বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের গল্প

আবদুল কাদের

প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের গল্প

ডাইনোসর কিংবা মোসোসোরাস কোনো রূপকথার গল্পের কাল্পনিক প্রাণী নয়। একটা সময় পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়াত এসব প্রকা- ডাইনোসর ও মোসোসোরাস। তারপর পৃথিবীতে জন্ম নেয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের আয়তনও নেহাত কম ছিল না। আজকের বাঘ, সিংহের চেয়েও বহু গুণ হিংস্র ছিল তাদের স্বভাব। পৃথিবীর বুক থেকে এসব বিলুপ্ত হয়ে গেছে ঠিকই। তবে আজও জীবিত রয়েছে তাদের ‘বংশধর’।  যদিও বিবর্তনের সূত্র মেনে কমেছে আয়তন। দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু প্রজাতি ও তাদের পূর্বপুরুষদের।

 

ডাইনোসর

পৃথিবীতে ৩ হাজার ৪০০ প্রজাতির বেশি ডাইনোসর ছিল বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। যার বেশির ভাগেরই জীবাশ্ম বা অস্তিত্ব আজ নেই।  তবে এদের বিচরণ ছিল পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে। এমনকি অ্যান্টার্কটিকায়ও এদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ডাইনোসর শব্দটি মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশালদেহী প্রাণীর অবয়ব। যে সব একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল ও শক্তিশালী প্রাণী হিসেবে পৃথিবীতে বিচরণ করত। এদের যে সব জীবাশ্ম রয়েছে, তা থেকে বিশ্লেষিত তথ্য আমাদের এ ধারণাই দেয় যে, পাখি থেরোপড ডাইনোসরেরই বিবর্তিত রূপ। বিজ্ঞানীদের মতে, ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর ওপর এক বিশাল গ্রহাণুর আঘাতের পরিণামে। একদল বিজ্ঞানী সেই ঘটনাটির বিশদ বিবরণ তৈরি করেছেন সেকেন্ড-মিনিট-ঘণ্টা ধরে ধরে। পৃথিবীর বুকে একসময় বিচরণ করত যে সব অতিকায় ডাইনোসর, আজ শুধু পাওয়া যায় তাদের হাড়গোড়। কারণ, এখন থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে এক ভয়ংকর ঘটনার পরিণতিতে তারা সবাই মারা গেছে। গবেষকরা মনে করেন, পৃথিবীতে এক বিরাট আকারের গ্রহাণুর আঘাত, বিস্ফোরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তন এদের নিশ্চিহ্ন হওয়ার কারণ। এদের কিছু প্রজাতি ছিল মাংসাশী, কিছু ছিল তৃণভোজী। কিছু দুই পায়ে হাঁটতে পারত। আবার কিছু হাঁটত চার পায়ে। কোনোটি উচ্চতায় ছিল প্রায় ১০০ ফুট আবার কোনোটা ছিল ছোট। এ পর্যন্ত ডাইনোসরের আবিষ্কৃত প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫০০। তবে জীবাশ্ম রেকর্ডের ভিত্তিতে ১৮৫০টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখনো প্রায় ৭৫% প্রজাতি আবিষ্কারের অপেক্ষায়। যার বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব বর্তমানে টিকে থাকা জীবাশ্মে নেই।

 

ডাইনোক্রোকুটা

এই প্রাণীটিরও সামনের পা থেকে পেছনের পা দুটি আয়তনে ছোট হতো। তবে দৈর্ঘ্যে ২.২ মিটার, উচ্চতায় ১২০ সেমি।  এরা ছিল প্রায় বাঘের সমান।

আদতে এটি ছিল স্তন্যপায়ী প্রাণী। আজকের দিনে হিংস্র হায়েনার পূর্বপুরুষও বলা চলে এদের। ধারণা করা হয়,  এদের থেকেই বিবর্তিত হয়েছে হায়েনারা। শক্তিশালী পেশি, বিশালাকৃতির মাথা আর কপাল এবং ভয়ংকর ধারালো দাঁত এদের হিংস্রতার পরিচয় বহন করে। প্রাগৈতিহাসিক এই প্রাণীটিরও সামনের পা থেকে পেছনের পা দুটি আয়তনে ছোট হতো। তবে দৈর্ঘ্যে ২.২ মিটার, উচ্চতায় ১২০ সেমি। এরা ছিল প্রায় বাঘের সমান। আফ্রিকা এবং এশিয়ায় জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এই প্রাণীটির। হায়েনাদের আচরণ ইঙ্গিত দেয় যে, প্রাচীন ডাউনোক্রোকুটাও ছিল অত্যন্ত হিংস্র এবং খুব সফল শিকারি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি স্বাধীনভাবে বড় শিকারকে আক্রমণ করতে সক্ষম ছিল।

 

কলোসাস পেঙ্গুইন

কলোসাস পেঙ্গুইন- আজকের দিনের বৃহত্তম পেঙ্গুইন প্রজাতি। আর্জেন্টিনার লা প্লাটা মিউজিয়ামের গবেষকদের একটি দলের জীবাশ্মের বিশ্লেষণ অনুসারে, লাখ লাখ বছর আগে বেঁচে থাকা এই পেঙ্গুইন মানুষের মতোই লম্বা হয়ে দাঁড়াতে পারত। অ্যান্টার্কটিক থেকে আবিষ্কৃত সবচেয়ে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম কলোসাস পেঙ্গুইনের। এরা উচ্চতা হয় প্রায় ১.১ মিটার। এদের থেকেও প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতা ছিল এই প্রাগৈতিহাসিক পক্ষীটির। প্রজাতিটি পায়ের আঙুল থেকে ঠোঁটের ডগা পর্যন্ত ২ মিটার লম্বা হতো। অর্থাৎ, মানুষের থেকেও বেশ খানিকটা লম্বা ছিল এই পেঙ্গুইন। ওজন হতো ১১৫ কেজি। জার্নালে রিপোর্ট বলছে, স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো, ঠোঁট নামিয়ে, পেঙ্গুইনটি প্রায় ১.৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হবে। আজ থেকে ৩.৭ কোটি বছর আগেই পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়েছে কলোসাস পেঙ্গুইন।

 

মোসোসোরাস

মোসোসোরাস ছিল মাংসাশী প্রাণী। ৭০-৬৬ মিলিয়ন বছর আগের দানবাকৃতির এই সামুদ্রিক প্রাণী মোসাসোরাস ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতো। এই প্রজাতির সবচেয়ে বড় প্রাণীটি ৫০ ফুটেরও বেশি লম্বা হতো। ক্রিটেসিয়াস যুগের সমুদ্রের হিংস্র প্রাণী মোসোসোরাস। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে ছিল এদের বসবাস। ফ্রান্সের সেন্টার-লোয়ার ভ্যালি, সাউথ ডাকোটা এবং নেব্রাস্কার মতো জায়গায় এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। বিশাল দেহ, শক্তিশালী চোয়াল, শক্তিশালী লেজ আর ধারালো দাঁত এদের সমুদ্রের রাক্ষসের খেতাব দিয়েছিল। সমুদ্রের বহু প্রাণীই এদের এড়িয়ে যেত। জীবাশ্মবিদরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছিলেন যে, মোসোসোরাস একটি প্রাচীন কুমির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির জলজ সরীসৃপ।

 

জায়েন্ট মোয়া

পেঙ্গুইনের কথা যখন উঠলই, তখন আরও এক পক্ষী প্রজাতির কথাও বলে রাখা যাক। লাখ লাখ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডের মোয়াস অঞ্চলে ডিনোর্নিথিফর্মেস নামে পরিচিত ছিল একটি বড় প্রজাতির উড়ন্ত পাখি। এদের উচ্চতা হতো প্রায় সাড়ে তিন মিটার (১০ ফুট)। অর্থাৎ, এদের দুই মানুষ সমান উচ্চতা ধরতেই পারেন। ওজনও হতো ৩৫০ কেজি পর্যন্ত। আজকের কিউয়ি পাখির পূর্বপুরুষ জায়েন্ট মোয়া। আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগেও এদের অস্তিত্ব ছিল বলে ধারণা গবেষকদের। তারপর প্রায় ৬০০ বছর আগে হঠাৎ প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৩ শতকের শেষে এই দ্বীপগুলোতে মানুষের (প্রাচীন মাওরি উপজাতি) আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এদের বিলুপ্তি ঘটেছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হোমো সেপিয়েন্সরা মোয়াসের এই প্রজাতি প্রাণীটির পতনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।

 

চ্যাপালম্যালানিয়া-র‌্যাকুন

আমেরিকার চ্যাপালম্যালানিয়ায় বিশাল আকৃতির  এই ভালুকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল

দক্ষিণ আমেরিকার এই প্রাণীটির সঙ্গে ইদানীং সবাই পরিচিত মার্ভেল সিনেমার দৌলতে। এরা মূলত চ্যাপালম্যালানিয়া-র‌্যাকুন নামে বেশি পরিচিত। আমেরিকার চ্যাপালম্যালে সর্বপ্রথম ভালুকের এই প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এরা প্রোসিওনিডে পরিবারের প্রাচীনতম সদস্য। যারা প্রাগৈতিহাসিক যুগে দাপিয়ে বেড়াত। একটি র‌্যাকুন সাধারণত দৈর্ঘ্য গড়ে এক ফুটের কাছাকাছি হয়ে থাকে। তবে এদের পূর্বপুরুষরা লম্বায় হতো প্রায় ১.৩ মিটার (৪ ফুট)। উচ্চতা হোত ৭০ সেমি পর্যন্ত। ৮০ কেজি ওজনের এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি খুব একটা শান্তশিষ্ট ছিল না বলেই বিশ্বাস গবেষকদের। তবে তাদের ধারণা, চ্যাপালম্যালানিয়ার প্লিওসিনে একসময় সমতল ভূমি ছিল। যেখানে ছিল সমৃদ্ধশীল তৃণভূমি ও গাছপালা। আর এখানেই ছিল প্রাচীন র‌্যাকুনদের আবাসস্থল।

 

স্যাবার টুথ লেপার্ড

স্যাবার টুথ লেপার্ড- নাম থেকেই বোঝা যায় এরা চিতা বাঘের পূর্বপুরুষ। স্যাবার টুথ ক্যাট (স্মাইলডন ফ্যাটালিস), যা স্যাবার টুথ টাইগার বা স্মিলোডন নামেও পরিচিত। ধারণা করা হয়, বরফ যুগের সবচেয়ে আইকনিক প্রাণী ছিল স্যাবার টুথ লেপার্ড। প্রাণীটির জোড়ালো খ্যাতির অন্যতম কারণ এদের ধারালো দাঁত, যা প্রায় সাত থেকে আট ইঞ্চি (১৭-২০ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত লম্বা হতো! এদের আরও একটি বিশেষত্ব ছিল, প্রাণীটির নিচের চোয়াল ঘুরতে পারত প্রায় ৯০ ডিগ্রি। ফলে নিজেদের তুলনায় আয়তনে বড় কোনো প্রাণীদেরও অনায়াসেই ধরাশায়ী করতে পারত। সেই সঙ্গে দৌড়ানোর অসীম ক্ষমতা তো ছিলই। ২৭০ কেজি ওজনের এই জায়েন্ট ক্যাট ছিল আজকের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সম আয়তনের। এরা আসলে আধুনিক বাঘ বা সিংহের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। এদের কাঁধ ১ মিটার লম্বা হতো, দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১.৭ মিটার (৫.৫ ফুট) এবং ওজন ৭৫০ পাউন্ড (৩৪০ কেজি) পর্যন্ত। এরা দেখতে সিংহের মতোই, যদিও খাট এবং প্রায় দ্বিগুণ ভারী। গবেষকদের ধারণা, এরা ছিল প্লাইস্টোসিন যুগের হিংস্র প্রাণী, প্রায় ৮০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের উপস্থিতি ছিল। গবেষকরা তাদের গবেষণায় জানিয়েছেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার বছর আগে এই প্রাণীটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

গুবরে পোকা

অন্যান্য প্রাণীর মতো ডাইনোসরও মৃত্যুর পর ব্যাকটেরিয়া, কৃমি, পোকা ইত্যাদির সাহায্যে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এদের মধ্যে পরিচিত একটি পোকা হলো ‘বোন-বোরিং বিটল’ বা ডার্মেস্টিড বিটল। মূলত ডার্মেস্টিড পরিবারের উত্তসূরি কীটগুলো হাড়খেকো পোকা হিসেবেই পরিচিত। এই পোকাগুলো মাংসের চেয়ে হাড়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি। প্রথমে এরা মৃত ডাইনোসরের হাড়ের ছিদ্রে ডিম পাড়ত, তারপর এগুলো থেকে লার্ভা বের হয়ে তা হাড়ের পুষ্টি সমৃদ্ধ হাড়ের মজ্জা খাওয়া শুরু করত। ফলে অল্প সময়ে হাড় ভেঙে মাটির সঙ্গে অতি সহজেই মিশে যেত। প্রায় ৭০০ প্রজাতির কীটপতঙ্গের (কোলিওপটেরা পোকামাকড়) মধ্যে ডার্মেস্টিড বিটল একসময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গৃহপালিত কীট হিসেবে পরিচিত ছিল। কারণ এই প্রজাতির পোকাগুলো কেবল হাড়ই নয়, পশম, চামড়া, পালক, শিং এমনকি চুলও খেয়ে সাবাড় করে ফেলত। আকৃতিতে এরা প্রায় ১ থেকে ১২ মিলিমিটার (১/২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতো।

 

ডায়োডন

ডায়োডন আকারে সবচেয়ে বড় না হলেও, প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে উত্তর আমেরিকায় এদের বসবাস ছিল। ধারণা করা হয়, এরা বন্য শূকরের পূর্বপুরুষ। আজকের দিনের শূকরগুলো ভীষণ ভয়ানক এবং আক্রমণাত্মক। আর এদের প্রাগৈতিহাসিক পূর্বসূরিরা ছিল আরও ভয়ংকর। দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিটার (১০ ফুট)। এই প্রাণীটির কাঁধের আকৃতি প্রায় ১.৮ মিটার এবং মাথার খুলি ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতো। দৈত্যাকার প্রাণীটির দেহের ওজন সাধারণত ৬০০ থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত হতো। প্রাণীটি মূলত ভয়ানক দাঁত এবং লম্বা হাড়সহ বিশাল চোয়ালের অধিকারী। গবেষকরা ধারণা করেন, সম্ভবত এরা ছিল অত্যন্ত হিংস্র, বিশালাকৃতির শিকারি। যাদের অবশিষ্ট জীবাশ্ম আমেরিকার অ্যাগেট স্প্রিংস কোয়ারিতে পাওয়া গিয়েছিল। সুপরিচিত জেনাস ডিনোহাউস ডায়োডনের পূর্বসূরি হিসেবে পরিচিত। কারণ বর্তমান সময়ের শূকরের প্রজাতিটি দেখতে প্রাগৈতিহাসিক ডায়োডনের সম্পূর্ণ সাদৃশ্য।

 

পেলোরোভিস

এটি প্রাচীন মহিষ; যা পেলোরোভিস অ্যান্টিকাস নামে পরিচিত। এরা আফ্রিকান বন্য গবাদিপশুর একটি বিলুপ্ত প্রজাতি। প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে প্লিওসিনে প্রাণীটি প্রথমবার আবির্ভূত হয়েছিল। দানবাকৃতির প্রাণীটি প্রায় ১২ হাজার বছর আগে সম্ভবত হলোসিনের সময় ৪ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া এই প্রজাতি এখনকার আফ্রিকান মহিষের পূর্বসূরি। তবে এরা পেলোরোভিস ওল্ডোওয়েনসিস থেকে আলাদা। কেপ বাফেলো কিংবা সিনসারাস ক্যাফারের সঙ্গে এদের অনেক বেশি মিল রয়েছে। এদের বিশালাকৃতির লম্বা শিং আকৃতিতে প্রায় তিন মিটার (৯ ফুট) পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা কেপ বাফেলোর সম্পূর্ণ মাথা এবং শরীরের দৈর্ঘ্যরে চেয়ে দীর্ঘ! দানবাকৃতির প্রাণীটি দেড় থেকে ২ হাজার কেজি ওজনের; আয়তনে আজকের মহিষের প্রায় দ্বিগুণ। এরা আমেরিকান লম্বা শিংযুক্ত বাইসন ল্যাটিফ্রনদের প্রতিদ্বন্দ্বী। সর্বকালের সর্ববৃহৎ গবাদিপশুর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান পেয়েছে প্রাণীটি।

 

মেগালোচেলিস

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কচ্ছপ হিসেবে পরিচিত মেগালোচেলিস অ্যাটলাস। বর্তমানে পৃথিবীর বুকে সর্ববৃহৎ কচ্ছপ প্রজাতি গালাপাগোস। এদেরই পূর্বপুরুষ ছিল মেগালোচেলিস অ্যাটলাস। এরা দেখতে একটি ছোট আকারের গাড়ির চেয়েও বড়! এদের খোসার দৈর্ঘ্য ২.১ মিটারেরও (৬ ফুট) বেশি। এদের দেহের আকৃতি প্রায় ২.৫ থেকে ২.৭ মিটার (৮ ফুট) কিংবা তারও বেশি লম্বা এবং ১ টনের বেশি ওজনের ছিল, যা একে এখন পর্যন্ত বিদ্যমান বৃহত্তম কচ্ছপ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এশিয়ায় (ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং মিয়ানমার) এই প্রজাতির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। গবেষকরা সর্বশেষ মিয়ানমারেই মেগালোচেলিসের সবচেয়ে বড় (প্রায় ২.৭ মিটার) প্রজাতির সন্ধান পেয়েছিলেন। মেগালোচেলিস ছিল প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর বৃহত্তম কচ্ছপ। এই প্রাণীটি অবলুপ্ত হয়েছে বহুকাল আগেই। এখন অবলুপ্তির সঙ্গে লড়াই করছে তাদের উত্তরসূরিরাও।

সর্বশেষ খবর