সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবাক পৃথিবী

অবাক পৃথিবী

যে পাথর হেঁটে বেড়ায়

পৃথিবীতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। পাথরে প্রাণের সঞ্চারের কথা রীতিমতো অবিশ্বাস্যই বলা চলে। প্রাণহীন, রুক্ষতার প্রতীক হিসেবেও পাথরের কথাই ওঠে সবার আগে। কিন্তু এমনও পাথর আছে যেগুলো রীতিমতো স্থান পরিবর্তন করতে পারে। অবিশ্বাস্য শোনালেও এমন পাথরের সন্ধান রয়েছে। ডেথ ভ্যালি উপত্যকার প্লেয়া অংশটি জনমানবহীন এক বৈচিত্র্যময় জায়গার রহস্যময় পাথরগুলো কোনো এক অজানা কারণে তার স্থান পরিবর্তন করে বয়ে চলে। বছরের পর বছর ধরে এ পাথর নিজেরাই কীভাবে যেন চলছে সরল পথ ধরে। ধারণা করা হয়, পাথরগুলো প্রতি দুই-তিন বছর পরপর অগ্রসর হয়। পাথরগুলো নিয়ে এখনো ব্যাপক গবেষণা চলছে। পাথরগুলো স্থান পরিবর্তন করে গ্রীষ্মকালে যখন মাটি একেবারে শুকনো থাকে এবং বরফও পড়ে না। তা ছাড়া পাথরগুলো একই রাস্তায় চলে না। প্রতিটি পাথরের চলার পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন বা আলাদা। যদিও এর পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। তারপরও এ পাথরের স্থান পরিবর্তনের ব্যাপারটা বরাবরই রহস্যময়।

 

লোহিত সাগর

রহস্যের আড়ালে আজও ঘেরা রয়েছে লোহিত সাগর। এর কাছেই স্বর্গোদ্যান। জলের নিচে প্রবাল অধিত্যকাটির ‘গার্ডেন অব ইডেন’ নামটি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কথিত আছে এখানে রয়েছে ‘জর্জ’ নামক সামুদ্রিক রাক্ষস। এরপর বিস্ময় জাগানো ‘ট্রিগার ফিশ’-এর কথা বলতে হয় আলাদাভাবে। এসব মাছে শুধু অদ্ভুতই নয়, খ্যাপাটে ও বেশ ছটফটে। বিষদাঁত দিয়ে শত্র“কে আক্রমণ করার এদের কুখ্যাতি রয়েছে জলের তলে। তবে লোহিত সাগরের অন্যরকম আকর্ষণের তালিকায় রয়েছে ‘অ্যানিমন সিটি’। এটি আসলে একটি প্রাচীরের মতো। এখানে অসংখ্য সাদা ও সবুজ রঙের অ্যানিমন সমুদ্রের তলায় যেন নরম পারস্যদেশীয় গালিচা বিছিয়ে রেখেছে।  এদের শুঁড়ের ভিতরে ও বাইরে হাজার হাজার ‘ক্লাউন ফিশ’ ও কালো দেহের ওপর সাদা বুটিওয়ালা ‘ডোমিনো ফিশ’ বাস করে। রেড সির ‘ফিশারম্যান ব্যাংক’ থেকে পানিতে ঝাঁপ দিলে অজস্র গুহা দেখা যায়। এ গুহার ভিতর লায়ন ফিশের ঝাঁক বিষাক্ত পাখনা উঁচিয়ে ঘোরে। আর আছে কুঠারের মতো দেখতে খুদে পাখনাওয়ালা ‘গ্লাসি সুইপার’ মাছ। এ মাছটি আবার ডুবুরিদের চারদিকে অদ্ভুত একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ করে ঘুরপাক খায়। সময়ের পালাবদলে এখন পরিবর্তন যোগ হয়েছে এ সাগরেও। বৈচিত্র্যের পাশাপাশি এক অপার রহস্যভান্ডার যেন এ সাগরটি।

 

মইরাকি

অনেকের ধারণা মইরাকি আসলে কোনো জায়গার নাম। কিন্তু আসলে এটা কতগুলো পাথরের নাম। বিশেষ ধরনের আলোচিত পাথরগুলো রয়েছে দক্ষিণ নিউজিল্যান্ডের কোজেকোহ সৈকতে। গবেষকদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেওয়া এসব পাথর দেখতে সাধারণ পাথরের মতো নয়। অতিকায় এ পাথরগুলো কোনোটা এতই ভারী যে, একেকটির ওজন এক টনের চেয়ে কম তো নয়। গবেষকদের দাবি বিশাল পাথরগুলো সাগরের তীরে পড়ে থাকা কোনো বস্তুকে ঘিরে বালু ও বালুজাতীয় পদার্থ মিশে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীদের মুখে এসব পাথর সৃষ্টির পেছনে কৌতূহল জাগানো দারুণসব পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে। নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাউরিদের মতে- তাদের পূর্বপুরুষরা একবার আরাইতেউরু নামের এক বিশাল নৌকা চেপে মহানন্দে নৌভ্রমণ করছিল। হঠাৎ বিরাট তিনটি ঢেউ এসে সেই  বিশাল নৌকা দিল ডুবিয়ে। যে কয়জন বেঁচে গিয়েছিল তারা পরে পাথর হয়ে যায়। সেই পাথরগুলোই পরে ওখানকার বিশাল বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়। আর নৌকায় যে জিনিসপত্র ছিল সেগুলোই হয়ে যায় মইরাকি পাথর।

 

নরকের পুকুর

নরকের পুকুর। পৃথিবীর বুকে এরকম পুকুরের সন্ধান সত্যিই বিস্ময় জাগানো। সাধারণের কৌতূহলে রয়েছে এটি। পুকুরগুলো রয়েছে জাপানে। নরকের সঙ্গে জলাশয়গুলোর আসলেও মিল আছে। এগুলো গরম পানির পুকুর। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গরম পানির উৎস নয়টি গরম পানির পুকুর। জাপানের কিউ শু দ্বীপে এ পুকুরগুলো অবস্থিত। এর মধ্যে সাতটি আছে কানাওয়া জেলায়, আর বাকি দুটি শিবাসেকি জেলায়। প্রতিটি পুকুরের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পুকুরগুলোর আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। সমুদ্র নরক, ন্যাড়া মাথা নরক, তপ্ত কড়াই নরক, পার্বত্য নরক, পাহাড়দানো নরক, স্বর্ণ ড্রাগন নরক আর শাদা পুকুর নরক। আর শিবাসেকি জেলার পুকুর দুটির নাম হলো- রক্তপুকুর নরক আর জলছিটানো নরক।

 

সাইবেরিয়ায় মীর মাইন

সাইবেরিয়াতে অবস্থিত মীর মাইন একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনি ছিল। এখান থেকে ১ কোটি ক্যারেট হীরা প্রতি বছর উত্তোলন করা হতো। হীরা শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত এক গর্তে পরিণত হয় স্থানটি। এটার গভীরতা ১৭২২ ফুট, চওড়া প্রায় ৩৯০০ ফুট। সুরক্ষার কারণে বর্তমানে মীর মাইনের ওপর নো ফ্লাইং জোন ঘোষণা করা হয়েছে। গর্তের ওপর দিয়ে যখন হেলিকপ্টার যায় তখন হেলিকপ্টারকে কোনো শক্তি নিচের দিকে টেনে ধরে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মীর মাইন খুব গভীর হওয়ার কারণে খনির নিচের বায়ু ভূঅভ্যন্তরের উষ্ণতার কারণে গরম হয়ে হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। আর এ শূন্যস্থান পূরণের জন্য উপরের বায়ু নিচে নেমে যায়। বায়ুর এ উঠানামার কারণে খনির উপরে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। তাই ওই স্থানের উপরে গেলে হেলিকপ্টার কিছুটা নেমে যায়।

 

অবাক বৃষ্টি

আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে আকাশ থেকে পড়া বিচিত্র সব জিনিসের তালিকায় রয়েছে মাংস, জেলি, ব্যাঙ! এমন অদ্ভুত বৃষ্টির উদাহরণ পাওয়া যায় ১৮৭৬ সালে। কেন্টাকিতে সেই অবাক বৃষ্টিতে আকাশ থেকে ঝরে পড়ল মাংস। সবচেয়ে বড় আকারের মাংসের টুকরাটি ছিল লম্বায় তিন ইঞ্চি মাপের। ব্রিটেনের মাক্রোস্কপিকাল রয়েল সোসাইটি সেই মাংস নিয়ে গবেষণা শেষে বলেছিলেন, কিছু বাজপাখি কোনো মৃত প্রাণীর মাংস খায় এবং তারা তা ওই শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এগুলো উগরে দিয়ে থাকতে পারে। তবে এরপর বৃষ্টির সঙ্গে ঝরেছিল এলিয়েনের কণা। লাল রঙের বৃষ্টির এমন উদাহরণ খুবই কম। ২০০১ সালে ভারতের কেরালা রাজ্যে বৃষ্টির সঙ্গে লাল কণা ঝরে পড়ে মাটিতে। রহস্যময় লাল বৃষ্টির সঙ্গে ঝরেপড়া সেই লাল কণাগুলো ছিল খুব ক্ষুদ্র কোষ আকৃতির। এ কণাগুলোর জন্যই বৃষ্টির পানির রং লাল হয়েছিল। পরীক্ষা করে ডিএনএর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এরপর ২০০৮ সালের ঘটনা। এবার অবাক বৃষ্টি হলো স্কটল্যান্ডে। বৃষ্টির সঙ্গে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল জেলিসদৃশ বস্তু। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি পুরো বিশ্ববাসীকে জানাল সেই অবাক বৃষ্টির খবর। তারপর কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যেও।

সর্বশেষ খবর