সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হকার ম্যাজিশিয়ান ও হুমায়ূন

তানভীর আহমেদ

হকার ম্যাজিশিয়ান ও হুমায়ূন

এক দিন দিলশাদ সিনেমা হলের টাঙানো পোস্টার দেখতে গিয়ে ভিড় লক্ষ্য করেন হুমায়ূন আহমেদ। সিনেমা হলের সামনে একজন জাদুকর ম্যাজিক দেখাচ্ছিলেন। অদ্ভুত সব জাদু তাঁকে মুগ্ধ করে। জাদুটা ছিল অনেকটা এ রকম- কাঠের একটি তক্তার সঙ্গে গা লাগিয়ে এক বালিকা দাঁড়িয়ে আছে। তার থেকে ১০-১২ ফুট দূরত্বে চোখ বাঁধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে জাদুকর বালিকাটির দিকে ছুরি ছুড়ে মারছেন। কিন্তু একটি ছুরিও বালিকার গায়ে লাগছে না। জাদুর এই অদ্ভুত রোমাঞ্চে হুমায়ূন আহমেদ জাদুর প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু তার জাদুবিদ্যায় হাতেখড়ি ঘটে ১৯৬৫ সালে। তখন তিনি সবেমাত্র ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছেন। এবার ঢাকার পথে ঘুরতে গিয়ে এক দিন দেখা পেয়ে গেলেন এক হকার ম্যাজিশিয়ানের। তিনি দাঁড়িয়ে থেকে উৎসুক মানুষের সঙ্গে জাদুকরের মনভোলানো জাদু দেখতে থাকলেন। জাদু শেষ হলে সবাই যার যার পথে চলে গেলেও দাঁড়িয়ে রইলেন হুমায়ূন। তিনি তখনই হকার ম্যাজিশিয়ানের কাছে জাদু শেখার ইচ্ছার কথা জানান। জাদুকরও কিছু টাকার বিনিময়ে কয়েকটি জাদুর কৌশল তাঁকে শেখান। জাদুমুগ্ধতা যেন আরও বেড়ে গেল তাঁর। যে কটা জাদুর কৌশল শিখেছেন সে কটা বারবার অনুশীলন করে চললেন। হুমায়ূন আহমেদের জাদুগুরু সেই হকার ম্যাজিশিয়ান বেশির ভাগই জাদু দেখাতেন চানখাঁরপুলের এক বস্তিতে। চানখাঁরপুলের সেই বস্তিতে হুমায়ূন আহমেদ ছুটে যেতেন তাঁর জাদুগুরুর কাছে। আরও জাদুর কৌশল রপ্ত করতে শুরু করেন তিনি। এমনও হয়েছে টিফিন না খেয়ে টাকা বাঁচিয়ে তিনি হকার ম্যাজিশিয়ানের কাছ থেকে ছোট ছোট ম্যাজিকের সরঞ্জাম কিনতেন। জাদুর নতুন সব কৌশল আয়ত্ত করার প্রতি তিনি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নতুন নতুন জাদুর কৌশল সম্পর্কে জানার জন্য তিনি জাদু বিষয়ে বিভিন্ন বই সংগ্রহ করতে শুরু করেন। দেশে তো বটেই বিদেশ ভ্রমণে গেলেও তিনি জাদুর সামগ্রী বিক্রি করে এমন দোকান বা জার্নালের খোঁজ নিতেন। তাঁর সংগ্রহে জাদু সম্পর্কিত বহু বই ছিল। জাদুবিদ্যায় প্ল্যানচেট দিয়ে আত্মা আনার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কথিত আছে, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সংগ্রহে থাকা প্ল্যানচেট দিয়ে মৃত আত্মার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। প্ল্যানচেট ব্যবহার করে তিনি বেশ বিপদেও পড়েছিলেন বলে জানা যায়। হুমায়ূন আহমেদ জাদুর কৌশল রপ্ত করার জন্য প্রায়শই জাদু প্রদর্শন করতেন। নিকটজনদের কাছে তিনি বিভিন্ন সময় জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি কলেজ ও ইউনিভার্সিটির লম্বা ছুটি কাটাতে যখন পরিবারের সদস্যদের কাছে আসতেন তখন তাঁর সঙ্গী ছিল জাদু দেখানোর সহজ-সরল সরঞ্জামগুলো। এ ছাড়া কৌশলী জাদু দেখিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিস্মিত করতেন। তিনি তাঁর নাটক ও চলচ্চিত্র ইউনিটের লোকজনের সামনে, বন্ধু মহলে ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সামনে শখের বশে জাদু দেখিয়ে আনন্দ পেতেন। জাদু দেখিয়ে মানুষকে চমকে দেওয়াটাকে বেশ উপভোগ করতেন তিনি। স্বনামধন্য লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক আড্ডায় জাদু দেখিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎই আড্ডার এক পর্যায়ে হুমায়ূন আহমেদ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেন, অ্যাসট্রে থেকে একটু ছাই তুলে নিতে। তারপর তুলে নেওয়া ছাই অন্য হাতের পিঠে ঘষে ঘষে মিলিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাঁর কথামতো তাই করলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ পর তাঁর সেই হাত উল্টে দেখতে বললেন কলম জাদুকর। হাত উল্টে দেখতেই সেখানে উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। কারণ হাতের পিঠের ছাই হাত ভেদ করে তালুতে চলে গেছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রীতিমতো ভিরমি খেলেন তাঁর জাদুতে। হুমায়ূন আহমেদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর খুব কাছের মানুষকে এভাবে জাদু দেখিয়ে বিস্মিত করতে পছন্দ করতেন।

সর্বশেষ খবর