বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর অ্যামাজন

তানভীর আহমেদ

ভয়ংকর অ্যামাজন

পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে তাকালে সবুজে আচ্ছন্ন সবচেয়ে বড় ভাগটি অ্যামাজনের। গরম আবহাওয়াচ্ছন্ন এ রেইন ফরেস্ট মোট নয়টি দেশজুড়ে বিস্তৃত। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে ছড়িয়ে রয়েছে বনটি। বনের প্রায় ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে। ব্রাজিল ছাড়াও পেরু, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্জ গায়ানা অ্যামাজন বিস্ময়ে ডুবে রয়েছে। ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এ বনের অনেক স্থানেই এখনো মানুষের পা পড়েনি। মানুষ চাঁদে পা ফেলেছে, গুহার অন্ধকারে নেমেছে, ডুব দিয়েছে মহাসাগরেও- কিন্তু অ্যামাজনের গোপনীয়তা ভাঙতে পারেনি সবটুকু। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশই হলো এ দুর্গম অ্যামাজন বন। পৃথিবীজুড়ে রেইন ফরেস্টের যত আয়তন, তার অর্ধেকটাই অ্যামাজন। বিস্ময়কর এ বনের আয়তন যেমন বিশাল তেমনি বিশাল এ বনের প্রাণী ও উদ্ভিদ-বৈচিত্র্য। অ্যামাজন বনের গহিনে মানুষের চলাচল নেই। তবে অ্যামাজনের জেগে থাকা সবচেয়ে বড় শহরটি রয়েছে ব্রাজিলে। ব্রাজিলের মানাস শহরটিতে ২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। বলা যায়, অ্যামাজন বেসিনে এটাই সবচেয়ে বড় শহর। অ্যামাজনের ২.১ মিলিয়ন বর্গমাইলের বেসিন অঞ্চল বিশ্বের নবম ক্ষুদ্র দেশের আয়তনের সঙ্গে সমতুল্য। রেইন ফরেস্ট অ্যামাজনে মাত্র দুটি ঋতু রয়েছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা। গরমপ্রধান এ বনে ছয় মাস গ্রীষ্ম ও বর্ষা থাকে। এ বনে গুমোট গরম আবহাওয়া কখনোই সরে যায় না।  প্রায় সবসময় ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকায় এ বনে পথচলা খুবই কষ্টের। এ ছাড়া এখানকার আর্দ্রতা থাকে ৭৭ থেকে ৮৮ শতাংশ। যে কারণে অল্পতেই হাঁপিয়ে যান বনে প্রবেশকারীরা।

 

মাংসখেকো গাছ

অ্যামাজনের মাংসাশী গাছগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রখ্যাত ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপকে। পাতাগুলোর মাঝ বরাবর দরজার কব্জার মতো ব্যবধায়ক আছে, যার মাধ্যমে পাতাগুলো দ্রুত খুলতে ও বন্ধ হতে পারে।  এ পাতাগুলোর ভিতরের পৃষ্ঠজুড়ে অনেক সংবেদনশীল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্ত লোমের মতো অঙ্গ থাকে। মাছি, পোকামাকড় বা এ জাতীয় কোনো শিকার এসব লোমের সংস্পর্শে আসামাত্র অতি দ্রুততার সঙ্গে শিকারসহ পাতার মুখ বন্ধ হয়ে যায়...

 

হলিউড চলচ্চিত্রে নিশ্চয় মানুষখেকো গাছ দেখেছেন। সিনেমার কারণে অনেকের ধারণা মানুষখেকো গাছ আছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের গাছ দেখা না গেলেও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকা কিছু গাছ খুঁজে পাওয়া যায়। এরাই মাংসখেকো গাছ। এর মধ্যে কলসগাছ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকায় মাংসখেকো উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আমাদের আজকের বিষয় ভয়ঙ্কর ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ। আর একে নিয়ে হয়েছে সবচেয়ে বেশি গবেষণা। দেখতে সুন্দর। মানুষের মুখগহ্বরের মতো গঠন এর পাতাগুলোর। পাতাগুলোর মাঝ বরাবর দরজার কব্জার মতো আছে যার মাধ্যমে পাতাগুলো দ্রুত খুলতে ও বন্ধ হতে পারে। এ পাতাগুলোর ভিতরের পৃষ্ঠজুড়ে অনেক সংবেদনশীল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্ত লোমের মতো অঙ্গ থাকে। মাছি, পোকামাকড় বা এ জাতীয় কোনো শিকার এসব লোমের সংস্পর্শে আসামাত্র অতি দ্রুততার সঙ্গে শিকারসহ পাতার মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

পাতার অভ্যন্তরে আটকা পড়া শিকারটির শরীরের নরম অংশগুলো খসে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে শিকারের দেহ বিগলিত হয়ে হজম হয়ে যায়। হজম কাজ সম্পন্ন করতে এর প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। একবার হজম হয়ে যাওয়ার পর পাতাটি পুনরায় উন্মুক্ত হয়ে যায় নতুন শিকারের অপেক্ষায়। আরেকটি মাংসখেকো গাছের নাম পিঙ্গিকুলার। এসব উদ্ভিদের পাতা গ্রন্থিসমৃদ্ধ ও বেশ বড়সড় হয়। এদের পাতার অগ্রভাগ থেকে আঠালো মিউসিলেজ নিঃসরিত হয় যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তন্তুর ন্যায় অংশে শিকার আটকাতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ পিঙ্গিকুলাতে এক ধরনের দুর্গন্ধ থাকে যা শিকারকে আকর্ষণে ভূমিকা রাখে। পিঙ্গিকুলার ফাঁদ দুই ধরনের গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথমটি পেডানকুলার। এটি থেকে মিউসিলেজ ও হজমকারী এনজাইমসহ এক রকম পদার্থ ক্ষরণ করে থাকে যা পাতার ওপরে ছোট ছোট তরল কণিকারূপে বিরাজ করে। এ আঠালো তরলের কণাগুলো পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। যখনই কোনো পোকামাকড় পাতায় বসে, সঙ্গে সঙ্গে পেডানকুলার গ্রন্থি আরও বেশি করে মিউসিলেজ ক্ষরণ করে পোকাটিকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। এরপরই সিসাইল নামক দ্বিতীয় গ্রন্থ। এটি একগাদা হজমকারী এনজাইম ক্ষরণ করে যা ধীরে ধীরে পোকাটির দেহকে শোষণ করে। এ ছাড়া বলা যায় নেপেন্থেসের কথা। এরা ‘মাংকি কাপ’ বা ‘ট্রপিক্যাল পিচার প্ল্যান্ট’ নামেও পরিচিত। এদের দেহের অংশবিশেষের পিচার বা কলসের মতো গঠনের কারণে এদের পিচার প্ল্যান্ট বলা হয়। এ কলসাকৃতি অংশটিই মূল ফাঁদ। এর ভিতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি প্রায়ই বানররা খেতে আসে বলে এদের আরেক নাম মাংকি কাপ। এ কলসের ওপরের অংশটি পিচ্ছিল থাকে। শুধু বানরই নয়, পানি খেতে আসা যে কোনো প্রাণী পিচ্ছিল অংশটির সংস্পর্শে এলেই কাজ হয়ে গেল! ফাঁদের নিচের অংশে থাকে কয়েকটি গ্রন্থি।  এসব গ্রন্থি দিয়ে শিকারের দেহ থেকে পুষ্টি শুষে নেয় গাছটি। ছোট প্রজাতির নেপেন্থেসগুলো সাধারণত পোকামাকড়কে শিকার করে থাকে। তবে বড় প্রজাতিগুলোকে ছোট ছোট পাখি ও ইঁদুর শিকার করে।

 

কুমিরের চেয়েও ভয়ংকর ব্ল্যাক কেইম্যান

অ্যামাজনে আছে ভয়ংকর প্রাণীদের চলাচল। কুমিরকে যতটা ভয় তার চেয়ে ঢের ভয় ব্ল্যাক কেইম্যানকে। অনেকে একে বলে কুমিরের চাচাতো ভাই। কুমিরের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর আর হিংস্র প্রাণী ব্ল্যাক কেইম্যান। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৯ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা ব্ল্যাক কেইম্যানের ওজন হতে পারে প্রায় ৪০০ কেজি। একসময় অ্যামাজন জঙ্গল থেকে এ প্রজাতিটি বিলুপ্তির পথে ছিল। কিন্তু শিকারের কঠিন আইন এদের বিলুপ্তির হাত থেকে অনেকটাই বাঁচিয়েছে। কেইম্যান জাতের অন্য কুমিরেরা যেখানে দিনে শিকারে ব্যস্ত থাকে, সেখানে ব্ল্যাক কেইম্যান বের হয় রাতে। গাঢ় রঙের চামড়া ব্ল্যাক কেইম্যানকে খুব সহজে ছদ্মবেশ ধারণ করতে সাহায্য করে। পিরানহা এদের প্রধান শিকার। তবে পিরানহা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাছও এরা ধরে। কখনো কখনো হরিণ এমনকি অ্যানাকোন্ডাকেও আক্রমণ করে বসে। টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্ল্যাক কেইম্যান অ্যামাজনের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেখে অনেকে।

 

বিশ্বের সবচেয়ে বড়  বুলেট পিঁপড়া

নাম শুনে অনেকটাই অনুমান করা যায় এ পিঁপড়া আমাদের পরিচিত পিঁপড়াগুলোর মতো নিরীহ নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিঁপড়া হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে বুলেট পিঁপড়া। অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের এ পিঁপড়াগুলো অনেকটা দেখতে বোলতা বা ভিমরুলের মতো। এরা একাকী বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে। সাধারণত এরা গাছের ভিতর বা গোড়ার দিকে বাসা বানায়। গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে এ পিঁপড়া। এরা আকারে বেশ বড়। বড় আকারের জন্য এদের হুলেও শক্তি বেশি। কামড়ালে অসম্ভব ব্যথা হয়। বুলেটবিদ্ধ হলে যেমন যন্ত্রণা হয় তার চেয়ে কম তো নয়ই- এ জন্য এদের বুলেট পিঁপড়া বলা হয়। হুলে বিষে ভর্তি থাকার কারণে বুলেট পিঁপড়াকে সবাই বেশ সমীহ করে চলে।

 

ব্ল্যাক জাগুয়ার

ব্ল্যাক জাগুয়ার পৃথিবী থেকে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে। যে কয়টি অবশিষ্ট আছে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল অ্যামাজন। এদের খাদ্য তালিকায় আছে হরিণ থেকে শুরু করে ইঁদুর। জাগুয়ার প্রায় ৮৭ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীকে যোগ করে নিয়েছে তার খাদ্য তালিকায়। দুর্ধর্ষ এ প্রাণী চলার পথে পড়লে আস্ত মানুষকে শিকার করতেও ছাড়ে না। পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েও এ প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। দক্ষ জাগুয়ার অনায়াসে সাঁতার কেটে শিকারকে ঠিকই কাবু করে ফেলে। অ্যামাজনের এ আশ্চর্য সুন্দর কিন্তু ভয়ংকর প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে। তাই বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা করছেন একে রক্ষা করার। এরা পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী এবং হিংস্র প্রাণী। দক্ষিণ আমেরিকায় এটি পরিচিত জাগুয়ার নামে। আফ্রিকা এবং এশিয়ায় এদের পাওয়া যায়। আর উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে এরা পরিচিত পুমা হিসেবে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, জীবিত বাঘদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে দ্রুতগতির এবং এদের শিকারের পিছু লেগে থেকে তাকে মারার আগ পর্যন্ত তাড়া করার দারুণ গুণ রয়েছে। একে নিয়ে ভয় পাওয়ার আরেকটি কারণ হলো- এদের হিংস্রতা। সাধারণত বাঘ জাতীয় প্রাণীরা আক্রমণাত্মক হয় না। শুধু ক্ষুধা পেলেই তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে দেখা যায়। সেদিক থেকে জাগুয়ার অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। ক্ষুধা না পেলেও জাগুয়ার যদি মনে করে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বা তার আবাসস্থলের দখল নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হচ্ছে তাহলে সে শিকারের দিকে ছুটে যায়। তার শিকারের তালিকায় আরও হিংস্র প্রাণীরাও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছে।

 

ইলেকট্রিক ইল

ইলেকট্রিক ইলের মতো ভয়ানক কিছু জলতলে দ্বিতীয়টি নেই। লম্বায় প্রায় ৬ ফুট এবং ২০ কেজি ওজনের ইলেকট্রিক ইল এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ভোল্ট মাত্রার ইলেকট্রিক শক দিতে পারে। অ্যামাজনের স্বাদু পানিতে এদের অবাধ বিচরণ। তবে বেশির ভাগ সময় এরা জলাশয়ের কর্দমাক্ত তলদেশে বাস করে। যদিও পানির ওপরেও এদের দেখা যায়। ছোট প্রাণী শিকার করতে গিয়ে ইলেকট্রিক শক ব্যবহার করে থাকে বলে এদের অনেকেই ইলেকট্রিক ইল ডেকে থাকে। তবে কোনো কারণে যদি এ শক মানুষের গায়ে লাগে তবে সে হƒদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। ইলেকট্রিক ইলকে কাবু করতে তাদের সবটুকু ইলেকট্রিক শক বের করে দেওয়া ছাড়া গতি নেই।

 

পয়জন ডার্ট ব্যাঙ

পয়জন ডার্ট ফ্রগ অ্যামাজনে বসবাসকারী ব্যাঙদের সেরা প্রতিনিধি। এ ক্ষুদ্রাকৃতির উজ্জ্বল রঙের ব্যাঙ শিকারিদের দূরে রাখার এক সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত। এর বিষ শিকারিরা শিকারের জন্য ব্যবহƒত তীরের মাথায় লাগায়- এ কারণেই বিষাক্ত প্রাণীটির নাম দেওয়া হয়েছে পয়জন ডার্ট ব্যাঙ। ব্যাঙগুলো আকৃতিতে বেশ ক্ষুদ্র। সোনালি রঙের পয়জন ডার্ট ব্যাঙ মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, কিন্তু এর বিষ ১০ জন শক্ত-সমর্থ মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এ ব্যাঙের বিষ সংগ্রহ করে তা চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বিষ সংগ্রহ করারও চেষ্টা করেছে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। বেদনানাশক হিসেবে পয়জন ডার্ট ব্যাঙের বিষ থেকে  তৈরি ওষুধ আবিষ্কারের কাজ চলছে ধীরে ধীরে। পয়জন ডার্ট ব্যাঙ তার শিকারকে ধরতে বিষের ব্যবহারটা ভালো করেই জানে।

 

আরও যত ভয়ংকর প্রাণী

ফিশিং বাদুড়

বাদুড়ের বদনাম হয়েছে কাল্পনিক রক্তচোষা বা ভ্যাম্পায়ারের কারণে। বাদুড় চোখে দেখে না শুধু কানে শুনে পথচলা বাদুড় অ্যামাজনের জন্ম থেকেই আছে। তবে ফিশিং বাদুড় অ্যামাজনের নিজস্ব কিছু। অ্যামাজন ছাড়া এদের পৃথিবীর অন্য কোথাও প্রায় দেখাই মেলে না। এরা পোকামাকড় খাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাদুড় হিসেবে এ প্রজাতির বাদুড়দের আলাদা খ্যাতি আছে। এদের নখ অনেকটা বাজপাখির মতো। এরা নখ দিয়ে শিকারকে তুলে নিতে বেশ পারদর্শী। এদের বুলডগ ব্যাটও বলে। কারণ এদের কুকুরের মতো নাক রয়েছে। রাতে এরা বিশেষ ক্ষমতা বলে মাছকে আক্রমণ করে।

 

ব্রাজিলিয়ান মাকড়সা

মাকড়সা আসলে অমেরুদন্ডী শিকারি কীট। আট পা-ওয়ালা মাকড়সার একটি বিশেষ গুণ হলো এরা জাল তৈরি করে এবং জালের মাধ্যমে অন্যান্য কীটপতঙ্গ শিকার করে। তবে সব মাকড়সাকে ছাড়িয়ে যায় ব্রাজিলিয়ান মাকড়সা। এর কামড় খুব বিষাক্ত। এরা জাল বুনে না। লাফিয়ে শিকার ধরে। এদের চেনার উপায় হলো নিচ দিকে বাঁকা দাঁড়া যা সোজা ওপর-নিচ নড়ে। মাকড়সাটি বিখ্যাত এর সৌন্দর্যের জন্য, পাশাপাশি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিষধর মাকড়সা এটি। এর একটি কামড় একজন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, তৃতীয়বার কামড়ানোর পর মাকড়সাটি তেমন একটা বিষ পুনরুৎপাদন করতে পারে না। ষষ্ঠবারের কামড়ে মাকড়সাটি যে পরিমাণ বিষ ঢালে তা খুবই নগণ্য। ব্রাজিলিয়ান মাকড়সা এতই বিষাক্ত, ফটোগ্রাফাররাও এর কাছে ঘেঁষে ছবি তুলতে ভয় পান। তবে ব্রাজিলিয়ান মাকড়সা শিকার ধরা ছাড়া অকারণে আক্রমণাত্মক নয়।

 

র‌্যাটল স্নেক

সাপ এমনিতেই বেশ আতঙ্কজনক প্রাণী। কিন্তু গোখরা বা র‌্যাটল স্নেকের কামড়ের ভয় সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের বিষয়। অ্যামাজন জঙ্গল বিভিন্ন ধরনের সাপে পরিপূর্ণ। সেখানে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর সাপ র‌্যাটল স্নেক। লাতিন আমেরিকার সাপের কামড়ের মধ্যে ৯ শতাংশ সাপের কামড়ই র‌্যাটল স্নেকের। প্রজাতিভেদে র‌্যাটল স্নেকের কামড়ের ধরনও ভিন্ন হয়। এ জন্য প্রায়শই অনেক সময় ডাক্তারদেরও সঠিক চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয়। হঠাৎ করে কামড় চিনে নিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে না পারলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এ সাপ পাওয়া যায়। বেশি মেলে অ্যামাজনের সাভানা অঞ্চলে।

বিস্ময় কিনকাজো

কিনকাজোকে অ্যামাজনের বিস্ময় বললে কম বলা হবে না। অ্যামাজনের যত বিস্ময়কর প্রাণী আছে তাদের একটি কিনকাজো। কিনকাজো আসলে রেকনের মতো। এ প্রাণীটির আছে সোনালি নরম মোটাসোটা ঘন লোম এবং আরও রয়েছে একটি লম্বা লেজ যা দিয়ে তারা গাছকে শক্ত করে আটকে ধরে রাখতে পারে। এদের মধু ভাল্লুুকও বলে। গাছের ডালে এরা বাস করে। সাধারণত ফলমূল খেয়ে বাঁচে। এদের জিহ্বাটি থাকে তাদের শরীরের তুলনায় বেশ লম্বা। গাছের ঝুলন্ত ফলকে ধরতে এবং ফুলের মধু চাটতে এ ৫ ইঞ্চি লম্বা জিহ্বা তারা ব্যবহার করে। এত বড় জিহ্বা থাকার কারণে এদের সহজেই বনে চিনে নেওয়া যায়। তবে এ পরিচিতি তাদের অস্তিত্বকে আরও সংকটে ফেলে দিয়েছে। শিকারির প্রথম পছন্দের তালিকায় তারা চলে এসেছে।

সর্বশেষ খবর