বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

অদ্ভুত আকাশযান

তানভীর আহমেদ

অদ্ভুত আকাশযান

পাখির মতো ডানা মেলে আকাশে উড়ার স্বপ্নই বাস্তবায়ন হয়েছে উড়োজাহাজ তৈরির পর। শুরুর দিকের উড়োজাহাজগুলো ধীরে ধীরে প্রযুক্তির উৎকর্ষে হয়ে উঠেছে আরও নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব। এখন উড়োজাহাজ অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার অন্যতম যানের একটি। সময়ের প্রয়োজনেই আকাশের রাজত্বে যোগ হয়েছে নিত্যনতুন আকাশযান। শুধু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেই নয়, এখন নভোযান ছুটে যাচ্ছে মহাশূন্যে আগামীর তথ্য সংগ্রহে। এসেছে অবাক করা ড্রোন, সামরিক নিরাপত্তায় যুদ্ধবিমান, গ্যাস বেলুন ইত্যাদি।

 

আকাশে ভাসার গল্পের শুরু

আমেরিকান অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। দুজনই আকাশে ওড়ার স্বপ্নকে করে তুলেছিলেন আরও বর্ণিল। তাদেরকেই উড়োজাহাজের আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য করা হয়। উড়োজাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা হয় ১৮৯৬ সালে। তারপর থেকেই আকাশযান তৈরির ছোটখাটো যন্ত্র নিয়ে ভাবনার শুরু হয়। তখন তারা জানতে পারেন র্জামান ইঞ্জিনিয়ার অটো লিলিয়েনথালও বেশ কয়েক বছর যাবৎ উড়ন্তযান নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই সঠিক হিসাবটা মিলছিল না যেন। ১৮৯৬ সালে লিলিয়েনথালের আকস্মিক মৃত্যুতে গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। রাইট ভাতৃদ্বয় লিলিয়েনথালের তৈরি উড়ন্ত যানের নকশা নিয়ে আবার ভালো করে হিসাব কষতে শুরু করেন। ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাইট ভাইরা দেখলেন লিলিয়েনথালের নকশায় বেশ কিছু ভুল রয়েছে। এরপর প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টায় তারা তৈরি করেন বিশাল গ্লাইডার বা উড়ন্ত যান। এই গ্লাইডার বাতাসে ভারসাম্য রেখে সহজেই উড়তে সক্ষম হবে বলেই তারা নিশ্চিত ছিলেন। এরপর তৈরি করেন দুই পাখাবিশিষ্ট ছোট বিমান। এরপর উন্নয়ন চলে এটির। ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৩ সাল। পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ল উড়োজাহাজ। প্রায় বারো সেকেন্ড আকাশে ভেসেছিল রাইট ভাইদের প্রথম উড়োজাহাজ।

 

ফ্লাইং সসার

পৃথিবীর বাইরে প্রাণী রয়েছে কি না সে নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। যদি থেকেই থাকে তবে তাদেরও নিশ্চয়ই আকাশযান রয়েছে। পৃথিবীর বুকে বহুবার ইউএফও দেখা গেছে। সে নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। ভিনগ্রহীদের আকাশযানকেই ফ্লাইং সসার বলতে আগ্রহী আমরা। অনেকেই মেনে থাকেন যে, ফ্লাইং সসার ভিনগ্রহীদের গুপ্তচর বিমান। তবে গবেষকরা ফ্লাইং সসারকে অশনাক্ত আকাশযান বলেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতকে মিসরের ফারাও ছিলেন তুতেন খামেন। তার সময় জনতা আকাশে দেখেছিল বিচিত্র ধরনের আগুনের গোলা। সেই থেকেই আকাশে ফ্লাইং সসার নিয়ে আলোচনা চলে আসছে। এরপর অনেকবার ফ্লাইং সসারের দেখা মিলেছে। দাবি উঠেছে এটির নিশ্চিত অস্তিত্ব নিয়ে। ১৬৮৬ সালের ৯ জুলাই  জার্মানির লিপজিক অধিবাসীরা রহস্যময় এক ধাতব বস্তুকে উড়তে দেখেছিল। ১৭৫৬ সালে সুইডেনের লোকেরাও দেখেছিল এ ধরনের অদ্ভুত রহস্যময় বস্তু। ১৯৮০ সালে সুইডেনে, ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের এক শস্যবৃত্তে এক এলিয়েনের মুখচ্ছবি এবং তার হাতে ধরে রাখা একটি গোলক দেখা গিয়েছিল।

 

কৃত্রিম উপগ্রহ

আধুনিক বিশ্ব তথ্য ও প্রযুক্তির অবাধ আদান-প্রদানের বিশ্ব। কৃত্রিম উপগ্রহ তথ্য ও প্রযুক্তিকে আরও সহজলভ্য করতে অভাবনীয় অবদান রেখে চলেছে। এটি মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রতিনিয়ত অবস্থান করছে। কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ।

কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয়, যাতে এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা বহির্মুখী শক্তি এটিকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বৃত্তাকারে পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির। টিভি ও বেতার সংকেত প্রেরণ এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর  উৎক্ষেপণের সময়ই পর্যাপ্ত জ্বালানি গ্রহণ করতে হয়। কারণ মহাকাশে রিফুয়েলিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু উপগ্রহ জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে। প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের।

 

উড়ার বিজ্ঞান

উড়োজাহাজসহ অন্যান্য আকাশযান কীভাবে আকাশে ভাসে সে নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই। উড়োজাহাজ আসলে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসামান্য সফলতা। মূলত সম-আয়তন বাতাসের চেয়ে ওজনে ভারি বিমানের বাতাসে ভেসে থাকার কায়দাটা আছে তার ডানার আকৃতি ও গতিবেগের মধ্যে। বিমানের ডানার প্রচ্ছদের একটি বৈশিষ্ট্য আছে, যাকে বলা হয় অ্যারোফয়েল সেকশন। এর উপরের দিকটা নিচের দিকের তুলনায় বেশি বাঁকানো। ফলে লম্বায় বড়। বিমান যখন জোরে চলে, তখন ডানার উপর দিকে বাতাসের গতিবেগ নিচের তুলনায় বেশি হয়। বিমান জোরে চলার ফলে উপরের দিকে বাতাসের চাপ কমে যায় ও নিচে বেশি হয়। ডানার নিচের উচ্চচাপে অ্যারোপ্লেন উপরের দিকে উঠতে চায়। এক সময় বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী বল যখন অ্যারোপ্লেনের ওপর মধ্যাকর্ষণ বলের চেয়ে বেশি হয়, তখন অ্যারোপ্লেন বাতাসে ভেসে ওঠে। আকাশে একবার উঠে যাওয়ার পর ইঞ্জিন অ্যারোপ্লেনকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শক্তি জোগায়। ইঞ্জিন ঘোরায় ‘প্রপেলার’ নামে পাখা। এটি স্ক্রুর মতো বাতাস কেটে সামনের দিকে উড়োজাহাজকে এগিয়ে নিয়ে চলে।

 

অবাক ড্রোন

ড্রোন আসলে এক ধরনের মনুষ্যবিহীন আকাশযান। এগুলোতে কোনো চালকের প্রয়োজন হয় না। মনুষ্যবিহীন ড্রোন যুদ্ধবিমানগুলোতে সংবেদনশীল যন্ত্র ও ক্যামেরা থাকে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে গৃহীত ভিডিওচিত্র ভূমি থেকে বিমান নিয়ন্ত্রণকারী অপারেটরের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আকাশসীমায় গুপ্তচরবৃত্তি চালানো, নিজ দেশের আকাশসীমা পাহারা দেওয়া, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের বেতার ও রাডার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পেতে তথ্য জোগাড় করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনে আরও ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে এ উড়োজাহাজ। এসব উড়োজাহাজ পাইলটবিহীন হওয়ায় যুদ্ধে পাইলটের মৃত্যুঝুঁকি থাকে না। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিমান ব্যবহার করা যায়। আধুনিক সময়ে যেসব ড্রোন বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে গুপ্তচরবৃত্তি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংগ্রহ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর