শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিস্ময় বিশ্ব

দ্য অ্যাংগুইসড ম্যান

রণক ইকরাম

দ্য অ্যাংগুইসড ম্যান

এই ‘দ্য অ্যাংগুইসড ম্যান’ নামক ছবিটি পেইন্টার তার নিজের রক্ত দিয়ে এঁকেছিলেন এবং এই ছবিটি আঁকা শেষ করার পর তিনি আত্মহত্যা করেন। যখন শেন রবিনসন পৈতৃক সূত্রে এই ছবিটি পান তারপর থেকেই তার পরিবার নানা ধরনের আধাভৌতিক কার্যকলাপের সম্মুখীন হন। তারা একটি মানবদেহের ছায়া ঘুরে বেড়াতে দেখত ঘরময়। এরপর ছবিটি বেজমেন্টে বন্ধ করে রাখা হয়

এই ছবির মূল গল্প শুরু আজ থেকে প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় আগে। রবিনসন নামের এক ব্যক্তি তার দাদির কাছ থেকে অদ্ভুত একটি পেইন্টিং উপহার পান। সেই মহিলার বর্ণনা অনুসারে ওই পেইন্টিংটি নানা কারণেই অদ্ভুত। পুরনো এই তেলচিত্রটি যিনি এঁকেছিলেন, তিনি ছবি আঁকা শেষ করার পরপরই আত্মহত্যা করেন। শুধু তাই নয়, তেলরঙের সঙ্গে নিজের রক্ত মিশিয়ে ছবিটি এঁকেছিলেন বলে দাবি করা হয়।

এ ছবিটি দেখেই আঁতকে উঠেছিলেন রবিনসনের স্ত্রী। তিনি কোনোমতেই এটিকে ঘরের ভিতর রাখতে রাজি ছিলেন না। রবিনসন চাচ্ছিলেন এটি যেন ঘরেই থাকে। কিন্তু স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত এই পেইন্টিংয়ের ঠাঁই হয় ভূগর্ভস্থ স্টোররুমে। কিন্তু অ্যাংগুইসড ম্যান-খ্যাত সেই পেইন্টিং হয়তো সেখানে থাকতে চায়নি। ফলে খুব দ্রুত বন্যার কারণে পেইন্টিংটি ঘরে তুলতে বাধ্য হন রবিনসন।

ছবিটিকে ঘরে নিয়ে আসার পর থেকেই রবিনসনের পরিবার অদ্ভুত সব ঘটনার সাক্ষী হতে শুরু করে। নানা জটিলতায় তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ভুতুড়ে এক ধরনের কান্নার শব্দ তাদের প্রতি রাতের রুটিনে পরিণত হয়। প্রায় প্রতিদিনই বিশ্রী রকমের কান্নার শব্দ ভেসে আসতে লাগল। বাড়িতে বসবাসরত সবাই দাবি করেন প্রায়ই তারা একটি কালো মতো ছায়ামূর্তি হেঁটে যেতে দেখেন।

রবিনসনের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। প্রায়ই রাতের বেলায় এই ছায়ামূর্তিকে নিজের বিছানার পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি। রবিনসনের বর্ণনা অনুসারে মধ্যবয়সী লোকটি দেখতে কেমন যেন অদ্ভুত। তাকে দেখতে পাওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই সে আবার হাওয়া হয়ে যায়।

এক রাতে রবিনসনের স্ত্রী বিছানায় গেলেন ঘুমুতে। শুয়ে পড়ার পর দেখলেন ওপাশ ফিরে শুয়ে আছেন রবিনসন। কিন্তু তাকে নিজের দিকে ঘুরাতেই চক্ষু চড়কগাছ। একজন অচেনা আগন্তুক তার দিকে তাকিয়ে। লোকটাকে কখনোই দেখেননি তিনি। চিৎকার করে সেখান থেকে ওঠে গেলেন রবিনসনের স্ত্রী। ততক্ষণে উধাও সেই আগন্তুক! এরপর রবিনসনের স্ত্রী কোনোমতেই পেইন্টিংটিকে তার ঘরে রাখতে চাইলেন না। পেইন্টিং আবার ফেরত গেল বাড়ির বেজমেন্টে। কিন্তু এবার সেখানেও ঘটল বিপত্তি। বেজমেন্টে একটা পোষা কুকুর থাকত। ছবিটা সেখানে নেওয়ার পর থেকে কুকুরটা আর সেদিকে যেতে চায় না!

এসব ঘটনা যখন বাইরে প্রকাশ পেল তখন কেউই এসব বিশ্বাস করতে চাইল না। এমনকি রবিনসনের বন্ধু-বান্ধব বলল এসবই তাদের মনের কল্পনা। কিন্তু রবিনসন জানেন তিনি কী কী বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ঘরের ভিতর সিসি ক্যামেরা লাগাবেন। যাতে করে এ ধরনের অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো ক্যামেরাবন্দী করা যায়। অতিপ্রাকৃত বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য দ্য অ্যাংগুইসড ম্যানকে আবারও বেজমেন্ট থেকে ওপরে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু এবার আর অতিপ্রাকৃত তেমন কোনো ঘটনা ঘটল না। সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে বিচিত্র কিছু চিৎকার আর কান্নার শব্দ পাওয়া গেল কেবল। আর কিছুই খুঁজে পাওয়া গেল না। এর মধ্যেই রবিনসনের ছেলে বাবার কাছে একটা ভয়ের ঘটনা বলল। সে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল, তখন কী একটা অদৃশ্য শক্তি তাকে ধাক্কা দিচ্ছিল। ভাগ্য ভালো পড়ে গিয়ে অল্প ব্যথা পেয়েছে সে। কিন্তু রবিনসন বুঝতে পারলেন কেবল সে কিংবা তার স্ত্রীই নয়, তার ছেলেও আত্মা অনুভব করতে পারছে। রবিনসন ভয় পেলেন। ফলে আবারও এটিকে বেজমেন্টে ফেরত পাঠানো হলো।

এর অনেকদিন পর রবিনসন যুক্তরাজ্যের হন্টেড হাউসখ্যাত চিলিংহাম প্যালেসে পেইন্টিংটি নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল একদল অতিপ্রাকৃত বিষয়ের গবেষক দিয়ে এর পরীক্ষা করানো। পেইন্টিংটি নেওয়ার পর বিশজন গবেষক প্ল্যানচেটের পরিবেশ তৈরি করে গোল করে বসলেন। এরপর এই পেইন্টিং সম্পর্কে আত্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের মাঝখানে একটি বড় কালো অবয়ব স্পষ্ট হলো। প্রশ্নের জবাবে কাঠের ভিতর জোরে জোরে শব্দ হলো। দ্রুত প্ল্যানচেটের আসর বন্ধ করলেন গবেষকরা। তাদের দাবি চিলিংহাম প্যালেসের আত্মারা রেগে গেছে। কারণ এখানে বিদেশি আত্মা নিয়ে আসা হয়েছে। গবেষকরা এও বললেন, এই পেইন্টিংটি সত্যি হন্টেড এবং এর সঙ্গে একটি অতৃপ্ত আত্মা বসবাস করছে।

এ ধরনের কয়েকটি গবেষণা ছাড়া রবিনসন আর কোনো তথ্যই খুঁজে বের করতে পারেননি। তিনি জানেন না এই পেইন্টিংয়ের আর্টিস্টের নাম কী? কেনইবা তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। সে নিজেই কী এই পেইন্টিংয়ের সঙ্গে বসবাস করেন, নাকি ভিন্ন কোনো আত্মা বসবাস করছে? এই আত্মা কী রবিনসনকে কিছু বলতে চায়? এসব প্রশ্নের জবাব কেবল রহস্যেরই জন্ম দেয়। কিন্তু এর কোনো উত্তর কারও কাছে নেই। এসব কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে কুখ্যাত পেইন্টিং হিসেবে নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করেছে ‘দ্য অ্যাংগুইসড ম্যান’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর