শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারকা শুভেচ্ছাদূত

তানিয়া তুষ্টি

তারকা শুভেচ্ছাদূত

জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মাঝে নির্ধারিত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মহল থেকে শুভেচ্ছাদূত নিয়োগ দেওয়া হয়। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মর্যাদা পান বিশ্বের নামকরা চলচ্চিত্র তারকা, শীর্ষস্থানীয় নেতা, খেলোয়াড়সহ উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের মধ্যে মানবহিতৈষী ব্যক্তিরা। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনিসেফের হয়ে তারা খাদ্য, স্বাস্থ্য কর্মসূচি, শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন, পরিবেশ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তারা সচেতন বার্তা ছড়ানোর কাজে সহায়তা করেন। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য তেমন কয়েকজন শুভেচ্ছাদূত নিয়ে আজকের আয়োজন।

 

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

ইংরেজি চলচ্চিত্র দেখেছেন অথচ টাইটানিক দেখেননি এমন দর্শক হয়তো পাওয়া মুশকিল। এমনকি টাইটানিকের জ্যাক চরিত্রটি অনেকের কাছে স্বপ্নের নায়কও বটে। তবে বাস্তব জগতে তিনিই লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। ২০১৪ সালে ডিক্যাপ্রিওকে জাতিসংঘের বার্তাবাহক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে অস্কার পুরস্কার গ্রহণের সময়কার বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। জাতিসংঘের মহাসচিব, বান কি মুন তাকে নিয়োগের সময় বলেছিলেন, মি. ডিক্যাপ্রিও পরিবেশগত আন্দোলনে একটি বিশ্বাসযোগ্য কণ্ঠ। তার মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য এবং সমুদ্র ও বন সংরক্ষণ বিষয়ে সার্বক্ষণিক প্রচারাভিযান চালিয়ে থাকেন। জনগণের সচেতনতার ওপর তা বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অভিনয়ের জাদুতে শুধু দর্শক মুগ্ধ নয়, তার হাতে এসেছে তিনবার গোল্ডন গ্লোব পুরস্কার, একবার একাডেমি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার। ভক্ত হৃদয়ে আলোড়ন ছড়ানো এই গুণী অভিনেতা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে নিজের কণ্ঠস্বর সবসময় রেখেছেন সোচ্চার।

 

ডেভিড বেকহ্যাম

ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূতের দায়িত্ব পালন করেন ফুটবলের বরপুত্র ডেভিড বেকহ্যাম। খেলার মাধ্যমে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রচারণায় খেলোয়াড় জীবনের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারকে কাজে লাগিয়েছেন। যাতে সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়। একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার ভূমিকা হলো, সারা বিশ্বে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা। এ ছাড়াও শিশুদের জন্য হুমকি বা সহিংসতা সৃষ্টি করে এমন সব বিষয়ে তাদের সচেতন করে তোলা। যাতে প্রতিটি শিশু সুন্দর শৈশব নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। ডেভিড বেকহ্যাম ইংল্যান্ড ফুটবল দলের বর্তমান খেলোয়াড় এবং সাবেক অধিকায়ক। ডেভিড বেকহ্যামের বিশ্ব পরিচিতির অন্যতম কারণ তার জাদুকরি ফ্রি কিক। তিনি দুইবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তাছাড়া ২০০৪ সালে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত পেশাদার খেলোয়াড়। এ ছাড়া ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে তিনি গুগলে খেলাধুলা সম্পর্কিত সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত ব্যক্তিত্ব। ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেকহ্যাম মোট ৫৮টি প্রতিযোগিতামূলক খেলায় ইংল্যান্ড ফুটবল দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফুটবল মাঠ কাঁপানো দাপুটে এই খেলোয়াড় শিশুদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

২০১০ সালে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জাতিসংঘ সংস্থা ইউনিসেফের শিশু ফান্ডে জাতীয় শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত হন। দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগেই প্রিয়াঙ্কা ইউনিসেফের সঙ্গে ভারতের পিছিয়ে পড়া শিশুদের উন্নয়নে কাজ করেছেন। কয়েক বছর এভাবে নিজের ভূমিকা রাখার পর তিনি দূত হিসেবে মনোনীত হন। ইউনিসেফের হয়ে তার কাজের পরিধি হলো- শিশু অধিকার এবং বয়ঃসন্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সচেতনতা বাড়ানো। ২১ মে তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। টানা চার দিন কক্সবাজার, উখিয়া এবং টেকনাফের ১০টি শরণার্থী ক্যাম্প এবং সীমান্তের কাছের রোহিঙ্গা আগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেছেন, শরণার্থী শিশুদের দায়িত্ব পুরো পৃথিবীকে নিতে হবে। কারণ তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাদের সামনে এমন নৃশংসমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে, যেগুলো তারা মুছে ফেলতে পারছে না, ঘুমের মধ্যেও তারা ভয় পাচ্ছে। হৃদয় খুলে দিন। আপনারা মনে সহমর্মিতা আনুন। আমাদের নিজেদের শিশুদের মতো এই শিশুদের দেখুন। ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড উপাধি লাভ করেন। ২০০২ সালে তামিল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তার অভিষেক হয়। এরপর বলিউডকে তিনি উপহার দিয়েছেন একাধিক নামকরা চলচ্চিত্র। বলিউড ছাড়িয়ে বর্তমানে তিনি হলিউডেও দারুণ জনপ্রিয়। জিতেছেন একাধিক পুরস্কার। ২০১৬ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত চতুর্থ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী অর্জন করেন এবং টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী নারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। অভিনয়জগতে এমন সাড়া ফেলা অভিনেত্রী মানবসেবায়ও পিছিয়ে নেই।

 

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

২০০১ সালে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়। তাছাড়া জাতিসংঘের মানবসেবামূলক যে কোনো কাজে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জাতিসংঘের রিফিউজি এজেন্সির সঙ্গে কয়েক বছর চাকরিও করেছেন। বিশ্বব্যাপী মানবতার প্রচারে একজন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিই সবচেয়ে দূরবর্তী ও দুর্গম স্থানগুলোতে গিয়েছেন। কমপক্ষে ৪০টির বেশি ক্ষেত্র ভ্রমণ করেছেন। ২০১২ সালে জোলি তার অসাধারণ সেবার জন্য বিশেষভাবে স্বীকৃত হন। জাতিসংঘের হাইকমিশনারের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ দূতের খেতাব দেওয়া হয়। তিনি কূটনৈতিক পর্যায়ে ইউএনএইচসিআরকে প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈশ্বিক স্থানচ্যুতিসহ মনবতা লঙ্ঘনের নানা বিষয়ে তিনি কাজে করেন। একজন মার্কিন অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবহিতৈষী হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। অভিনয়ের পারদর্শিতা তাকে তিনবার গোল্ডন গ্লোব পুরস্কার, দুইবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার এবং একবার একাডেমি পুরস্কার এনে দিয়েছে। এ ছাড়াও অন্য আরও অনেক পুরস্কার তো আছেই। একাধিকবার তিনি বিশ্বের সেরা সুন্দরী হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে দম ফেলার ফুরসত না থাকলেও মানবতার সেবায় কিন্তু সর্বজনসমাদৃত।

 

সেলিনা গোমেজ

পেশাগত কাজের পাশাপাশি সেলিনা গোমেজ জনকল্যাণমূলক এবং সামাজিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত কাজে জড়িত। ২০০৯ সালে তাকে মনোনীত করা হয় ইউনিসেফের রাষ্ট্রদূত হিসেবে। ইউনিসেফ ইউএসএ এর পক্ষ থেকে তিনি অসংখ্য জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান, কার্যক্রম ও উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের স্কুলে যাওয়া, মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ, স্বাস্থ্যসচেতনতায় সবচেয়ে দুর্বল শিশুদের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন সেলিনা গোমেজ। পেশাজীবনে বারনি অ্যান্ড ফ্রেন্ডস টিভি সিরিজের মাধ্যমে সেলিনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে তিনি বর্তমানে সবার কাছে একজন মার্কিন সংগীতশিল্পী এবং অভিনেত্রী হিসেবেই পরিচিত। সেলিনা ডিসনি চ্যানেলের বিভিন্ন সিরিজ এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে জোনাস ব্রাদারস : লিভিং দ্য ড্রিম, ডিসনি চ্যানেল গেমস উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং অসংখ্য গানের মাধ্যমে কোটি ভক্তের হৃদয় কেড়েছেন।

 

এমা ওয়াটসন

ইউএন ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট প্রচারণায় ওয়াটসন সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন। এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য- ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে লিঙ্গ সমতার পক্ষে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো’। ২০১৪ সালে তাকে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়। তিনি যুবতী নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রচার চালান। একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেত্রী ও মডেল এমা ওয়াটসন। তিনি বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় হ্যারি পটার চলচ্চিত্রের হারমায়োনি গ্রেঞ্জারের চরিত্রে অভিনয় করে সবিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। ওয়াটসন নয় বছর বয়সে এই চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ওয়াটসন হ্যারি পটারকে ঘিরে ধারাবাহিকভাবে ছয়টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। হ্যারি পটার ধারাবাহিকের শেষ চলচ্চিত্র হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোসেও অভিনয় করেছেন। হ্যারি পটার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন।

 

সেরেনা উইলিয়ামস

সেরেনা উইলিয়ামসকে ইউনিসেফের আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ২০১১ সালে। ইউনিসেফের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আফ্রিকা প্রোগ্রামের জন্য তাকে কাজ করতে হয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় আফ্রিকার বিভিন্ন স্কুল এবং এশীয় উদ্যোগে আসন্ন স্কুলগুলোর মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া দুর্বল শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো তার কাজ। অবহেলিত এই শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য তিনি ইউনিসেফের মিশনকে সহায়তা করে থাকেন। সেরেনা উইলিয়ামস একজন আমেরিকান পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। সর্বমোট ২৫টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন তিনি। এর মধ্যে ১২টি একক, ১১টি নারী দ্বৈত, ২টি মিশ্র দ্বৈত। এ ছাড়া তিনি নারী দ্বৈতে ২ বার অলিম্পিক স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। বর্তমানে সক্রিয় যে কোনো মহিলা খেলোয়াড়ের চেয়ে তিনি বেশিসংখ্যক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন এবং টেনিস ইতিহাসে যে কোনো মহিলা খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি প্রাইজমানি অর্জন করেছেন।

 

শাকিরা

২০০৩ সালের অক্টোবরে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যোগদান করেন কণ্ঠশিল্পী শাকিরা। সব পিছিয়ে পড়া শিশুকে স্কুলগামী করা এবং ভালো শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য ইউনিসেফের প্রোগ্রাম রয়েছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে শাকিরা সহায়তা করে থাকেন। গোটা বিশ্ব শাকিরাকে গানের জন্য এক নামেই চেনে। শাকিরা সমধিক পরিচিত বিশ্বকাপ ফুটবলে থিমসং সিঙ্গার, গীতিকার, সুরকার, সংগীত প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী ও জনহিতৈষী হিসেবে। কলম্বিয়ার বার্রানকিলাতে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শাকিরার মাতৃভাষা স্পেনীয় হলেও, তিনি অনর্গল ইংরেজি, পর্তুগিজ এবং ইতালীয় ভাষায় কথা বলতে পারেন। কলম্বিয়ার স্থানীয় প্রযোজকদের সহায়তায় শাকিরার সংগীত জীবনের প্রথম দুইটি অ্যালবাম প্রকাশ পায়। তিনি দুইবার গ্রামি পুরস্কার, সাতবার ল্যাটিন গ্রামি পুরস্কার পেয়েছেন। মনোনীত হয়েছেন গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের জন্য। এ ছাড়াও তিনি কলাম্বিয়ার সর্বকালের সেরা অ্যালবাম বিক্রীত শিল্পী।

 

আরও যারা...

জ্যাকি চ্যান

জ্যাকি চ্যানের পরিচয় দিতে গেলে উঠে আসবে অনেক বৈশিষ্ট্য। যেমন- তিনি একাধারে অভিনেতা, অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার, মার্শাল আর্টিস্ট, চলচ্চিত্র প্রণেতা, রঙ্গ অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্য লেখক, উদ্যোক্তা, কণ্ঠশিল্পী ও স্ট্যান্ট পারফর্মার। চলচ্চিত্রে এই চাইনিজ অভিনেতা শারীরিক কসরতপূর্ণ মারামারির দৃশ্য, হাস্যরসাত্মক ভঙ্গি ও আবির্ভাব, অপ্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহার ও স্ট্যান্ট দৃশ্য দিয়ে জয় করেছেন অগণিত ভক্তের হৃদয়। একই সঙ্গে মানবহিতৈষীমূলক কাজেও রয়েছে তার দারুণ সুনাম। মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনিসেফ ২০০৪ সালে জ্যাকি চ্যানকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত করেন। চ্যান যখন বিভিন্ন ক্ষেত্র পরিদর্শনে যান তখন শিশুদের উৎসাহমূলক ভূমিকা পালন করে থাকেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ধারণ করা শিশুদের আশা প্রদান করেন। চ্যান প্রাচীন অনুশীলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য সাহস দেন।

নিকোল কিডম্যান

নিকোল কিডম্যান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউএন ইউমেনের একজন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন। একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রী বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা চালান। তার প্রচারণায় বিশেষভাবে স্থান পায়, নারীদের সঙ্গে করা সহিংসতা রোধের বিষয়টি। কিডম্যান জাতিসংঘের মহিলাবিষয়ক ‘ইউনিট টু অ্যান্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট ওমেন’ বা নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধকারী ইউনিটের প্রচারাভিযানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। নিকোল কিডম্যান পেশাজীবনে একজন অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও গায়িকা। কিডম্যানের উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ১৯৮৯ সালের থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র ডেড কাম এবং থ্রিলার মিনি ধারাবাহিক ব্যাংকক হিল্টন।

কিডম্যান ১৯৯৪ সাল থেকে ইউনিসেফ এবং ২০০৬ সাল থেকে ইউনিফেম-এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন।

রিকি মার্টিন

মার্টিন ২০০৩ সালে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মনোনীত হন। তিনি বিশ্বের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকার শিশুদের জন্য কাজ করে থাকেন। তার কাজের আওতায় রয়েছে শিশু অধিকার রক্ষা। ইউনিসেফের শিশু অধিকার রক্ষা প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়নে তিনি নিজের অবস্থান থেকে যথাযোগ্য সহায়তা প্রদান করে থাকেন। বিশেষ করে শিশু পাচারের বিরুদ্ধে তাদের প্রচেষ্টা ভূমিকা পালন করেন। জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করা এই রিকি মার্টিন একজন পুয়ের্তো রিকান স্প্যানিশ গায়ক, অভিনেতা ও লেখক। তিনি রিকি মার্টিন নামেই সমধিক পরিচিত। বারো বছর বয়সে মেনুডো নামে একটি পপ বয় ব্যান্ডে মার্টিন নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। পাঁচ বছর পর ১৯৯০-এর দশকে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় একাধিক একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এ ছাড়া মেক্সিকোর নাট্যমঞ্চ ও টেলিভিশনে অভিনয় করে তিনি।

ক্যাটি পেরি

আমেরিকান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ক্যাটি পেরি জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মনোনীত হন ২০১৩ সালে। তার কাজের আওতায় রয়েছে বিশ্বের শিশু ও কিশোরদের উন্নয়ন সাধন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল শিশু ও কিশোরদের জটিল জীবনযাত্রার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন। ইউএন এর এই প্রজেক্টে ক্যাটি পেরি শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সহায়তা করে থাকেন। শৈশবে তিনি খ্রিস্টান যাজক অভিভাবক দ্বারা পালিত হন। তিনি ছোটকালে গোস্পেল সংগীত শুনতেন। শিশু হিসেবেই চার্চে গান করতেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিইডি পরীক্ষা দেওয়ার পর তিনি সংগীতকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০১ সালে তিনি নিজের নামে প্রথম সংগীত অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ২০০৮ সালে তিনি সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেন একক সংগীত প্রকাশের মাধ্যমে। গানটির নাম ‘আই কিসড এ গার্ল’। এটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে এবং বিভিন দেশের টপ চার্টে স্থান পায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর