রবিবার, ৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত যত বিমানবন্দর

পরিত্যক্ত যত বিমানবন্দর

ইউরোপ থেকে আমেরিকা; উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি শহরের বিমানবন্দর এবং তাদের পেছনের গল্পগুলো যেমন ধ্বংসযজ্ঞে পরিপূর্ণ, তেমনি অনেক বিমানবন্দর আবার রহস্যেঘেরা। ধুলো, মরিচাপড়া, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আরও নানা কারণে বিমানবন্দরগুলোর আজ পরিত্যক্ত দশা।  সেসব বিমানবন্দরের পেছনের গল্প নিয়েই আজকের আয়োজন। লিখেছেন- আবদুল কাদের

 

♦ আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বের বেশ কিছু বিমানবন্দর পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম স্পেনের সিউদাদ রিয়েল সেন্ট্রাল এয়ারপোর্ট।
♦ অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের (দ্বন্দ্ব) কারণে অনেক বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছে।  জর্জিয়ার আবখাজিয়ার সুখুমি বাবুশারা বিমানবন্দর এদের অন্যতম।
♦ ফাঁকা, ধুলোয় ঢাকা পরিত্যক্ত স্থান হলেও দ্য হাঙ্গার গেমস, দ্য বোর্ন সুপ্রিমেসি ও ব্রিজ অব স্পাইজ-এর মতো চলচ্চিত্রের শুটিং করা হয়েছে টেম্পলহফ এয়ারপোর্টে।

সাইবেরিয়ার উগোলনি বিমানবন্দর

এক সময় এই বিমানবন্দরে দাপিয়ে বেড়াত যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং যাত্রীবাহী এয়ারপ্লেন। আসলে বিমানবন্দরটি মিশ্র ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত ছিল। অর্থাৎ সাইবেরিয়ায় সামরিক এবং বেসামরিক দুভাবে বিমানবন্দর ব্যবহৃত হতো। এটি সাইবেরিয়ার উপসাগর এবং এর পার্শ¦বর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এখন এখানে মিলবে পরিত্যক্ত আর জীর্ণশীর্ণ হেলিকপ্টার ও এয়ারপ্লেন। এক সময়ের ব্যস্ত নগরীটি আজ অবহেলায় ধুলোর আস্তরণে ঢেকে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের টার্মিনাল এবং রানওয়ে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পরবর্তীকালে বিমানবন্দরটি একবার কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দখলদারিত্বের শিকারও হয়েছিল। দখল করা হলেও তা কেবল নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো। বিশেষভাবে অন্য দেশের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরটি  একটি নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান হিসেবেও ব্যবহার হয়েছিল।

 

ফ্লয়েড বেনেট ফিল্ড

১৯৩০-এর দশকে ফ্লয়েড বেনেট ফিল্ড ছিল নিউইয়র্কের প্রথম পৌর বিমানবন্দর। ভৌগোলিক ও কৌশলগত দিক থেকে ব্যারেন দ্বীপ ও ম্যানহাটন থেকে খানিকটা দূরত্বে অবস্থিত এই এয়ারপোর্ট। প্রথম দিনগুলোয় এটি অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টের শোষণের সাক্ষী এবং পরবর্তীতে দর্শনীয় রেস আয়োজনের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। কিন্তু পরে এয়ারপোর্টটি একটি নৌ বিমান স্টেশনে পরিণত হয়। অবশেষে ১৯৭০-এর দশকে এটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নিউজার্সির নেওয়ার্ক বিমানবন্দরের কারণে এয়ারপোর্টটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও অন্যান্য বিমানবন্দরের মতো এটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়নি।  ১৯৭২ সাল থেকে ফ্লয়েড বেনেট ফিল্ড ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের তত্ত্বাবধানে চলে আসে। কারণ, নির্মাণের পর অনেক ভবনই ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিমানবন্দরটি পার্ক হিসেবে রূপান্তরের পরে এটি আমেরিকার বৃহত্তম শহুরে ক্যাম্পগ্রাউন্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থান হয়ে ওঠে।

 

জেলজাভা এয়ারবেস

ক্রোয়েশিয়া অর্থাৎ সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় এয়ারবেসটির দেখা মিলবে। ভূগর্ভস্থ এই বিমানবন্দরটি ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়ার সীমান্তঘেঁষা প্লাজেভিকা পর্বতমালার নিচে অবস্থিত। এটি ছিল সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বৃহত্তম ভূগর্ভস্থ বিমানবন্দর। যা তৎকালীন ইউরোপের অন্যতম সেরা আন্ডারগ্রাউন্ড এয়ারবেস হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। ১৯৪৮ সালে এয়ারবেসটি নির্মাণ করা হয়। তবে সময় লেগেছিল দুই দশকেরও বেশি। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে এয়ারবেসটির মূল কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে প্রথমবার এয়ারবেসটি যাত্রীদের সেবা প্রদানে প্রস্তুত হয়। পাহাড়ের অভ্যন্তরে সামরিক ঘাঁটি তৈরিতে ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত সামরিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। এয়ারবেসটি ভূগর্ভস্থ ৫৯০ ফুট পাথরের নিচে নির্মাণ করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, যুগোস্লাভ যুদ্ধের সময় বিস্ফোরণে এটি ধ্বংস হয়ে যায়।

 

ব্র্যান্ডেনবার্গ বিমানবন্দর

জার্মানির বার্লিনের ব্র্যান্ডেনবার্গ এয়ারপোর্টটি স্থানীয়দের কাছে বার্লিন বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। ২০০৬ সালে বিমানবন্দরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশটির টেম্পেলহফ এয়ারপোর্ট এবং অন্যান্য এয়ারবেস প্রতিস্থাপনের পর বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছিল। তবে এখান থেকে কোনো প্লেন টেক অফ করেনি। অর্থাৎ নির্মাণের পর থেকে আজও এখানে কোনো বিমান রানওয়ে স্পর্শ করেনি। অভিযোগ রয়েছে- পরিকল্পনায় ধীরগতি আর দুর্নীতির কারণে এয়ারপোর্টের নির্মাণ প্রক্রিয়াটি প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে ফেলেছিল। সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ২০২০ সালের ৫ অক্টোবরের মধ্যে এর টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা হয়নি। নির্মাণ প্রক্রিয়ার মতো এয়ারপোর্টের সার্বিক কার্যক্রমও অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছিল। অবাক করার বিষয়টি হলো- নির্মাণ কাজ আরম্ভের ১৪ বছর পর ২০২০ সালের মে মাসে কর্তৃপক্ষ এয়ারপোর্টের অপারেশনাল লাইসেন্স গ্রহণ করে!

 

গোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার মিটার রানওয়ে এবং একটি বড় টার্মিনাল নিয়ে গোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি যাত্রা শুরু করেছিল। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোয় এয়ারপোর্টটির অবস্থান। কিন্তু প্রকৃতির রোষানলে জনপ্রিয় বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে ছিল নাইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরি। ২০০২ সালে এর অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে। পরে কর্তৃপক্ষ এয়ারপোর্টটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। প্রাকৃতিক ওই বিপর্যয়ে সম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আগ্নেয়গিরির লাভায় ঢেকে যায়। রানওয়ে, টার্মিনাল এমনকি এপ্রোন জোনও ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে এটি ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেই বিপর্যয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টও প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ ছাড়া যুদ্ধ এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি বিমানবন্দরটিকে নানা প্রতিবন্ধকতায় ফেলেছিল। পরে স্থানটি শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।

 

ইয়াসির আরাফাত বিমানবন্দর

৮৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিমানবন্দরটি ১৯৯৮ সালে উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এক সময় এটি ছিল ফিলিস্তিনের একমাত্র এয়ারপোর্ট। দেশটির স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পরিচালিত গাজা উপত্যকায় এর অবস্থান। এয়ারপোর্টটি গাজা ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। ভৌগোলিকভাবে এটি মিসরীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এখন এটি কেবল একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিমানবন্দরটি মাত্র কয়েক বছরই ঠিকঠাক পরিচালিত হয়েছিল। ২০০০ সালে বিমানবন্দরটি ইসরায়েল দখলদারদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংঘর্ষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ২০০২ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে এয়ারপোর্টের কন্ট্রোল টাওয়ার ও রাডার স্টেশন ধ্বংস করে দেয়। একপর্যায়ে বিমানবন্দরের রানওয়েগুলো বুলডোজারের মাধ্যমে ল-ভ- করে ফেলে। একই বছর বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এখন বিমানবন্দরের ধ্বংসস্তূপের অবশিষ্টাংশে উজ্জ্বল সোনার গম্বুজটিই কেবল দাঁড়িয়ে আছে।

 

জয়সলম এয়ারপোর্ট

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়সলম শহর থেকে দক্ষিণে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০১৩ সালে বিমানবন্দরের টার্মিনালের নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এতে ব্যয় হয় ৮০ কোটি রুপি। এয়ারপোর্টের পাশেই রয়েছে ৬৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত যাত্রীদের বিলাসবহুল রিসোর্ট। উদ্বোধনের পর থেকে রাজস্থানের জয়সলম ভারতের সোনার শহরের খ্যাতি অর্জন করে। বেলেপাথরের স্থাপত্য এবং নানা কারণে রাজস্থান এবং আশপাশের অঞ্চলগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। সরকার এবং স্থানীয় জনসাধারণ আশা করেছিল এয়ারপোর্টটি গোটা অঞ্চলের ভাগ্য বদলে দেবে। কিন্তু বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলোর আগ্রহের অভাব সব আশার গুড়ে বালি হয়েছে। ফলে জয়সলমের রানওয়ে থেকে আজও কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইট টেক অফ করেনি। শুধু কি তাই! আজও ব্যাগেজের ক্যারোসেলটিও অব্যবহৃত রয়েছে। এ কারণে এয়ারপোর্টটি ২০১৭ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত ছিল। তখন এটি কেবলই একটি ভবন। যাত্রীদের আসনও ধুলোয় ঢাকা। শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে ফ্লাইট চালু হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

কাই টাক বিমানবন্দর

হংকং-এর ব্যস্ততম আবাসিক এলাকার কাছাকাছি নির্মিত কাই টাক এয়ারপোর্টটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম। কারণ এখানে উড্ডয়ন কিংবা অবতরণ; দুটোই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এয়ারপোর্টে অবতরণের  সময় দ্বীপের ভবনগুলো পাশ কাটিয়ে ল্যান্ডিং করতে হতো। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ঝোড়ো আবহাওয়া এবং আশপাশের পর্বতমালার মধ্যে প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ জটিল। তাই কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরটিকে অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের অভিমুখে হওয়ার কারণে এখানে বিমান অবতরণ প্রক্রিয়া  মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যা বিমানের পাইলট এবং যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এমনকি রানওয়ের দুই পাশও ছিল পানিতে পূর্ণ। অর্থাৎ এটি চালু রাখা ছিল অসম্ভব। ফলস্বরূপ কর্তৃপক্ষ ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। নতুন একটি বিমানবন্দরের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয় এবং এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন এটি কেবলই একটি পরিত্যক্ত স্থান।

 

এলিনিকিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

দীর্ঘ ৬০ বছর গ্রিসের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করার পর ২০০১ সালে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। ছয় দশক ধরে এলিনিকিন এয়ারপোর্ট ছিল গ্রিসের প্রধান বিমানবন্দর। যা দেশটির রাজধানী এথেন্সে অবস্থিত। ১৯৩৮ সালে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের অলিম্পিক গেমসের ভেন্যুতে পরিণত হয়। পরিত্যক্ত ঘোষিত হলেও এটি এক সময় গ্রিক পতাকাবাহী অলিম্পিক এয়ারওয়েজের ভিত্তি হয়ে ওঠে। যদিও অলিম্পিকে দেশটি খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি। ভাবা যায়! এক সময়ের ব্যস্ততম বিমানবন্দরটি ২০ বছর আগেও সচল ছিল। আজ কেবল পরিত্যক্ত স্থাপনা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে জমেছে ধুলোর আস্তরণ, দেওয়ালে পড়েছে মরিচা এবং এসকেলেটর পড়ে আছে লিভার আর্চ ফাইলে। তবে ভবিষ্যতে স্থানটিকে আঞ্চলিক উপকূলীয় বিলাসবহুল রিসোর্টে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তত দিন বিমানবন্দরটি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।

 

ম্যানসটন কেন্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ইংল্যান্ডে অবস্থিত ম্যানসটন বিমানবন্দরটি উপকূলরেখা থেকে প্রায় এক মাইল দূরে মাত্র একটি একক রানওয়ে নিয়ে গঠিত। কিন্তু যখন বিমানবন্দরটি কিছু বৃহত্তর বিমান পরিচালনা করত, তখন অনেক এয়ারলাইনস যেগুলো এর মধ্যে এবং বাইরে উড়েছিল তারা বিভিন্ন কারণে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু এয়ারলাইনস পরিষেবা হারানোর পর ২০১৪ সালে এক ঘোষণায় দৈনিক লোকসান ১৩ হাজারের বেশি বলে বলা হয়েছিল। এ কারণে ম্যানসটনের প্রধান নির্বাহী ঘোষণা করেছিলেন, বিমানবন্দরটি ২০১৪ সালের এপ্রিলে বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৪ সালের ১৫ মে বিমানবন্দরের শেষ দিন ছিল। তারপর থেকে টার্মিনাল খালি ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

 

সিউদাদ রিয়্যাল সেন্ট্রাল

২০০৯ সালে নির্মিত এয়ারপোর্টটি স্পেনের রাজধানী থেকে ১১৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। সাউথ মাদ্রিদ এয়ারপোর্ট এমনকি ডন কুইজোট এয়ারপোর্ট হিসেবে এটি বেশ প্রসিদ্ধ। ২০০৯ সালে বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ জলে প্রথমবারের মতো জনসাধারণের জন্য এর প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১ বিলিয়ন ইউরো। বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও ভবনটি প্রথম বেসরকারি আন্তর্জাতিক স্প্যানিশ বিমানবন্দর হিসেবে ইতিহাস গড়েছিল। পরের বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট টেক অফ করতে শুরু করে। আর দুই বছর বাদে সব কিছু বদলে যায়। আর্থিক সংকটের কারণে এক সময় এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। ২০১২ সালে এয়ারপোর্টটি বন্ধ হয়ে যায়।

 

টেম্পলহফ এয়ারপোর্ট

২০০৮ সালে অকেজো হয়ে পড়ে বার্লিনের টেম্পলহফ এয়ারপোর্ট। পেন্টাগন নির্মাণের আগ পর্যন্ত এয়ারপোর্টের ভবনটি বিশ্বের বৃহত্তম ভবন হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছিল। ১৯২০ সালে এর উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৭ বছর পর শেষ হয় এর নির্মাণ প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নাৎসি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছিল। দুর্ভাগ্যবশত এর ইতিহাস ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসতে থাকে। এক সময় এর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবন্দরের শেষ ফ্লাইটটি টার্মিনালে আসার পরে স্থানটি সরকারের শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়।

 

নিকোসিয়া এয়ারপোর্ট

নিকোসিয়া এয়ারপোর্ট; এক সময়ের সাইপ্রাসের পর্যটন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালক। কিন্তু এখন এটি কেবল পরিত্যক্ত চেয়ার, মরিচাপড়া বিমান ও ভাঙা কাচের সমাধি। ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে তুর্কিদের হামলার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ  এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বিমান হামলার পাশাপাশি স্থলভাগেও চলে সৈন্যদলের আক্রমণ। এটি এখন কেবলই একটি খালি পরিত্যক্ত স্থান। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যরা এখন এয়ারপোর্টটির দেখভাল করে থাকেন। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের বিশেষ অনুমোদনে এয়ারপোর্টে শেষ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছিল।

 

সুখুমি বাবুশারা এয়ারপোর্ট

আবখাজিয়া জর্জিয়ার একটি বিতর্কিত অঞ্চল। যেখানে ১৯৯০-এর দশকের সময় সুখুমি বাবুশারা এয়ারপোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পেরোলেও এই এয়ারপোর্টের রানওয়েতে কখনোই কোনো বিমান দেখা যায়নি। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর নানা সংকটে এয়ারপোর্টটি কোনো দিন সচল হতে পারেনি। জানা গেছে, ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত গোটা বিমানবন্দর এলাকা ছিল ল্যান্ড মাইনে পরিপূর্ণ। যদিও পরবর্তীতে হ্যালো ট্রাস্ট ঘোষণার পর সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে আজও এয়ারপোর্টটি পরিত্যক্ত।

 

দামেস্ক এয়ারপোর্ট

৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় দামেস্কের বিমানবন্দরটির যাত্রা শুরু। পরবর্তীকালে এটি হয়ে ওঠে সিরিয়ার ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ডিজিটাল আর্কাইভ দ্য ওয়েব্যাক মেশিনের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে প্রায় ৫৫ লাখ যাত্রী এয়ারপোর্টটি ব্যবহার করেন। দুর্ভাগ্যবশত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফলে অনেক এয়ারলাইনস তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। ইজিপ্ট এয়ার, এমিরেটস এবং রয়্যাল জর্ডানিয়ান-এর মতো সংস্থাগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। এখন ভবনটি কেবল অন্যদের মতো ধুলোমাখা পরিত্যক্ত স্থান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর