বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

২৪ বছর আগে করোনা মহামারীর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে অন্ধ নারী

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ বক্তা মানা হয় ১৬০০ শতকের পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ নস্ট্রাদামুসকে। ১৫৫৫ সালে তিনি মোট ৯৪২টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর বেশির ভাগই মিলে গেছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর ভাষা ও ইঙ্গিত নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখনো তাঁকে নিয়ে চর্চা হয়। আর সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক বিশ্ব খুঁজে পেয়েছে আরেক নস্ট্রাদামুসকে। তাঁকে বলা হয় এ যুগের নস্ট্রাদামুস। তিনি বুলগেরীয় নারী ভ্যাঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। অন্ধ এই নারী বাবা ভাঙ্গা নামে বিখ্যাত। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারের হামলার কথা তিনি বলে গেছেন ১৯৮৯ সালেই। জলবায়ু পরিবর্তন, ২০০৪ সালের সুনামি এমনকি সর্বশেষ মহামারী করোনার ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন তিনি। এ ভষ্যিদ্বাণীগুলো তাঁকে বিখ্যাত করে তুলেছে। এখনো তাঁকে নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা।

র ণ ক ই ক রা ম

২৪ বছর আগে করোনা মহামারীর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে অন্ধ নারী

সাধারণ ভ্যাঞ্জেলিয়ার গল্প

বাবা ভাঙ্গা নামে পরিচিত হলেও পৃথিবী কাঁপানো এই অন্ধ মহিলার নাম ভেঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। বুলগেরিয়ার রহস্যময় আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন এই নারীকে বলা হয় এ যুগের নস্ট্রাদামুস। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপিটি নামক স্থানে। তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উসমানীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র) স্ট্রোমিকাতে। এ অঞ্চলটি প্রথম বলকান যুদ্ধের সময় বুলগেরিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। ভ্যাঞ্জেলিয়া ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। এমনকি জন্মের পরও অনেকক্ষণ কোনো সাড়া-শব্দ ছিল না তাঁর। তখনকার স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া না যায় যে, শিশুটি বেঁচে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর নাম রাখা হয় না। একটু সময় নিয়ে শিশু ভ্যাঞ্জেলিয়া যখন কেঁদে উঠল তখন ধাত্রী রাস্তায় বেরিয়ে এলেন। রীতি অনুযায়ী অপরিচিত আগন্তুকের কাছে তাঁর নাম রাখার অনুরোধ করলেন ধাত্রী। অপরিচিত সেই ব্যক্তিটি শিশুটির নাম অ্যান্ড্রোমাহা রাখতে চাইলেন। কিন্তু এই নামটি গ্রিক নামের সঙ্গে খুব বেশি মিল থাকায় প্রত্যাখ্যাত হলো। এরপর আরেকজন অপরিচিত ব্যক্তি ভেঞ্জেলিয়া নাম রাখার জন্য প্রস্তাব করলেন। এই নামটিও গ্রিক নামের সঙ্গে মিলে যায়। এর মধ্যে একটা বুলগেরীয় ভাব থাকায় সেটি গৃহীত হলো। শেষ পর্যন্ত শিশুটির নাম রাখা হয় ভেঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা।

শৈশবে ভেঞ্জেলিয়া নীল চোখ ও সোনালি চুলের অধিকারী ছিলেন। তাঁর বাবা অভ্যন্তরীণ ম্যাসেডোনীয় বিপ্লবী সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ভ্যাঞ্জেলিয়ার মা শৈশবেই  মৃত্যুবরণ করায় তাঁর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ফলে সৎ মায়ের আশ্রয়ে পালিত হন ভ্যাঞ্জেলিয়া।

অসহায় সেই মেয়েটি

কথিত আছে, ভেঞ্জেলিয়ার বয়স যখন মাত্র ১২ বছর, তখন সে তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে খেলায় মত্ত থাকা অবস্থায় এক ভয়ানক ঝড়ের কবলে পড়ে। সেই ঝড় ভেঞ্জেলিয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যায় বহুদূর। কয়েক দিন পর যখন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়, তখন দেখা গেল তাঁর উভয় চোখের অবস্থাই খুব খারাপ। অক্ষিকোটরে ধুলাবালু ও ময়লা ঢুকে তাঁর চোখের ওপর জমে শক্ত আবরণ তৈরি করে ফেলেছে! এ অসহায় মেয়েটির দরিদ্র পরিবারের সামর্থ্য ছিল না তাঁকে উন্নত চিকিৎসা করানোর। ফলে ভাগ্যের নির্মম পরিণতি মেনে নিয়ে তাঁকে আজীবনের জন্য অন্ধত্ব বরণ করে নিতে হয়।

সেই ঝড় থেকেই অদ্ভুত ক্ষমতা

অন্ধ হওয়ার পর ভেঞ্জেলিয়া এক অদ্ভুত দাবি করে বসলেন। তিনি জানালেন, প্রলয়ঙ্করী ঝড়টি যখন তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে গেল, যখন সে তাঁর দৃষ্টি হারাল, সে বুঝতে পারল তাঁর মধ্যে ভর করেছে অদ্ভুত কোনো ক্ষমতা। যেন সে তাঁর দৈবদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পাচ্ছে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে। শুধু তাই নয়, তাঁর মধ্যে নাকি রয়েছে-স্পর্শের মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা! ১৯২৫ সালে জেমুন শহরে ভাঙ্গাকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় যেখানে তাঁকে ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়। সেখানেই তিনি পিয়ানো বাজানো, বুনন, রান্না ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর শিক্ষা নেন। এই বিদ্যালয়ে তিনি তিন বছর অবস্থান করেন। সে সময়ই তাঁর সৎমা মৃত্যুবরণ করলে তিনি তাঁর সৎ ছোট ভাইদের দেখাশোনার জন্য বাড়ি ফিরে আসেন।

ভ্যাঞ্জেলিয়া থেকে বাবা ভাঙ্গা

এরপর দেখা গেল সত্যি সত্যি ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন ভ্যাঞ্জেলিয়া। এমনকি স্থানীয়দের মধ্যে এমন বিশ্বাস প্রগাঢ় হয়ে উঠল যে, ভ্যাঞ্জেলিয়ার স্পর্শে জটিল সব রোগও ভালো হয়ে যায়। ফলে ভ্যাঞ্জেলিয়া বুলগেরীয়দের কাছে হয়ে ওঠেন ‘বাবা ভাঙ্গা’ (Baba Vanga)। বুলগেরিয়ান ভাষায় ‘বাবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘দাদিমা’ বা ‘জ্ঞানী মহিলা’। বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যৎ দর্শন ও মানুষকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতার কারণেই এরূপ নামকরণ। অন্যদিকে আস্তে আস্তে তাঁর এই ক্ষমতার কথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ভবিষ্যৎ বলার এমন ক্ষমতার কারণে তিনি উপাধি পান ‘বলকানের নস্ট্রাদামুস’। আবার অনেকের কাছে ‘এ যুগের নস্ট্রাদামুস’। ১৯৯৬ সালে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বাবা ভাঙ্গার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিপুল লোক সমাগম ঘটে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পেটরিচের বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয় এবং ২০০৮ সালে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তিনি চলে গেলেও তাঁর বাণী এখনো মানুষের কাছে উৎসাহের বিষয় হয়ে আছে। তাই তাঁর কথাগুলোকে আরও ১০০০ বছর মানুষকে ভাবাতে থাকবে,  কারণ তিনি ৫০৭৯ সাল পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

মিলে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণীগুলো

বিশ্বজুড়ে বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে এত আলোচনার মূল কারণ হচ্ছে অদ্ভুতভাবে মিলে যাওয়া তার বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সেখান থেকেই কয়েকটির  কথা আলোচনা করা যাক

টুইন টাওয়ারে হামলা

বাবা ভাঙ্গার সবচেয়ে সাড়া জাগানো ভবিষ্যদ্বাণী মানা হয় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাটিকে। বলা হয়ে থাকে বাবা ভাঙ্গা ১৯৮৯ সালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীটি ছিল এরকম- Horror, horror! The American brethren will fall after being attacked by the steel birds.The wolves will be howling in a bush and innocent blood will gush.এর অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় অনেকটা এরকম- ‘ইস্পাত নির্মিত (ধাতব) পাখিদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর আমেরিকান ভ্রাতাদের পতন ঘটবে। নেকড়েরা ঝোঁপের আড়াল থেকে চিৎকার করতে থাকবে, আর নিরীহদের রক্ত ঝরবে।’

এখানে ইস্পাতনির্মিত পাখি বলতে ‘বিমান’কে বোঝানো হয়েছে। আর Brethren শব্দের অর্থটা বিস্তৃত বা ভাই। এখানে এটি জোড়া টাওয়ার বা টুইন টাওয়ারকে বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে যেহেতু Bush শব্দটির উল্লেখ আছে, তাই সেটিকে কাকতাল না ভেবে, বরং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে মেলানো হয়।

কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট

বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ। আশ্চর্যজনক ভাবে বারাক ওবামা একজন আফ্রিকান-আমেরিকান এবং তিনিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট!

ভয়ঙ্কর সুনামি

বাবা ভাঙ্গা ১৯৫০ সালে বলেছিলেন-A huge wave will cover a big coast covered with people and towns, and everything will disappear beneath the water.‘মানুষ ও বসতিতে পরিপূর্ণ এক সমুদ্রতীরে বিশাল বড় এক ঢেউ আছড়ে পড়বে এবং সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে যাবে।’

বলা হয়ে থাকে এখানে বাবা ভাঙ্গা ২০০৪ সালে ঘটে যাওয়া বক্সিং ডে, অর্থাৎ বড়দিনের পরদিন (২৬ ডিসেম্বর) এর সুনামির কথা বলেছেন। সেদিন ভারত মহাসাগরের তলদেশে এক ভয়ানক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল, যার মাত্রা ছিল প্রায় ৯.১! এর ফলে প্রবল শক্তিশালী সুনামি। এই সুনামি যখন ইন্দোনেশিয়ায় আছড়ে পড়ে, তখন পানিস্তম্ভের উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট। আক্ষরিক অর্থে কিছুই দাঁড়াতে পারেনি এই বিশাল জলরাশির শক্তির সামনে। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

বাবা ভাঙ্গা বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-‘শীতল অঞ্চলগুলো উষ্ণ হয়ে উঠবে এবং আগ্নেয়গিরিরা জেগে উঠবে। সবকিছু বরফের মতো গলে যাবে।’ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে মিলে যায়। বাবা ভাঙ্গা এখানে সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন।

আইএসের উত্থান

বাবা ভাঙ্গা বহু আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০১০ সালের দিকে সিরিয়াতে এক ‘বৃহত্তর মুসলিম যুদ্ধ’ শুরু হবে। এতে এক ‘চরমপন্থি মুসলিম শক্তির’ উত্থান ঘটবে এবং তারা ইউরোপ আক্রমণ করবে। আইএসের উত্থানের ঘটনা এবং ইউরোপের কয়েকটি স্থানে তাদের অনুসারীদের হামলার ঘটনাকে ওই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।

ব্রেক্সিট প্রসঙ্গ

বাবা ভাঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ২০১৬ সালে ইউরোপের পতন হবে। বাবা ভাঙ্গার অনুসারীদের দাবি এখানে ‘পতন’ বলতে ইউরোপের ‘ঐক্য বিনষ্ট হওয়া’র কথা বুঝিয়েছেন। ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটির কথাই কি বাবা ভাঙ্গা বোঝাতে চেয়েছিলেন?

পরাশক্তি চীন

চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রসঙ্গেও ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে গেছেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালের মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে নতুন পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হবে।

আরও ভবিষ্যদ্বাণী

২০০০ সালের ১২ আগস্ট, রাশিয়ার উত্তরে ব্যারেন্ট সাগরের বুকে রুশ নৌবাহিনীর একটি পারমাণবিক-শক্তিচালিত সাবমেরিন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং ডুবে যায়। এটির নাম ছিল ‘কুর্স্ক’। জানা যায়, এই দুর্ঘটনার বিষয়ে বাবা ভাঙ্গা একদম সময় উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন! তিনি সে সময় ১৯৯৯ বা ২০০০ সালের দিকে এমনটি ঘটার উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ স্ট্যালিনের মৃত্যুর দিনক্ষণ, চেরনোবিল নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপর্যয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং রাশিয়ার শাসক হিসেবে পুতিনের উত্থানের ব্যাপারেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন  বলে শ্রুতি আছে।

করোনার কথা ২৪ বছর আগেই বলে গেছেন বাবা ভাঙ্গা

গোটা বিশ্ব এখন লড়াই করছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সঙ্গে। এ নিয়ে নাকি অনেক বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাবা ভাঙ্গা। এই খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। 

ডেইলি স্টার ইউকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবা ভাঙ্গা ১৯৯৬ সালেই করোনাভাইরাসের ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। তার মৃত্যুর আগে ৮৪ বছর বয়সে সবাইকে মরণঘাতী এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা। বাবা ভাঙ্গার সঙ্গে ওই সময় সাক্ষাৎ করা এক নারীর দাবি, তিনি সে সময় দাবি করেছেন করোনায় সবাই আক্রান্ত হবেন। ৭৩ বছর বয়সী এই নারীর নাম নেশকা স্টেফানোভা। নেশকার দাবি বাবা ভাঙ্গা একটা মহামারীর কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন `Neshka, the Corona will be all over us’.

 নেশকা বলেন, তখন তিনি বাবা ভাঙ্গার কথার মানে বুঝতে পারেননি। এখন যখন সারা বিশ্ব করোনার সঙ্গে লড়াই করছে, তখন তিনি এ যুগের নস্ট্রাদামুসের বলা সেই কথা মনে করলেন। সেই সঙ্গে সবাইকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেছেন বলেই মুখ খুলেছেন।

সত্য-মিথ্যা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল

বাবা ভাঙ্গার এই অলৌকিক ক্ষমতা-ভবিষ্যদ্বাণী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সম্ভবত এটাই যেএগুলো বিশ্বাস করা উচিত, নাকি না?

 

বলা হয়ে থাকে বাবা ভাঙ্গার করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই নাকি পুরোপুরি মিলে গেছে। কিন্তু এ ধরনের দাবির সত্যিকার কোনো ভিত্তি নেই। এটা সত্য যে, বাবা ভাঙ্গা বেশ চমকপ্রদ কতগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যেগুলো মিলে গেছে। কিন্তু ৮০ শতাংশ মিলে যাওয়া দাবিটি সঠিক নয়। এ ধরনের দাবি কিংবা তথ্য প্রকাশ পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপাক্ষিক। হয় অন্ধ ভক্তশ্রেণি এ ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে, নতুবা নির্দিষ্টি উদ্দেশে কেউ এসব তথ্যকে সত্য প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মজার ব্যাপার হলো এই দলের লোকেরা যে কথাগুলো মিলে যায়নি, সেগুলোর কথা একদমই মুখে আনেন না। বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে অনলাইন ভিডিও বা পোর্টালের স্টোরিগুলো অধিকাংশই একপেশে এবং বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা। বাবা ভাঙ্গা কেমন করে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন? এ নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে না হয়তো। তবে বাবা ভাঙ্গা নিজেই বলেছেন, তাঁকে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এই জাতীয় কোনো সত্তারা ভবিষ্যৎ দেখতে কিংবা অতিন্দ্রীয় কোনো কিছু বুঝতে সাহায্য করে!

তাঁর খ্যাতি বাড়তে বাড়তে এক সময় এমন পর্যায়ে চলে গেল যে, বাল্টিক অঞ্চলের আশপাশে এবং সারা বিশ্বের অনেক স্থান থেকেই তাঁর সাক্ষাতে লোক আসতে লাগল। সেসব লোকদের মধ্যে নানা দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ অসংখ্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। রয়েছেন বুলগেরিয়ার জার তৃতীয় বরিস ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ-ও! এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব কোন পর্যায়ে ছিল।

বুলগেরিয়ান রাজপরিবারের সঙ্গে বাবা ভাঙ্গার সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েমের পর কমিউনিস্ট নেতাদের পরামর্শক হিসেবে বাবা ভাঙ্গাকে নিয়োগ করা হয়। এটি পুরোটাই কৌশলগত। কমিউনিস্টরা তখন বাবা ভাঙ্গার ‘তথাকথিত’ ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, এসবের কারণেই আরও বেশি খ্যাতি লাভ করেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি কী আসলেই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ছিলেন, নাকি শুধুই কমিউনিস্টদের হাতের পুতুল- এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক থাকলেও বাবা ভাঙ্গা নিঃসন্দেহে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর আশপাশে দারুণ প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সিরিয়াসলি বিশ্বাসের যেমন কারণ নেই তেমনি একেবারে অবহেলারও সুযোগ নেই।  এ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে!

যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মেলেনি

বিশ্বজুড়ে বাবা ভাঙ্গার ওই বাণীগুলো নিয়েই আলোচনা বেশি হয় যেগুলো মিলে গেছে বা কাছাকাছি গেছে তবে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু অনেকবারই ভুল প্রমাণিত হয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা তুলনামূলকভাবে কম হলেও সত্য  লুকানোর কোনো সুযোগ নেই

১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল

বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে যে দুটি দল খেলবে তাদের আদ্যক্ষর হবে ‘বি’। কিন্তু ব্রাজিলের ক্ষেত্রে কথাটি মিলে গেলেও বুলগেরিয়া সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় তার কথা পুরোপুরি ফলেনি।

পারমাণবিক যুদ্ধ

বাবা ভাঙ্গার অনুমান ছিল ২০১০ সালের আগে পরে বা কাছাকাছি সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ২০১০ পেরিয়ে এখন চলছে ২০২১। তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী এতটুকুও মেলেনি।

ইউরোপের পতন

বাবা ভাঙ্গা অনুমান মতে, ২০১৬ নাগাদ ‘মুসলিম চরমপন্থি শক্তি’ কর্তৃক ইউরোপে রাসায়নিক হামলা সংঘটিত হওয়ার কথা। আর এটি ধীরে ধীরে ইউরোপের জনবসতি কমাতে থাকবে। এমনকি ইউরোপে ‘কোনো প্রকার প্রাণের অস্তিত্ব’ থাকবে না বলেও দাবি করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা। অথচ আইএস বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা এমন কোনো হামলাও ঘটল না, আবার ইউরোপও বহাল তবিয়তেই আছে।

উত্তরসূরি ফরাসি বালিকা

বাবা ভাঙ্গা মৃত্যুর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছিলেন যে, তার মৃত্যুর পর ১০ বছর বয়সী এক ফরাসি দৃষ্টিহীন বালিকা তার এই ঐশ্বরিক ক্ষমতা লাভ করবে এবং মানুষ দ্রুতই সে মেয়েটির পরিচয় জানতে পারবে। কিন্তু এ ধরনের কারও কথাই জানা যায়নি।

বাবা ভাঙ্গা প্রচুর বিষয় নিয়ে নিজের গণনা বা অনুমানের কথা বলে গেছেন। সেগুলোর অনেকগুলো বাস্তবের সঙ্গে মেলেনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে বাবা ভাঙ্গার যে কথাগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কেউ সাধারণত আলোচনা করতে চায় না। এমনকি বিশ্ব মিডিয়াতেও বারবার ঘুরে ফিরে বাবা ভাঙ্গার মিলে যাওয়া ঘটনাগুলোকেই তুলে ধরা হয়েছে। অমিলের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে শতভাগ ঐশ্বরিক ক্ষমতা তাঁর ছিল না।

তাঁর চোখে আগামীর বিশ্ব

আগামীর পৃথিবী নিয়ে বছর ধরে ধরে বাবা ভাঙ্গা বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন পৃথিবীর ভবিষ্য নিয়ে যদি আপনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকে তাহলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন  নিশ্চিত চমকে উঠবেন!

২০২৫-২০২৮

পৃথিবীর বুক থেকে দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হবে। মানবজাতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

২০২৩

পৃথিবীর কক্ষপথে পরিবর্তন আসবে। 

২০৩৩-২০৪৫

পোলার আইস ক্যাপ, অর্থাৎ দুই মেরুতে জমা বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। 

২০২৮

জ্বালানির নতুন উৎসের সন্ধানে মানুষ শুক্রগ্রহে যাবে।

২০৪৩

ইউরোপে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তার রাজধানী হবে রোম। মুসলমানদের শাসনে বিশ্ব অর্থনীতি গতি পাবে।

২০৪৬

মানুষ অঙ্গ ক্লোনিং বা স্টেমসেল গবেষণায় অনেক উন্নতি লাভ করে কৃত্রিমভাবে অঙ্গ তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করবে।

২০৬৬

মসজিদে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্ত্র ব্যবহার করবে যেটা হঠাৎ তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে। 

২০৭৬

পৃথিবীতে কমিউনিজম বা সাম্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। 

২০৮৪

নতুন করে সৃষ্টি হবে প্রকৃতির।

২০৮৮-২০৯৭

এক নতুন ধরনের অসুখ ছড়াবে যাতে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাবে। ২০৯৭-এর মধ্যে সেই অসুখের অ্যান্টিডোজ খুঁজে পাবে মানুষ।

 ২১০০

কৃত্রিম সূর্যের দ্বারা রাতকে আলোকিত করা হবে। তখন সর্বদাই পৃথিবীর বুকে দিন থাকবে, কখনো আঁধার নামবে না।

২১০০-২১৩০

মানুষ জীবন্ত রোবট হয়ে যাবে। এই আধা রোবট-আধা মানুষদের বলা হবে ‘সাইবর্গ’ বা ‘সাইবর্স’।

২১৩০

মানুষ সমুদ্রের নিচে বসতি স্থাপন করে বসবাস করার সক্ষমতা অর্জন করবে। ভিনগ্রহের প্রাণীদের সহায়তা বা প্রযুক্তির সাহায্যে করা হবে কাজটি।

২১৫৪-২২০০

এ সময়ের মধ্যে প্রাণীরাও আধা-মানুষে পরিণত হবে।

২১৭০

বিশ্বে খরা দেখা দেবে।

২১৭০-২২৫৬

মানুষ মঙ্গলগ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করবে। 

২২৬২-২৩০৪

মানুষ টাইম-ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ করার সক্ষমতা অর্জন করবে।

২১৯৫

সাগরের পানির নিচে শহর গড়ে উঠবে।

২১৯৬

এশিয়া ও ইউরোপের মানুষ একসঙ্গে মিলে নতুন এক জাতের মানুষ তৈরি হবে।

২৪৮০

দুটো কৃত্রিম সূর্যের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে। পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসবে।

৩০০৫

মঙ্গলগ্রহে বিশ্বযুদ্ধ হবে।

৩০১০

চাঁদে একটি ধূমকেতু আছড়ে পড়বে।

৩৭৯৭

পৃথিবী নামক গ্রহের কোনো কিছুই টিকে থাকবে না, সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।

৪৩০২-৪৬৭৪

মানুষ অমরত্ব লাভ করবে এবং বহির্জাগতিক কোনো প্রাণী বা এলিয়েনদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। মহাবিশ্বের জনসংখ্যা তখন হবে প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন।

৫০৭৯

পুরো মহাবিশ্ব ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

সর্বশেষ খবর