বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপির দুর্গে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বিএনপির দুর্গে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায় বলে বলা হয় বিএনপির দুর্গ। বিএনপি তার দুর্গে ক্ষমতায় থাকাকালে রাস্তা ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্টসহ নানা  উন্নয়ন করেছে। নিজ এলাকার মানুষের ভালোবাসা পেতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করেছে। সে কারণে জেলার গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়ার-৭ আসনে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কখনো হারেনি। বারবার জয়লাভ করেছে। কিন্তু এবারের সংসদ নির্বাচনে হাওয়া বলছে ভিন্ন কথা। এই আসনে শক্ত প্রতিপক্ষ হবে আওয়ামী লীগ। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করছে। আওয়ামী লীগ মাঠে নামলেও বিএনপিসহ অন্য দলের তেমন কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এই আসনে অন্যান্য দলের তেমন প্রচারণা না থাকায় আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছে শক্তিশালী।

জানা যায়, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে প্রতিবারই আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় উপনির্বাচন হয়েছে। সেখানেও ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তিনটি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আসন ভাগাভাগিতে জাপাকে (এরশাদ) ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। জাপার প্রার্থী মুহাম্মাদ আলতাফ আলীর সঙ্গে আমিনুল ইসলাম পিন্টুর লড়াই হয়। নির্বাচনের দিনে ৮৮টি কেন্দ্রে হামলা হয়। পরে স্থগিত কেন্দ্রে নিরুত্তাপ ভোটে মুহাম্মাদ আলতাফ আলী জয়ী হন। জয়ী হলেও এই আসনের ভোটারদের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক রাখতে পারেননি বলে এলাকার ভোটাররা জানিয়েছেন। বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে আইনগত সমস্যা না থাকলে প্রার্থী হবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তাঁরা দুজন প্রার্থী না হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বিএমএ বগুড়া শাখার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ আজম খান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক টি জামান নিকেতা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ কে এম আসাদুর রহমান দুলু, বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রফি নেওয়াজ খান রবিন। জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী, জাপার সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু, জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা লুত্ফর রহমান স্বপন সরকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে জেপি (মঞ্জু) থেকে আবদুল মজিদ সরকার, ন্যাপ থেকে জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. মন্তেজার রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এদিকে গাবতলী শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, প্যানা ডিজিটাল ব্যানার। তবে বর্তমান এমপি আলতাফ আলীর কোনো প্রচারণা নেই। দুই উপজেলায় জাপার নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তার তেমন কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন। এদিকে সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু জাপায় ফিরে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান দুলু। নির্বাচনী এলাকা শাজাহানপুরে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। তার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ মাঠে নেমেছে। একই রকম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফি নেওয়াজ খান রবিন। আসাদুর রহমান দুলু, রফি নেওয়াজ খান রবিন  ও ডা. মোস্তফা আলম নান্নুর প্রচার প্রচারণার কারণে বগুড়া-৭ আসনে আওয়ামী লীগ এবার বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভোটারদের কাছেও তাদের নাম ডাক শোনা যাচ্ছে।  অপরদিকে আওয়ামী লীগের আরেক বর্ষীয়ান নেতা ডা. মোস্তফা আলম নান্নুও আছেন নির্বাচনী মাঠে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ডা. মোস্তফা আলম নান্নু কেন্দ্রীয় নির্দেশে শেষ পর্যন্ত শরিকদের কারণে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।

সর্বশেষ খবর