রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রনায়কদের পুরনো পেশা

আবদুল কাদের

রাষ্ট্রনায়কদের পুরনো পেশা

রাষ্ট্রনায়করা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন অথবা নানা পটভূমি থেকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন। কেউ ছিলেন ডাক্তার, কেউ বাস ড্রাইভার, কেউবা আবার ছিলেন সাধারণ বার মেকার কিংবা আইসক্রিম বিক্রেতা। এমনকি অনেক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন সাধারণ খনিশ্রমিক এবং কৌতুক অভিনেতা। এমন সব রাষ্ট্রনায়কের গল্প নিয়েই আজকের রকমারি...

 

পত্রিকায় কলামিস্টের চাকরি নিলেন বরিস জনসন

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ আগেই ছেড়েছেন, সর্বশেষ পার্লামেন্টের এমপির পদও ছাড়েন। তবে নতুন চাকরি পেয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা। সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে কলাম লেখক হিসেবে যোগ দিয়েছেন বরিস জনসন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে সংবাদপত্রের কলামিস্ট ছিলেন তিনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর টাইমস-এ কাজ করেন। সে সময় ইতিহাসবিদ কলিন লুকাসকে নিয়ে মিথ্যা দাবি করায় বরখাস্তও হয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি বিতর্কিত। সম্প্রতি কলামিস্টের চাকরি নিয়েও ডালপালা মেলেছে বিতর্ক। দেশটির পার্লামেন্ট কমিটি জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস তাঁর নতুন চাকরির বিষয়টি আগে জানাননি। খবরটি প্রকাশের মাত্র আধা ঘণ্টা আগে পার্লামেন্ট কমিটি বিষয়টি জানতে পারে। যা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর আগে ‘পার্টি গেট’ কেলেঙ্কারির ঘটনার জেরে এমপির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বরিস।

 

রিগ্যান ছিলেন সার্কাসকর্মী

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনেতা। এক সময় রিগ্যান ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতাও। পরে জড়িয়ে পড়েন আমেরিকার রাজনীতিতে। যার পরিসমাপ্তি ঘটেছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে পা রেখে। মার্কিন অর্থনীতির বিকাশ ও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দ্য উইকের তথ্যমতে, রিগ্যান নবিশ হিসেবে ঘণ্টায় শূন্য দশমিক ২৫ ডলার মজুরিতে রিংলিং ব্রাদার্স সার্কাসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি ইলিনয়ের দূরবর্তী ডিক্সন শহরে রক রিভার উপকূলে জীবনরক্ষাকারী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেই দিনগুলোতে শীর্ণ আর লম্বা এই কিশোর বিপজ্জনক আর খরস্রোতা রক রিভার থেকে ৭৭ জন বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন। সে সময় জীবন রক্ষাকারী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। ৬৯ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রতিভাবান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৬৬ সালে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সে সময় রোনাল্ড রিগ্যান একজন সুবক্তা হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

 

ভূমি জরিপ কর্মী ছিলেন ওয়াশিংটন

জর্জ ওয়াশিংটন; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশ গঠনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। ১৬ বছর বয়সে জর্জ ওয়াশিংটন ভার্জিনিয়ার সেনানদোয়ায় ভূমি জরিপকারীর চাকরি শুরু করেন। পরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে কালপিপার শহরে সরকারি জরিপকারী হিসেবে ওয়াশিংটনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমেরিকান স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ২১ বছর বয়স নাগাদ ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ১৫০০ একরের বেশি ভূমির মালিক হন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে কন্টিনেন্টাল আর্মির কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছিল বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন এতটাই সফল ছিলেন যে, তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে মানা হয়। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি শতভাগ ইলেকটোরাল ভোটে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন নিজ কর্মে উজ্জ্বল। তাঁর নেতৃত্ব আর গুণাবলির জন্য তিনি সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৩২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি জর্জ ওয়াশিংটন। ছেলেবেলায় সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ওয়াশিংটন। ভার্জিনিয়ার গভর্নর একসময় তাঁকে সৈনিক পদে নিয়োগ দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওয়াশিংটন দখলমুক্ত করেছিলেনন ভার্জিনিয়া অঞ্চল।

 

স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজও করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

জো বাইডেনের বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, সে সময় ডেলওয়ারের আর্কমেয়ার একাডেমির ফি পরিশোধের জন্য স্কুলের জানালা ধোয়া, বাগানের আগাছা পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছিলেন তিনি।

বর্তমান বিশ্বের আলোচিত নাম জো বাইডেন। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। মাত্র ২৯ বছর বয়সে সিনেটর নির্বাচিত হন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিতে আসার আগে একজন আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন বাইডেন। উত্তর-পূর্ব পেনসিলভেনিয়ার স্ক্র্যানটনে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাইডেনের বাবা ছিলেন গাড়ি বিক্রেতা। মা ছিলেন গৃহিণী। কিন্তু ১৯৫০ সালে তার চাকরি চলে যায়। এরপর তাঁর বাবা প্রতিবেশী শহর ডেলওয়ারে চলে যান। তখন বাইডেনের বয়স মাত্র ১০ বছর। সে সময় ডেলওয়ারের আর্কমেয়ার একাডেমির ফি পরিশোধের জন্য স্কুলের জানালা ধোয়া, বাগানের আগাছা পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছিলেন বাইডেন। পরে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির ল’ স্কুলে পড়াশোনা করেন। তবে বাইডেন এর আগে ডেলওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন। তাঁর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ শুরু এই ডেলওয়ার থেকে। একসময় লেখক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। ক্যান্সারে মারা যাওয়া ছেলে বিউকে নিয়ে একটি বই লেখেন। ওবামার প্রশাসনে জো বাইডেন যুদ্ধ, পররাষ্ট্র এবং অর্থনীতির মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাজ করতেন।

 

স্টেশনারি দোকানে কাজ করতেন লিংকন

অত্যন্ত গরিব পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্রাহম লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জীবনের শুরুর দিকে লিংকন পোস্টমাস্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেল স্টোরে কেরানি হিসেবে কাজ করেছেন। খুব ছোট কাজ মনে হলেও পরবর্তীকালে এটাই তাঁর জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা দিয়েছিল। নিউ সালেমে তাঁর দোকানটি ছিল শহরের এক জনপ্রিয় আড্ডাস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এখান থেকেই শহরের প্রায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হন। ছয় মাস পার না হতেই ইলিনয়ের পক্ষ থেকে আইনসভার প্রতিনিধি হিসেবে নিজের প্রথম রাজনৈতিক প্রচারণা চালান। প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কেন্দ্রে কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। মজার তথ্য হলো- লিংকনের মদের দোকানের পরিবেশক হিসেবে বৈধ লাইসেন্স ছিল। তিনি ছিলেন একজন ভয়ংকর মুষ্টিযোদ্ধা। প্রায় ৩০০-এর মতো লড়াইয়ে লড়ে হেরেছিলেন মাত্র একটিতে। মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্টের অর্জনও রয়েছে তাঁর দখলে। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি। সর্বপ্রথম মহিলাদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করেন আব্রাহাম। পাশাপাশি দেশটির সিক্রেট সার্ভিসও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং আইনজীবী একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন। তিনি স্বশিক্ষিত ছিলেন। যার পেছনে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের বাবা-মা।

 

ছিলেন চীনাবাদাম বিক্রেতা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার একাধারে রাজনীতিবিদ, লেখক ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য। যুক্তরাষ্ট্র এবং বহির্বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি ২০০২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। জীবনের শুরুর পথচলায় জিমি কার্টার চীনাবাদাম বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করতেন। পাশাপাশি জিমি তাঁর বাড়িতে চীনাবাদামের চাষ করতেন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হন। মানবিক অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন ব্যাপক তৎপর। এ জন্য তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল প্রচুর। তিনি কার্টার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৮২ সালে। হ্যাবিট ফর হিউমিনিটি প্রজেক্টের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন কার্টার। পরবর্তীতে লেখক হিসেবেও তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই বিভিন্ন বিষয়ে রচনা করেন। চীনাবাদামের ব্যবসা করলেও এর আগে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ইউনাইটেড স্টেটস নেভিতে। সেখানে তিনি নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে কাজ করেন। হাইস্কুল শেষ করেই নেভিতে যোগ দেন। জিমি কার্টার ১৯২৪ সালের অক্টোবরে জর্জিয়ার প্লেইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্ত তাঁর পিতা জেমস আর্ল শ্রীরাম ছিলেন একজন চীনাবাদাম ও তুলা কৃষক। যিনি একটি ফার্ম-সাপ্লাই ব্যবসার মালিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

 

জনপ্রিয় টিভি কমেডি শো করতেন জেলেনস্কি

২০২১ সালেও যার নাম ছিল বিশ্ববাসীর কাছে অজানা। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর প্রেসিডেন্ট পুতিনের পর সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে ভলোদিমির জেলেনস্কির নাম। তিন বছর আগে অভিনেতা থেকে রাজনীতিতে আসেন তিনি। ভলোদিমির জেলেনস্কি ৭৩ শতাংশ ভোটে হন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান। অভিনেতা হিসেবে বেশ কিছু সিনেমা এবং টেলিভিশন সিরিজে কাজ করেছেন ভলোদিমির। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি কমেডিয়ান হিসেবে অভিষেক করেন অভিনয় জগতে। এরপর রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় ভাষার একাধিক টিভি শোতে অংশ নেন। পরে ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে তাঁর। টিভিতে অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পেতে থাকেন ভলোদিমির। তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘লাভ ইন দ্য বিগ সিটি’ মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। তারপর অভিনয় করেন ‘অফিস রোম্যান্স আওয়ার টাইম’, ‘লাভ ইন ভেগাস’সহ মোট আটটি সিনেমায়।

 

নানা চাকরি করেছেন ওবামা

মার্কিন ইতিহাস রচনাকারী প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেইন ওবামা। আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। এমনকি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টও তিনি। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নানা ধরনের চাকরি করেছেন। আইসক্রিম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রাস্কিন-রবিন্সের হনুলুলু শাখায় তিনি একজন আইসক্রিম বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতেন। কোনো কাজই দেখতে যতটা সহজ আসলে ততটা নয়। চকোলেট, আইসক্রিম বানানো অনেক কঠিন। তা বানাতে কবজির ওপর অনেক চাপ পড়ে বলে নিউইয়র্ক সাময়িকীকে জানিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও ওবামা তিন বছর কাজ করেছেন একটি ডেভেলপিং কমিউনিটিস প্রজেক্টের ডিরেক্টর হিসেবে। এটি শিকাগোতে অবস্থিত একটি দাতব্য সংস্থা। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং নিজ দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচিত ছিলেন বারাক ওবামা। বাল্যকালের স্বপ্ন ছিল প্রেসিডেন্ট হওয়া। ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী হনুলুলুতে জন্মগ্রহণ করেন। ওবামা ২০১২ সালে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

শিক্ষানবিশ উকিল ছিলেন

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্ববাসী যখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং যুদ্ধের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত, তখন পৃথিবীর কেন্দ্রীয় এক চরিত্র দেখা দিয়েছিল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। মার্কিন ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তিনবার এ দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থবারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন তিনি। রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে প্রথমবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ছিলেন একজন সিনেটর এবং নৌবাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মার্কিন ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রুজভেল্ট ২৫ বছর বয়সে লেডইয়ার্ড ও মিলবার্ন এলাকায় ওয়াল স্ট্রিট ফার্ম ‘কার্টারের’ একজন শিক্ষানবিশ উকিল হিসেবে কাজ করেন। ফার্মটির অনেক সুনাম থাকলেও নিয়ম অনুসারে কাজ শুরুর প্রথম এক বছর এখানে কর্মচারীদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। ১৮৮২ সালের জানুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক, হাইড পার্কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম রুজভেল্টের। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। রুজভেল্ট দীর্ঘ ১২ বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও কাজ করে গেছেন দেশের জন্য।

 

ছিলেন অধ্যাপক ফুটবল কোচ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট থমাস উড্রো উইলসন। ১৯১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। উইলসন ১৮৫৬ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় একটি গরিব ও দাস পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভার্জিনিয়ায় জন্ম নিলেও উইলসন তাঁর শৈশব ও কৈশোর আগস্টা, জর্জিয়া, দক্ষিণ ক্যারোলিনা ও কলম্বিয়ায় কাটিয়েছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই উইলসন পড়াশোনায় ভীষণ অনাগ্রহী ছিলেন। তবে খেলাধুলায় তাঁর ছিল ব্যাপক আগ্রহ। ১৮৮৬ সালে পিএইচডি গ্রহণের পর আমেরিকার বিখ্যাত কর্নাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তবে তিনি সেখানে ফুলটাইম কর্মী হিসেবে ছিলেন না। কর্নাল ইউনিভার্সিটির পার্টটাইম অধ্যাপক ছিলেন। এর আগে তিনি আমেরিকান বায়ার্ন মর কলেজ এবং ওয়েসলি ইউনিভার্সিটিতে তিন বছরের জন্য কোচ হিসেবে চাকরি করেছিলেন। সেখানে ফুটবল দলের কোচ হিসেবে কাজ করতেন উইলসন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও খেলার প্রতি ভালোবাসা কমেনি তাঁর। ফুটবল ছাড়াও বেসবল, ভলিবল এবং গলফ খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল অনেক। ১৯০২ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এবং ওই ইউনিভার্সিটির ফুটবল দলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ খবর