শিরোনাম
রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মা দিবসের কথা

মা দিবসের কথা

পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াময় মুখ মায়ের। মা শব্দটিতে যে পরিমাণ ভালোবাসা মিশে আছে তা আর কোনো শব্দেই নেই। মায়ের জন্য ভালোবাসা অকৃত্রিম, চিরন্তন ও অনাবিল। জন্মের পর প্রথম মায়ের স্পর্শ পেয়ে দেহ-মনে শিহরণ জাগে মানব দেহের। পৃথিবীর সভ্যতার উত্থান-পতনের যত গল্পই বলা হোক না কেন মায়ের জন্য ভালোবাসার গল্পটি সব সময় একই মমতায় মাখা থাকবে। মায়ের হাসিমুখের তুলনা চলে না অনুভূতির ভান্ডারে জমে থাকা কোনো আনন্দ বা সুখের সঙ্গে। অজস্র দুঃখ-বেদনার ঝড় সামলে রাখা সেই মমতাময়ীকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। জীবনের প্রতিটি দিনই সন্তানের জন্য মা দিবস। মা দিবসের বিশেষ আয়োজন নিয়ে আজকের রকমারি-

মাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। মায়ের জন্য ভালোবাসা চিরন্তন, অনাবিল। সবারই মায়ের পাশে থাকতেই মন উচাটন। তবু বছরের একটি দিনকে শুধু মায়ের জন্য তুলে রাখার কথা প্রথম ভাবেন মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড। তবে সেটাই আধুনিক মা দিবসের সূচনা নয়। আধুনিক মা দিবসের ধারণার প্রবর্তক অ্যান জার্ভিস। তিনি ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকায় নারীদের স্বাস্থ্যরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। তার কাজের মূল বিষয়ই ছিল পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি। এর আগে বিভিন্ন দিনের কথা জানা যায়, যেখানে মা দিবসের ধারণা রোপণ করা হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিসে মা দিবসের আয়োজন হতো ঘরে ঘরে। প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’, যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিণী তার উদ্দেশ্যে উদযাপন করা হতো। মা দিবস তখনো এত ব্যাপ্তি লাভ না করলেও এই ধারণাটির গোড়াপত্তন ঘটে। আবার কথিত আছে, আজ থেকে ১৫০ বছর আগের সপ্তাহের রবিবারের সকালটা অ্যান জার্ভিসের জন্য একদম অন্যরকম ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠিত সানডে স্কুলে বাচ্চাদের দিতেন বাইবেল পাঠ। এই পাঠদানকালে বাচ্চাদের জন্য তার মায়া সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার নিজের মায়ের ছবি খুঁজে ফিরতেন। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় মায়ের মুখচ্ছবিকে লালন করতে চাইলেন তিনি। এই বোধ থেকেই ১৯০৫ সালে মাকে ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে প্রবর্তন করেন মাদার্স ডে বা মা দিবসের। তবে যুক্তরাষ্ট্রে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর স্বীকৃতি ও প্রসার ঘটে ১৯১৪ সালে। কিন্তু এর প্রসার ঘটে আরও পরে। এর আগে আধুনিক মা দিবস পালনের কথা জানা যায়। মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। প্রতি বছর মে মাসের চতুর্থ রবিবারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতের শতকের কথা। মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস। অ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারি অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন; কিন্তু সফল হতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যান জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে ‘মা দিবস’টি উদযাপন করার জন্য। সে লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রবিবার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করলেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত হতে থাকে চারপাশে এবং এক সময় ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য বিশেষ দিনগুলোর চেয়ে এ দিনটিতে সবচেয়ে বেশি ফোন কল হয়। উইকিপিডিয়া অনুসারে মা দিবসের তাৎপর্যের মূলে আছে তিনটি বিষয়- ১. সব মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ২. সব মাতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ৩. সমাজে মায়েদের প্রভাবের প্রতিফলন। ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিসের মা মারা গেলে তার মাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে আনা জারভিস প্রথম মা দিবস পালন করেন। ১৯২০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় সব দেশে মা দিবসের প্রচলন শুরু হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর