শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রিন্ট পত্রিকার দিন ফুরিয়ে যায়নি

মো. ইসমাইল হোসেন, প্রবীণ সংবাদপত্র পরিবেশক ও স্বত্বাধিকারী আলমগীর এন্টারপ্রাইজ, সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

প্রিন্ট পত্রিকার দিন ফুরিয়ে যায়নি

দেশে পত্রিকার অভাব নেই। কিন্তু পাঠক সব পত্রিকা হাতে নেন না। একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে হলে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। পত্রিকাকে হতে হয় গণমানুষের কণ্ঠস্বর। রাজনৈতিক সংবাদে নিরপেক্ষতা বজায়, অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোসহীন অবস্থান ও বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে ধরতে পারলে-তবেই একটি পত্রিকা সাধারণ মানুষের মনে আস্থা তৈরি করতে পারে। আর পত্রিকা নিরপেক্ষ না হলে পাঠক মুখ ফিরিয়ে নেয়।

সংবাদপত্র নিয়ে পাঠকের মূল্যায়ন তুলে ধরতে গিয়ে কথাগুলো বলেন সিলেটের প্রবীণ সংবাদপত্র পরিবেশক আলমগীর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইসমাইল হোসেন।

প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক ধরে সংবাদপত্র বিক্রয় ও বিপণনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ইসমাইল হোসেন। এক সময় নিজে বিক্রি করতেন পত্রিকা। পাঠকের হাতে সরাসরি পত্রিকা তুলে দিতেন। এখন সিলেটে পত্রিকার সর্ববৃহৎ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী। পরিবারের অন্য সদস্যরাও এই পেশায় জড়িয়ে আছেন। এখন পত্রিকার বান্ডিল নিয়ে ঘোরেন ইসমাইল হোসেন। রাস্তায় পরিচিতজন পেলে পড়ার জন্য তুলে দেন বিভিন্ন পত্রিকার সৌজন্য কপি।

প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক ধরে সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইসমাইল হোসেন মনে করেন, ছাপা পত্রিকার এখন ক্রান্তিকাল চলছে। করোনার সময় মানুষ ঘরবন্দি থাকাবস্থায় অনলাইনের প্রতি বেশি ঝুঁকেছে। প্রিন্ট পত্রিকার পরিবর্তে তারা অনলাইনে পত্রিকা পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া আর্থিক সংকটের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাঠকরা এখন আর আগের মতো একাধিক পত্রিকা রাখেন না। এতে অনেক পত্রিকার কাটতি কমে গেছে।

প্রিন্ট পত্রিকার পাঠক আগের চেয়ে কমে যাওয়ার জন্য হকার স্বল্পতাকেও দায়ী করেন সংবাদপত্র পরিবেশক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, করোনার পর বন্যা-দুই দুর্যোগে অনেক হকার এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পত্রিকার বিক্রির জন্য হকারই নেই। হাতেগোনা কয়েকজন হকার পত্রিকা বিক্রি করেন। বিভিন্ন স্থানে সাব-এজেন্টও কমে গেছে। অনিশ্চিত এই পেশায় এখন হকাররাও নিজেদের জড়াতে চান না।

তবে কাটতি আগের মতো না থাকলেও প্রিন্ট পত্রিকার দিন ফুরিয়ে যায়নি বলে মনে করেন ইসমাইল হোসেন। তিনি মনে করেন, পাঠক অনলাইনে যতই সংবাদ পড়ুক, এতে মনের খোরাক হয় না। প্রিন্ট পত্রিকা পড়ার আগ্রহ এখনো পাঠকের মধ্যে আছে। এ জন্য পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে পাঠকের চাহিদা বুঝতে হবে। পাঠক চায়, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। কিন্তু অনেক পত্রিকা পাঠকের সেই চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করতে পারছে না। এখন আগের মতো অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয় না। মাঝে মধ্যে কোনো পত্রিকা করলে পাঠকদের মধ্যে হুলস্থুল পড়ে যায়। পাঠক ঠিকই খুঁজে নেয় পত্রিকা। গণমানুষের কণ্ঠস্বর হতে না পারলে পত্রিকা পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে পারে না।

সংবাদপত্রের এই সংকটকালে হাতেগোনা যে কয়টি পত্রিকা পাঠকের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন অন্যতম বলে মনে করেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, যাত্রা লগ্ন থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতি পাঠকের একটি ঝোঁক আছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং সময়োপযোগী সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিন এখনো পাঠকচাহিদার শীর্ষে রয়েছে। আগে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান দেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে উপসম্পাদকীয় লিখতেন। তার ক্ষুরধার লেখনী পাঠকের মনে দাগ কাটতো। তার মৃত্যুর পর এই শূন্যতা এখনো কাটেনি। এরকম বাস্তবধর্মী লেখনী আরও বাড়ানো গেলে বাংলাদেশ প্রতিদিন পাঠক হৃদয়ে তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে পারবে বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর