রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
মাকে নিয়ে মজার স্মৃতি

মায়ের সহকারী ছিলাম : ববিতা

আলাউদ্দীন মাজিদ

মায়ের সহকারী ছিলাম : ববিতা

আজ বিশ্ব মা দিবস। মাকে শুধু এই একটি দিনেই মনে পড়ে বললে ভুল হবে। কারণ সন্তানের জীবনে মায়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই অন্তত আমার সব কাজে-কর্মে, সুখে-দুঃখে, আশা-নিরাশায় মাকেই প্রথম স্মরণ করি। মাকে ঘিরে আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি রযেছে। আজ এমন একটি মজার স্মৃতির কথা বলব। তখন আমরা গেন্ডারিয়ার বাসায় থাকি। সুচন্দা আপার পর আমার আরেকটি বোন ছিলেন, নাম জেলি।

একবার বোনটি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকতেন। বোনটির অসুস্থ অবস্থায়ও বাবা ঢাকায় ছিলেন না। তাই ডাক্তার আনতে দেরি হওয়ায় বোনটি মারা গেলেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই মা অনেক কষ্ট পেলেন এবং যেহেতু সময়মতো ডাক্তার আনা না যাওয়ায় বোনটির অকালমৃত্যু হলো, তাই মায়ের মনে প্রচণ্ড জেদ চাপলো যে, তিনি ডাক্তার হবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ডাক্তার হলেন। গেন্ডারিয়াতেই চেম্বার খুললেন। তিনি ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। মা আমাকে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট বানালেন। আমি খুব দুষ্টু ছিলাম। বিভিন্ন রোগের ওষুধের নাম মুখস্থ করে ফেলতাম। মা যখন চেম্বারে থাকতেন না তখন রোগীরা এলে আমি তাদের বলতাম অসুবিধা নেই আমিই ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি।

মায়ের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বই নিয়ে কোন অসুখের কোন ওষুধ দেখে রোগীদের ওষুধ দিয়ে দিতাম। তারা ওষুধ নিয়ে পয়সা না দিয়েই চলে যাচ্ছে দেখে বলতাম পয়সা কোথায়? তারা বলত তোমার মা তো আমাদের কাছ থেকে পয়সা নেন না। আমি বলতাম, ‘না আমাকে পয়সা দিতে হবে’। সেই পয়সা জমিয়ে আমাদের এলাকায় আমার বেশ ক’জন বান্ধবী ছিল, তাদের নিয়ে গুলিস্তানের নাজ সিনেমা হলে গিয়ে ইংরেজি সিনেমা দেখতাম। তবে আমরা ছোট ছিলাম বলে একা যেতে ভয় পেতাম। তাই আমাদের এলাকায় পাখি আপা নামে একজন সিনিয়র আপা ছিলেন। উনাকে বলতাম আমাদের নিয়ে যেতে। সবাই মনের আনন্দে রোগী দেখার পয়সা দিয়ে ছবি দেখতাম।

আমার মায়ের নাম ছিল বেগম জাহানারা। তিনি সাহিত্যচর্চা, কবিতা আবৃত্তিও করতেন। গল্প লিখতেন। তার রচিত অনেক গল্পের বই আছে। মা অনেক গুণী মানুষ ছিলেন, রবীন্দ্রসংগীতও করতেন। আমাদের তিন বোনের জন্য বাসায় নাচ-গানের শিক্ষক রেখে দিয়েছিলেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি মায়ের প্রবল ঝোঁক ছিল বলেই আমরা আজ চলচ্চিত্রে আসতে পেরেছি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। মাকে কোনো দিন ভুলতে পারব না। মায়ের সমতুল্য কখনো কেউ হতে পারে না। পৃথিবীর সব মায়ের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল।

সর্বশেষ খবর