বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বের কুখ্যাত যত ক্রাইম সিটি

আবদুল কাদের

বিশ্বের কুখ্যাত যত ক্রাইম সিটি

নাগরিক সভ্যতার বিপরীতে শহরকেন্দ্রিক অপরাধ নগরবাসীর সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয়। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, খুন সবই নাগরিক জীবনকে করে তোলে দুঃসহ। এর বাইরেও খবরের কাগজে উঠে আসা ব্যাপক পরিসরে সহিংসতা, অপহরণ এবং গ্যাং ওয়ারফেয়ারদের কর্মকাণ্ড ভাবিয়ে তোলে নিরাপত্তাবাহিনীকে। ঘরের ভিতরে কি বাইরে- কোথাও নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ। তবে অপরাধী আর খুনিদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে বিপজ্জনক এসব শহর। অপরাধ প্রবণতার হারেও এই শহরগুলো বিশ্বের কুখ্যাত ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত...

 

কাবুল [আফগানিস্তান]

বিপজ্জনক শহরের তালিকায় অন্যতম আফগানিস্তানের কাবুল। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ শহরটিতে নিরাপত্তা বলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নগরবাসীর কাছে। নাগরিকের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই এই শহরে। আফগানিস্তানের এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি বোমার আঘাতে প্রতিদিনই বিধ্বস্ত হচ্ছে। গাড়িবোমা কিংবা সন্ত্রাসীদের আক্রমণে মারা যাচ্ছে নিরপরাধ মানুষ। আকাশপথে ছোড়া যুদ্ধবিমানের বোমা নিমিষেই ধসিয়ে দিচ্ছে বাড়িঘর-দোকানপাট। যুদ্ধের কালো অধ্যায় এ শহরটিকে করে তুলেছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর শহর হিসেবে। আতঙ্কের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে এই শহরের নগরবাসীকে করছে ভীত আর পীড়িত। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সরকারবিরোধীদের সংকট চরমে অবস্থান করায় কেউ জানে না এই দুঃসহ অবস্থা কবে নিরসন হবে।

 

মোগাদিসু [সোমালিয়া]

সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর শহর হিসেবে গণ্য। ১৯৯০ সাল থেকেই দুরবস্থায় পতিত এই শহরের নাগরিকদের জীবনশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ইউনাইটেড ন্যাশন এবং বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বাসি সরে যাওয়ার পর সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এখানে সরকার ব্যবস্থার সফল পরিচালনা ছিল। তারপর থেকেই নাগরিক জীবন প্রতিনিয়তই অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। ২০০৭ সালের দিকে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততার কথা বলা হলে অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে গেছে। যুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত অবস্থার ভিতর দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না এ শহরের নিরাপত্তার বিষয়টিকে। ২০১১ সালের পর তুর্কি এয়ারফোর্সের শহরে আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার পর অবস্থা বিশেষ নিরাপদ নয় মোটেও। আকাশপথে বোমাবর্ষণের আতঙ্ক এবং রাজপথে সন্ত্রাসীদের গুলি, বোমা, আক্রমণ সব মিলিয়ে মোগাদিসু সোমালিয়াসহ বিশ্বের অন্যতম আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে।

 

বাগদাদ [ইরাক]

বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর স্থানের তালিকায় রয়েছে বাগদাদের নাম। আকাশপথে ড্রোন হামলার পাশাপাশি সড়কে গাড়িবোমা হামলা বাগদাদ শহরকে আতঙ্কের শহরে পরিণত করে। অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যায় গেরিলা হামলা বেড়ে যাওয়ার পর। বড় ও ভারী যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি কাঁধে বহনযোগ্য অল্প দূরত্বের মিসাইল ছোড়ার কারণে নাগরিকের প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে আশার কথা হলো, এখনো পুরোপুরি নিরাপদ নগরীতে ফিরে না গেলেও অবস্থা আগের চেয়ে ভালোর দিকেই যাচ্ছে। ইরাকের বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় নাগরিক নিরাপত্তা পাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। তবু সবকিছু ছাপিয়ে প্রায়ই খবর আসছে নিরপরাধ মানুষ খুনের। সুইসাইড বোম্বিং এবং এলোপাতাড়ি গুলি, রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণ এখনো থামেনি।

 

ক্যারাকাস [ভেনেজুয়েলা]

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম অপরাধপ্রবণ দেশ। ভেনেজুয়েলার ক্যারাকাস শহরতলি মাদক ব্যবসা এবং মাদক পাচারকারীদের স্বর্গ হিসেবে কুখ্যাত। দেশটির এই শহরে দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে। সাধারণ জীবন বিপন্ন করে খুন, অপহরণ, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধগুলো হয়ে উঠেছে এখানকার নিত্যদিনের কাজ। আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতা। সম্পদের অভাব এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় দুর্নীতির কারণে এই শহরে বেশিরভাগ খুনের শাস্তি হয় না। লাখে অন্তত ১০০ জন মানুষ এই শহরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই শহরে খুনের হার ৯৯.৭১। যা প্রমাণ করে যে, কী দুর্বল অবস্থা বিরাজ করছে ভেনেজুয়েলার ক্যারাকাসে। এ ধরনের সহিংসতার প্রধান কারণ হলো- শহরের দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী এবং দুর্বল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

 

ক্যালি [কলম্বিয়া]

বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক নগরী হিসেবে তালিকায় রয়েছে কলম্বিয়ার ক্যালি নগরী। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত রয়েছে আরেক শহর বুয়েনাভেন্টু। এখানকার অপরাধের হার স্থানীয় প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে। এই শহরতলির হত্যার হার ৫৯.৩৩। প্রতিদ্বন্দ্বী কার্টেলের অস্তিত্বের কারণে মাদক পাচার, সহিংসতা এবং হত্যার মতো দীর্ঘ ও জঘন্য ইতিহাস রয়েছে ক্যালি শহরের। বন্দরনগরী হওয়ায় এখানে মাদক ব্যবসা ও মাদক পাচারে শক্তিশালী অবস্থানের নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো কয়েক দশক ধরে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। শহরের তিন লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। যাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। জানা গেছে, দুর্নীতির কারণে এই শহরে অপরাধের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। খুন ছাড়াও ক্যালি ও বুয়েনাভেন্টুর শহরতলিতে দেখা যাচ্ছে যৌন সহিংসতা। এই সহিংসতার হারও বিশ্লেষকদের মতে বেশ উদ্বেগজনক।

 

কিংস্টন [জ্যামাইকা]

ক্যারিবিয়ান বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম কিংস্টন [জ্যামাইকা]। ফলে দেশটির পর্যটন শিল্পে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। তবে দেশটির কিংস্টন শহরতলি অপরাধ জগতের তালিকায় রয়েছে। যেখানে খুনের হার শতকরা ৬৪.১৭। সংঘটিত অপরাধ, সামাজিক অসমতা এবং আইন প্রয়োগকারীর ব্যর্থতা এখানকার পরিবেশকে করেছে বিপজ্জনক। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি এই শহরে ছোটখাটো চুরি কিংবা ছিনতাই থেকে বাঁচতে সর্বদা চোখ-কান খোলা রেখে চলাফেরা করতে হয়। এ ছাড়াও পকেটমার, ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধে স্থানীয় অপরাধীরা পর্যটকদের টার্গেট করে থাকে।

 

কেপটাউন [দক্ষিণ আফ্রিকা]

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনকে অপরাধ এবং অপরাধীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। এই শহরতলিকে বলা হয়- ‘এক এলাকায় দুই বিশ্ব’। একদিকে শহরটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এবং আশ্রয়স্থল, অন্যদিকে সহিংসতায় ভরা একটি যুদ্ধক্ষেত্র। ফলস্বরূপ, কেপ টাউন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০২১ সালে এই শহরে ২,৯১১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ৪০ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার কেপ টাউনে মার্ডার রেট শতকরা ৬২.২২। এই শহরে শতাধিক গ্যাংয়ের বসবাস। বেশিরভাগ অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে শহরের ১০০টিরও বেশি গ্যাংয়ের উপস্থিতিতে। যাদের মধ্যে অনেকেই মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, সশস্ত্র ডাকাতি এবং আরও নানা অপরাধে জড়িত।

 

সান পেদ্রো সুলা [হন্ডুরাস]

যত ধরনের অপরাধ নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারে তার কোনোটাই বাকি নেই হন্ডুরাসের এ শহরটিতে। নিরপরাধ মানুষকে তাই জীবন শঙ্কা নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে সান পেদ্রো সুলায়। ৭ লাখ ১৯ হাজার ৪৪৭ জন নাগরিকের বসবাস এ শহরে। অথচ যে কেউ আঁতকে উঠবে এই শহরের মার্ডার বা খুনের হার দেখলে। এ শহরের মার্ডার রেট ১৫৮.৮৭! খুনের হার এই অবিশ্বাস্য রেটে পৌঁছার পর নিশ্চয়ই বোঝার বাকি থাকে না এই শহরে আতঙ্কের পরিমাণ কতখানি। পৃথিবীর অন্যতম শুধু নয়, কোনো কোনো বিশ্লেষকের হিসাব অনুযায়ী এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর এবং আতঙ্কের শহর। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্যাতন, দারিদ্র্য আর সহিংসতা থেকে বাঁচতে অনেকেই নিজ দেশ হন্ডুরাস ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।

 

ফেইরা ডি সান্তানা [ব্রাজিল]

প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত ব্রাজিলের ফেইরা ডি সান্তানা সিটি। সম্প্রতি আরেকটি কারণে শহরটি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে- তা হলো উচ্চ অপরাধের হার। এই শহরের খুনের হার শতকরা ৬১.২১। মাদক পাচার, ডাকাতি এবং অতর্কিত হামলার মতো অন্য গ্যাংদের নানা অপরাধের জন্য কুখ্যাতি রয়েছে এই শহরের। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বড় কোকেইনের চালান যায় ব্রাজিলের বেলেম থেকে। অপরাধীদের অবাধ বিচরণের কারণে বেলেম শহরটিও বিশ্বের বিজ্জনক শহরের তালিকায় রয়েছে। ব্রাজিলের অনেক শহরের মতো ভিটোরিয়া দা কনকুইস্তা অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। এমনকি দুর্বল আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে দেশটির মসোরো নগরী কুখ্যাতি পেয়েছে। এখানকার খুনের হার শতকরা অন্তত ৫৪.৬৪।

 

অপরাধ জগতের শীর্ষে মেক্সিকোর অনেক শহর

সিউদাদ সুয়ারেজ

মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া রাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল শহর সিউদাদ সুয়ারেজ। অপরাধের হারের জন্য এর কথা আলাদা করেই বলতে হয়। এই শহরের মার্ডার রেট শতকরা ৯৫.৭৯। শুধু ২০২১ সালে খুনের হিসাবে সেই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ জন। শহরে নারী হত্যার হারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরটি যে কোনো গ্যাংয়ের জন্য একটি খেলার মাঠ, যেখানে নানা অস্ত্রে সজ্জিত যুদ্ধ একটি সাধারণ বিষয়। হত্যা ছাড়াও গাড়ি ছিনতাই এবং ছোটখাটো চুরি এখানে নিত্যদিনের ঘটনা।

 

এনসেনাদা

মেক্সিকোর এনসেনাদা নগরী বিশ্বের সপ্তম বিপজ্জনক শহরে পরিণত হয়েছে। যেখানে মার্ডার রেট শতকরা ৭৫.৭৯। আর এই হার যে কারও চোখ কপালে তুলে দিতে বাধ্য। ২০২১ সালে এই শহরে ৮১৬টি হত্যা রেকর্ড করা হয়েছে। সহিংস অপরাধের পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি অপরাধ চক্রের হাত। এর মধ্যে সিনালোয়া কার্টেল, জলিসকো নিউ জেনারেশন কার্টেল এবং আরেলানো ফেলিক্স অর্গানাইজেশন অন্যতম। হত্যার পাশাপাশি, মানব পাচার, চুরি এখানে সাধারণ ঘটনা।

 

উরুপান

উরুপান হলো আরেকটি মেক্সিকান শহর যা সহিংস অপরাধের জন্য কুখ্যাত। মিচোয়াকান রাজ্যের এই শহরটি গ্যাংয়ের জন্য যে, একটি যুদ্ধক্ষেত্র তা সহজে বলাই যায়। যেখানে মার্ডার রেট শতকরা ৭৩.৪০। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই শহর জালিস্কো নিউ জেনারেশন কার্টেলের নিয়ন্ত্রণাধীন। অন্য গ্যাংগুলোর বেশিরভাগই শহরের মাদক পাচারের রুট নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করে থাকে। ছিনতাই, গাড়ি চুরি এবং অপহরণসহ নানা অপরাধের স্বর্গ এই শহর।

 

কোলিমা

কোলিমা হলো মেক্সিকোর একটি শহর, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা সহিংসতার নাম। আর এ কারণে অনিরাপদ শহরের তালিকায় মেক্সিকোর এই শহরটি বেশ কুখ্যাতি অর্জন করেছে। এখানে রয়েছে মানজানিলো বন্দর, যেখানে মাদক পাচারের গ্যাংগুলো নানা রকম সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। জালিসকো নিউ জেনারেশন এবং সিনালোয়া কার্টেলের মতো কার্টেল এই শহরের প্রধান দুটি সন্ত্রাসী দল। এই শহরের মার্ডার হার ৫৯.১১। অনেকে একে আতঙ্কজনক বলে মনে করেন।

 

কুয়ার্নভাকা

কুয়ার্নভাকা, মেক্সিকোর আরেকটি পর্যটনপ্রবণ নগরী। একে বলা হয় মেক্সিকান রিসোর্ট শহর। তবে এখানেও রয়েছে সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের প্রভাব। বিশ্বের পর্যটন স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক মেক্সিকান কুয়ার্নভাকা। দিন-দুপুরে গোলাগুলি যেন এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। ২০২১ সালে এই শহরে ৪৪৫টি খুনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে এখানকার মার্ডার হার শতকরা ৫৬.৮৪। চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংদের মধ্যে যুদ্ধ এই শহরের সহিংস পরিসংখ্যানের প্রধান কারণ।

 

জামোরা

মেক্সিকো সুন্দর শহর হলেও জামোরা দেশটির অন্যতম ভয়ংকর স্থান। মেক্সিকান শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে সহিংসপ্রবণ স্থান। খুন, অপহরণ এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। খুন ছাড়াও চাঁদাবাজি, চুরি হরহামেশাই ঘটে। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে লড়াই এবং পুলিশ-নাগরিকদের মধ্যে সংঘর্ষও এখানে দেখা যায়। ২০২১ সালে এই শহরে ৬১০টি হত্যা রেকর্ড করা হয়েছিল। এখানকার মার্ডার রেট শতকরা ১৯৬.০৬। ২০০৮ সালে প্রথম এখানে ক্রাইম ডাটা রেকর্ড শুরুর পর এটি মেক্সিকোর দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডের শহর হয়ে ওঠে।

 

সিউদাদ ওব্রেগন

মেক্সিকোর বেশ কয়েকটি শহরের অপরাধের হার চোখ কপালে তুলে দেবে অনেকের। এর মধ্যে অন্যতম অপরাধপ্রবণ শহর মেক্সিকান রাজ্যের সিউদাদ ওব্রেগন। ২০২১ সালে এই শহরটি বিশ্বের দ্বিতীয় বিপজ্জনক শহরে পরিণত হয়ে ছিল। এখানে খুনের হার ১৫৫.৭৭। যা যে কোনো শহরের জন্য বিপজ্জনক। জানা গেছে, মাদক ও মানব পাচার চক্রের অপরাধে শহরটি বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। ফলস্বরূপ, শহরটি অসংখ্য গ্যাং-অপরাধীর জন্ম দিয়েছে, যা ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো মেক্সিকোর অপরাধের তালিকায় উঠে আসে।

 

জাকাতেকাস

ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে একটি পরিচিত শহর জাকাতেকাস। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০২১ সালে লাখে ১০৭.৭ জনের হত্যার হার রেকর্ড করা হয়। এ কারণেই শহরটি মেক্সিকোর অনিরাপদ স্থানের তালিকায় তৃতীয়। এখানে সংঘটিত নানা অপরাধ এবং অসংখ্য গ্যাংয়ের উপস্থিতি ও সহিংসতা শহরটির অপরাধ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। জনসম্মুখে গোলাগুলি, অপহরণ এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়। সম্পদের অভাব ও দুর্নীতি আইন প্রয়োগকারীদের অপরাধ দমনে পিছিয়ে রেখেছে।

 

তিজুয়ানা

মেক্সিকোর সান দিয়েগো শহরের পাশে রয়েছে তিজুয়ানা শহর। কয়েক বছর আগেও এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে এখানে অপরাধ সামান্য কমে এসেছে। ২০২১ সালে মেক্সিকান শহরটি ২,১২৪টি হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করেছে, যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ। এই শহরে গড়ে ১০৩.১৯ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। দরিদ্রতা এই শহরে অপহরণ, ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ বাড়িয়ে তুলেছে। সিনালোয়া-তিজুয়ানার গ্যাংগুলো এখানকার সহিংসতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

 

সেলয়া

মেক্সিকোর গুয়ানাজুয়াতো রাজ্যের সেলয়া শহরতলি দেশটির সংঘটিত অপরাধের জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। সেন্ট্রাল মেক্সিকান শহরটি এখন অপরাধের ভয়াল থাবায় জর্জরিত। এই শহর মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতায় ভুগছে, ফলে এখানে মার্ডার হার ১০০.৯২। যা ভীষণ ভাবিয়ে তোলে নিরাপত্তাবাহিনীকে। অপরাধ বৃদ্ধি এবং সহিংসতার জন্য বেশিরভাগ গ্যাং দায়ী। সান্তা রোসা ডি লিমা কার্টেল এবং জলিসকো নিউ জেনারেশন কার্টেলের মতো গ্যাংগুলো শহরের নানা রকম অবৈধ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করে থাকে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধপ্রবণ শহর..

সেন্ট লুইস

আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও নিরাপত্তার অভাবে জনগণ নিশ্চিন্ত নন, তেমনই একটি শহর সেন্ট লুইস। এই শহরে বসবাস করেন তিন লাখের বেশি মানুষ। এখানে ভায়োলেন্স ক্রাইম রেট ৬৫.৩২। ২০২১ সালে এই শহরে ৪,৩৪৭টি হত্যা রেকর্ড করা হয়েছে। এখানে সবচেয়ে সাধারণ সহিংস অপরাধ হলো- আক্রমণ, যা মোট হিংসাত্মক অপরাধের প্রায় ৭৪ শতাংশ।

 

বাল্টিমোর

মনোরম সংস্কৃতি, অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত বাল্টিমোর। তবে বিপজ্জনক পরিবেশের জন্য এর কুখ্যাতি রয়েছে। এটি বিশ্বের অনিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। বন্দর নগরী হওয়ায় মাদক পাচার, হত্যা এবং চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা এখানে প্রায়সই ঘটে। এর অন্যতম কারণ- দরিদ্রতা। এখানকার প্রায় ২৫ শতাংশ বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এখানের ভায়োলেন্স ক্রাইম রেট ৫৭.৫৪ শতাংশ।

 

ডিট্রয়েট

শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের ভয়ংকর শহরগুলোর তালিকায় রয়েছে ডিট্রয়েট শহরের নাম। ২০১৮ সালের হিসাবে, সেন্ট লুইস এবং বাল্টিমোরের পরে যুক্তরাষ্ট্রের ডিট্রয়েট চতুর্থ সর্বোচ্চ খুনের শহর। এই শহর যেন সন্ত্রাসীদের সেরা পছন্দ। এখানের ভায়োলেন্স ক্রাইম রেট ৪৮.৩৫ শতাংশ। গ্যাং রিলেটেড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এই শহরের কুখ্যাতি সবচেয়ে বেশি।

 

অকল্যান্ড

আমেরিকানদের কাছে অকল্যান্ড শহরে পা রাখা আর নিরাপত্তার ভার সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়ারই সমান। এই শহরে বসবাসকারীদের বিপরীতে অপরাধ প্রবণতার হার যে কাউকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে। এই শহরের ভায়োলেন্স ক্রাইম রেট প্রায় ১৬৮৩ জন প্রতি ১ লাখ বসবাসকারীর বিপরীতে।

 

মেমফিজ

স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরাই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে দ্রুত অনিরাপদ শহরের তালিকায় নাম উঠেছে মেমফিজের। দারিদ্র্য, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, গ্যাং কাণ্ড এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্পদের অভাবের কারণে এখানে অপরাধের হার বেশি। এই শহরের ক্রাইম রেট ৫৪.৬৫।

 

নিউ অরলিন্স

ড্রাগ চোরাচালানির কারণেই অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে নিউ অরলিন্সে। দারিদ্র্য, মাদকের অপব্যবহার এবং সহিংসতা এড়াতে চায় এখানকার মার্কিন সরকার। এই শহরের ক্রাইম রেট ৫৬.৭৭। যার জন্য নানা সহিংস কর্মকাণ্ডে এখানে প্রায় ১,৪৩৩ জন মারা যায়। ছুরি চালিয়ে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও এখানে ঘটে।

সর্বশেষ খবর