বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সাইবার জগতে কঠোর বিশ্ব

সাইফ ইমন

সাইবার জগতে কঠোর বিশ্ব

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এখন তোলপাড় সারা দুনিয়া। যে কেউ কোনো বিষয়ে যা খুশি বলে দিতে পারে কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাও আবার আইনের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন চেষ্টা চলছে কীভাবে বড় সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বেপরোয়া কাজকর্মের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়।  যদিও মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকে এটি দেখছেন মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা হিসেবে।

 

আপত্তিকর পোস্ট মুছতে তৎপর ফেসবুক-টুইটার

ফেসবুক ও টুইটারে উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদকে যারা সমর্থন করে, যারা মনে করে ফেসবুকে যা খুশি লেখা বা করা যায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, হত্যার হুমকি দেওয়া, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বিশেষ কোনো কারণে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা, শান্তি বিনষ্ট করা কিংবা সহিংসতা ছড়ানোর মতো বক্তব্য প্রচার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ মাধ্যম দুটিতে। ফেসবুক এ সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। সবাইকে প্রকৃত এবং আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নাম ব্যবহার করতে হবে। যারা ছদ্মনাম, কোনো সংস্থার নাম বা অন্য কোনো ধরনের নাম ব্যবহার করছেন, তাঁরা প্রকৃত এবং আইনত গ্রহণযোগ্য নামে আত্মপ্রকাশ না করলে অ্যাকাউন্ট ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ করা হবে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, কিংবা অপরাধকর্মে জড়িত যে কোনো সংগঠনই ফেসবুকে নিষিদ্ধ। আবার নগ্ন দেহ, যৌনাঙ্গ বা উন্মুক্ত নিতম্বের ছবির বিরুদ্ধে ফেসবুক আগে থেকেই কঠোর। এমন ছবি দিলে ফেসবুক সরিয়ে দেয়। ফেসবুক টুইটার বলছে মা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন ছবির ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। এখন থেকে নগ্নতার বিষয়ে তারা অনেক বেশি কঠোর। কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠান অনলাইনে মনিটরিংয়ের জন্য ৩০ হাজার লোক নিয়োগ করেছে আগেই।

 

বিতর্কিত বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলে ইউটিউব

ইউটিউব দাবি করে এসেছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে যেখানে তারা নিজেরাই আপত্তিকর বিষয়বস্তু সরিয়ে নেন। তাদের সাইটে যখন কোনো আপত্তিকর কনটেন্ট দেওয়া হয়, তারা সেটি জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইউটিউব কোটি কোটি ভিডিও তাদের সাইট থেকে অপসারণ করেছে। এর মধ্যে ৮১ শতাংশই সরানো হয়েছে যন্ত্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এই ভিডিওগুলোর তিন-চতুর্থাংশ কেউ দেখার আগেই সরিয়ে ফেলা হয়। শুধু আপত্তিকর ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার জন্য সারা বিশ্বে ইউটিউব ১০ হাজার লোক নিয়োগ করেছে। তাদের কাজ মনিটরিং করা এবং আপত্তিকর ভিডিও সরিয়ে নেওয়া। ইউটিউব তাদের প্রযুক্তি আরও বেশি উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদী প্রপাগান্ডা সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে তারা যাতে শতভাগ সফল হতে পারে। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি দিয়ে শনাক্ত করা গেলে দ্রুত সরিয়ে ফেলার কাজ সম্পন্ন করা যায়। যখন কেউ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কারও নগ্ন ছবি বা ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয় তখন এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে এতদিন দায়ী করা যেত না। এ জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত কেবল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে।  কিন্তু এখন অনেক দেশেই আইন বদলানোর চিন্তাভাবনা চলছে, অনেকে আইন করেও ফেলেছে।

 

কঠোর ব্যবস্থা নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদে উৎসাহ জোগায় সেসব ভিডিও প্রচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কঠোর। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) নামে আইন কার্যকর হয়েছে আগে থেকেই। বিভিন্ন কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান কীভাবে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করবে, সে বিষয়ে মূলত এই আইন। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরেকটি আইনের প্রস্তাব করেছে, যেটি নিয়ে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো দুশ্চিন্তায় আছে। কেউ যদি কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমে কপিরাইট লঙ্ঘন করে কিছু পোস্ট করে, সে জন্য ওই ব্যক্তি তো বটেই, সেই সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফরমকেও দায়ী করা যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পূর্বের আইনে আপত্তিকর কনটেন্টের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর তা সরিয়ে নিলেই মামলা চুকে যেত। কিন্তু নতুন আইনে এ জন্য দায়িত্বটা  এখন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের ঘাড়েই বর্তাবে। কপিরাইট আইন লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকবে তাদেরই।

 

যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ করে দেওয়া হয় আইডি

মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারের প্রতি আহ্‌বান জানিয়েছেন সম্প্রতি। অনলাইনে নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল মিথ্যা অপ্রীতিকর তথ্য ছড়িয়ে দাঙ্গা হামলার ঘটনা ঘটেছে মার্কিন মুল্লকে। তাই  সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে ও হ্যাকিং প্রতিরোধে মার্কিন কংগ্রেসে আইনও পাস করা হয়েছে। এতে  এখন থেকে দেশটির সব প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তা প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে স্বেচ্ছায় তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে। অপরাধের ক্ষেত্রে দেখা হচ্ছে না ব্যক্তি কে, কী তার পরিচয়- সোজা আইডি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। কাউকে আঘাত করে, হুমকি দিয়ে লেখা, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করা ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। এদিকে, ‘সাইবার সিকিউরিটি ইনফরমেশন শেয়ারিং অ্যাক্ট (সিআইএসএ)’ বিলের ফলে আরও বেশি করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য  জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সি ও অন্যান্য সরকারি গোয়েন্দার হস্তগত হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

 

চীন

চীন গণপ্রজাতন্ত্রের সাইবার সিকিউরিটি আইনের ব্যাপারে বেশ কড়া। দেশটি জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে ডেটা, তথ্য-উপাত্তের স্থানীয়করণ ও দেশটির সাইবার সিকিউরিটি জোরদার করার জন্য সাইবার সিকিউরিটি আইন করে। চীনা কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি এই আইনটি করেছিল ২০১৬ সালের নভেম্বরে। ২০১৭-এর জুনে আইনটি কার্যকর করা হয়। এই আইনের আওতায় রয়েছে চীনের কয়েক কোটি অনুসারী। দেশটিতে  সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমগুলোয় কয়েক লাখ সাইবার পুলিশ কাজ করে। যাদের কাজ- সাইবার ক্রাইম, সাইবার বুলিং, বিতর্কিত অনলাইন পোস্ট, ভিডিও ইত্যাদির ওপর নজরদারি রাখা। দেশটি সাইবার আইনের নামে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বার্তাগুলোও যাচাই-বাছাই করে থাকে। দেশটির সরকার অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলোর ওপর নজরদারির পাশাপাশি ডেটা সংরক্ষণ এবং কোনো সংস্থার নেটওয়ার্কিং স্পর্শকাতর হলে ওই প্ল্যাটফরম এবং তার ব্যবহারকারীর ওপর শাস্তির বিধান রেখে সাইবার সিকিউরিটি আইন করেছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল- বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সীমাবদ্ধ করতে নয়, দেশ ও দেশের জনগণের তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়াতে নতুন সাইবার আইন করেছে চীন সরকার।

 

রাশিয়া

অনলাইন সতর্কতায় রাশিয়া অনেক আগে থেকেই সফল। তারা দেশের প্রত্যেক নাগরিক সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে রাখে নিপুণ দক্ষতায়। রাশিয়ায় ২০১৫ সালের ডাটা আইন অনুযায়ী সব সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে রুশ নাগরিকদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাশিয়াতেই কোনো সার্ভারে সংরক্ষণ করতে হয়। তবে ফেসবুক এবং টুইটার কীভাবে এই আইন মেনে চলবে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা দিতে না পারায় রাশিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায়। রাশিয়া এর পাশাপাশি জার্মানির মতো একটি আইন করার কথা বিবেচনা করছে যেখানে আপত্তিকর কনটেন্ট সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এটা করবে না তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থা থাকবে। নতুন এই আইনের বিধান সম্প্রতি আরও বাড়ানো হয়েছে, যাতে ফৌজদারি অপরাধের জন্য সন্দেহ করা হচ্ছে এমন কনটেন্ট সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফরমকে রাশিয়ার পুলিশের কাছে সরাসরি পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি কারও ব্যক্তিগত তথ্য বা অনলাইন প্ল্যাটফরমে নিরাপত্তাজনিত হুমকি দিলে এবং তা আদালতে প্রমাণিত হলে আদালত  অপরাধীকে শাস্তির বিধানও রাখে। 

 

তুরস্ক

২০২০ সালের জুলাইয়ে তুরস্কের সংসদ সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফরমগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে একটি আইন পাস করেছে। এই আইনের আওতায় যেসব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের ১০ লাখের বেশি অনুসারী আছে, তাদের তুরস্কে স্থানীয় কার্যালয় থাকতে হবে এবং সরকার কোনো কনটেন্ট সরাতে বললে তাদের সেটা মানতে হবে। কোনো সংস্থা এই নির্দেশ অমান্য করলে তাদের জরিমানা করা হবে এবং তাদের ডেটা সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ তাদের ডেটা সরবরাহের গতি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেওয়া হবে। এই পরিবর্তন প্রযোজ্য হবে ফেসবুক, গুগল, টিকটক এবং টুইটারের মতো বিশাল প্রযুক্তি সংস্থাগুলোসহ বহু কোম্পানি এবং বহু সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফরমের ক্ষেত্রে। নতুন আইনে নির্দেশ অমান্যকারী সংস্থাগুলোর ব্যান্ডউইথ ৯৫% পর্যন্ত হ্রাস করা হতে পারে, যার অর্থ হবে তারা কাজ করতে পারবে না। নতুন আইন অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত তথ্য তুরস্কে সংরক্ষিত রাখা হবে। পাশাপাশি প্ল্যাটফরমগুলোয় কোনো ব্যবহারকারী আপত্তিকর ছবি, মন্তব্য কিংবা জনবিদ্বেষমূলক কার্যক্রম করলে শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইন পাস করেছে দেশটির সংসদ। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো নতুন আইনকে বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ বলে দাবি করে আসছে। ২০২০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন চালু হওয়ার পর স্পর্শকাতর মন্তব্য কমে এসেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তুরস্কের ৮ কোটি ৪০ লাখ জনগণের মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট  এবং টিকটক সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফরমগুলো খুবই জনপ্রিয়।

 

জার্মানি

জার্মানিতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও বাকস্বাধীনতা গুরুত্বের সঙ্গে রক্ষা করার রেওয়াজ চালু আছে। যার ধারাবাহিকতায় দেশটি ২০১৭ সালে নেটজেডডিজি নামে একটি নেটওয়ার্ক এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট বা নেটওয়ার্ক আইন চালু করে। ২০১৮ সালের শুরু থেকে দেশটি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে এক নতুন আইন কার্যকর হয়। জার্মানিতে যেসব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের ২০ লাখের বেশি ব্যবহারকারী আছে, তারা সবাই এই আইনের আওতায় পড়বে। একইভাবে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এবং আপত্তিকর কনটেন্টকে ওই আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। জার্মানিতেও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আপত্তিকর কোনো পোস্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে না সরালে আইন অনুযায়ী তাদের ৫০ মিলিয়ন ইউরো (৫ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানার বিধান আছে। কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কোনো কনটেন্ট শেয়ার করে যা এই আইনের বিরোধী, সেজন্য তাকে ৫০ লাখ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। জার্মানিতে আইনটি কার্যকর হওয়ার পর প্রথম বছরে ব্যবহারকারীদের দিক থেকে ৭১৪টি অভিযোগ আসে। অনলাইন প্ল্যাটফরমের কাছে অভিযোগ করার পরও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপত্তিকর পোস্ট সরিয়ে নেওয়া হয়নি বা ব্লক করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন তারা। ২০০৬ সালে দেশটি সাইবার ক্রাইম একটি আইন পাস করেছিল, যেখানে ওই আইনে অনলাইন সম্পর্কিত আইনের সব ধরনের ফাঁকফোকর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের নতুন আইনে এর পূর্ণতা পায়। আর এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সাইবার অ্যান্ড ইনফরমেশন ডোমেন সার্ভিস নামের একটি জার্মান  সামরিক সংস্থা।

 

ভারতেও কঠোরতা

ভারতে ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন কার্যকর হয় গত মাসে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন সম্পর্কে দেশটি আছে কঠোর অবস্থানে। ইতিমধ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষ সব অনলাইন প্ল্যাটফরমকে সতর্ক থাকার আহ্‌বান জানিয়েছে। আইন মানতে ব্যর্থ হলে সোশ্যাল মাধ্যম এবং সেগুলোর ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে ভারত সরকার। ধারাগুলো এমনভাবে সাজানো, যেন ব্যবহারকারীর পোস্টের নিয়ন্ত্রণ থাকে সরকারের হাতে। নতুন আইনে বলা হয়েছে- টুইটার, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলে, তা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পালন করতে হবে। ব্যবহারকারীর অভিযোগ জানানোর মতো একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। যার কাজ হবে- অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা সুরাহা করা। আইনে আছে- একজন প্রধান কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য  একজন কর্মকর্তাও থাকতে হবে।

 

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া, সাইবার অপরাধ রোধে এক কঠোর আইন চালু করে যাতে সহিংস ও জঘন্য কোনো কিছু অনলাইনে শেয়ার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করলে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এনে জেল-জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে। জরিমানার অঙ্কটি বেশ বড়। কোনো সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি বার্ষিক গ্লোবাল টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনলাইন সেফটি আইন নামে আরেকটি আইনে একজন ‘ই-সেফটি কমিশনারের’ পদ তৈরি করা হয়। এটি কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে পারেন আপত্তিকর কনটেন্ট সরিয়ে নিতে। এ জন্য থাকবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিস দেওয়ার ক্ষমতা। জরিমানা হতে পারে ৫ লাখ ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত। ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এই জরিমানা হতে  পারে ১ লাখ ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত।

 

যুক্তরাজ্য

সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর উদ্দেশ্য, ক্ষতিকর কনটেন্ট কোনো সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেলে এর জন্য কোম্পানিকেও যেন দায়ী করা যায়। ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় নিয়ম ভঙ্গকারী সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের জরিমানা থেকে শুরু করে তাদের সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথাও রয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার থেকে শুরু করে নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া যারা ব্যবহার করেন, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের কথা ভাবছে। ব্রিটেনের আইনে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। ব্রিটিশ সরকার এই অবস্থান পরিবর্তন চায়। যাতে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো বাধ্য হয় অবৈধ কনটেন্ট সরিয়ে নিতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর