শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্বজুড়ে নান্দনিক শহর

আবদুল কাদের

বিশ্বজুড়ে নান্দনিক শহর

দোহা

পর্যটকদের পদচারণে মুখর

পারস্য উপসাগরের প্রাচীনতম একটি দেশ কাতারের রাজধানী এই শহর বৃহত্তর নগরী দোহা এবং এটি হলো দেশটির বৃহত্তম শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। কাতারের দক্ষিণে সৌদি আরব এবং এর পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের মতো কাতারও একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। আরব্য সাগরের পাড়ে অবস্থিত এই শহর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা, যার পূর্ব নামকরণ করা হয়েছিল আল-বিদ্যা। প্রাচীনতম এ দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়ায় অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে দোহা নগরীটি পারস্য উপসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত ও আয়তনের দিক থেকে ১৩২ বর্গ কিলোমিটার বা ৫১ বর্গমাইল। এই দোহা শহরটি প্রাচীন সময়ের, যার গোড়াপত্তন করা হয় ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে।

আয়তনের দিক থেকে বেশি বড় না হলেও এই শহরে ১৩১২০৪৭ (আদমশুমারি ২০১৩) জনগোষ্ঠীর বসবাস। উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে আল-থানি গোত্রের লোকেরা কাতার অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দেশটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, দোহা শহরেই আল-জাজিরা টেলিভিশনের মূল সম্প্রচার কেন্দ্র অবস্থিত। এ শহরটিতে প্রতি বছরই বহু পর্যটক বেড়ানোর জন্য আসেন।

 

হাভানা

আমেরিকায় স্পেনীয় উপনিবেশের শেষ সাক্ষী

‘হাভানা’ কিউবার রাজধানী, যা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে সমস্ত সমুদ্রপথের ওপর কিউবার রাজধানী হাভানা শহরটি অবস্থিত। বৈশ্বিক পরিচিতিতে কিউবার রাজধানী এই ঐতিহাসিক হাভানা, এমনকি এই দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। অতি প্রাচীন এই হাভানা শহরটির উৎপত্তি ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে। কিন্তু প্রাচীন সাম্রাজ্যের এ শহরটি তখনো বহির্বিশ্বের কাছে মর্যাদা পায়নি। মর্যাদা পায় ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দের সময়। স্পেনের কনকিস্তাদোরেরা এ শহরটিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকাতে আক্রমণ চালাত। ১৫ শতকের শেষ দিকে স্পেনের অধিকাংশ অঞ্চল স্বাধীনতা লাভ করার বহু দশক পর এখানকার জনগণ একটি স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তোলে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এর স্বীকৃতি দেয়নি কেউ, ৭৭ বছর পর স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ সর্বপ্রথম এটাকে নগরের মর্যাদা দেন। এই ঐতিহাসিক শহরটি আমেরিকায় স্পেনীয় উপনিবেশের শেষ সাক্ষী। হাভানা ষোল শতকের দিকে মূলত স্পেনীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকা মহাদেশের ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এই প্রাচীন শহরটি ৭২৮.২৬ বর্গ কিলোমিটার। কিউবার রাজধানীতে বসবাসরত জনসমষ্টির সংখ্যা প্রায় ২১০৬১৪৬। হাভানা এই প্রাচীনতম শহরটিতে জনসমষ্টি শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে অনেকটা সমৃদ্ধিশালী।

 

কুয়ালালামপুর

এশিয়ার সৌন্দর্য

সারা বিশ্বের মানুষের ভোটের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরকে বিস্ময়কর শহর হিসেবে ঘোষণা করে মিউনিখ অ্যান্ড জুরিখভিত্তিক সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডারস। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সুন্দর শহরের মধ্যে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরটি অকপটেই স্থান পেয়েছে। এশিয়ার অন্যতম সুন্দর দেশ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছেও সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত। দক্ষিণ চীন সাগরের পাশে এই মালয়েশিয়া অবস্থিত। এ শহরটি মালয়েশিয়ার রাজধানী এমনকি এটি দেশের প্রধান শহর। আধুনিক এই শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে, কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৭২ সালে। যদিও এর ইতিহাস অনেকটা আকর্ষণীয় এবং মজার। ১৮৫৭ সালে ভারতে যখন সিপাহি বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে কুয়ালালামপুর তখনো ব্রিটিশদের রাজত্বের অধীনেই। একদল চীনা ভাগ্যান্বেষী ঘুরতে ঘুরতে হাজির হন এই অঞ্চলে। ব্রিটিশদের অনুমতি নিয়ে জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপনা শুরু করতে থাকেন। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে গ্রাম থেকে শহর কুয়ালালামপুর। যদিও আজকের কর্মচঞ্চল, ঝকঝকে আধুনিক শহরের দিকে তাকালে এ কথা বিশ্বাস করাই কঠিন। আধুনিক এই শহরটি অসাধারণ আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে সারা বিশ্বের কাছে একটি পর্যটন শহর হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে আসছে। আয়তনের দিক থেকে এশিয়ার এই সুন্দর শহরটি ৮৭২ বর্গ কিলোমিটার। এখানে বসবাসরত জনসংখ্যা প্রায় ১৬,২৭,১৭২। এশিয়ার সুন্দর শহরটি সারা বিশ্বের কাছে দারুণ একটি পর্যটন শহর হিসেবে পরিচিত এবং প্রতি বছরই এখানে হাজারো দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। আর গোটা মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক মূলচালিকা হিসেবে রয়েছে কুয়ালালামপুরের এই নান্দনিক পর্যটনশিল্প।

 

ভিগান

প্রাচীন সাম্রাজ্যের বহু নিদর্শন

ফিলিপাইন ইলোকোস স্যু প্রদেশের রাজধানী ভিগান। প্রাথমিক পরিচয়ে শহর হলেও, ভিগান আদতে আব্রা, মেসতিজো ও গোভান্তেজ নদী দিয়ে ঘেরা একটি দ্বীপ। ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক এই শহর বিখ্যাত তার ‘কবলস্টোন’ রাস্তার জন্য। গোলাকৃতি পাথর বসানো এই ধরনের রাস্তা ফিলিপিন্স, প্রাচ্য ও ঔপনিবেশিক নির্মাণশৈলীর ধারা বহন করে। এখানে প্রাচীন সাম্রাজ্যের বহু নিদর্শন এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে, যা এখন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি বিস্ময়। ফিলিপাইনের এই ভিগান সিটি সারা বিশ্বের কাছে একটি ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র ও সুন্দর শহর হিসেবে উনিশ শতক থেকেই পরিচিত। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে ভিগানের অবস্থান দক্ষিণ চীন সাগরের সম্মুখে লুজন দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভিগান সিটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তালিকাভুক্ত হয়। নাইস লুকিং এই ভিগান সিটির প্রতিষ্ঠাকাল সময় অনেক প্রাচীন, ধারণা করা হয় আনুমানিক ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে এই আকর্ষণীয় প্রাচীন শহরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পনেরো শতকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ভিগান সিটি প্রায় পাঁচশত বছর পর ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। আয়তনের দিক থেকে শহরটি বেশ ছোট প্রকৃতির। ২৫.১২ বর্গ কিলোমিটার বা ৯.৭ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এই শহরটির অবস্থান। ৪৯৭৪৭ জনবসতি নিয়ে এই সুন্দর শহরটি বেঁচে আছে ফিলিপাইনের মাঝে।

 

লা পাজ

বিস্ময়কর এক শহর

বিশ্বের বিস্ময়কর শহরের তালিকায় রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম উঁচু শহর বলিভিয়ার লা পাজ। পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর শহরের একটি এটি। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখে বর্ণনা করা যাবে না। পর্যটকদের চোখে সব সময়ই এক আকর্ষণের নাম লা পাজ। বলিভিয়ার এ শহরটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই আলোচিত নয় বরং বিভিন্ন সময়ের নানা ঐতিহ্য ধারণের জন্যও এই শহরটির নাম উঠে আসে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ মিটার উঁচু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই শহরটি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর শহর। বলিভিয়ার রাজধানী হলো এই নান্দনিক সুন্দর শহর ও পৃথিবীর অন্যতম উঁচু শহর লা পাজ।

বলিভিয়ার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর হিসেবে আখ্যায়িত, যেখানে প্রায় ৮৭৭৩৬৩ লোক একসঙ্গে বসবাস করে থাকে। আধুনিক এই শহরকে ভ্যাটিকেন সিটিও বলা হয়। বলিভিয়ার লা পাজ শহরটির প্রতিষ্ঠিত সময়কাল হলো প্রায় ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে, প্রাচীনকালের অন্যতম শহরটি স্পেনিস বিজেতা আলোনসো ডি মেন্ডোজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়তনের পরিমাণ ৮৭২ বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীর ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে লা পাজ হলো অন্যতম সর্বোচ্চ শহর। এই শহরের বিশেষত্ব হলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এখানে বছরের বেশির ভাগ সময়ই বেড়াতে আসেন। ধর্মীয় গুরুত্ব তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ইতিহাসের রসায়ন। চারদিকে পাহাড় ঘেরা শহরটি আকারে খুব বড় না হলেও এর গুরুত্ব মোটেই কম নয়। তবে এখানে আধুনিক সভ্যতার অনেক সুব্যবস্থা এখনো প্রাধান্য পায়নি।

 

বৈরুত

এক প্রাচীন দ্বীপ

লেবাননের রাজধানী বৈরুত শহর। অবিস্মরণীয় শহরের তালিকায় লেবাননের এই রাজধানী বৈরুতকে প্রথমে রাখা হয়েছে। শুধু প্রশাসনিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুই নয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দুও বটে। বিশ্বের সাতটি বিস্ময়কর আধুনিক শহরের তালিকায় ইউরোপীয় শহরগুলোকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুত। ইতিহাসের দিক থেকে বৈরুত শহরটি অনেক প্রাচীন এবং এর ইতিহাসও ব্যাপক জনপ্রিয়। প্রাচীনকালে এটি একটি দ্বীপ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে শহরটির সবচেয়ে বড় অনন্য দিক হলো এর বয়স। আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার বছর বয়স এই প্রাচীন নগরীটির। খ্রিস্ট জন্মের প্রায় তিন হাজার ৩০০ বছর আগে বৈরুত নগরীটি গড়ে উঠতে শুরু করে। বৈরুত শহরটি হলো লেবাননের রাজধানী ও দেশের সর্ববৃহৎ শহর এবং প্রধান সমুদ্রবন্দর। ভৌগোলিক সীমারেখায় যার আয়তন ১০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৪০ বর্গমাইল। নগরটির প্রথম অধিবাসী ছিল ফিনিশীয়রা। বর্তমানে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র প্রাচীন এই শহরটি।

 

ডারবান

ব্যস্ততম বন্দর

ডারবান শহর, আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণের সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শহর বা রাজ্য। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। ঐতিহাসিকভাবে বিংশ শতাব্দীর মধ্য থেকে শেষ দশক পর্যন্ত এ দেশটি বর্ণবাদের জন্য সারা বিশ্বে নিন্দিত ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশের অন্যতম বৃহত্তম শহর। অতীব প্রাচীন না হওয়া এই শহরটির গোড়াপত্তন হয় ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে। আর নান্দনিক এই শহরটির ভৌগোলিক অবস্থান হলো ভারত উপমহাসাগরীয় উপকূলে। বৃহত্তর এই শহরটিতে বসবাসরত জনসংখ্যা মাত্র ৫৯৬০৬১ (আদশুমারি ২০১৩)। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে জোহানেসবার্গের পর এই শহরটির সক্রিয় অবস্থান। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ, ব্যস্ততম বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র।

সর্বশেষ খবর