রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বের খাদ্যভান্ডার

আবদুল কাদের

বিশ্বের খাদ্যভান্ডার

খাদ্য পৃথিবীর মানুষের মূল চালিকাশক্তি। বিশুদ্ধ পানি ছাড়াও পর্যাপ্ত খাবারের অভাব আজকের দিনে বেশির ভাগ মানুষের উদ্বেগের কারণ। বৈশ্বিকভাবে পৃথিবীর একেক দেশ একেক কৃষিপণ্য উৎপাদনে এগিয়ে। কেউ ফসল উৎপাদনে, আবার কেউ নিত্যনতুন কৃষিপ্রযুক্তিতে। বিশ্বের খাদ্যভান্ডার নিয়ে আজকের আয়োজন...

 

শস্য উৎপাদনে বিশ্বের সেরা দেশগুলো

খাদ্যশস্যের ওপর দাঁড়িয়ে এ মানবসভ্যতা। খাদ্যশস্য বৃহত্তর পরিমাণে জন্মায় এবং বিশ্বব্যাপী অন্য কোনো ধরনের শস্যের তুলনায় খাদ্যশক্তি প্রধান এবং সে জন্য একে প্রধানতম ফসল বলা যায়। আর খাদ্যই পৃথিবীর মানুষের মূল চালিকাশক্তি। যে দেশের উৎপাদন খাত যত সমৃদ্ধ সে দেশের অর্থনীতিও তত শক্তিশালী। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সেসব দেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে অবস্থান জানান দিতে থাকে। এখন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকৃত কৃষিপণ্য হলো- গম, চাল, সয়াবিন, ভুট্টা, বার্লি, রেপসিড, পাম অয়েল, সূর্যমুখী বীজ এবং কলা। ২০২০ সালে মোট রপ্তানিকৃত গমের পরিমাণ ১৯৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট গম উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ। তবে বিশ্বের প্রধান খাদ্যশস্য ও উদ্ভিজ্জ ফসলের উৎপাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারত প্রায়ই শীর্ষ উৎপাদক হিসেবে উপস্থিত হয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, অর্থনীতি সমৃদ্ধশীল রাষ্ট্র হিসেবে চীনের উত্থান বেশি দিন আগের নয়। তবে তাদের উত্থানের গল্পে কৃষিশিল্পের অবদান অনেক। চীন বিশ্বজুড়ে ধানের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক। তবে তারা গম ও ভুট্টার উৎপাদনে দুই নম্বরে। সেই সঙ্গে পিঁয়াজ ও বাঁধাকপিসহ অনেক শাক-সবজির বৃহত্তম উৎপাদনকারীও। মোট উৎপাদনের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্র গম উৎপাদনে চতুর্থ, ভুট্টায় প্রথম ও সয়াবিন উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসল রয়েছে। আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশির ভাগ অংশে বাজরা একটি প্রধান ফসল। যার প্রধান উৎপাদক ভারত ও নাইজেরিয়া। একইভাবে বার্লি, রাই ও মটরশুটি/ডাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ফসল নয়। তবে রাশিয়া, জার্মানি এবং ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফসল। ২০২১ সালে মোট রপ্তানিকৃত গমের পরিমাণ প্রায় ২১১ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট গম উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ। শস্যের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ ছিল রাশিয়া, পরে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা। এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলো কৃষিপণ্য উৎপাদকদের মধ্যে বৃহত্তম। সাম্প্রতিককালে চীন কৃষিপণ্য উৎপাদনে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো তাদের উৎপাদন বাড়িয়ে থাকে সাধারণ মানুষের খাদ্য সংকট দূর করার জন্য। উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্য থেকে একটি ছোট অংশ রপ্তানি করা হয়।

 

