শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুঘল ই আজম (পর্ব - ৩)

রণক ইকরাম

মুঘল ই আজম (পর্ব - ৩)

ভারতবর্ষের সবচেয়ে ঐশ্বর্যমণ্ডিত সময় মনে করা হয় মুঘল সম্রাটদের শাসনামলকে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পতনকে অনেকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন বললেও প্রকৃত অর্থে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। এর আগ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছরের বেশি সময় ভারতবর্ষ শাসন করেছে মুঘলরা। যার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন মধ্য এশিয়ার সমরখন্দ ও ফারগানার অধিপতি বাবর। স্থাপত্যকলা, সমাজ সংস্কার, ঐশ্বর্যমণ্ডিত শাসন আর নানা কারণে মুঘল সম্রাটরা বরাবরই মানুষের কৌতূহলের শীর্ষে থেকেছেন। সেই মুঘল সম্রাটদের নিয়ে রকমারির শনিবারের বিশেষ ধারাবাহিক মুঘল-ই আজম। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের উত্থানপর্ব জেনেছি। আজ ছাপা হলো এর পরবর্তী অংশ।

 

কাবুলে বাবরের জীবনের নানা রং

পুত্র হুমায়ুনকে ক্ষমতায় বসানোর পর নিজের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাবর। কিছুদিন পরই তিনি কান্দাহার আর কালাত অবরোধ করেন। কালাত সহজে হাতে এলেও কান্দাহার দেড় বছরেরও বেশি সময় অবরোধ করে রাখেন বাবর। অবশেষে কান্দাহারও বাবরের দখলে আসে। মির্জা কামরানের হাতে কান্দাহারের ক্ষমতা তুলে দিয়ে কাবুল ফেরেন বাবর। ওই সময় আফগানিস্তান ও তার আশপাশের এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী শাসকে পরিণত হন বাবর। প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে কাবুল শাসন করেন বাবর। শুধু তাই নয়, পারিবারিক দিক থেকেও কাবুলের জীবন বাবরের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। সন্তানের জন্য তার একসময়ের আহাজারি এখানে আসার পর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এই কাবুলে বাবর মোট ১৮ জন সন্তানের জনক হন।

বাবরের পুত্র হুমায়ুনের আত্মজীবনী ‘হুমায়ুননামা’য় ওই সময়ের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। সেখান থেকেই খানিকটা দেখে নেওয়া যাক—

‘আল্লাহর রহমতে কাবুল বিজয়ের পর আমার বাবার প্রাসাদ সন্তান-সন্ততিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এখানেই তিনি ১৮টি সন্তানের জনক হন। তবে এক স্ত্রীর গর্ভেই তার সব সন্তানের জন্ম হয়নি। স্ত্রী মাহাম বেগমের গর্ভে জন্ম নেন মুঘল সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হুমায়ুন, বারবুল মির্জা, মেহেরজান বেগম, ইশান দৌলত বেগম এবং ফারুক মির্জা। অপর স্ত্রী মাসুমা বেগমের কোলজুড়ে আসে এক কন্যাশিশু। কিন্তু শিশুটি জন্ম দিয়েই মাসুমা বেগম ইন্তেকাল করেন। তার স্মরণে এ কন্যার নাম রাখা হয় মাসুমা বেগম।

স্ত্রী গুলরুখ বেগমের কোলজুড়ে যে সন্তানরা আসে তাদের নাম কামরান মির্জা, আসকারি মির্জা, শাহরুখ মির্জা, সুলতান আহমেদ মির্জা এবং গুল ইজার বেগম। দিলদার বেগমের গর্ভে জন্ম নেন গুলরং বেগম, গুল চিহরা বেগম, হিন্দাল মির্জা, আমি (‘হুমায়ুননামা’র লেখিকা) গুলবদন বেগম এবং আলওয়ার মির্জা।’

‘বাবরনামা’ আর ‘হুমায়ুননামা’র বর্ণনাতে বাদশাহ বাবরের মোট নয়জন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা আছে। আর ‘হুমায়ুননামা’তে বাদশাহ বাবরের মোট ১৯ জন সন্তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বাদশাহ বাবরের পুত্র হুমায়ুনের শাসনকালে বাবরের মাত্র ৪ পুত্র (বাদশাহ হুমায়ুনসহ) এবং ৪ কন্যা জীবিত ছিলেন।

তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কাবুলে বাদশাহ বাবর একটি নিশ্চিন্ত সুখী জীবনযাপন করছিলেন। তার কাছে তখন বিশাল একটি রাজ্য ছিল, রাজ্যে সুখ-সমৃদ্ধি ছিল, কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতাও ছিল না। তবে এরপরই বাবরের জীবনের সবচেয়ে বড় মোড় ঘুরে যায় যখন তিনি ভারতবর্ষের শাসক হিসেকে আত্মপ্রকাশ করেন। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবর একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতবর্ষকে প্রকৃত অর্থে নিজের রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন।

 

ভারতের পথে শক্তিশালী বাবর

নিজের অনেক বিজয়ের চেয়ে সমরখন্দ বিজয়কে বেশি এগিয়ে রেখেছিলেন সম্রাট বাবর। নিজের জীবনীতে তিনি বলেছেন, সমরখন্দ পুনরুদ্ধার ছিল আল্লাহর দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। ক্রমশ আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাবর এবার  ভারত ও এর পূর্বদিকে মনোযোগ দিতে চাইলেন। বিশেষ করে আইয়ুুদিয়ার রাজ্য এবং পেনিনসুলার মালায়া রাজ্য। বাবরের মধ্যে অদ্ভুত একটা বিষয় কাজ করত। একদিকে যেমন তিনি নিজেকে সৈয়দ বংশের সত্যিকার শাসনকর্তা দাবি করতেন ঠিক তেমনি দিগ্বিজয়ী বীর তৈমুরের উত্তরাধিকার হিসেবেও তার মুকুটের দাবিদার ভাবতেন নিজেকে। মূলত এই ভাবনাই তাকে তৈমুরীয় সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত পুরনো এলাকাগুলোর দিকে ধাবিত করে। এমনই একটি এলাকা ছিল তিমুর। এটি ছিল খিজর খানের রাজ্য। কিন্তু তিনি তার রাজ্যকে মিত্ররাজ্য পাঞ্জাবের হাতে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। পরে খিজর খান দিল্লি সালতানাতের সুলতান হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। বাবর পাঞ্জাব আক্রমণের পরিকল্পনা করলেন। এর আগে বাবর ইব্রাহিম লোদিকে একটি অনুরোধ করেন, ‘আমি তাকে একটি তালিকা পাঠিয়েছি এবং তার কাছে সেসব দেশের অধিকার চেয়েছি সেগুলো প্রাচীনকাল থেকেই তুর্কিদের ওপর নির্ভরশীল।’ ইব্রাহিম লোদি বাবরের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। আবার দুজনের মধ্যে দ্রুত কোনো যুদ্ধ হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা গেল না। ফলে বাবর নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য খানিকটা সময় পেলেন। আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে বাবর কান্দাহার বন্ধ করে দেন। ভারত দখলের জন্য চূড়ান্ত রণকৌশল প্রণয়ন করলেন বাবর। তার পরিকল্পনামতে কাবুলের পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ চালানো হবে। তিন বছর পর কান্দাহার ও এর পৌরদুর্গ বাবরের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এর মধ্যে অনেক ছোটখাটো যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই খণ্ডযুদ্ধগুলো বাবরের প্রস্তুতিতে দারুণ ভূমিকা রেখেছিল। ফলে পাঞ্জাবে প্রবেশের সময় ঘনিয়ে এলো। সেই সময় রাজদূত লঙ্গর খান নিয়াজি পরামর্শ দেন জানজুয়ার রাজপুতকে যেন এই অভিযানে সম্পৃক্ত করা হয়। ১৫২১ সালে গাখারসে বাবর তার মিত্রদের একত্রিত করেন। বাবর তাদের প্রত্যেককে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন এবং রানা সংঘকে পরাজিত করেন। এটিও তার ভারত দখলের অন্তর্ভুক্ত।

১৫০৮ সাল থেকে ১৫১৯ সালের সময়টুকু বাবরের স্মৃতিকথায় অনুপস্থিত। মূলত ভারত দখলের আগে দারুণ ঝামেলার মধ্যে দিনাতিপাত করেন বাবর। এর মধ্যেই ম্যাচলক মাস্কেট নামক এক ধরনের নতুন অস্ত্র ব্যবহারের কথা জানতে পারেন বাবর। ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে নিজের বাহিনীকে আধুনিক করে তোলেন বাবর। ম্যাচলক যন্ত্রের প্রশিক্ষণ দিতে একজন অটোমান ওস্তাদ আলীকে নিয়ে আসা হয়। এ যন্ত্রগুলো থেকে বিকট শব্দ হতো এবং কোনো তীর বা বর্ষা নিক্ষিপ্ত হতো না। এই অস্ত্রগুলো স্বল্পসংখ্যক সৈন্যের হাতে দেওয়া হয় শত্রুদের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্য। ভারতের পথে অগ্রসর হওয়ার সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের সময় এটি ব্যবহার করা হয় শুধু শত্রুদের অবস্থান এবং কৌশল পরীক্ষা করার জন্য।

 

ইতিহাস পাল্টে দেওয়া পানিপথের যুদ্ধ

ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের একটি শহরের নাম পানিপথ। এই শহরের প্রান্তরে ঘটে যাওয়া তিনটি বড় যুদ্ধের কারণে এটি বিখ্যাত।

দক্ষিণ তখন দিল্লির সিংহাসন সুলতান ইব্রাহিম লোদির দখলে ছিল। তার সভাসদের একজন ছিলেন দৌলত খান লোদি। তিনি সম্পর্কে সুলতানের চাচা ছিলেন। কিন্তু সুলতান কর্তৃক তার প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে তিনি বাবরকে ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ করার অনুরোধ করেন। বাবর প্রায় ১৫ হাজার সেনাসদস্য নিয়ে দক্ষিণে যাত্রা শুরু করেন। লোদির বিশাল বাহিনীর বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য তা পর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু বাবরের যাত্রার পূর্বেই সুলতান দৌলত লোদির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত হন এবং তাকে অপসারণ করতে সেনা দল প্রেরণ করেন। বাবরের কৌশলী আক্রমণের মুখে লোদির সৈনিকরা পরাজিত হন। মুঘল সেনারা লাহোর শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। যুদ্ধে বাবরের প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়। ফলে শক্তিবৃদ্ধির জন্য কাবুল থেকে নতুন সেনারা এসে বাবরের বাহিনীতে যোগ দেন। তারপর আলম খান এবং দৌলত লোদি বাবরের সৈন্যবাহিনী নিয়ে দিল্লি অভিযানে যান। যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদির বিশাল বাহিনীর হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। এদিকে লোদি বাবরকে রুখে দিতে ছোট আকারের ফৌজ প্রেরণ করেন। বাবর তার সন্তান হুমায়ুনকে হামিদ খানের বাহিনীকে পরাস্ত করতে পাঠান। এরপর বাবর তার বাহিনী নিয়ে আম্বালার দিকে রওনা হন। সেখান থেকে আরও দক্ষিণে দুয়াব নামক একটি গ্রামে বাবর লোদি প্রেরিত ফৌজের মুখোমুখি হন। বাবর অনায়াসে লোদির ফৌজকে পরাজিত করেন। যুদ্ধে প্রচুর সৈনিক বাবরের হাতে বন্দী হন। সেদিন রাতে বাবর সব সৈনিককে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এ পরাজয় মেনে নিতে পারেননি দিল্লির মসনদে বসে থাকা সুলতান লোদি। এবার লোদি তার সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের নিয়ে ফৌজ গঠন করা শুরু করেন। বাবরকে পরাজিত করতে দিল্লি থেকে প্রায় ৪০ হাজার সেনাসদস্যের বিশাল ফৌজ প্রস্তুতি নেয়। ১৫২৬ সালের ১৩ এপ্রিল দুই পক্ষ পানিপথ প্রান্তরে মুখোমুখি হয়। এখানে উভয় দল ৮ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে। এরপর ২১ এপ্রিল সকালে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন বাবর এবং লোদি।

লোদির প্রধান শক্তি ছিল অশ্বারোহী দল। কিন্তু তিনি নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন যে বাবরকে হারানো সহজ হবে না। তিনি ঘোড়ার পাশাপাশি প্রায় ১ হাজার যুদ্ধবাজ হাতি দিয়ে বিশাল এক হস্তীবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিটি হাতির ওপর তৈরি আসনে তিনজন সুদক্ষ তীরন্দাজ নিযুক্ত করেন। লোদির অধীনে দক্ষ তীরন্দাজ পদাতিক বাহিনীও ছিল। প্রয়োজনে সম্মুখযুদ্ধেও সমান দক্ষতার সঙ্গে লড়াই করার যোগ্যতা রাখতেন তারা। পদাতিক যোদ্ধারা তলোয়ার, কুঠার এবং বর্শা দিয়ে সজ্জিত ছিলেন। অন্যদিকে বাবরের মুঘল বাহিনীতে তুর্কি, মঙ্গোল, পারস্য এবং আফগান অঞ্চলের যোদ্ধারা ছিলেন। বাবরের সুদক্ষ পরিচালনায় তারা জাতিভেদ ভুলে একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। আর তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। লোদির বিশাল বাহিনীর খবর পাওয়ার পরও তারা বিচলিত হননি। মঙ্গোলদের চিরাচরিত কায়দায় বাবর অশ্বারোহী বাহিনী, তীরন্দাজ বাহিনী এবং পদাতিক বাহিনী দিয়ে দল ভারি করলেও তার কাছে ছিল গোপন বাহিনী। যাকে বলে ‘গোলন্দাজ বাহিনী’। তখনো ভারতীয়রা পশ্চিমা বারুদের গন্ধ পায়নি। তাই লোদি এই অস্ত্র সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। বাবরের বাহিনীতে চার ধরনের ভারী এবং হালকা কামান ছিল। গোলা হিসেবে পাথর এবং বিভিন্ন ধাতুর তৈরি গোলক ব্যবহার করেন।

প্রায় ২০টি কামানসহ ৮ হাজার সৈনিক সংবলিত মুঘল বাহিনী ইতিহাস গড়ার জন্য বাবরের নেতৃত্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পানিপথের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাবর তার পুরো বাহিনীর বাম দিকে পানিপথ শহর এবং ডান দিকে অসংখ্য খাদ নির্মাণ করে এমনভাবে অবস্থান করেন যে লোদি বাহিনীর আক্রমণের পথ খুব সরু হয়ে যায়। তারপর তার নির্দেশে সৈনিকরা শহর থেকে শত শত গরুর গাড়ি নিয়ে হাজির হন। বাবর গরুগুলো ছেড়ে দিয়ে গাড়িগুলোকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে অর্ধবৃত্তাকার প্রতিবন্ধক তৈরি করেন এবং গাড়িগুলোর মাঝে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা রাখেন। সেখানে তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পদাতিক সেনাও মোতায়েন করেন। এরপর প্রতিবন্ধক থেকে আরও পেছনে বাবর তার কামানগুলো স্থাপন করেন। এর ফলে গোলন্দাজ বাহিনী লোদি বাহিনীর প্রধান অস্ত্র তীরন্দাজদের সীমানার বাইরে চলে যায়। যুদ্ধের শুরুতেই লোদি বাহিনীকে চমকে দেন বাবর। তার ৮ হাজার সৈনিক যখন কৌশলে লোদির ৪০ হাজার যোদ্ধাকে ঘিরে ফেলল তখন সুলতান নিজেই খেই হারিয়ে ফেললেন। লোদি তার হস্তীবাহিনী দিয়ে চড়াও হলেন ঘিরে ফেলা মুঘল সৈনিকদের ওপর।

কিন্তু বাবর বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখলেন এবং দৃষ্টিপাত করলেন গোলন্দাজ বাহিনীর ওপর। হঠাৎ একসঙ্গে ২০টি কামান গর্জে উঠল। লোদির হস্তীবাহিনী এর আগে কখনো কামানের আওয়াজ শোনেনি। একদিকে কামানের গোলায় লোদি বাহিনীর ঘোড়া, হাতি এবং সৈনিকদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। অন্যদিকে হাতিগুলো ভয় পেয়ে উল্টো পাগলের মতো লোদি বাহিনীর ওপর চড়াও হলো। হাতির পায়ের তলায় পিষে যেতে থাকলেন সুলতানের সৈন্যরা।

বাবরের গোলন্দাজ বাহিনী এবং তীরন্দাজ বাহিনী অতি উৎসাহে আক্রমণ চালাতে লাগল। মুঘলরা লোদি বাহিনীকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ না দিয়ে নির্বিচারে হত্যা করতে লাগল। তাদের সঙ্গে বাবরের অতিরিক্ত সৈনিকরা যোগ দিলে যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ বাবরের হাতে চলে যায়।

যুদ্ধে সুলতান ইব্রাহিম লোদি মৃত্যুবরণ করেন। অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, লোদি তখন যুদ্ধের তীব্রতায় সৈনিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে অতিরিক্ত ফৌজ থাকার পরও তিনি তাদের ব্যবহার করতে পারেননি। সুলতানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই লোদি বাহিনী পরাজয় বরণ করে নেয়। বাবরের গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয় দিল্লির সালতানাত।

 

বাবর যদি ভারতে না আসতেন!

ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আকবর বা শাহজাহানের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলেও মূল ভিত্তিটা কিন্তু বাবরের তৈরি। তাই বাবর যদি কাবুল ছেড়ে ভারতের দিকে অগ্রসর না হতেন তাহলে গোটা উপমহাদেশের ইতিহাসটাই পাল্টে যেত। কী হতো বাবর যদি ভারতে না আসেতন?

ইতিহাসবিদ হরবংশ মুখিয়ার মতে, ‘সংস্কৃতি, সাহসিকতা আর সেনা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাবর নিঃসন্দেহে অনন্য একজন ছিলেন। যদি বাবর ভারতে না আসতেন, তাহলে এখানকার সংস্কৃতি কখনই এতটা বিচিত্র হওয়ার সুযোগ পেত না।’

ভাষা, সংগীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, পোশাক অথবা খাবার-দাবারসহ ভারতবর্ষের চলতি জীবনযাত্রায় মুঘলদের অনস্বীকার্য ভূমিকা রয়েছে। শত বছর পরও যার চর্চা করে চলেছে এখানকার মানুষ।

মাত্র ১২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন বাবর। বাবরের  হার না মানার মানসিকতাই তাকে এগিয়ে নিয়েছে বার বার। নিজের জন্মভূমি সমরখন্দের কথাই ধরা যাক। সেই ভূমি উদ্ধারের একটা সুপ্ত বাসনা বাবরের মধ্যে ছিল। তিনবার সমরখন্দ দখলের পরও হাতছাড়া হয়ে যায়। তবু বাবর দমে যাননি। আবার ইতিহাসবিদদের মতে, সমরখন্দের ব্যর্থতাই আসলে বাবরকে বড় শাসকে পরিণত করে। সমরখন্দ দখলে রাখতে পারলে বাবর ভারত দূরে থাকুক হয় তো কাবুলের দিকেই অগ্রসর হতেন না।

ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, সম্রাট বাবর হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম শাসক, যিনি নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন। ‘বাবরনামা’-তে তার জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতা দুটোরই চমৎকার বর্ণনা রয়েছে।

তুর্কি ভাষায় কবিতা লিখতেন বাবর। বাবরনামায় ব্যবহৃত বেশকিছু শব্দ এখন ভারতবর্ষে প্রতিদিনের ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে। যেমন ‘ময়দান’। এই শব্দটা বাবরের জীবনীতেই প্রথমবার পাওয়া গিয়েছিল। সেভাবেই অনেক তুর্কি আর ফারসি শব্দ ভারতীয়দের মুখের ভাষায় ঢুকে গেছে।

ব্যক্তিগত জীবনেও বাবর একজন অনুপ্রেরণীয় মানুষ ছিলেন। যুদ্ধ, সাম্রাজ্য পরিচালনার মধ্যেও নিজের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন বাবর। তার মা এবং নানীর সঙ্গে যেমন গভীর সম্পর্ক ছিল, তেমনই বোনের কাছেও বাবর ছিলেন এক আদর্শ ভাই। আবার ছেলে হুমায়ুনের প্রতিও ছিল গভীর পিতৃস্নেহ।

হুমায়ুনের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল। সেই সময় বাবর ছেলের শরীর ছুঁয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন পুত্রের অসুখ সারিয়ে দিয়ে তিনি যেন বাবরের প্রাণ কেড়ে নেন।

হুমায়ুন সেই যাত্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু ওই ঘটনার কিছুদিন পরই বাবর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই মৃত্যু হয় তার। ফলে বিভিন্ন দিক থেকে স্বয়ং বাবর এবং বাবরের প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য ভারতবর্ষে এমন ছাপ রেখেছে যা আসলেই অনস্বীকার্য।

 

বাবরি মসজিদ কাহিনী

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যায় ষোড়শ শতকে নির্মিত বাবরি মসজিদকে ঘিরে অনেক দশক ধরেই বিতর্ক চলছিল, হয়েছে বহু মামলা মোকদ্দমাও। এই বাবরি মসজিদটি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অনেকেরই ধারণা, প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তখন থেকেই এর নাম হয়ে যায় বাবরি। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, বাবর নন- এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন অন্য একজন। বাবরি মসজিদ আদতে বাবরের এক সেনাপতি মীর বাকি তাসখন্দি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি মূলত তাসখন্দের বাসিন্দা ছিলেন। জানা যায়, পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভের পর মুঘল সেনারা অযোধ্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তখন বাবর আগ্রাতেই থেকে গিয়েছিলেন। সেই সময় মীর বাকিকে নেতা নির্বাচন করেছিলেন বাবর। তিনিই এই মসজিদের নির্মাতা ছিলেন। তারপর বাবরকে খুশি করার জন্য এর নাম রাখেন বাবরি মসজিদ। আবার স্থানীয় কিছু মতবাদ অনুযায়ী, বাবরের হুকুমেই এই মসজিদ তৈরি হয়েছিল। দুই ধরনের মন্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হওয়া যায় যে, মসজিদটি নির্মাণে বাবর সরাসরি জড়িত ছিলেন না। এ বিষয়ে বাবরের জীবনী ‘বাবরনামা’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। তবে সেখানে বাবরি মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে কোনো উল্লেখই নেই। এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবি, অযোধ্যা রামচন্দ্রের জন্মভূমি হওয়ায় ওখানে আগে মন্দির ছিল। সেটা ভেঙেই নাকি পরবর্তীতে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

 

অভিনব শাসক বাবর

বাবর বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। একদিকে তিনি যেমন ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি, অন্যদিকে শাসক হিসেবেও ছিলেন দারুণ প্রজাবৎসল। পুত্রবৎসল পিতা, দয়ালু শাসক এবং মহান বন্ধু হিসেবে বাবর তার সমকালীন শাসকদের মধ্যে আলাদা খ্যাতি লাভ করেন। বাবরের জীবনের অনেক ঘটনাই ইতিহাসের বাঁক বদলের সাক্ষ্য হয়ে আছে। জীবনের কোনো একসময় সম্রাট বাবর এবং শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানকশাহীর মধ্যে সাক্ষাৎ ঘটে। এ প্রসঙ্গে শিখ ঐতিহাসিকরা একটি চমৎকার ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। তাদের মতে, একাধিকবারের ব্যর্থতা সত্ত্বেও ভারত আক্রমণের এতটুকু পিছপা হননি বাবর। বরং সব প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে চূড়ান্ত গন্তব্য অভিমুখে ছুটেছেন বার বার। শেষবারের মতো নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য বাবর দিল্লি অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। বাবর পাঞ্জাবের ছোট শহর এমিনাবাদে পৌঁছান, তখন তার সামনে বেশ কজন বন্দীকে হাজির করা হয়। বন্দীদের মধ্যে একজনের প্রতি নজর পড়তেই বাবর তার আসন থেকে উঠে দাঁড়ান এবং তার মন্ত্রীকে তুরানিয়ান ভাষায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কী ব্যাপার! গজনিতে অবস্থান করার সময় যে ব্যক্তি স্বপ্নে দেখা দিয়ে আমাকে তৃতীয়বার ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান এবং বিজয়ের সুসংবাদ দেন- সেই সম্মানিত মানুষকে এখন আমি স্বশরীরে দেখতে পাচ্ছি।’

এই সম্মানিত ব্যক্তিই ছিলেন শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক। বাবর তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্বোধন করেন এবং তাকে এমন ইচ্ছা প্রকাশ করতে আবেদন জানান যা তিনি পূরণ করতে পারেন। গুরু নানক তার সঙ্গে থাকা অপরাপর বন্দীদের মুক্তি প্রার্থনা করেন। তত্ক্ষণাৎ তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়। শিখ ধর্মাবলম্বীরা বাবরের এমন মহত্ত্বের কথা গভীর মনে স্মরণ করেন।’

শুধু তাই নয়, ভারত বিজয়ের পরও নানা ক্ষেত্রে বাবর তার সুদূরপ্রসারী চিন্তার ছাপ রেখেছিলেন। ভারতবর্ষ শাসন করতে গিয়ে বাবর প্রথমেই নিজস্ব নীতি অবলম্বন না করে পাঠান রাজাদের প্রশাসন ব্যবস্থা ঠিক রাখেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তার পাঁচ বছরের স্বল্পকালীন রাজত্বকালে তিনি সরকার পরিচালনার জন্য কোনো নয়া পদ্ধতি চালু করেননি।

বাবরের ভারতবর্ষ শাসন খুব সহজ ছিল না। অনেক দূরের শাসক হওয়া এবং সাম্রাজ্যের বিশালতার কারণে এ প্রান্ত ও প্রান্তে বিদ্রোহ লেগেই থাকত। বাবর নিজে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকতেন এবং দেশ পরিচালনার জন্য সেনাপতিদের ওপর নির্ভর করতে হতো অনেকাংশেই। তার সময় কোনো প্রশাসনিক নিয়মকানুন বা প্রথা, কোনো বিচার পদ্ধতি চালু ছিল না। সম্রাট এবং তার সেনা নায়করা মাত্র কয়েকটি মামলার বিচার করেন। সম্রাট বাবরের কন্যা এবং সম্রাট হুমায়ুনের বৈমাত্রীয় ভগ্নি গুলবদন বেগম তুর্কি ও ফারসি ভাষায় পারদর্শিনী ছিলেন। তিনি সম্রাট বাবরের বিচার পদ্ধতির কয়েকটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। সেখান থেকে বাবরের বিচারপদ্ধতির একটি ধারণা পাওয়া যায়।

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বৈরাম খানের পুত্র মির্জা খানের ক্ষেত্রে। বৈরাম খানের পুত্র মির্জা খান ও মির্জা মোহাম্মদ হোসেন বিদ্রোহ করে কাবুল অবরোধ করেন। সম্রাট অল্প দিনের মধ্যে দুর্গটি পুনরায় জয় করেন। মির্জা খান তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকেন, কারণ তার মা ছিলেন সম্রাটের চাচি। মোহাম্মদ হোসেনও তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকেন। কারণ তার স্ত্রী ছিল সম্রাটের আত্মীয়। সম্রাট বাবর তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন। তাদের কাউকেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। সম্রাট বাবর বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার মতো অবকাশ পাননি। অবশ্য পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা ইসলামী আইনের ভিত্তিতে বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। যদিও এ ব্যাপারে সম্রাটের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। লিখিত বা ক্রমানুসারে বিচারব্যবস্থার কোনো বিধিবিধান না থাকলেও সম্রাটরা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে ন্যায়নিষ্ঠ বিচার করতে অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন।

 

হুমায়ুনের জন্য অসিয়তনামা

ভারতবর্ষের প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের পুত্রভক্তি ছিল অসাধারণ। মৃত্যুর আগেই নিজের পুত্রদের নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন বাবর। সবার মধ্য থেকে হুমায়ুনকে পরবর্তী সম্রাট হিসেবে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করে যান তিনি। আর মৃত্যুকালে সেই হুমায়ুনকে নিম্নলিখিত অসিয়ত করে যান। এই অসিয়তনামার লিখিত মূল দলিলটি ভূপালের সরকারি লাইব্রেরিতে এখনো সংরক্ষিত আছে। ১৯২৯ সালের আগস্ট মাসের ‘The Indian Review’ পত্রিকায় ড. সৈয়দ মাহমুদ লিখিত প্রবন্ধের ৪৯৯ পৃষ্ঠায় এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রিত Indian Islam বইয়ের ১৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় এর ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যায়। বাবর লিখে গেছেন—

‘বাছা’, ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোক বাস করে। আল্লাহতায়ালাকে ধন্যবাদ যে তিনি তোমাকে এই দেশের শাসক হওয়ার তৌফিক দিয়েছেন, এখন তোমার কর্তব্য এই যে—

(১) ধর্ম ব্যাপারে গোঁড়ামির বশীভূত হবে না। দেশের সব শ্রেণির মানুষের ধর্মমত ও আচারের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রেখে নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার করবে।

(২) বিশেষভাবে গো-হত্যা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে ভারতবাসীর হৃদয়ে জায়গা পাওয়া যাবে। এতে এদেশীয় লোক তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

(৩) কোনো সম্প্রদায়ের উপাসনালয় কখনো ভাঙা চলবে না। সবসময় ন্যায়পরায়ণ থাকতে হবে। তাহলে রাজা-প্রজার মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় থাকবে এবং দেশে শান্তি ও সন্তুষ্টি বিরাজ করবে।

(৪) ইসলাম প্রচারে জোর প্রয়োগের অস্ত্রের চেয়ে ভালোবাসা ও বাধ্যতার তলোয়ার অনেক বেশি কার্যকরী হবে।

(৫) শিয়া-সুন্নির বিরোধের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করতে হবে। নইলে এর কারণে ইসলাম দুর্বল হয়ে পড়বে।

(৬) প্রজাদের নানা বৈশিষ্ট্যকে বছরের বিভিন্ন ঋতু বলে গণ্য করতে হবে, এতে রাষ্ট্রদেহে কোনো ব্যাধি প্রবেশ করতে পারবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর