বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় বদলে যাওয়া জীবনযাপন

আবদুল কাদের

করোনায় বদলে যাওয়া জীবনযাপন

করোনাভাইরাস গ্রাস করেছে বিশ্বকে। ভয়াবহ ভাইরাসটির প্রভাবে সবকিছু প্রায় বন্ধ। বদলে গেছে সমগ্র বিশ্বের মানুষের চিরচেনা জীবনযাপন। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে। করোনায় জীবনব্যবস্থায় যেসব পরিবর্তন এসেছে, সেসব নিয়ে আজকের আয়োজন-

 

নিরাপদ আশ্রয়স্থল

করোনার কারণে বন্ধ হয়েছে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ এবং শিল্প-কারখানা। এমন পরিস্থিতি সাধারণত মানুষ ঘুরে বেড়ান দেশ-দেশান্তর। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি উৎসবের জন্য নয়। মহামারীর এ সময়ের সাধারণ ছুটি কেবল ঘরে থাকার জন্য। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটও (আইইডিসিআর) সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মনে হতেই পারে, রাস্তা ফাঁকা তাই নিরাপদ। এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কেননা, অদৃশ্য শত্রুকে আমরা কেউ দেখতে পাই না। জনসমাগম বা ফাঁকা রাস্তা থেকেও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন ভয়াবহ করোনাভাইরাসে। নিজের অজান্তেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র। তাই বিশেষজ্ঞরা বারবার ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। ঘরে থাকলেই এখন আপনি নিরাপদ। তাই সাধারণত যারা ঘরের বাইরে থাকেন, তাদেরও এখন বাধ্য হয়ে ঘরে থাকতে হচ্ছে। এমন সময় কী করবেন বলে ভাবছেন? পছন্দমতো গান বা কবিতা শোনা, মুভি, খেলা, ডকুমেন্টারি দেখা এবং বই বা ম্যাগাজিন পড়ার পরামর্শ কমবেশি সব সমাজবিজ্ঞানীর। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসি (যুক্তরাষ্ট্র) এ সময় সারাক্ষণ কম্পিউটার, বই বা মোবাইলে ডুবে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষত সব ধরনের মাদক থেকে দূরে থেকে ঘরে বসেই ফ্রি হ্যান্ডব্যায়াম, যোগব্যায়াম, সময়মতো ঘুম এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। নিজেকে এবং পরিবারকে আক্রান্তমুক্ত রাখতে বাইরে যাওয়া বাদে আপনার যা করতে ভালো লাগে বা যা কিছু করে আপনি আনন্দ পান, তা-ই করুন। মনে রাখবেন, করোনা মহামারীর এমন সময় ঘরই আপনার এবং আপনার পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

 

নিয়মমাফিক জীবনযাপন

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। কিন্তু নিজেকে আর নিজের পরিবার-পরিজনকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন নিয়মমাফিক জীবনব্যবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কিছু উপদেশ দিচ্ছে। যেমনÑকারও সঙ্গে হাত মেলানো (হ্যান্ড শেক), কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। নিয়মিত এবং ভালো করে বারবার হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ)। ফলত কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এ সময় যে কোনো সর্দি-কাশি, জ্বর বা অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ আবার ছয় ফুট অর্থাৎ দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দেন। প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বেরুলে অবশ্যই পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ফেস মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। কেউ কেউ আবার পুরো সেট অর্থাৎ পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যথাসম্ভব অপরিষ্কার হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করবেন না। নিজে কাশির আদবকেতা বা রেসপিরেটরি হাইজিন মেনে চলুন। আর হ্যাঁ, অসুস্থ (জ্বর, সর্দি-কাশি) হলে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করুন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, প্রচুর পানি পান করুন। সুস্থ থাকতে পরিমিত ঘুমও আবশ্যক। সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেতে নিজেকে আপডেট রাখুন। গুজবে কান দেবেন না। আপনার স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকের কাছে তথ্য জানতে চান।

 

ব্যাংকিং ও কেনাকাটা অনলাইনে

করোনার ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে সারা বিশ্বকে। বিশ্বের সমস্ত দেশ ও অঞ্চলে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিত্যদিনের সঙ্গী কাগজের নোট নিয়েই বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি ধনী দেশের রেস্টুরেন্টগুলো ব্যাংক নোট গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় ব্যাংকিং খাতেও। গত কয়েক সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। কমেছে আমানত ও ঋণ আদায়ও। ফলে ব্যাংকিং খাতগুলোয় তারল্য সংকটের আকার বাড়ছে। তবে বাজারে এর খারাপ প্রভাব পড়লেও কদর বাড়ছে অনলাইনে জিনিস কেনাকাটায়। করোনায় এক ঝটকায় সমস্ত অভ্যাস বদলে গেছে। আগে শুধু জামা-কাপড় বা নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা হতো অনলাইনে। বেশি না হলেও অনলাইনে অর্ডার করা হতো খাবার। এখন ঘরে বসে খাবার অর্ডারের পরিমাণও বেড়েছে। বিশেষত অনলাইনে চাহিদা বাড়ছে গ্রোসারি পণ্যের। শপিংমল, রেস্তোরাঁয় গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে মানুষ এখন ঘরে বসেই অর্ডার করছে। তবে সাধারণ মানুষের সুবিধা হলেও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোয় গ্রাহকদের উপস্থিতি অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতি বিশেষ করে আর্থিক খাত ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। সব ধরনের লেনদেন এখন হচ্ছে অনলাইনে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে গার্মেন্ট এবং শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে অনলাইন বা ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করেছে।

সুষম খাওয়া-দাওয়া

অদৃশ্য ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সদা তৎপর দেহের অভ্যন্তরীণ সৈন্যরা। এরাই সাধারণত ইমিউনিটির (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) রক্ষক। তবে সবাই তো সমান ইমিউনিটির অধিকারী হয় না! কেউ একটু দুর্বল, কেউবা আবার শক্তপোক্ত। করোনা মহামারীর এমন সময় বিশেষজ্ঞরা দেহের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, এখনো করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে চিন্তার কিছু নেই। খাওয়া-দাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখে, সঠিক খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ভিটামিন-ডি, প্রোবায়োটিক ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।  যাদের ঠান্ডা, সর্দি-কাশির সমস্যা তারা ভিটামিন-সি জাতীয় ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন। অল্প হলেও উপকার পাবেন। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য টক জাতীয় ফল যেমন- বাতাবি লেবু, পাতি লেবু, কমলা লেবু ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে পারেন। এ ধরনের ফল স্বাভাবিক ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি এবং জ্বরের জন্য উপকারী। চিকিৎসকরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ট্যাবলেট খাওয়ারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ক্যাপসিকাম ও ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ ও সি রয়েছে। আবার বিটা ক্যারোটিনের আরও একটি সোর্স হলোÑগাজর ও পেঁপে। এ ছাড়া সমস্ত সবুজ শাক-সবজিই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভীষণ উপকারী। যেমনÑ পালং শাক হতে পারে এ সময়ের আদর্শ খাবার। এতে থাকা ভিটামিন-ই এবং বেশ কয়েকটি উপাদান ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটোতে আছে পটাসিয়াম, আয়রন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট। যা যেকোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আদা, রসুন ও পিয়াজে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ঠান্ডা লাগা বা ইনফেকশনের মতো সমস্যা দূর করে। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের খালি রসুন খাওয়া বারণ। যারা একটু সচেতন তারা টকদই খেতে পারেন। দই কিন্তু রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি প্রধান অস্ত্র। বাদাম শরীরের জন্য খুবই ভালো। বাদামের ভিটামিন-ই দেহের ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হলুদ দেহে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। গ্রিন-টিতে ক্যাটেচিন নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে মাছ-মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। প্রতিদিন বেশি করে পানি পানে দেহের ভাইরাস ইউরিনেশনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।

 

ঘরেই চলছে শরীরচর্চা

করোনা পরিস্থিতির কারণে সকালবেলা ঢাকার পার্কগুলোয় শরীরচর্চা করতে আসা মানুষের সংখ্যাও কম। তাই বলে তো শরীরচর্চা থেমে থাকবে না! যেহেতু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সবার বাইরে যাওয়া বারণ, তাই সুস্থ থাকার জন্য ঘরোয়া শরীরচর্চার বিকল্প নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ (ইমিউনিটি) ক্ষমতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তুলতে শরীরচর্চা নিঃসন্দেহে উপকারী। নিয়মিত ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ যেমন-হাত-পা ভাঁজ করা, সাঁতার, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা ইত্যাদি করতে পারেন। ব্রেথিং (শ্বাস-প্রশ্বাস) এক্সারসাইজও খুব ভালো। এতে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে এবং ফ্রি র‌্যাডক্যালের পরিমাণ কমে। অন্যদিকে, আইসোমেট্রিক (প্ল্যাঙ্ক, সাইড ব্রিজ, ওয়াল সিট ইত্যাদি) এক্সারসাইজে দ্রুত পেশির ক্লান্তি দেখা দেয়। এতে শরীর তাড়াতাড়ি হাঁপিয়ে যায়। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়, যা ইমিউনিটি দুর্বল করে দেয়। তাই এক্সারসাইজ করার সময় বয়স এবং শরীরের চাহিদা, দুটো বিষয়েই খেয়াল রাখুন। অতিরিক্ত এক্সারসাইজ উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। তা থেকেও বিরত থাকুন।

ব্রিটিশ সোসাইটি ফর ইমিউনোলজির এক অধ্যাপক বলেন, ‘সারা বিশ্ব গৃহবন্দী থাকলেও শরীরকে বন্দী রাখলে চলবে না। শারীরিকভাবে ফিট থাকলেই দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে’। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ‘করোনার এমন পরিস্থিতিতে সবারই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই।’

সহজ-সরল ব্যায়াম

ঘরে থাকার সময়টায় শরীরচর্চা করে কাটানোর পরামর্শ সব বিশেষজ্ঞের। সব বয়সীদের জন্য বেশ কিছু কসরতের কথাও বলছেন কেউ কেউ। নিয়মিত এসব

 শরীরচর্চায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

১) দুই হাঁটু ভাঁজ করে কোমর থেকে ফুট খানেক দূরে রাখতে হবে। হাত যেন থাকে মাটিতেই। এ অবস্থায় কোমরকে তুলতে হবে শূন্যে। মনে মনে ৩০ পর্যন্ত গুনুন। ব্যায়ামটা সহজ মনে হলে একটি পা’কে শূন্যে রেখে কোমরকে উপরে তোলার চেষ্টা করুন।

২) ছয়টি দুই লিটারের পানিভর্তি বোতল ঘরের এক কোণে রাখুন। দুই হাতে দুটি বোতল রেখে দিন ঘরের ঠিক বিপরীত কোণে। ফিরে এসে বাকি চারটি  বোতলও একইভাবে  রাখুন বিপরীত কোণে। এবার বোতলগুলো শুরুতে যেখানে ছিল, সেখানে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। বিশ্রাম নিন দু-মিনিট। আবার আগের প্রক্রিয়ায় ফিরে যান। এভাবে দুই-তিনবার ব্যায়ামটা করতে হবে। এ ধরনের ব্যায়াম স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৩) একটা বালিশ নিয়ে দুই হাঁটুর মাঝখানে জোরে চেপে ধরে চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। এবার কোমর উপরে তুলে শরীরকে ডান থেকে বাঁ-দিকে ঘোরাতে হবে।

মনে রাখবেন, এ সময় কোমর যেন শূন্যেই থাকে। দুদিক মিলিয়ে ২০ বার মতো এই ব্যায়াম করার পর উঠে পড়ুন।

৪) আয়নার সামনে দুই হাতে এক লিটারের পানিভর্তি বোতল নিয়ে দাঁড়াতে হবে। ঠিক যে ভঙ্গিতে আমরা হাঁটি, সেভাবেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দ্রুত হাঁটতে হবে। হাতের বোতল দুটিকেও জোরে দোলাতে হবে। মনে মনে ৩০ গুনবেন। হাঁটার প্রথম অংশটা কঠিন হলেও দ্বিতীয় অংশটা সহজ। ব্যায়াম হয়ে যাওয়ার পরে জোরে শ্বাস নিতে এবং ছাড়তে হবে। এতে ফুসফুসে বেশি মাত্রায় অক্সিজেন ঢুকবে।

 

অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব

আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি ছিল বেশ কয়েক মাস আগের বৈশ্বিক চিত্র। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, ধনী-গরিবে ভেদাভেদ ইত্যাদি দৃশ্য দেখা যেত হরহামেশা। করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার পর পাল্টে গেছে বৈশ্বিক সাম্প্রদায়িকতার দৃশ্যপট। কভিড-১৯ মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদিসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে এসেছে একই কাতারে। বৈশ্বিক মহামারীর এমন পরিস্থিতিতে কমেছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। নেই ছোট-বড়র কোনো ভেদাভেদ। রক্তে-মাংসের মানুষ সবাই সমান। সবার মনে জাগ্রত হয়েছে এমন নীতি এবং মানবিকতা। পৃথিবীর সব মানুষ দেখছে এক অসাম্প্রদায়িক বিশ্বকে। সারা বিশ্বে এখন নেই কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ। মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছে মানুষ। প্রতিদিনই ভালোবাসাবাসির দিন। ঘরে বসে বসে ক্লান্ত হয়ে পড়া শিশুদের কথা মাথায় রেখে অনলাইনে আঁকা শেখাচ্ছেন মার্কিন টিভি উপস্থাপক নোয়েল ফিল্ডিং। কানাডায় ‘কেয়ারমংগারিং’ নামের একটি দল অনলাইনে মানুষকে শক্তি ও সাহস জোগানোর কাজ করছে। পাশাপাশি দরিদ্রদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। গৃহহীনদের জন্য করছে থাকার সুব্যবস্থা। এমন বহু উদাহরণ টানা যাবে করোনার এমন দিনে। এই তো গেল বিদেশের গল্প। বাংলাদেশেও অনেক বড় বড় সংগঠনের পাশাপাশি এমন বহু ছোট দলও অসহায় দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি বিশ্ববাসীকে দাঁড় করিয়েছে চিরচেনা ভালোবাসার বন্ধনে।

 

পারিবারিক মেলবন্ধন

এক পরিবারে থেকেও মা-বাবা ও সন্তানরা দিন কাটাচ্ছেন যে যার মতো। পারিবারিক বন্ধন আর আগের মতো দৃঢ় নয়। এমনটাই ছিল কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার আগের দৃশ্য। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পরিবারের সব সদস্য এসেছেন এক প্লাটফর্মে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশনা জারি থাকায় পারিবারিক বন্ধন মজবুত হচ্ছে। আগে নানা ঝামেলায় পরিবারকে সময় দিতে না পারলেও করোনার কারণে কমবেশি সবাই পরিবারকে সময় দিতে পারছেন। এক ছাদের নিচে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে পারছেন রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুম। পেশায় একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। সকাল থেকে রাত অবধি অফিসই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু এই করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে তিনি এখন ঘরবন্দী। এখন তাকে আর অফিসে যেতে হচ্ছে না। সারা দিন বাসায় বসে পরিবারের সদস্যদের নিয়েই তার দিন কাটছে। তিনি বলেন, ‘মহামারীর এই সময়টা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কাটছে। গৃহকর্মী না আসায় বাসার কাজ স্ত্রী আর আমি দুজনে মিলেই সামলাচ্ছি। টিভি দেখছি, বই পড়ছি, সন্তানদের নিয়ে খেলা করছি। এতে পরিবারের সবাই খুশি।’ একই সুরে সুর মেলান আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের ব্যস্ত জীবনে সুখ এনে দিয়েছে। অন্য সময় রুটিন মাফিক ব্যস্ততায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন কাটছে।’

 

অনলাইনে পড়াশোনা

নব্বই দশকে এসেছে কম্পিউটার। এরপর মোবাইল ফোনের সিঁড়ি বেয়ে স্মার্টফোনে বদলে গেছে বিশ্ব। সবচেয়ে বড় কথা জীবনটা অনেক বেশি সহজ আর স্বাচ্ছন্দ্য হয়েছে এদের বদৌলতে। ভার্চুয়াল আর বাস্তবতা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। তবে করোনাভাইরাসের এমন বৈশ্বিক  মহামারীর সময় ভার্চুয়াল জগৎ বা প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ভীষণ কাজে আসছে তা মানতেই হবে। সমগ্র বিশ্ব যখন করোনা আতঙ্কে তখন বাংলাদেশ সরকারও গেল ১৬ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। ছোট-বড় সব কোচিং সেন্টারও এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। মূলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশেও নেওয়া হয় এমন সিদ্ধান্ত। তবে কীভাবে চলছে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা? সেক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা প্রযুক্তির ব্যবহার। অর্থাৎ অনলাইন স্কুলিং বা হোম স্কুলিং। এর আবার রয়েছে অনেক প্লাটফর্ম। লাইভ ক্লাস করতে গুগলের হ্যাংআউট/জুম/স্কাইপে সহজেই ব্যবহার করা যায়। আবার ফেসবুক লাইভ করেও ক্লাস নিয়ে নেওয়া যাবে। এতে অবশ্য সুবিধাও রয়েছে। যারা লাইভে আসতে পারবে না, তারা পরবর্তীতে রেকর্ড করা ভিডিও দেখে নিতে পারবে। এ ছাড়া ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপও ভালো সমাধান। বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক, ‘এ’ লেভেল এবং ‘ও’ লেভেলের ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন স্কুলিংয়ে অভ্যস্ত হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা অনভ্যস্ত। বাংলাদেশ সরকার প্রান্তিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জাতীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে।

 

বাড়ি বসে অফিস

ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বজুড়ে বন্ধ হয়েছে অনেক অফিস-আদালত। এর মধ্যেও অবশ্য কর্মচাঞ্চল্য থেমে নেই। ইতিমধ্যে গুগল, মাইক্রোসফট, টুইটার, হিটাচি, অ্যাপল, আমাজন, শেভরন, সেলসফোর্স, স্পটিফাইয়ের মতো কোম্পানি কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে। এর একমাত্র উপায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। সাধারণত যুক্তরাজ্যে ১৫ লাখ মানুষ ঘরে বসে কাজ করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে সমগ্র বিশ্বে ঘরে বসে অফিসের কাজকর্ম সেরে নেওয়াদের তালিকা বাড়ছে। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে কাজ করার প্রবণতা অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্য, জাপান থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কয়েক দিন ধরে বাড়িতে বসে কাজ করছেন। কর্মীদের আমাদের দেশের টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোও ইতিমধ্যে এ পথে হেঁটেছে। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে। এ কাজের জন্য বাড়িতেই তৈরি করতে হবে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ এবং মানতে হবে দূরে বসেই দলগতভাবে কাজ করার সব নিয়ম-কানুন। বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যোগাযোগ। পাশাপাশি ভাবনায় পরিবর্তন আনুন। শুয়ে শুয়ে কাজ নয় এবং বাড়ির সদস্যদের সীমানা নির্ধারণ করে দিন। কর্মী একাকী বোধ করলে একাকীত্ব দূর করার জন্য পরিবারের সঙ্গে সময় দিন। সম্ভব হলে বন্ধুদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আড্ডা দিন।

সর্বশেষ খবর