শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বের যত বৈচিত্র্যময় রাস্তা

সাইফ ইমন

বিশ্বের যত বৈচিত্র্যময় রাস্তা

কোনো জায়গার উন্নতির প্রথম ধাপই হলো সহজ এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর সহজ যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো চলাচলের পথ। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নানা রকম অদ্ভুত ও বৈচিত্র্যময় রাস্তা। কিছু রাস্তা আবার সুন্দরের পাশাপাশি ভয়ঙ্করও! এ রকম কিছু রাস্তা নিয়েই আজকের রকমারি —

 

লম্বার্ড স্ট্রিট

শুরু করছি পৃথিবীর সবচেয়ে বক্রাকৃতির রাস্তা দিয়ে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিস্কোতে অবস্থিত। নাম লম্বার্ড স্ট্রিট। পৃথিবীর সবচেয়ে বক্রাকৃতির রাস্তা বলা হয় এই লম্বার্ড স্ট্রিটকে। যদিও এই অদ্ভুতাকৃতির রাস্তাটি মূলত দীর্ঘ লম্বার্ড স্ট্রিটের একটি অংশমাত্র যার দৈর্ঘ্য মাত্র এক মাইল এবং এখানে ড্রাইভিংয়ের সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৫ কি.মি.। সানফ্রান্সিস্কোর আরও অনেক রাস্তাই এমন আঁকাবাঁকা।  এর মূল কারণ হচ্ছে সানফ্রান্সিস্কোর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। এখানে সোজা রাস্তা তৈরি করতে গেলে তা অতিরিক্ত খাড়া আর বিপজ্জনক হয়ে যাবে। আর তাই এই রাস্তার পরিকল্পনাকারী রাস্তাটিকে আঁকাবাঁকা করে তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ফলে সোজা রাস্তায় গাড়ি চালানোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় এখানকার ড্রাইভাররা। লম্বার্ড স্ট্রিটের চারপাশের ফুলের বাগান দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

 

আমব্রেলা স্ট্রিট

নামটাই কী অদ্ভুত! আমব্রেলা স্ট্রিট। অর্থাৎ ছাতার রাস্তা। এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। তাই পুরো রাস্তায় ছাতার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আবার খুব রোদের কারণে এই ব্যবস্থা; তাও কিন্তু নয়। যদি প্রথমবার দেখলে এসব কথাই মাথায় আসবে সবার। আসলে কয়েক বছর আগে থেকেই এই আমব্রেলা স্ট্রিটের উৎপত্তি।

এই রাস্তাজুড়ে কিন্তু ছাতা বিছানো থাকে না বরং রাস্তার ওপরে খোলা আকাশে সারি সারি খোলা ছাতা প্রদর্শিত থাকে। প্রতি বছর জুলাইয়ে একটি আর্ট ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে পর্তুগালের এগুইডা শহরের একটি গলিকে সাজিয়ে তোলা হয় রং-বেরঙের ছাতার রঙে। রাস্তাজুড়ে ছাতা টাঙানো থাকে বলেই এই রাস্তার নাম হয়েছে আমব্রেলা স্ট্রিট। আর্ট ফেস্টিভ্যালটির নাম ‘Agitagueda art festival’। আর এই ছাতার কারণে এই রাস্তাটির পাশাপাশি পুরো বিশ্বে আর্ট ফেস্টিভ্যালটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই অভিনব আয়োজন সত্যিই দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করেছে খুব। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে জুলাই মাসে এই ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে মানুষজন আসে। এই রাস্তার সৌন্দর্যকে কেন্দ্র অনেক চলচ্চিত্র ও গানের শুটিং হয়েছে।

 

আটলান্টিক ওশান

প্রকৃতি মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপ ধারণ করে। যেখানে একই সঙ্গে ভয়ঙ্কর অনুভূতি সৃষ্টি হবে আবার সৌন্দর্যও আপনাকে টানবে। নরওয়ের ৯ কি.মি.  দৈর্ঘ্যের একটি রাস্তাও এ রকম। এখানে এলে আপনার দারুণ ভয় লাগবে আবার চারপাশের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেনই। এর নাম আটলান্টিক ওশান রোড।

এই রাস্তাটির একটি মজার বিষয় হচ্ছে যে, এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের রাস্তাটিতে সেতু রয়েছে ৮টি। সমুদ্রের জল ছুঁয়ে চলে যাওয়া এই রাস্তাটিকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। যে কাউকেই মুগ্ধ করে এই সমুদ্রের স্পর্শ। রাস্তাটি তৈরি করাই হয়েছে বিষয়টি মাথায় রেখে। চমৎস্যর সুন্দর এই রাস্তাটি মাঝে মাঝে বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। কারণ প্রায়ই পূর্বাভাস ছাড়াই তুষার ঝড়ের কবলে পড়তে হয় এই পথে চলাচলকারীদের। তখন খুব সাবধানে চলতে হয়। একটু এদিক-সেদিক হলেই প্রাণহাণির আশঙ্কা থাকে। 

 

জাজ হ্যারি

পৃথিবীতে যতগুলো প্যাঁচানো রাস্তা আছে তার মধ্যে জটিল থেকে জটিলতর রাস্তাটির নাম হচ্ছে জাজ হ্যারি প্রেগারসন ইন্টারচেঞ্জ। উপর থেকে দেখতে অবিকল মনে হবে কোনো বিষাক্ত সাপ। কিংবা অনেকগুলো প্যাঁচানো সাপ একত্রে।

ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে অবস্থিত এই জাজ হ্যারি প্রেগারসন ইন্টারচেঞ্জ বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ইন্টারচেঞ্জ। এর জটিলতার মূল কারণ হচ্ছে অনেকগুলো স্তরে স্থাপিত সেতুগুলো যেখানে সব দিক থেকে গাড়ি প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারে। চারটি স্তরে স্থাপিত এই ইন্টারচেঞ্জটি প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে সহজ সংযোগ স্থাপন করে।

অসম্ভব জটিল হলেও মানষের চলাচলের সুবিধার জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই জাজ হ্যারি প্রেগারসন ইন্টারচেঞ্জ।

 

পিংক স্ট্রিট

পিংক অনেকেরই পছন্দের একটি রং। বিশেষ করে মেয়েরা পিংক খুব পছন্দ করে। একবার ভাবুন তো পিংক কালার দিয়ে যদি একটা শহরের অংশ পুরোটা পেইন্ট করা যায় তাহলে কেমন হবে। এমন একটা জায়গায় গেলে মন ভালো না পারে!  

সমুদ্র তীরবর্তী লিসবন শহরের পিংক স্ট্রিট নামক এলাকার রাস্তা আর অলিগলি সব ঝলমলে পিংক রঙের। এ ছাড়াও এর দুই পাশের ফুটপাথে রয়েছে খোলামেলা আর্ট গ্যালারি। সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় ট্যুরিস্টদের উপস্থিতি ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য নাইট ক্লাব ও বার এবং এর ফলে লিসবনের নৈশ জীবনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে পিংক স্ট্রিট। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস একে ইউরোপের সবচেয়ে পছন্দনীয় ১২টি রাস্তার মাঝে স্থান দিয়েছে। এখানে এলে মন ভালো না হয়ে উপায় নেই। এখানে হাঁটতে এবং আর্ট গ্যালারি উপভোগ করতে খুব পছন্দ করে ট্যুরিস্টরা।

 

ব্লু স্ট্রিট

প্রায় সবারই প্রিয় একটি রং হচ্ছে নীল। একবার ভাবুন তো আপনার প্রিয় রং দিয়ে সাজানো হয়েছে পৃরো একটি শহর। যে শহরের রাস্তা থেকে শুরু করে সবকিছুই নীল। যেন এক আকাশ নীল ধারণ করেছে শহর। কেমন হবে, দারুণ না! আটলান্টিক সাগর পাড়ে অবস্থিত আফ্রিকার ছোট্ট সুন্দর দেশ মরক্কো। মরক্কোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শেফশাওয়ান এমনই একটি নীল শহর। একে বলা হয় জাদুময় শহর যা Blue Pearl of Morocco A^ev Blue City। এই শহরটি পুরোপুরি নীল রঙে আচ্ছাদিত। শহরের ঘরবাড়ির দেয়াল, দরজা আর রাস্তাঘাট সবই নীল রঙের যা এই শহরে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। অনেক আগে স্পেন থেকে পালিয়ে আসা ইহুদিরা এই শহরে বসবাস করতে শুরু করে এবং তারাই শহরটিকে নীল রঙে রাঙিয়েছে।

 

ডেথ রোড

ডেথ রোড মানেই মৃত্যু পথ। যে পথে মৃত্যু অবধারিত। ডেথ রোড এমনই একটি রোড, ঠিক তা নয়। তবে এটি তা থেকে কোনো অংশে কমও নয়।

কারণ প্রতি বছর এই রাস্তায় গড়ে ২০০-৩০০ জন লোক প্রাণ হারায়। বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজ থেকে করোইকো পর্যন্ত ৬৯ কি.মি. দীর্ঘ রাস্তাটি স্থানীয়ভাবে ডেথ রোড নামে পরিচিত। ঘন পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে নির্মিত এই রাস্তাটি শুরু হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতা থেকে এবং একটি গভীর খালের পাশে গিয়ে মিশেছে। ভয়ঙ্কর এই রাস্তার দুই পাশ কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

 

দ্য জুলিও স্ট্রিট

ফ্রান্সের প্রশস্ত রাস্তার কথা সবাই জানে। বিশাল রাস্তাগুলোতে থাকে অনেক লেন। আবার রাস্তার মাঝেই থাকে সারি সারি গাছ। কিন্তু আর্জেন্টিনার প্রধান রাজপথ নাইন দ্য জুলিও স্ট্রিট পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ত রাস্তা। ১৮১৬ সালের ৯ জুলাই আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা লাভ করে। আর তাদের স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে এই রাস্তার নামকরণ করা হয় ৯ দ্য জুলিও স্ট্রিট। এটি শুধু একটা সাধারণ রাস্তা নয় বরং ১৮ লেন বিশিষ্ট বিশালাকার একটি রাজপথ যা সাজানো রয়েছে অসংখ্য বৃক্ষরাজির সমারোহে। এ ছাড়াও ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে রয়েছে সবুজে ঘেরা পার্ক যাতে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ। চলাচলের পথে ক্লান্ত হয়ে গেলে পার্কে বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করা যাবে। ট্যুরিস্টরাও এখানে আসতে পছন্দ করে।

সর্বশেষ খবর