রপ্তানিতে সেরা দেশগুলো

চীন এবং ভারতের মতো দেশগুলো শীর্ষস্থানীয় কৃষি উৎপাদনকারীদের তালিকায় রয়েছে। এ দেশগুলোর বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা সবার আগে প্রাধান্য পায়। যদিও এ উৎপাদনের একটি বড় অংশ দেশের ভিতরে ব্যবহৃত হয়। তবে এর বাইরে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের একটা বিশাল অংশ রপ্তানি করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলো। অ্যাগ্রোএক্সপোর্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে মোট খাদ্য রপ্তানির ২ দশমিক ১ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়ার রপ্তানি অনেক কমে এসেছে। এ কারণে দেশটি রপ্তানিতে শীর্ষ ১০ স্থান হারিয়েছে। অপরদিকে গম উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ দেশ ইউক্রেনও যুদ্ধের কারণে আছে কোণঠাসা। বৈশ্বিক রপ্তানিতে তারাও বেশ পিছিয়ে পড়েছে, বলতে গেলে বিশ্বের রপ্তানিকারক দেশের তালিকা থেকে অনেক নিচে নেমে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে। দেশটির খাদ্য রপ্তানি ৯ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ১৯৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। পরবর্তী স্থানে থাকা ব্রাজিলও একই হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে খাদ্য রপ্তানি থেকে ১৩৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। তালিকার পরবর্তী দেশগুলো হলো নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও চীন। অপরদিকে কৃষিবিজ্ঞানের কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের মতো বড় দেশের পরই উচ্চারণ হয় বাংলাদেশের নাম। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে চীন-ভারতকে পেছনে ফেলে প্রথম অবস্থানে পৌঁছে গেছে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

 

চীনের রকমারি ফল ও শস্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত

চীনের অর্থনীতির প্রাণ কৃষি। তাই তো কৃষিপণ্যের উৎপাদনে এখানে দেওয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব। দেশটির বেশির ভাগ জমি কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৪৯ সালে চীন তার আবাদযোগ্য জমির ৫ ভাগের ১ ভাগ হারায়। এখন দেশটির মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জমি কৃষির জন্য উপযোগী। তবে তারা মাত্র ৭ শতাংশ জমিতে কৃষিপণ্য উৎপাদন করে। এমনকি তারা বিশ্বের জনসংখ্যার ২২ ভাগ খাদ্য সরবরাহ করে। যদিও বিংশ শতাব্দীতে দেশটি নিজেদের জনগণের জন্য খাদ্য সরবরাহে সংগ্রাম করেছিল। তারপর কৃষিপণ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়নে দেশটি আজ বিশ্বের বুকে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি রাষ্ট্র। চীন বিশ্বের বৃহৎ ধান উৎপাদনকারী দেশ। পাশাপাশি তারা বিশ্বের মানুষের জন্য সয়াবিন, বাজরা, গম ও ভুট্টার চাহিদা পূরণ করে। চীনের সাধারণ মানুষ রাস্তার ওপর এবং অনেক ভবনের দেয়ালে সবজির চাষ করে। রকমারি ফল, সবজি, তুলা, ডিম এবং মুরগি উৎপাদনে চীন বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেয়। যাই হোক, গম, ধান এবং ভুট্টা তিনটি প্রধান ফসল এবং এ তিনটি ফসলের উৎপাদন চীনের মোট খাদ্য উৎপাদনের ৯০ শতাংশেরও বেশি। চীন ২০২১ সালে ১১ কোটি হেক্টরের বেশি জমি আবাদ করেছে।

 

ব্রাজিল বিখ্যাত কফি ও চিনি উৎপাদনে

ঐতিহাসিকভাবে ব্রাজিল কৃষিপ্রধান দেশ। দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষিপণ্য উৎপাদন। তাদের আবাদকৃত জমির প্রায় ৪১ শতাংশ (প্রায় ৮৬৭.৪ মিলিয়ন একর) কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। কৃষি গবেষকদের মতে, ব্রাজিল ১২ হাজার বছর আগে মিষ্টি আলু, ভুট্টা, চিনাবাদাম, তামাক এবং আরও অনেক ফসলের চাষ শুরু করেছিল। আখ উৎপাদনে ব্রাজিল বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশ। দেশটি আখ উৎপাদনে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যা মূলত চিনির প্রধান কাঁচামাল। বছরে তারা ৬০০ মিলিয়নের বেশি টন আখ উৎপাদন করে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সয়াবিন উৎপাদনকারী দেশও ব্রাজিল। বিশ্বব্যাপী তারা বিপুল পরিমাণ মটরশুটি রপ্তানি করে থাকে। এমনকি তারা বিশ্বের বৃহত্তম কফি, গরুর মাংস এবং সয়াবিন রপ্তানিকারক দেশ। এখানকার প্রায় ৭ শতাংশ জমিতে নানা রকম ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। যার মধ্যে সয়াবিনও রয়েছে। আর জানলে অবাক হবেন, লাতিন আমেরিকার এ দেশটি বৈশ্বিক তিন ভাগের এক ভাগ কমলার চাহিদা পূরণ করে থাকে।

 

তেলবীজ ও গম উৎপাদনে সেরা পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেন

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেন। বিশ্বের অন্যতম প্রধান শস্য ও তেলবীজ উৎপাদনকারী দেশ এটি। একইভাবে তারা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশও। যুদ্ধপূর্ব এ দেশ কৃষিক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। কারণ- ইউক্রেনের সমতল উর্বর মাটি চাষের জন্য আদর্শ। যুদ্ধের আগে আন্তর্জাতিক বাজারে কেনা সব খাদ্য ক্যালোরির ৬ শতাংশ ইউক্রেন একাই উৎপাদন করত। ইউক্রেন সাধারণত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক। অপরদিকে দেশটি বিশ্বের ৪২ শতাংশ সূর্যমুখী তেল, ১৬ শতাংশ ভুট্টা এবং ৯ শতাংশ গম উৎপাদন করে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামেও ইউক্রেন অনেক বেশি অবদান রাখে। কিন্তু রুশ হামলায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। ইউক্রেনিয়ান গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানের বক্তব্যে উঠে এসেছে ইউক্রেনের বর্তমান রপ্তানির চালচিত্র, রুশ হামলার কারণে বছরে দেশটির শস্য উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমছে। শস্য রপ্তানিতে দেশটি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। ফলে দেশটিতে শস্য উৎপাদন আরও এক-তৃতীয়াংশ কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

কৃষিবিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র

কৃষিবিজ্ঞানে সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। সমগ্র বিশ্বে একমাত্র তারাই উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি প্রদান করে। এতে দেশটি অনেক দেশের কৃষির জন্য রোল মডেল। ১৯৯০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কৃষিশ্রমিকের উৎপাদন বছরে ০.৮৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বলাই যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র কৃষিপ্রযুক্তিতে বিশ্বের সেরা রাষ্ট্র। আবহাওয়ার বৈচিত্র্যের কারণে নানা খাদ্যশস্য উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে রাসায়নিক সারের প্রয়োগও কম এখানে। দেশটি কাঠ উৎপাদনে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। তাদের কৃষি আদমশুমারির তথ্য মতে, ২০০৭ সালে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন খামার কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। ভুট্টা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফসল। এরপরই সয়াবিন ও গমের অবস্থান। গমজাতীয় শস্য, মাংস, সয়াবিন বীজ, দুধ উৎপাদনে দেশটি সেরাদের কাতারে রয়েছে। এ ছাড়া নানা ধরনের বাদাম ও আঙ্গুর ফল উৎপাদন করে দেশটি। তাদের কৃষিজাত প্রধান ফসল হলো- আখ, আলু, কফি, চিনি এবং কলা।

 

চাল উৎপাদন ও রপ্তানিতে অন্যতম ভারত

ভারতের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৫৮ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। সাম্প্রতিক তথ্যমতে, দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকের আয়ের প্রাথমিক উৎস কৃষি। যা এশিয়ার দেশটির জিডিপিতে কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলোর অবদান ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। চাল উৎপাদনে ভারত পৃথিবীর অন্যতম দেশ। বিশ্বব্যাপী দুধ উৎপাদনে প্রথম, শুকনো ফল উৎপাদনে দ্বিতীয়, মাছ চাষে তৃতীয়, ডিম উৎপাদনে চতুর্থ এবং মুরগি উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে। এ ছাড়া কফি উৎপাদনে বিশ্বে ষষ্ঠ। ভারত বিশ্বের বেশির ভাগ ফলের সবচেয়ে বড় উৎপাদক ও রপ্তানিকারক। কলা, পেয়ারা, আম, লেবু, পেঁপে এবং ছোলাসহ অনেক শাকসবজি রপ্তানিতে দেশটি অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। মুখরোচক মসলা উৎপাদনে ভারত অন্যতম। যার মধ্যে রয়েছে আদা, মরিচ ও গোল মরিচ। গত ১৪ বছরে ভারতীয় কৃষি ৮৭ ডলার থেকে ৩৯৭ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ১১ শতাংশ। ২০২১-২০২২ সালের কৃষিজ পণ্যের রপ্তানিতে ভারত সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এ সময় দেশটির কৃষিপণ্যের রপ্তানি ১৯.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব খাদ্য বাণিজ্যে ভারতীয় কৃষিপণ্যের অবদান প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

চিনি ও গম উৎপাদনে সেরা রাশিয়া

স্থলভাগে রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ- কানাডার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। রাশিয়া প্রধানত শিল্প অর্থনীতিতে নিযুক্ত, এর বাইরেও তাদের রয়েছে বিশাল কৃষিশিল্প। রাশিয়ার মোট জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ কৃষিশিল্পের দখলে। পাশাপাশি দেশটির এ কৃষিশিল্প মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও বিশ্বে গম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় শীর্ষে রাশিয়া। কেবল উৎপাদন নয়, রপ্তানির শীর্ষস্থানও তাদের দখলে। চিনি, গম এবং আলু উৎপাদনের জন্য দেশটি তাদের জমির প্রায় ১৩ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। দেশটির সর্বাধিক উৎপাদিত প্রধান ফসল- যব, আখ (চিনির বিট), আলু, ভুট্টা, বার্লি, ওটস, রাই ইত্যাদি। দেশটিতে ২৩ মিলিয়ন হেক্টরের বেশি আবাদি জমি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। চাষকৃত জমির প্রায় অর্ধেক অংশে হয় শস্য চাষ। যা থেকে দেশের মোট শস্যের ৭০ শতাংশ উৎপাদন হয়। চিনি উৎপাদনেও এগিয়ে দেশটি।

 

ফ্রান্সের জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ কৃষিকাজ ও মাছ ধরে আয় করে থাকে

ফ্রান্সে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি খামার রয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ কৃষিপণ্য উৎপাদন, মাছ চাষ বা বনায়নের মতো খাত থেকে উপার্জন করে থাকে। ফ্রান্সে প্রায় সবাই কৃষি-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য উৎপাদন, শস্য বিশ্লেষণ, কৃষি উদ্ভাবন এবং কৃষি উন্নয়ন ইত্যাদি। তেলবীজ, চিনি, দুধ, ওয়াইন এবং গরুর মাংস উৎপাদন ও রপ্তানিতে সমগ্র ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্স শীর্ষ। কয়েকটি প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে ফ্রান্সে ২৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স আঙ্গুরের মতো কৃষিপণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়াইন উৎপাদনকারী। এমনকি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং পানীয়ের বৃহত্তম রপ্তানিকারকও তারা। সাম্প্রতিক বছরে এ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যশস্য ও ময়দার উৎপাদন ১২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কয়েক বছরে অন্যান্য প্রাণিজ পণ্যের প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এমনকি কৃষি থেকে ফ্রান্সের আয় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

মেক্সিকোর জিডিপিতে কৃষি সামান্যই অবদান রাখে

মেক্সিকোয় কৃষি ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক- উভয়ভাবেই দেশটির অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কৃষি খাত মেক্সিকোর মোট জিডিপির সামান্যই পূরণ করে থাকে। তবে অনেক আগে, তারা অ্যাভোকাডো, মটরশুটি, টমেটো, মরিচ, ভুট্টা এবং আরও অনেক কিছু উৎপাদন করত। দেশটি তার কৃষি রপ্তানির জন্যও ব্যাপকভাবে পরিচিত। মেক্সিকো কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- তারা তাদের ক্রমবর্ধমান ফসল এবং কৃষি উৎপাদন পুরোটাই হিসাবের আওতায় রাখে। মেক্সিকোর ১৫ শতাংশ জমি কৃষিশিল্পের জন্য বরাদ্দ এবং ৫০ শতাংশ জমি গবাদিপশু পালনে ব্যবহৃত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে তাদের প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে আছে- রকমফের ফল, ভুট্টা, দুধ, হাঁস-মুরগি এবং ডিম উৎপাদন, যা তাদের মোট কৃষি উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশজুড়ে রয়েছে। তবে দেশটির সবচেয়ে লাভজনক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফসল হলো- আখ ও কফি। মেক্সিকোয় গবাদিপশুর উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- হাঁস, ডিম, গরুর মাংস এবং দুধ। তারা বেশ বৃহৎ পরিসরে হাঁস-মুরগি এবং গবাদিপশু পালন করে থাকে। এমনকি ফল, কফি, শাকসবজি ও চিনি রপ্তানিতেও তারা এগিয়ে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে, গম উৎপাদনে মেক্সিকোর অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। একই বছরে তারা ৫৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন চিনি (সুগার ক্যান) উৎপাদন করে।

 

জাপানের জিডিপির ২ শতাংশ কৃষি আর ১০ শতাংশ মানুষ কৃষক

শিল্পবিপ্লব আর আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে এশিয়ার সেরা রাষ্ট্র জাপান। জাপানের অর্থনীতিতে শিল্প ও প্রযুক্তির ব্যাপক ভূমিকা থাকলেও দেশটির মোট জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ আসে জাপানের কৃষিশিল্প থেকে। এবং দেশটির প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ খামারে কাজ করে। ১৯৬১ সালে জাপানের কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ০৯ মিলিয়ন হেক্টর; তবে ২০০৬ সালে সে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন হেক্টর। জাপানিরা ভাত ও অন্যন্য শস্যের সঙ্গে মাছ, শাকসবজি, পাহাড়ের গাছপালা ইত্যাদি আহার করে। কৃষিশিল্পের জন্য তাদের পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি রয়েছে। তবুও তাদের জমির মাত্র ১.২ হেক্টর (৩ একর) পরিমাণ কেবল সমন্বিত চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। গত ৪০ বছরে তারা ভাতের ওপর চাপ কমিয়েছে। তবে উল্টোদিকে তারা খাবার হিসেবে দুধ, অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য এবং গবাদিপশুর মাংস ইত্যাদির ব্যবহার বাড়িয়েছে।

 

জার্মানির প্রধান কৃষিখাদ্যের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০টি কৃষিপণ্য

নদী এবং উপত্যকাবেষ্টিত জার্মানির দক্ষিণ এবং পশ্চিম অংশে কৃষিযোগ্য জমি রয়েছে। তবে তাদের পণ্য এলাকা ভেদে ভিন্ন। দেশটির প্রধান কৃষিখাদ্যের মধ্যে রয়েছে ১০টি কৃষিজাত পণ্য। এগুলো হলো- শূকরের মাংস, মুরগি, আলু, দুধ, সিরিয়াল, গরুর মাংস, চিনি, বাঁধাকপি, বার্লি এবং গম। এ ছাড়া তাদের বেশির ভাগ অঞ্চলে শাকসবজি, ফল এবং ওয়াইনের উৎপাদন করা হয়। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়। এমনকি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিয়ার উৎপাদনকারী দেশ এ জার্মানি। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ জমি ও বনভূমি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার হয়। ১৯৯৭ সালে পশ্চিমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারকারী পারিবারিক খামার ছিল জার্মানির। জার্মানির কৃষকদের প্রায় ৮৭ শতাংশ মাত্র ১২৪ একর জমিতে খামারের কাজ করে। এ ছাড়া দেশটির ১০ লাখ মানুষের জন্য প্রতি বছর ৫০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর