফ্রান্স রেজিস্ট্যান্সের গেরিলা বাহিনী মাকিসে। গোপন তথ্য সংগ্রহে হঠাৎই ধরা পড়েন তিনি। ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে জার্মানদের হাতে ধরা পড়েন। অবাক করা ব্যাপার হলো—সেখান থেকেও ছাড়া পেয়ে লন্ডনে যান ন্যান্সি। যোগ দেন ব্রিটেনের স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভ (এসওই)-তে। আবারও গোয়েন্দার কাজে মন দেন এই ভয়ঙ্কর নারী। জার্মানরা তাকে ‘হোয়াইট মাউস’ বলে ডাকত। ১৯৪২ সালের পর গেস্টাপো বাহিনীর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে ছিলেন ন্যান্সি ওয়েক। তাকে হত্যা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে পুরো এলিট ফোর্স। এমনকি তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫০ লাখ ফ্রাঙ্ক। ন্যান্সির হদিস না বলার জন্য তার স্বামীকে খুন করে গেস্টাপো। পরে ব্রিটিশ বিমান মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি নেন ন্যান্সি। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট ৯৮ বছর বয়সে মারা যান এই দুঃসাহসী নারী গোয়েন্দা।

এমন আরেকজন নারী গোয়েন্দার কথা আলাদা করে বলতে হয়। তিনি এক পা নিয়েই গোয়েন্দাগিরিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি খোঁড়া নারী-খ্যাত ভার্জিনিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন গুপ্তচর ভার্জিনিয়া তার অসাধারণ গোয়েন্দাবৃত্তিতে বোকা বানিয়েছিলেন জার্মান বাহিনীকে। ভার্জিনিয়ার এক পা ছিল না। কাঠের তৈরি নকল পা নিয়েই তিনি যুদ্ধের ময়দানের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে পাচার করে দিতেন মার্কিন বাহিনীর কাছে। তাকে নিয়ে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ ছিল না জার্মানদের। তারা তাকে লিম্পিং লেডি বা খোঁড়া নারী বলে ডাকত। ১৯৪৪ সালে এসওইর গুপ্তচর হিসেবে তাকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়। সেখানে ফরাসি সেনাদের যুদ্ধ ও গুপ্তচর বৃত্তির প্রশিক্ষণ দিতেন ভার্জিনিয়া। জার্মান সেনাদের মধ্যে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির কাজেও তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তথ্য পাচার ও ভুল তথ্য দিয়ে শত্রুপক্ষে কলহ সৃষ্টির সফলতা তাকে অনন্য করেছে। ১৯৮২ সালের ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে ৭৬ বছর বয়সে মারা যান সর্বকালের সেরা ছদ্মবেশী এই নারী গোয়েন্দা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর