শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
চাকরি ছেড়ে, গাড়ি বিক্রি করে, বউকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বকাপ দেখতে আসা

ফুটবল পাগলামি একেই বলে!

তানভীর আহমেদ ও তানিয়া তুষ্টি

ফুটবল পাগলামি একেই বলে!

পেরু সমর্থকদের পাগলামির গল্প শুনে শেষ করতে পারবেন না। নিজ দলকে সমর্থন দিতে অনেকেই চাকরি ছেড়ে, সাধের গাড়ি বিক্রি করে, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে ছুটে এসেছেন রাশিয়ায়। কেউ এসেছেন পালিয়ে, বউকে না বলে বন্ধুদের সঙ্গে উঠেছেন রাশিয়াগামী বিমানে। প্রেমের তোয়াক্কাও করেনি অনেকে, বয়ফ্রেন্ডও আটকাতে পারেনি প্রেমিকাকে— ফুটবল পাগলামি তো একেই বলে!

পেরুর পাগলাটে ফ্যানদের গল্প

এডগার। বুড়োর বয়স ৮০ বছর। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না বয়সের ভারে। পরিবারের সবাই ‘না’ করেছিলেন তবু তাকে থামায় কে? তিনটা বিমান তারপর ১০ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি— অবশেষে পৌঁছেন রাশিয়ায়। বুড়ো বয়সের ভীমরতি ভাবার কারণ নেই। পেরু সমর্থকদের ভালোবাসার ধরনটাই এমন। পেদ্রো নামের এক পেরুভক্ত চাকরি ছেড়ে ছুটে এসেছেন রাশিয়ায়। অফিসে ছুটি চেয়েছিলেন। এত লম্বা ছুটি কি আর অফিস দেয়। তাতে কি, উল্টো চাকরি ছেড়েই হাসি মুখে রাশিয়ার বিমানে চড়ে বসেন। পেরিতো নামের আরেক ভক্তের গল্প চমকে ওঠার মতো। পকেটে টাকা নেই, বিমান খরচ কমাতে ভেঙে ভেঙে বাস, ট্রেন, কাভার্ড ভ্যান যখন যা পেয়েছেন, ড্রাইভারের সঙ্গে বন্ধুত্ব জুড়ে পৌঁছেন রাশিয়ায়। এতে তার সময় লেগেছে দুই মাস! তার মতো অনেক পেরুভক্তই আসার পথে রাত কাটিয়েছেন বিমানবন্দরের সোফায়, অচেনা মানুষের গাড়িতে। কেউ কেউ চলতি পথে রেস্টুরেন্টে কাজ করে একবেলা খাবার জুটিয়ে তবেই এলেন রাশিয়ায়! পাগলাটে পেরু ভক্তদের কেউ এসেছেন সাধের গাড়ি বিক্রি করে। বন্ধুদের নিয়ে রাশিয়া যাবেন শুনে ঘরের বউ তেঁতে উঠেছিল— তারাও বউকে ফাঁকি দিয়ে ঘর ছেড়েছেন লুকিয়ে। শুধু কি তাই? প্রেমিকের প্রেমও আটকাতে পারেনি প্রেমিকাকে। প্রেমিককে সোজা জানিয়ে এসেছেন, ফুটবলই তার আসল প্রেম!

 

জন্ম ব্রাজিলে

কাপ নিতে চান স্পেনের হয়ে

দিয়েগো কস্তা

 

জন্মভূমির বিপক্ষে মাঠে নামার ঘটনা শুনে অনেকেই চমকে যেতে পারেন, সেটাই স্বাভাবিক। দেশের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে যান খেলোয়াড়রা। কিন্তু জীবনের গল্প সবার একরকম নয়। জন্ম যে দেশে সে দেশের হয়ে আলো ছড়ানোর সুযোগ কজন পান? কারও কারও ভাগ্যের খেলাটা একেবারেই আলাদা। তেমনই একজন স্পেনের তুরুপের তাস দিয়েগো কস্তা। ব্রাজিল তার জন্মভূমি হলেও এবার খেলছেন স্পেনের হয়ে। ২০১৩ সালে ব্রাজিলের হয়েই কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবলে এসেছিলেন তিনি। তবে দুই বছরের মাথায় স্পেন জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ার বেছে নেন। স্পেনের আক্রমণভাগে জ্বলে ওঠা কস্তা যে প্রতিপক্ষের জন্য কতটা দুশ্চিন্তার কারণ সেটা টের পাওয়া গেলে পর্তুগালের সঙ্গে স্পেনের প্রথম ম্যাচেই। দুটি গোল করে নিজেকে জানান দেওয়া কস্তা কিন্তু জন্মভূমি ব্রাজিলের কথা ভুলেননি। বিশ্বকাপ জয়ের জন্য যদি ব্রাজিলের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় তাকে— তখন হবেটা কী! সেই কথা গোপনে রাখতে পারেননি। ব্রাজিলকে নিয়ে কস্তা পরিষ্কার করেই বলেছেন, ‘আমি ব্রাজিলের খেলতে দেখাটা পছন্দ করি। কারণ দলটিতে উইলিয়ান, ফিলিপে লুইস, মিরান্দার মতো আমার অনেক বন্ধু আছে। আমি চাই না, বিশ্বকাপটা তাদের জন্য বাজে হোক।’ তবে এ কথায় কি চিঁড়ে ভিজবে? মোটেই না। তার বাড়ি, পরিবারের অন্য সদস্যরা তো ব্রাজিলে লাগার্তোয়। কস্তার বাড়ির সবাই কিন্তু ব্রাজিলকেই সমর্থন করছেন। সেটা নিয়ে মোটেই আক্ষেপ নেই কস্তার। তিনি বলেছেন, ‘ব্রাজিল-স্পেন ফাইনাল দারুণ হবে। যদি ওই রকম একটা ফাইনাল আমি খেলতে পারতাম এবং জিততে পারতাম মন্দ হতো না।’ ফাইনাল নিয়ে কস্তার এ স্বপ্নটা যদি সত্যি হয় তাহলে কিন্তু অন্যরকম এক লড়াই দেখবে বিশ্ববাসী। জন্মভূমি ব্রাজিলের পাশাপাশি স্পেনের নাগরিকত্ব রয়েছে কস্তার। তিনি এখন পুরোদস্তুর স্পেনিয়ার্ড, সেটা ভুলে গেলে চলবে না!

রোনালদোর অন্যরকম রহস্য

১৫ জুন পর্তুগাল-স্পেন ম্যাচের চার মিনিটেই  পেনাল্টি স্পট থেকে নিখুঁত কিকে গোল দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তখন তাকে দেখা গেল গোলের উৎসবে একটু অন্যরকম আনন্দে। ডান হাতের আঙুল দিয়ে নিজের চিবুকে আঁচড় দেওয়ার ভঙ্গিতে চুলকালেন। গোলের পর মাঠে এমন উদযাপনে আগে কখনই দেখা যায়নি পর্তুগালের এই ফরোয়ার্ডকে। কেন, কি কারণে এবং কার উদ্দেশে রোনালদোর এমন চিবুক চুলকানো? নাকি দূরে থাকা কাউকে খোঁচালেন?

আসলে বিশ্বকাপ শুরুর কদিন আগে অ্যাডিডাসের একটি বিজ্ঞাপন বাজারে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের শর্ত মানতেই মেসি এই বিশ্বকাপে চিবুকে দাড়ি নিয়ে খেলতে নামেন। সেটি দেখাতেই চিবুক চুলকানো।

বউ রাশিয়ায় যেতে দেয়নি তাতে কি ?

বউয়ের মধুর যন্ত্রণায় রাশিয়া বিশ্বকাপে স্বশরীরে আসতে পারেননি  মেক্সিকোর সমর্থক খেভিয়ার। বন্ধুদের সঙ্গে রাশিয়া বিশ্বকাপ যাত্রার সব ঠিকঠাকই ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরনো স্কুলবাস মেরামত করেছিল খেভিয়ার ও তার চার বন্ধু। সেই বাসে করেই রাশিয়ায় পৌঁছার কথা ছিল তাদের। কিন্তু খেভিয়ারের বউ বেঁকে বসলেন। বললেন, ‘রাশিয়ায় যাওয়া তোমার হচ্ছে না, ঘরেই থাক। নইলে কপালে দুঃখ আছে।’ বউয়ের পারমিশন মিলল না কিছুতেই। সব পরিকল্পনাই মাটি! অগ্যতা তাকে রেখেই অন্য চার বন্ধু চলে এলেন রাশিয়া। রাশিয়ায় আসতে না পারার দুঃখ ভোলানোর জন্য তার বন্ধুরা খেভিয়ারের ছবির প্লাকার্ড বানিয়ে নিলেন। সেই ছবি নিয়েই তারা রাশিয়ায় হাজির। চার বন্ধু রাশিয়ার যে প্রান্তেই ছুটছেন সেখানেই তাদের সঙ্গী খেভিয়ারের ছবিযুক্ত প্লাকার্ড। বিশ্বকাপে পাঁচ বন্ধুর এমন অদ্ভুত উন্মাদনা আগে কে কবে দেখেছে কে জানে। বউকে ফাঁকি দিয়ে অবশেষে রাশিয়া পৌঁছাল খেভিয়ারের ছবি।

 

মেসির ভিডিওতে বাংলাদেশ

বিশ্বকাপ ফুটবল যেন এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। তাইতো লিওনেল মেসি যখন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে খেলছে, তখন বাংলাদেশি ভক্তরা কাঁপছে মিছিল-উন্মাদনায়। এ উন্মাদনার গুরুত্ব মেসির কাছেও কম নয়। নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ‘লিও মেসি’তে প্রকাশিত ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তারই প্রমাণ দেয়। ভিডিওটিতে আর্জেন্টিনার পতাকা ও মেসির ছবি নিয়ে অন্যান্য দেশের সমর্থকদের সঙ্গে বাংলাদেশি সমর্থকদের র‌্যালি-শোডাউন তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশি সমর্থকদের মুহূর্তগুলো ভিডিওতে ফুটে উঠতেই ডান কোণে লাল-সবুজের পতাকাও ভেসে ওঠে।

 

সেনেগাল ও জাপান সমর্থকদের অন্যরকম উদযাপন

প্রিয় দলের প্রাণবন্ত খেলা গ্যালারিতে বসে উপভোগ করার আনন্দই অন্যরকম। পছন্দের দলের খেলা উপভোগ করতে ভক্তদের মাঠে উপস্থিতির কত না প্রচেষ্টা।  প্রতিপক্ষকে হটিয়ে সমর্থকদেরও চাঙ্গা করে প্রিয়দল। এই তো গেল ১৯ জুন বুধবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় ২১তম বিশ্বকাপে আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করা সেনেগাল। প্রথমার্ধেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যাওয়ায় গ্যালারিতে উপস্থিত গেনেগাল সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। হৈ হুল্লোড়ের সময় ভুলবশত গ্যালারি অপরিচ্ছন্ন করে বসেন তারা। তবে ম্যাচ শেষে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে। অন্যান্য দর্শক বেরিয়ে যাওয়ার পর সেনেগালের দর্শক-সমর্থকরা গ্যালারি পরিষ্কার করতে থাকেন। আর তাদের ‘মহানুভবতার’ এ বিষয়টির কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল। একই দিনের কলম্বিয়া-জাপানের খেলাতেও গ্যালারি পরিষ্কার করেন জাপানের সমর্থকরা। জয়ের উল্লাসে স্টেডিয়াম নোংরা না করে বরং পরিষ্কার করে জয় উদযাপন করলেন। অবশ্য এটাই জাপানিদের প্রথম নয়, এর আগে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে তারাও খেলা শেষে গ্যালারি পরিষ্কার করেছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর