শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাহিত্যিকদের প্রেম ও প্রেমিকারা

সাইফ ইমন

সাহিত্যিকদের প্রেম ও প্রেমিকারা

রবীন্দ্রনাথের প্রিয় নারী

আন্না তড়খড়

ডা. আত্মারাম পাণ্ডুরংয়ের কন্যা আন্না তড়খড়। তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ-সম্পর্ক মাত্র এক মাস বা তার সামান্য কিছু বেশি হলেও এঁর স্মৃতির বৃত্তে বয়স পর্যন্ত তাঁর মনে অম্লান ছিল। ভালোবেসে ছিলেন কবিকে। কিন্তু বাঁধনে জড়াতে পারেননি। সে চেষ্টাও করেননি। কবির জীবনের প্রথম প্রেম হয়ে এসেছিলেন আন্না। রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৮ সালের আগস্টে মেজদা আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মস্থল আহমেদাবাদ ত্যাগ করে মুম্বাইয়ে বন্ধু ডা. আত্মারাম পাণ্ডুরংয়ের পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল স্পোকেন ইংলিশে ও ইংরেজদের আদবকায়দায় ধাতস্থ হওয়া। বিলাতফেরত আন্না এ সময় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন নবীন রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে। সে সময়ে মেয়েদের বিলেত যাওয়া আজকের মতো পাড়া বেড়ানো গোছের ছিল না। এ সময়ই কবির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আন্না। পরবর্তীতে ১১ নভেম্বর ১৮৭৯ তারিখে বরোদা কলেজের উপাধ্যক্ষ হ্যারন্ড লিটেলডলের সঙ্গে আন্নার বিয়ে হয়। ১৮৮০ সালে আন্না বরোদার রানীর গৃহশিক্ষক রূপে নিযুক্ত হন। বরোদাতে কিছুকাল থাকার পর হ্যারল্ড লিটেলডল দম্পতি এডিনবরাতে চলে যান। আন্নার দুটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ভারত ত্যাগের পর মাতৃভূমির সঙ্গে বা নিজের পরিবারের সঙ্গে আন্নার বিশেষ কোনো যোগাযোগ ছিল না। আন্না মৃত্যু বরণ করেন ৫ জুলাই ১৮৯১ তারিখে এডিনবরা শহরে।

 

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো

বিদেশিকন্যা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। ভিক্টোরিয়াকে বেশ আপন করে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই  প্রেমের গাথা রচিত হয়েছিল আর্জেন্টিনার প্লাতা নদীর তীরে। এ নদীর  তীর ঘেঁষে কবির সঙ্গী হয়ে পথ চলেছেন বিদেশিনী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। যাকে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনাতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তখন নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ বিশ্বে খুব পরিচিত। দেশে-বিদেশে তার অসংখ্য ভক্ত। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থে বিমুগ্ধ ছিলেন ওকাম্পো। এক ফরাসি সাহিত্যিকের অনূদিত গীতাঞ্জলি পড়েই ওকাম্পো প্রেমে পড়েন রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভ্রমণের একপর্যায়ে আর্জেন্টিনায় পৌঁছান। সেখানে পৌঁছেই বিপুল সংবর্ধনা পান তিনি। প্রিয় কবিকে কাছে পেয়ে ওকাম্পো উদ্বেলিত হয়েছিলেন।

ক্রমেই কবির কাছে তিনি ভালো লাগার যে আবেদন প্রকাশ করেছেন তাতে দুজনের মধ্যে বেশ গোছানো একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

অনেকেই দাবি করেন রবীন্দ্রনাথের বহুল জনপ্রিয় গান, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’ তাকে ভেবেই লেখা। কিন্তু গানটি লেখা হয়েছিল ১৮৯৫ সালে, শিলাইদহে। আর রবীন্দ্রনাথ আর্জেন্টিনা যান আরও অনেক পরে, সম্ভবত ১৯২৪ সালে। হয়তো বা শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ যাকে নিয়ে গান রচনা করেছিলেন সে ছিলেন রবীন্দ্রজীবনের আরেক প্রেমের উপাখ্যান। যা সবার অজানা।

 

►► মাত্র ১৮ বছর বয়সে ২৬ বছরের প্রেমিকাকে বিয়ে  করেছিলেন শেকসপিয়র

অ্যানি হ্যাথওয়ে

নিজের চেয়ে ছয় বছরের বড় অ্যানি হ্যাথওয়ের প্রেমে পড়েছিলেন শেকসপিয়র। অ্যানিও সাড়া দেন শেকসপিয়রের প্রেমের আহ্বানে। মাত্র আঠারো বছর বয়সে অ্যানি হ্যাথওয়েকে বিয়ে করেছিলেন শেকসপিয়র। হ্যাথওয়ের বয়স তখন ২৬। ১৫৮২ সালের ২৭ নভেম্বর ডায়োসিস অব ওরসেস্টরের কনসিস্টরি কোর্ট একটি বিবাহ অনুজ্ঞাপত্র জারি করে। বিবাহে কোনো দেনা-পাওনাই বাকি নেই এই মর্মে পরদিনই একটি বন্ড প্রকাশ করেন হ্যাথওয়ের দুই প্রতিবেশী। নববিবাহিত দম্পতি অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। কারণ ওরসেস্টর চ্যান্সেলর একবার মাত্র বিবাহ ঘোষণাপত্রটি পাঠ   করার অনুমতি দেন। সাধারণত এই ঘোষণা তিন বার পাঠ করা হতো। এই ব্যস্ততার  কারণ সম্ভবত হ্যাথওয়ের গর্ভাবস্থা। বিবাহের ছয় মাস পরেই এই দম্পতি এক কন্যা সন্তান জন্ম দেন। সুসানা নাম রাখা হয় মেয়ের।  এর প্রায় দুই বছর পরে জন্ম হয় যমজ          সন্তান পুত্র হ্যামলেট ও কন্যা জুডিথের। শেকসপিয়র তার এক সনেটের আদি সংযোজনের একটি পাঠে অ্যানির নাম উল্লেখ রয়েছে জীবনদাত্রী বলে।

 

►► প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে প্রেমে পড়ে যান আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

এগনেস ভন কুবোস্কি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক হেমিংওয়ে প্রেমে পড়ে যান এগনেস ভন কুবোস্কির। কুবোস্কি পেশায় ছিলেন নার্স। সে সময় যুদ্ধাহতদের সেবা দেওয়ার ছোট শহর ক্যানসাসে স্বেচ্ছাসেবীর খোঁজে আসা  রেডক্রসের দলে যোগ দিলেন হেমিংওয়ে। পাড়ি জমালেন ইতালিতে। যুদ্ধাক্রান্ত ইতালির রাস্তাধরে রেডক্রসের অ্যাম্বুলেন্স চালাতে শুরু করেন হেমিংওয়ে। মর্টারের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েও অ্যাম্বুলেন্সে করে মরণাপন্ন যাত্রীদের পৌঁছে দিয়ে বিরত্বের স্বাক্ষর রাখেন। পরে আহত হেমিংওয়ে ছয় মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ইতালিয়ান সরকার অবশ্য এই সাহসিকতার জন্য তাকে ভূষিত করেন ‘ইতালিয়ান সিলভার মেডেল অব ব্রেভারি’ দিয়ে।

হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই হেমিংওয়ে প্রেমে পড়ে যান এগনেস ভন কুবোস্কির। যে ছিল রেডক্রসের এক নার্স।

২০ বছর বয়সে জীবনের প্রথম প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। কিন্তু ব্যর্থ  হেমিংওয়ে এখান থেকেই জোগাড় করলেন তার বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম ‘এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’-এর অনুপ্রেরণা।

 

►►১৬ জুন হোটেল পরিচারিকার প্রেমে পড়েন ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল জেমস জয়েস

নোরা বার্নাকেল

ইংরেজি সাহিত্যের মহান পুরুষ জেমস জয়েস। ‘ইউলিসিস’ তার অমর সৃষ্টি। উপন্যাসটি ১৯২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ হয়। এই উপন্যাসে জেমস জয়েস ১৬ জুন দিনটিকে স্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার ব্যক্তিগত জীবনেও এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য আছে। এই তারিখে জেমস নোরা বারনাকলের  প্রেমে পড়েন। জেমস জয়েসের বয়স তখন মাত্র ২৩। স্বল্পশিক্ষিত নোরা ছিলেন হোটেল পরিচারিকা। নোরা জয়েসের ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি একজন পাদ্রিকে বিয়ে করতে  মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। তখন জেমস তাকে ‘কমন-ল’ ওয়াইফ হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯০৪ সালে জেমস জয়েস নোরাকে নিয়ে চাকরির উদ্দেশে ইউরোপে পাড়ি জমান। পরে ১৯৩১ সালে মেয়ে লুসিয়ার জোরাজুরিতে জয়েস ও নোরার বিয়ে হয়।

জয়েস বলেছিলেন, আমি আসলে কোনো হৃদয়সম্পন্ন নারীর সঙ্গে সঙ্গম করতে চাইছিলাম। নোরা বার্নাকলই ছিলেন তার দেখা প্রথম হৃদয়সম্পন্ন নারী।

 

►►পশ্চিমা সাহিত্যের জনক মার্ক টোয়েন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েও জয় করেছেন প্রেমিকা অলিভিয়াকে

অলিভিয়া

১৮৬৮সালের পুরোটা সময়জুড়ে টোয়েন এবং অলিভিয়া একসঙ্গে ছিলেন কিন্তু অলিভিয়া  টোয়েনের প্রথমবার করা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অবশ্য এর দুই মাস পর তাঁরা পরস্পরের সম্মতিতে বাগদান করেন।

১৮৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এলমিরা, নিউইয়র্কে অলিভিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

অলিভিয়া ছিলেন ধনী এবং প্রগতিশীল পরিবারের মেয়ে। টোয়েন দম্পতি ১৮৬৯  থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত বাফেলো, নিউইয়র্কে বসবাস করেন। বাফেলোতে থাকাকালীন সময়ে তাঁদের সন্তান ল্যাঙডন মাত্র উনিশ মাস বয়সে ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। টোয়েন দম্পতি তিন কন্যার জনক-জননী ছিলেন : সুসি ক্লেমেন্স (১৮৭২-১৮৯৬), ক্লারা  ক্লেমেন্স (১৮৭৪-১৯৬২) এবং জীন  ক্লেমেন্স(১৮৮০-১৯০৯)।

দীর্ঘ ৩৪ বছর একসঙ্গে কাটানোর পর ১৯০৪ সালে অলিভিয়া মৃত্যুবরণ করেন।

 

নজরুলের প্রেমিকা

নার্গিস

নজরুলের জীবনে প্রথম প্রেম হয়ে এসেছিলেন নার্গিস। যার প্রকৃত নাম সৈয়দা খানম। নজরুল ১৯২১ সালের মার্চে কুমিল্লা বেড়াতে যাওয়ার সুবাদে নার্গিসের সঙ্গে পরিচয় ও প্রণয়। এক রাতে কবি দীঘির ঘাটে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন,  সেই বাঁশি সুরে মুগ্ধ হন সুন্দরী যুবতী নার্গিস। এরপর একদিন নজরুলের এই বাঁশি বাজানো সম্পর্কে আলোচনার সূত্রে কবির সঙ্গে তিনি আলাপ করেন। এই আলাপ-পরিচয়ের পরই নজরুল তার প্রেমে পড়ে যান। নার্গিসের প্রেমে পাগল কবি তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ও আকদ সম্পন্ন হয়। কিন্তু কাবিন নামায় সম্পাদনার সময় কবিকে ঘর জামাই হয়ে থাকতে হবে এমন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় খেপে গিয়ে কবি বিয়ের রাতেই নার্গিসকে ছেড়ে চলে যান। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর নজরুলের সঙ্গে নার্গিসের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ১৯৩৭ সালে নজরুলকে নার্গিস একটা চিঠি লেখেন। চিঠি পড়া শেষে নজরুল একটি গান লিখে দেন—

‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই/ কেন মনে রাখ তারে/ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে/ আমি গান গাহি আপনার দুখে/ তুমি কেন আসি দাঁড়াও সুমুখে/ আলেয়ার মত ডাকিও না আর/ নিশীথ অন্ধকারে...১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নজরুল নার্গিসকে আর একটি চিঠি লেখেন। এর প্রায় বছর খানেক আগেই শিয়ালদহ হতে নার্গিস ও নজরুলের উপস্থিতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

 

প্রমিলা দেবী

কুমারী প্রমীলা সেনগুপ্তা আলী আকবরের সঙ্গে কুমিল্লায় গিয়ে প্রথম যে বাড়িতে নজরুল উঠেছিলেন, সেই বাড়ির কর্ত্রী বিরজা সুন্দরী দেবী কবিকে পুত্রবৎ স্নেহ করতেন, কবিও তাঁকে মা বলে ডাকতেন। নার্গিসের বিয়ে বাসর  থেকে পালিয়ে নজরুল এই বাড়িতে ওঠেন এবং পরে আরও কয়েকবার সেখানে যান। এই বাড়িতে যৌথ পরিবারে বিরজা সুন্দরী দেবীর বিধবা জা গিরিবালা থাকতেন। তার কন্যা আশালতার (প্রমীলা) সঙ্গে কবির পরিচয় ও প্রণয় গড়ে ওঠে। তিন বছর পর কবি এই আশালতাকে বিয়ে করেন এবং তার নাম দেন প্রমীলা। ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কলকাতায় নজরুল ও প্রমীলার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়েতে বাধা ছিল একটাই, ধর্ম। বিবাহ-আইনের নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে তাঁদের বিয়েটা হয়েছিল স্ব-স্ব ধর্মপরিচয় বহাল রেখেই। তখন প্রমীলার বয়স ছিল ১৪ আর নজরুলের ২৩। বিয়ের পর নিজ ধর্ম-আচরণ বহাল রেখেই প্রমীলা দেবী আমৃত্যু সব সুখ-দুঃখের বোঝা মাথায় নিয়ে কবির জীবন সঙ্গিনী হয়েছিলেন। প্রমীলার প্রতি কবির প্রেমের কথা তাঁর ‘বিজয়িনী’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছিল।’

‘বিজয়িনী’ ছাড়াও নজরুল প্রমীলাকে নিয়ে ‘প্রিয়ার রূপ’, ‘দোদুল দুল’সহ আরও অনেক কবিতা রচনা করেন। ‘দোদুল দুল’ কবিতায় কবি প্রমীলার রূপের বর্ণনা এভাবে তুলে দেন— ‘মৃণালু হাত/নয়ানু পাত/গালের টোল,/চিবুক  দোল/সকল কাজ/করায় ভুল/প্রিয়ার মোর/কোথায় তুল?/কোথায় তুল?/কোথায় তুল?/কাঁকল ক্ষীণ/মরাল গ্রীব/ভুলায় জড়/ভুলায় জীব,/গমনু দোল/অতুল তুল্।’ দোলন চাঁপা কাব্যগ্রন্থে সবার আগে এই কবিতাটি রয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থটি ১৯২৩ সালের ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত হয়।

 

►►প্রথম প্রেম সুখের না হলেও ম্যারি গডউইনেই সুখ খুঁজে পান কবি শেলি

ম্যারি গডউইন

প্রখ্যাত লেখক ও প্রগতিশীল দার্শনিক উইলিয়াম গডউইনের প্রতি কবি শেলির গভীর মুগ্ধতা ছিল। ১৮১৪ সালে কবি শেলি গডউইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার সুডৌল মাথা ছিল সোনালি চুলে আবৃত, মুখ ছিল হালকা রঙিন ও স্নিগ্ধ। তার ছিল প্রশস্ত কপাল, উত্সুক ও হালকা বাদামি চোখ। তার  চেহারায় ছিল সুস্পষ্ট বুদ্ধিমত্তার ছাপ। এ ছাড়া ছিল ঈষৎ বঙ্কিম ও কমনীয় ওষ্ঠাধর। মেরি গডউইন তার মায়ের নিকট থেকে প্রচণ্ড মানসিক ক্ষমতা, আত্মমর্যাদা বোধ ও সুশীল আচরণের মতো গুণাবলি অর্জন করেন।

প্রথম সাক্ষাতেই শেলি ও মেরি পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। উভয়ে উভয়কে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলেন।

তাদের মধ্যে যখন দেখা হতো তারা পরস্পরের প্রতি চুম্বকের মতো রোমাঞ্চকর আকর্ষণ অনুভব করতেন। ভালোবাসার টানে তারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ভবঘুরেদের মতো তারা ফ্রান্স ভ্রমণ করতে থাকেন। প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও পরবর্তী সময়ে তারা অবিচ্ছিন্ন ছিলেন।

 

►►অনেকেই জানে না বাংলা সাহিত্যের কীংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রেমিকার নাম নিলু

হুুমায়ূনের নিলু

হুমায়ূন আহমেদের বয়স যখন ৫০ ছুঁই ছুঁই তখন তিনি প্রেম নিবেদন করেন অভিনেত্রী, গায়িকা ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনকে। যার সফল পরিণতি ছিল বিয়ে। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন গুলতেকিন। কিন্তু এর বাইরেও হুমায়ূন আহমেদের জীবনে আরও একজন নারী ছিলেন। যার কথা কখনও কোথাও বলেন নি তিনি। তবে একজনকে বলেছিলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনকে। সম্প্রতি শাওনের বয়ানে হুমায়ূন নামে একটি স্বক্ষাৎকার ভিত্তিক বই প্রকাশিত হয়। যেখানে শাওন উল্লেখ করেছেন হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রেম সম্পর্কে। একেবারে তরূন বয়সে নিলু নামের এক মেয়ের প্রেমে পরেন হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন ভক্তরা নিশ্চয়ই এই নামটির সাথে খুব পরিচিত। কারণ তার অনেকগলো উপন্যাসের নায়িকা এই নিলু। হুমায়ূন আহমেদের নিলু সব ছেড়ে তার জন্য চলে এসেছিলেন স্টেশন পর্যন্ত। হুমায়ূনও গিয়েছিলেন স্টেশনে। কিন্তু নিলুর সাথে তিনি দেখা করেননি সেদিন। অপেক্ষা করে এক সময় নিলু যখন ট্রেনের উঠে পরে সেই দৃশ্য তখন প্রত্যক্ষ করছিল একজোড়া বিষন্ন চোখ।

 

►►কবি অমৃতা প্রীতমকে তীব্র বাসনার জালে আটকে ফেলেন সাহির

সাহির লুথিআনভি

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ভারতীয় কবি অমৃতা প্রীতম একটি চাপিয়ে দেওয়া বিয়ে নিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে সুখী ছিলেন না। তার প্রেম বিষয়ে যার নামটি আসে তিনি হলেন সাহির লুধিআনভি। সাহির ছিলেন একজন কবি ও গীতিকার। ১৯৪৪ সালে তাদের প্রথম  দেখা হয়। লাহোরের অনতিদূরে প্রীত নগর নামে এক গ্রামে এক কবিতা পাঠের আসরে গিয়ে অমৃতা সাহিরের দেখা পান। সাহিরের মতাদর্শ, বুদ্ধিমত্তা, শব্দশৈলী সবকিছু মিলিয়ে অমৃতা তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। তীব্র বাসনার জালে জড়িয়ে ফেলে। অমৃতার তখন স্বামী আছে এবং এক সন্তানের জননী। তারপরও সাহিরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে অমৃতার। সাহিরও অনেক ভালোবেসে ছিলেন ছিলেন অমৃতাকে। কিন্তু কোনো এক কারণে সাহির চাননি তাদের নৈকট্য। হয়তো তার আবেগের গভীরতা অমৃতার মতো অতল ছিল না। দূর থেকে সেই পত্র আদান-প্রদান তার কাছে বেশি আকর্ষণীয় ছিল। তবে দুয়েকবার তারা গোপনে সাক্ষাৎ করেছেন।  সেখানে ভালোবসার নৈঃশব্দ্যই বেশি ছিল।

 

►►নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সঙ্গীদের পালানোর সুযোগ দিতে কভার দেওয়ার জন্য স্টেনগান থেকে অবিরাম গুলি ছুড়তে থাকে ভায়োলেট

ফ্যানি ব্রাউন

সৌন্দর্যের কবি জন কিটস ভালোবাসতেন ভায়োলেট ফুল, ভালোবাসতেন শেকসপিয়ার আর ফ্যানি ব্রাউন। বাগদত্তা ফ্যানি ব্রাউন ছিলেন কিটসের মূর্তিমতী প্রেরণা। বলা হয়ে থাকে, ফ্যানি ব্রাউনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরেই কবিতায় আরও বেশি বিস্ফোরিত হয়েছিলেন ক্ষণজন্মা কবি জন কিটস। ফ্যানিকে লেখা তার চিঠি সর্বকালের সেরা প্রেমপত্রগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে। কিন্তু তাদের এই ভালোবাসার সম্পর্ক ভালো থাকতে পারেনি বেশিদিন। ১৮২১ সালে মাত্র ২৫ বছর ৪ মাস বয়সে রোমে মারা যান কিটস। তাকে সমাহিত করা হয়েছিল প্রিয়তমা ফ্যানি ব্রাউনের একগুচ্ছ চুল আর না খোলা চিঠিসহ। ফ্যানি আমৃত্যু পরেছিলেন কবি জন কিটসের দেওয়া বাগদানের আংটিখানা। ফ্যানিকে কবি লিখেছিলেন, ‘এমন প্রায়ই মনে হয়, আমরা দুজন যদি হতাম প্রজাপতি আর বাঁচতাম গ্রীষ্মের তিনটে দিন। তোমার সঙ্গে অমন তিন দিন যে আনন্দে ভরে তুলতে পারতাম, তা হতো সাদামাটা পঞ্চাশটি বছরের চেয়েও ঢের বেশি।’

সর্বশেষ খবর