রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীর্ষ ধনীদের যত ব্যবসা

আবদুল কাদের

শীর্ষ ধনীদের যত ব্যবসা

তারা সবাই শীর্ষ ধনী। শত শত বিলিয়ন ডলারের মালিক। বলা হয়ে থাকে, তাদের হাতে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ। এই ধনীদের প্রায় সবাই সেলফ-মেইড। অর্থাৎ নিজের চেষ্টায় তারা বিপুল অর্থ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পেলেও তা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছেন এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাম্রাজ্য গড়েছেন। এদের প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী টাইকুন। শীর্ষ ধনীরা কে কোন ব্যবসা থেকে গড়লেন টাকার পাহাড়- সেসব নিয়ে আজকের রকমারি।

রকেট, স্যাটেলাইট ও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবসায় শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক

প্রযুক্তিবিশ্ব কিংবা করপোরেট জগৎ- যাই বলা হোক, ইলন মাস্কের মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তারুণ্যের আদর্শ। এখন পর্যন্ত তিনি আটটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এগুলো হলো- টেসলা, স্পেসএক্স, হাইপারলুপ, ওপেন এআই, নিউরালিংক, দ্য বোরিং কোম্পানি, জিপ টু, পেপাল। কখনো টেসলা, কখনো বা স্পেসএক্স নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এই প্রযুক্তিবিদ।  সবশেষ ছোট্ট টুইট-পাখিকে কিনে গোটা বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেন। যদিও মাইক্রোব্লগিং সংস্থা টুইটার কিনে নেওয়ার পর থেকে ইলন মাস্কের অপর সংস্থা টেসলার শেয়ারে পতন হওয়া শুরু করে। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিভাবান মাস্ক ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন প্রযুক্তির পোকা। কম্পিউটার কোডিং শিখেছেন নিজে নিজেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি ‘ব্লাস্টার’ নামে একটি ভিডিও গেম বানিয়েছিলেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় জিপ টু নামের কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালে সেটি বিক্রি করেন ৩০ কোটির বেশি ডলারে। এরপর অনলাইনে লেনদেনের জন্য এক্স ডটকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরবর্তী সময়ে পেপাল নামে পরিচিত হয়। ২০০২ সালে ১৫০ কোটি ডলারে সেই প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেন তিনি। এরপর একের পর এক প্রযুক্তি এনে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ইলন মাস্ক। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ সংস্থা টেসলা। তিনি এমন এক গাড়ি তৈরি করেছেন যাতে গ্যাসের দরকার পড়ে না, চালক না থাকলেও চলে। এক কথায়, গাড়ির জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। টেক্সাসভিত্তিক এই সংস্থা মূলত ইলেকট্রিক গাড়ি, সোলার প্যানেল, সোলার রুফ টাইলসহ বেশ কিছু পরিচ্ছন্ন শক্তি সংক্রান্ত পণ্য উদ্ভাবন করে। একই বছর প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স। রকেট উৎক্ষেপণে এই প্রতিষ্ঠান যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এর বাইরেও হাইপারলুপ, ওপেন এআই, নিউরালিংক, দ্য বোরিং কোম্পানির মতো সংস্থাগুলোর সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানুষের জীবনযাপনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।

 

অভিজাত পোশাক আর বিলাসী প্রসাধনী পণ্যের ব্যবসা রয়েছে আর্নল্ট ও তার পরিবারের

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল ফ্যাশন পণ্য কোম্পানি এলভিএমএইচ মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট। একই সঙ্গে তিনি সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরের তকমা এখন তারই দখলে। তবে সদা হাসোজ্জ্বল মানুষটি বরাবরই গণমাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পছন্দ করেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন রিটেইল প্ল্যাটফরম অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসকে পেছনে ফেলে ধনী ব্যক্তিদের শীর্ষে জায়গা করে নেন বার্নার্ড আর্নল্ট। শুধু অ্যামাজনের মালিক নন, বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী এখন স্পেসএক্স ও টেলসার মালিক ইলন মাস্ককেও বার্নার্ড টপকে গেছেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, বার্নার্ড আর্নল্ট মোট সম্পদের নিরিখে এই নীল গ্রহের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। সূচক অনুসারে, তার মোট সম্পদের অঙ্ক ২১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শীর্ষ এই ধনকুবেরের ব্যবসার ঝুলিতে রয়েছে লুই ভিটন, সেফোরাসহ ৭৫টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড। বার্নার্ড আর্নল্ট বিলাসবহুল ব্র্যান্ড লুই ভিটনের প্রায় অর্ধেকের মালিক। ১৯৮৯ সালে তিনি এলভিএমএইচ-এ নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারিত্ব পান। বিলাসপণ্যের সাম্রাজ্য এলভিএমএইচের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। বিখ্যাত এই সংস্থার অধীনে লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, বুলগারি, টিফানি, সেফোরা, ট্যাগ হুয়ের, মোয়েলিস ও শ্যান্ডন শ্যাম্পেনের এবং ডম পেরিগনন শ্যাম্পেনের মতো নামিদামি ব্র্যান্ড রয়েছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স-এর তথ্য অনুসারে, বার্নার্ড আর্নল্ডের বেশির ভাগ সম্পদ আসে ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের অংশীদারিত্ব থেকে; এটি এলভিএমএইচের ৪১.৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের ৯৭.৫ শতাংশ মালিকানা বা শেয়ারের মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট ও তার পরিবার। বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন, জুয়েলারি আর অ্যালকোহলের যত বড় বড় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের নাম আপনি জানেন তার প্রায় সব কটিরই মালিক তিনি। প্রায় ৩৫ বছর আগে এলভিএমএইচ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বার্নার্ড আর্নল্ট। কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ারের মালিক তিনি নিজেই। ব্যক্তিজীবনে দুবার বিয়ে করেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। পাঁচ সন্তানের বাবা তিনি।

 

পণ্য বিক্রির বড় অনলাইন বাজারের মালিক বেজোস

ই-কমার্স জগতে পথিকৃত হিসেবে পরিচিত জেফ বেজোস। বিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা। কয়েক বছর আগেও এই মানুষটি শীর্ষ ধনকুবেরের দৌড়ে ছিলেন সবার শীর্ষে। তবে বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১৪ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আমাজনডটকম। তখনো সাধারণ মানুষ বুঝতেনই না অনলাইন মার্কেটিং আসলে কী? আর অনলাইনে অর্ডার করলে পণ্য হাতে পৌঁছে যাবে! এমন ভাবনা যেন ছিল কল্পনাতীত। তবে সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন জেফ বেজোস। মূলত একটি গ্যারেজ থেকে তিনি এর যাত্রা শুরু করেছিলেন। এখন তার সাম্রাজ্য শুধু অ্যামাজন ঘিরেই নয়; তার আছে সংবাদপত্র, রকেট কোম্পানি, কুপন ওয়েবসাইট, গ্রোসারিসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের রয়েছে ১৫ কোম্পানি। সেগুলো হলো- জ্যাপোস, এলিমেন্টাল টেক, সউক ডটকম, ব্লু অরিজিন, ওয়াশিংটন পোস্ট, হোল ফুডস, আইএমডিবি, কিভা সিস্টেমস, অ্যালেক্সা, ডিপিরিভিউ, ফেব্রিক ডটকম, উট ডটকম, গুডরিডস, টুইচ ও অডিবল। ব্যক্তিগত সম্পদের বেশির ভাগই অ্যামাজনের শেয়ার; যা তার সম্পদ ৯০ শতাংশ বাড়াতে অবদান রেখেছে। বাকি ১০ শতাংশের উৎস স্পেস কোম্পানি ব্লু অরিজিন এবং শীর্ষ গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। ইন্টারনেটে পুরনো বই বিক্রি থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রথম ‘ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি’ হয়েছে তার অ্যামাজন। ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা হিসেবে ওয়ালমার্টকে ছাড়িয়ে যেতে পারে অ্যামাজন।

 

প্রযুক্তি ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা করেন এলিসন

সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও প্রোগ্রামিং-এ সমানভাবে এগিয়েছেন ল্যারি এলিসন। তিনি সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। আমেরিকার এমডাল করপোরেশনে ডাটাবেজ (সিআইএর জন্য ডেটাবেজ) তৈরি করে ক্যারিয়ার শুরু করেন ল্যারি এলিসন। তিনি বর্তমানে ১০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। এরপর তিনি ১৯৭৭ সালে ওরাকল নামে ডেটাবেজ সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ওরাকলের প্রাথমিক নাম ছিল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি। ১৯৯০ সালে ওরাকল করপোরেশন দেউলিয়া হতে বসেছিল। সে পরিস্থিতি থেকে ওরাকলকে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন ল্যারি এলিসন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এটি পরিচালনা করেছেন। ওরাকল হলো- বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সফটওয়্যার কোম্পানি, যা বিভিন্ন ধরনের ক্লাউড কম্পিউটিং প্রোগ্রামের পাশাপাশি জাভা ও লিনাক্স কোড এবং ওরাকল এক্সডাটা কম্পিউটিং প্ল্যাটফরম প্রদান করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওরাকল বেশ কিছু বড় কোম্পানি কিনে নেয়। এদের একটি ছিল সান মাইক্রোসিস্টেম। যা কেনা হয় ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এলিসন হাওয়াইয়ের দ্বীপ লানাই কিনে নেন ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে। ২০২০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওই দ্বীপে চলে যান। এলিসন টেসলাতেও বিনিয়োগ করেছেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

৬০টিরও বেশি কোম্পানির মালিক ওয়ারেন বাফেট

ওয়ারেন বাফেট, সর্বকালের সেরা বিনিয়োগকারী। বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সফলতম ব্যক্তির কথা বলতে গেলে সবার আগে ওয়ারেন বাফেটের কথা বলতেই হবে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অল্প বয়স থেকে বিনিয়োগে উৎসাহী ছিলেন ওয়ারেন বাফেট। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দাখিল করেন তার প্রথম ট্যাক্স রিটার্ন। এক সময় হকার ছিলেন তিনি। করেছেন সংবাদপত্র, বই বিক্রির কাজ। এমনকি মুদি দোকানের কর্মচারীর কাজও করেছিলেন তিনি। সেখান থেকে ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ওয়ারেন বাফেটের। একসময় বনে যান বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারী। জেদের বশে লোকসানের মুখে বন্ধ হতে যাওয়া বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কিনে একে পৃথিবীর সেরা ১০টি কোম্পানির একটি বানিয়েছেন। ওয়ারেন বাফেট বিখ্যাত বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে, বীমা কোম্পানি জিকো, ডুরসেল এবং ডেইরি কুইনের মতো ৬০টি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

 

সফটওয়্যারের ব্যবসা করে বিল গেটস দখল করেন বিশাল বাজার

১৩ বছর শীর্ষ ধনীর স্থান ধরে রেখেছিলেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তার হাত ধরেই বিশ্ব দেখে কম্পিউটিং সফটওয়্যার মাইক্রোসফট। ১৯৭৫ সালে বিল গেটস ও পল এলেন একসঙ্গে ‘মাইক্রোসফট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালে তারা তৈরি করেন অপারেটিং সফটওয়্যার এমএস-ডস। তাদের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের আস্থা তৈরি করে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাজারে আসে এবং ব্যাপক সাড়াও ফেলে। ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে জায়গা করে মাইক্রোসফট। ১৯৯০ সালে সংস্থাটি অপারেটিং সফটওয়্যারের পাশাপাশি নিজেদের বাণিজ্য প্রসারে একের পর এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসে। ২০০০ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান বিল গেটস। তত দিনে সাফল্যের আকাশ ছুঁয়েছে মাইক্রোসফট। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

 

মাইক্রোসফট তাকে করেছে বিশ্বের অন্যতম ধনী

মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিভ বলমার। তিনি ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের ব্যবসা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বিল গেটসের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন তিনি। একই তলায় থাকতেন দুজন। এরপর দুজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিচালনা করেন মাইক্রোসফট কোম্পানি। বলমার ছিলেন মাইক্রোসফটে বিল গেটসের নিয়োগকৃত ৩০তম কর্মী। তাকে প্রথমে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোম্পানিতে মালিকানার কিছু অংশও দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে যখন মাইক্রোসফট ইনকরপোরেটেড হয়, তখন তার শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ শতাংশ। তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। এ ছাড়া মাইক্রোসফটের হয়ে ২০১১ সালে বলমার ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে স্কাইপ কেনার তদারকি করেছিলেন। বলমার মাইক্রোসফটের আনুমানিক ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক, যা তাকে বৃহত্তম এই সফটওয়্যার জায়ান্টের ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডার করে তোলে। মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপারস বাস্কেটবল কিনে নিয়েছিলেন। যে কোনো এনবিএ টিমের জন্য ওই দাম ছিল সেই সময়ের একটি রেকর্ড। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় দশম অবস্থানে আছেন স্টিভ বলমার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮০ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার বাদশাহ কার্লোস স্লিম হেলু

১৯৪০ সালে মেক্সিকোয় জন্ম নেওয়া কার্লোস স্লিম হেলু বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনকুবের। লাতিন আমেরিকার টেলিকম কোম্পানি আমেরিকা মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করেন স্লিম। ১৯৯০ সালে মেক্সিকোর ফোন কোম্পানি টেলমেক্সের অংশীদারিত্ব কিনে নেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল তার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন ফ্রান্স টেলিকম এবং সাউথ ওয়েস্টার্ন বেল করপোরেশনের সঙ্গে।

এ ছাড়াও স্লিম রিয়েল এস্টেট, ভোগ্যপণ্য, খনি উত্তোলনসহ নানা ব্যবসায় সম্পৃক্ত। এক সময় তিনি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ ১৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন। স্লিম এবং তার পরিবার লাতিন আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম গ্রুপ গ্রুপো কার্সোর ৭৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, মেক্সিকোর এই ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

টেলিকম, জ্বালানিসহ নানা ব্যবসায় সফল আম্বানি

ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৬৬ বছর বয়সী মুকেশ আম্বানি। স্কুলশিক্ষক বাবার পরিবারে ছেলেবেলা কেটেছে অভাব-অনটনে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে মুকেশ আম্বানি নেমে পড়েন কর্মের সন্ধানে। পাড়ি জমান ইয়েমেনের বন্দরনগরী এডেনে। সেখানে একটি তেল কোম্পনিতে ৩০০ রুপির বিনিময়ে কাজ শুরু করেন। কাজ ছিল গ্যাস ভরা ও অর্থ আদায় করা। চাকরি করার সময় ভালোভাবে রপ্ত করেন তেলের ব্যবসা। এরপর চলে আসেন মাতৃভূমি ভারতে। একমাত্র এশীয় হিসেবে তিনি আছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায়। আশির দশকের শুরুর দিকে পারিবারিক ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় মুকেশ আম্বানির। ১৯৮০ সালে একজন ক্ষুদ্র বস্ত্রকলের মালিক হিসেবে তিনি সুতার ব্যবসা শুরু করেন। তিলে তিলে গড়ে তোলেন ভারতীয় শীর্ষ এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা করা এই কোম্পানি চালান তিনি। তার ব্যবসা রয়েছে পেট্রকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাস, টেলিকম ও খুচরা পণ্য বিক্রয় খাতে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানায় রয়েছে নেটওয়ার্ক ১৮, ফোর্বস মিডিয়ার লাইসেন্স এবং নিউইয়র্কের ম্যান্ডারিন অরিয়েন্টাল হোটেল। রিলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা তার পিতা ধীরুভাই আম্বানি। ২০০২ সালে পিতার মৃত্যুর পর আম্বানি এবং তার ছোট ভাই অনিল পারিবারিক ব্যবসা ভাগ করে নেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যমতে, ভারতীয় এই শীর্ষ ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের টাকার পাহাড়

কম্পিউটার বিজ্ঞানী ল্যারি পেজ। তালিকায় থাকা অন্যদের মতো ল্যারি পেজও একটি ছাত্রাবাসে তার খ্যাতির পথে যাত্রার সূচনা করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পেজ ও তার বন্ধু সের্গেই ব্রিন ইন্টারনেট ডেটা উন্নত করার ধারণা নিয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ও সের্গেই ব্রিন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ল্যারি পেজ হলেন পেজ র‌্যাংকের উদ্ভাবক। তা গুগলের সার্চ র‌্যাংকিং এলগরিদম হিসেবে বেশি পরিচিত। পেজ ২০০১ সাল পর্যন্ত কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসেবে কাজ করেছিলেন। আবার ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ছিলেন তিনি। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী ল্যারি পেজের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৯ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সর্বশেষ খবর