বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধনী লেখকদের গল্প

রণক ইকরাম

সৃজনশীলতার আলোয় প্রতি মুহূর্তে যারা পৃথিবীর কোটি পাঠককে মুগ্ধ করে রাখেন, সেসব লেখক বা সাহিত্যিকের অর্থনৈতিক আয়টা কেমন? অনেকের ক্ষেত্রেই টাকা-পয়সার বিষয়টি খুব একটা সুবিধাজনক না হলেও অনেকেই আবার করেছেন বাজিমাত। কেবল একটি বই লিখেই অনেকের ভাগ্য পাল্টে গেছে। কোনো কোনো লেখক আবার কয়েকটি বই লিখেই পরিণত হয়েছেন দেশের শীর্ষ আয়ের মানুষে।  আমাদের বাংলাদেশে এমন নজির খুব বেশি না থাকলেও এ ক্ষেত্রে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের নামটি উল্লেখ করা যেতে পারে। কেবল লিখেই প্রচুর পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বের আলোচিত কয়েকজন ধনী লেখককে নিয়েই আমাদের এ আয়োজন।

 

নন-ফিকশন ও রোমান্স উপন্যাসে জনপ্রিয় জেমস প্যাটারসন

জেমস প্যাটারসন, সাহিত্য অঙ্গনে অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। এই থ্রিলার সায়েন্স ফিকশন লেখক আয়ের দিক থেকে ২০১২ সালের আগেও দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ২০১২ সালে প্রথম শীর্ষ স্থানে উঠে আসেন জেমস প্যাটারসন। আর বিগত বছরগুলোয় বই লিখে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করেছেন জেমস প্যাটারসন। তার লেখা অ্যালেক্স ক্রস সিরিজের বইগুলো প্রায় ২৫ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। জনপ্রিয় এ কথাসাহিত্যিকের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নিউবার্গে। মূলত থ্রিলার ও সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসেবে পরিচিত হলেও প্যাটারসন কখনো কখনো নন-ফিকশন এবং প্রেমের উপন্যাসও লিখে থাকেন। তার লেখা ‘ম্যাক্সিমাম রাইড’, ‘ড্যানিয়েল এক্স’ এবং ‘উইচ অ্যান্ড উইজার্ড’ সিরিজের বইগুলোও দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তিনি ছিলেন একটি নামকরা বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপিরাইটার। ১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি লেখালেখির দিকে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। ৩৩ বছরের লেখক জীবনে তিনি এ পর্যন্ত ৬৫টি উপন্যাস লিখেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং বইয়ের তালিকায় উপর্যুপরি ১৯ বার উঠেছে তার লেখা উপন্যাসের নাম। একজন লেখক হিসেবে নিউইয়র্ক টাইমসের হার্ড কভার বেস্ট সেলিং শিরোপা সবচেয়ে বেশিবার (মোট ৫৬) জেতার নজির গড়েন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্টিফেন কিং, জন গ্রিশাম ও ডন ব্রাউনের মতো জনপ্রিয় লেখকের বই যৌথভাবে যতটা বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় প্যাটারসনের উপন্যাস। জনপ্রিয় এই লেখক ইতোমধ্যে দি এডগার অ্যাওয়ার্ড, দি বিসিএ মিস্ট্রি গিন্ডস থ্রিলার অব দ্য ইয়ার, দি ইন্টারন্যাশনাল থ্রিলার অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং দ্য চিল্ড্রেনস চয়েস বুক অব অ্যাওয়ার্ড ফর আদার অব দ্য ইয়ারের মতো পুরস্কার লাভ করেছেন। জেমস প্যাটারসন হলেন প্রথম লেখক, যিনি একই সঙ্গে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বয়স্ক ও ছোটদের বইয়ের বেস্ট সেলারের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন এবং ‘নভেল ট্রেকার্স টপটেন’-এর তালিকায় একই সময় ছিল তার দুটি বই।

গত বছর আগস্টে ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে বিশ্বের দামি ১০ লেখকের যে তালিকা বেরিয়েছে, তার শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, প্যাটারসন এ বছর সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন ৮৪ মিলিয়ন ডলার। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত প্যাটারসনের আয় ৭ কোটি ডলার, বাংলাদেশের মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যদি কমপক্ষে ২০টি বই বিক্রি হয় তাহলে এর একটি প্যাটারসনের। ৬৪ বছর বয়সী এই লেখক মূলত শিশুদের জন্যই লেখেন। মাঝেমধ্যে চলচ্চিত্র রিভিউ লিখে থাকেন অনলাইনে। প্যাটারসন বর্তমানে ১৭টি বই লিখে দেওয়ার জন্য হ্যাচেট প্রকাশনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। দুই বছর আগে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। গত বছর তার ২০টি বই ছিল বেস্ট সেলারের তালিকায়। গত বছর তার বইয়ের ১ কোটি কপি বেশি বিক্রি হয়েছে। প্রকাশনা সংস্থা অ্যামাজন জানায়, তার ‘কিন্ডল’ বইটিই বিক্রি হয়েছে ১০ লাখের বেশি। আমেরিকান লেখক জেমস প্যাটারসন প্রতি বছর গড়ে আটটি বই লিখে থাকেন। প্রধানত থ্রিলার ও শিশুতোষ উপন্যাস লেখেন তিনি। গত দুই বছরে প্রকাশককে ৫০ কোটি ডলার মুনাফা অর্জনে সাহায্য করেছেন তিনি। ওই বিশাল অঙ্কই ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে সবচেয়ে বেশি আয়ের লেখকদের তালিকার শীর্ষে তাকে পৌঁছে দিয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে ওই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠেছিল তার নাম। ওই বছর শীর্ষে ছিলেন ‘হ্যারি পটার’ রচয়িতা জে. কে. রাউলিং।

 

সুজানের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল টেলিভিশন দিয়েই

নারী লেখকদের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী সুজান কলিন্স। ২০১১ সালে প্রকাশিত সুজানের ‘হাঙ্গার গেমস’ বিক্রি হয়েছে ৯০ লাখ কপি। আলোচিত হয়েছে উপন্যাসটি নিয়ে বানানো ছবিও। গল্পের স্বত্ব বিক্রি থেকে পেয়েছেন ৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা; প্রতি সপ্তাহে পাচ্ছেন ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ১৯৬২ সালের ১০ আগস্ট হার্ডফোর্ডে জন্ম নেন সুজান কলিন্স। তিনি ছিলেন একজন আমেরিকান বিমান কর্মকর্তার মেয়ে। সুজানের বাবা ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সামরিক অফিসারের কন্যা হওয়ার কারণে সুজান এবং তার পরিবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ফলে সুজানের পারিপার্শ্বিকতা ছিল অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। টেলিভিশন লেখিকা হিসেবে পরিচিত সুজানের ক্যারিয়ারের শুরুটাও হয়েছিল টেলিভিশন দিয়েই। ১৯৯১ সালে ছোটদের টেলিভিশন অনুষ্ঠানের লেখিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন কলিন্স। এরপর আস্তে আস্তে লেখালেখির ভুবনে নিজের একটা শক্ত ভিত গড়ে তোলেন সুজান। শুধু তাই নয়, জনপ্রিয়তার পারদটাকেও আস্তে আস্তে করে তুলেছেন ঊর্ধ্বমুখী। তার বিখ্যাত সিরিজ হচ্ছে নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলিং সিরিজ। ‘দ্য আন্ডার ল্যান্ড ক্রোনিকলস’ (পাঁচটি বই) এবং ‘দ্য হাঙ্গার গেমস ট্রিলজি’ (তিনটি বই) হচ্ছে তার বিখ্যাত বই। নিজের কাজের জন্য ছোটবেলা থেকেই অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত কলিন্স এখনো অবস্থান করছেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

 

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাউলিং

তার গল্পটা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। একটা সময় ছিল যখন বেঁচে থাকার জন্য দুমুঠো অন্নের জোগান করতেও কষ্ট হতো তার। আর সেই জায়গা থেকে বই লিখে নিজের ভাগ্য পাল্টে ফেলেছেন তিনি। বলা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাউলিংয়ের কথা। কেবল লেখকদের মধ্যেই নয়, বিশ্বে শীর্ষ আয়ের তারকাদের মধ্যেই তার অবস্থান ওপরের দিকে। ফোবর্স ম্যাগাজিনের গত বছরের শীর্ষ আয়ের লেখকদের মধ্যেও রয়েছেন রাউলিং। তবে আরেকটি জায়গায় অন্য সবাইকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। উঠে এসেছেন ফোর্বস প্রকাশিত ১০০ ধনী সেলিব্রেটির তালিকায়। এ ক্ষেত্রে ফোর্বসের হিসাব মতে রাউলিংয়ের আয় ৩০০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার (আনুমানিক ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা)। ২০০৭ সালের এ তালিকায় জে কে রাউলিংয়ের অবস্থান ছিল ৪৮তম। টাইম ম্যাগাজিন ২০০৭ সালের পার্সন অব দি ইয়ারে তাকে রানারআপ ঘোষণা করে। এখানেই শেষ নয়। ইংল্যান্ডের এডিনবার্গ শহরের পক্ষ থেকে সম্প্রতি তাকে দেওয়া হয়েছে আরেকটি সম্মাননা। যা কিনা এডিনবার্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। আর সেটাও তাকে দেওয়া হয় সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য। ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই ইংল্যান্ডের দক্ষিণে গ্লুসেস্টারশায়ারে জে কে রাউলিংয়ের জন্ম। অনেকটা গ্রাম্য পরিবেশেই তার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই গল্প পড়া আর গল্প শোনার প্রতি আলাদা একটা মোহ ছিল তার। এরপর যখন আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলেন, তখন লেখক হওয়ার একটা সুপ্ত বাসনা মনের ভেতর আবাস গড়ল। কিন্তু ওটুকুই। মনের ভেতরের কথাটা কাউকে কখনো খুলে বলেননি। পড়াশোনার ক্ষেত্রে অবশ্য নিজের মেধার প্রমাণটা রাখলেন বেশ ভালোভাবেই।

জীবনের নানা পর্যায়ে অনেক জায়গায় চাকরি করেছেন রাউলিং। বয়স যখন ২৬, তখন তিনি চলে যান পর্তুগালে। ওই সময় পর্তুগিজ সাংবাদিক জর্জ অ্যারান্টেসকে বিয়ে করেন। ১৯৯৩ সালে আগস্টে রাউলিংয়ের কোলজুড়ে জন্ম নিল মেয়ে জেসিকা।

হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম গল্পটি ১৯৯৫ সালে লেখা শেষ করলেও এই চরিত্রটির আইডিয়া তার মাথায় আসে প্রায় পাঁচ বছর আগে। লোকজনে ভর্তি এক পাতাল ট্রেনে চড়ে ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন যাচ্ছিলেন রাউলিং। এই প্রচ- ভিড় এবং বিরক্তিকর জায়গায় হঠাৎ করেই তার কল্পনার জগতে উঁকি দিল হ্যারি পটার চরিত্রটি।

এরপরই আস্তে আস্তে লেখা শুরু করেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাউলিং সকালে লিখতেন ও বিকালে এবং রাতে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৯৫ সাল নাগাদ স্বামী অ্যারান্টেসের সঙ্গে তার বনিবনা না হওয়ায় ছোট্ট জেসিকাকে নিয়ে রাউলিং চলে আসেন স্কটল্যান্ডের এডিনবরায়।

প্রথম দিকে নিজের বাচ্চার খরচ সামলানোর সামর্থ্য রাউলিংয়ের ছিল না। এ কারণে তিনি চলে গেলেন সরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে, আর এরই ফাঁকে চলতে থাকল লেখা। পরে অবশ্য তিনি স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পান। লেখালেখি কিন্তু তার থেমে থাকেনি। কখনো কখনো ক্যাফের মধ্যে খুব দ্রুত লিখতেন। ওই সময় হয়তো ছোট্ট মেয়ে জেসিকা ঘুমিয়ে থাকত তার পাশে। এভাবেই জে কে রাউলিংয়ের হাতে একসময় জন্ম নিল শিশুসাহিত্যের অমর চরিত্র হ্যারি পটার। রাউলিংয়ের চূড়ান্ত পা-ুলিপি প্রথম দিকে বেশ কয়েকজন প্রকাশক বাতিল করে দেন। অবশেষে ব্লুমসবারি প্রেস ১৯৯৬ সালে তার পা-ুলিপিটি কেনে। এরপর ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন প্রকাশিত হয় হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বই ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি ফিলসফারস স্টোন’। বইটি ওই ছোট্ট ছেলেটিকে নিয়ে যে ১১ বছর বয়সে তার জাদুকরী ক্ষমতার পরিচয় পায়।

আর এর পরেই সে ডাকিনী ও মায়াবিদ্যার স্কুল হগওয়ার্টসে ভর্তি হয়। বইটি প্রকাশের পরের বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা স্কলাস্টিকা ইনকরপোরেটেড কিনে নেয় ও আমেরিকায় ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি সরসারার্স স্টোন’ নামে প্রকাশিত হয়।

রাউলিংয়ের ইচ্ছা ছিল হ্যারি পটারের গল্পগুলো তিনি সাতটি বইয়ের সিরিজে লিখবেন। প্রতি বছর একটা বই- হগওয়ার্টসে হ্যারির ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে মাধ্যমিক স্কুলজীবনের প্রতিটি বছর। দ্বিতীয় বই ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি চেম্বার অব সিক্রেটস’ প্রকাশিত হয় ব্রিটেন থেকে ১৯৯৮ সালে এবং এর পরের বছর আমেরিকায়। এ বইটি লিখতে স্কটিশ আর্ট কাউন্সিলের কাছ থেকে অনুদান পেয়েছিলেন রাউলিং। তৃতীয় ভলিউম, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি প্রিজনার অব আজকাবান’ দুই দেশেই একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। হ্যারি পটারের বইগুলো বাংলাসহ প্রায় ৩০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এরপর একে একে বাজারে আসে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি গবলেট অব ফায়ার’, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি অর্ডার অব দি ফিনিক্স’ ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি হাফ ব্লাড প্রিন্স, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি ডেথলি হলোস’।

এ সিরিজের বই নিয়ে এরই মধ্যে ছয়টি জনপ্রিয় মুভি তৈরি হয়েছে : হ্যারি পটার অ্যান্ড দি সরসারার্স স্টোন, হ্যারি পটার অ্যান্ড দি চেম্বার অব সিক্রেটস, হ্যারি পটার অ্যান্ড দি প্রিজনার অব আজকাবান, হ্যারি পটার অ্যান্ড দি গবলেট অব ফায়ার ও হ্যারি পটার অ্যান্ড দি অর্ডার অব দি ফিনিক্স এবং ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি ডেথলি হলোস’। আর হ্যারি পটার তো এখন স্কুলের পাঠ্যবইয়ে স্থান করে নিয়েছে। এত অল্প সময়ে কোনো বই স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনা বিরল।

 

রোমান্স লেখক স্টেফানি মেয়ার

ভ্যাম্পায়ার রোমান্স লেখক স্টেফানি মেয়ার আছেন তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে। ‘টুইলাইট’ সিরিজের লেখক মেয়ার ৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। ‘টুইলাইট’ সিরিজের মুভি থেকে তিনি আয় করেছেন ৭ মিলিয়ন ডলার। ভ্যাম্পায়ার অ্যাডওয়ার্র্ড, মানবী বেলা এবং ওয়ারউলফ জ্যাকবের ত্রিমুখী প্রেমকাহিনি নিয়ে রচিত উপন্যাসের নতুন কাহিনি ‘নিউ মুন’, ‘ইক্লিপস’ এবং ‘ব্রেকিং ডন’ও পেয়েছে আশাতীত জনপ্রিয়তা। চারটি উপন্যাস নিয়েই নির্মিত হয়েছে সিনেমা। স্টেফানি মেয়ারের জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর হার্ডফোর্ডে। তিনি মূলত একজন আমেরিকান লেখিকা, যিনি তরুণ-তরুণীদের জন্য সিরিজ লিখে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার আরেকটি পরিচয় আছে, তিনি একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকও বটে। তার লেখা টুইলাইট সিরিজের বইগুলো বিশ্বজুড়ে আশাতীত জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এ বইগুলো সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রায় ৪০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে রোমাঞ্চ ও ফ্যান্টাসিধর্মী টুইলাইট সিরিজের বইগুলো। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে আমেরিকায় বেস্ট সেলিং লেখক হয়েছেন। আর ওই দুই বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তার বই বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ২৯ মিলিয়ন এবং ২৬.৫ মিলিয়ন কপি। টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে ২০০৮ সালের সেরা ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ৪৯তম স্থানে ছিলেন মেয়ার। ফোর্বস-এর সেরা ধনী সেলিব্রেটি ও লেখক তালিকায় একাধিকবার এসেছে জনপ্রিয় এই লেখকের নাম।

 

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক জন গ্রিশাম

তাকে বলা হয় থ্রিলার ফিকশনের রাজা। সেই নব্বই দশক থেকে একের পর এক বই লিখে প্রতি বছর নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার খেতাব পায় তার রচিত বই। তার বার্ষিক সর্বোচ্চ আয় ২০৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তার পুরো নাম জন রয় গ্রিশাম জুনিয়র। জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে। তিনি মূলত থ্রিলার লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও তার আরও কিছু পরিচয় রয়েছে। তিনি একাধারে একজন আইনবিদ এবং রাজনীতিকও।

মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা জন গ্রিশাম ১৯৮১ সালে মিসিসিপি স্কুল অব ল’তে যোগ দেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মিসিসিপির হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন গ্রিশাম। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘এ টাইম টু কিল’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। অবশ্য এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল আরও আগে ১৯৮৪ সালে। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা। আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বজুড়ে তার লেখা বই ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রথমবারেই ২ মিলিয়ন কপি বই বিক্রি হওয়া সেরা তিনজনের একজন হিসেবেও ইতিহাসে জায়গা করে নেন। এই তালিকার অন্য দুজন হচ্ছেন জেকে রাউলিং এবং টম ক্ল্যান্সি। তার প্রথম বেস্ট সেলার ছিল ‘দ্য ফার্ম’। প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালে। এটি ৭ মিলিয়নেরও  বেশি কপি বিক্রি হয়। তার ৮টি বই নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘দ্য চেম্বার’, ‘দ্য ক্লায়েন্ট’ ‘এ পেইন্টেড হাউস’, ‘স্কিপিং ক্রিস্টমাস’, ‘দ্য রানওয়ে জুরি’ ইত্যাদি।

 

জেফ কিনেই জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক

আসল নাম জেফরি প্যাট্রিক। তবে সাহিত্যাঙ্গনে তিনি পরিচিত জেফ কিনেই নামে। আমেরিকান এই শিশুতোষ লেখকের আয় ১৯৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তিনি একাধারে একজন কার্টুনিস্ট, লেখক এবং অভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত। তার লেখা শিশুতোষ সিরিজ ডায়েরি অব এ উইম্পি কিড বিশ্বজুড়ে আশাতীত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই সিরিজকেন্দ্রিক ছবিগুলোর সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন জেফ কিনেই। জনপ্রিয় এই শিশুসাহিত্যিকের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ ফেব্র“য়ারি। জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডেই কেটেছে তার শৈশব। ২০০৪ সালে ডায়েরি অব এ উইম্পি কিড-এর একটি অনলাইন ভার্সন প্রকাশিত হয়। ওয়েবসাইটে ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত নিয়মিত লেখা হয়। ২০০৭ সালে এসে ওয়েবসাইটে একসঙ্গে ২০ মিলিয়নেরও বেশি হিট পড়ে। ফলে ডায়েরি অব এ উইম্পি কিড-এর জনপ্রিয়তা আঁচ করা যায়। ফলে সে বছরই ডায়েরি অব এ উইম্পি কিডের প্রথম প্রিন্টেড ভার্সন প্রকাশিত হয়। এর পরের ঘটনা কেবলই ইতিহাস। টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে সেরা ১০০ প্রভাবশালী লেখকের তালিকায় রয়েছেন বিখ্যাত লেখক জেফ কিনেইয়ের নাম।

 

২০০-এর বেশি ছোট গল্প লেখা স্টিফেন কিং

স্টিফেন এডউইন কিং। লেখক পরিচিতিতে তার নাম স্টিফেন কিং হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। ভৌতিক, অতিপ্রাকৃত কল্পকাহিনী, সাসপেন্স, ক্রাইম, বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী এবং ফ্যান্টাসি উপন্যাস লিখে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ‘ভয়ের রাজা’ হিসেবে পরিচিত স্টিফেন কিং। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তার বই বিক্রি হয়েছে ৩৫০ মিলিয়নেরও বেশি কপি। তার লেখা গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজ এবং কমিক বই বাজারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। লেখালেখিতে বছরে তিনি সর্বোচ্চ আয় করেছেন ৩১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। স্টিফেন কিংয়ের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পোর্টল্যান্ডে। মার্কিন এই লেখক তার হরর গল্প ও উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বজুড়ে তার বই ৩৫০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এ পর্যন্ত তার ৫০টিরও বেশি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য রিচার্ড ব্যাচম্যান ছদ্মনামে লিখেছেন সাতটি উপন্যাস। একজন ছোট গল্প লেখক হিসেবেও তার আলাদা পরিচিতি আছে। ২০০-এর বেশি ছোটগল্প লেখা স্টিফেন কিংয়ের এই গল্পগুলো তার নয়টি ছোটগল্প সমগ্রে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশন মেডেল পান। ১৯৭৩ সালে কিংয়ের প্রথম উপন্যাস ‘ক্যারি’ প্রকাশিত হয়। মায়ের মৃত্যুতে তার লেখালেখিতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে তিনি লেখালেখিটা চালিয়ে যান। ফলশ্র“তিতেই তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা লেখকদের একজন। বিশ্বের অনেক দেশে তার বই বিক্রি হচ্ছে দেদার। তার বই অনূদিত হয়েছে বিশ্বের একাধিক ভাষায়।

সর্বশেষ খবর