শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রেমিক নজরুল

প্রেমিক নজরুল

কবি জীবনের দর্শন কালজয়ী। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জীবনে প্রেম এসেছে বেশ কয়েকবার। নারীর প্রেম তার কাব্যে ফেলেছে প্রভাব। হয়ে উঠেছেন একাধারে দ্রোহ ও প্রেমের কবি। তার জীবনে এসব প্রেমের ছোঁয়া বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে অনন্যমাত্রা। কবি তার জীবনে আসা প্রেমিকাদের নিয়ে লিখেছেন অজস্র গান, কবিতা। তার জীবনের নানা ঘটনার জম্ম হয়েছে তার প্রেমিকাদের ঘিরে। এসব প্রেমে ছিল মোহমুগ্ধতা, অনবদ্য সৌন্দর্য, বিরহ-যাতনা। মন দেওয়া-নেওয়ার এই মানবিক অনুভূতি কবি জীবনে তাই বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে এসেছে। বিদ্রোহী কবি হিসেবে তার পরিচয়ে বৈচিত্র্য যোগ করেছে তার প্রেম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি প্রেমে পড়েছিলেন একাধিক নারীর। তার প্রমাণ মিলেছে তাদের নিয়ে লেখা গান, কবিতা আর প্রেমপত্রগুলোতে। কবি জীবনে প্রেমের প্রথম পরশ এনে দিয়েছে নার্গিস। নজরুল গবেষকদের কাছে তাই নার্গিসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সৈয়দা খানম নার্গিসের মামা আলী আকবর খান। তার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় কলকাতায় ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে। আলী আকবর খান সম্রাট বাবরের জীবনী নিয়ে একটা নাটক লিখেছিলেন এবং টুকটাক পুস্তিকা লিখে নিজেই ফেরি করে বিক্রি করতেন। নার্গিসের সঙ্গে কবির পরিচয় হয় ১৯২১ সালের মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে। কবি নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন কুমিল্লার দৌলতপুরে। সেখানেই কবির মনের লেনদেন শুরু। নজরুল যখন গানের সুর, গীতিকথায় সৈয়দা খাতুনকে প্রেমের জালে আবদ্ধ করছেন তখন নিজেও রূপমুগ্ধতায় বন্দী হলেন। কবি তার প্রেমে পড়েন প্রথম দেখাতেই। সৈয়দা খাতুনও কবির প্রেমে সাড়া দিয়েছিলেন। সৈয়দা খাতুনকে ভালোবেসে কবি তার নাম রাখলেন নার্গিস। নার্গিস ইরানি শব্দ। এর মানে সাদা গুল্মপুষ্প। বাস্তবই নার্গিস তাই ছিলেন। তাদের ভালোবাসার তরী ভালোই ভাসতে লাগল। দৌলতপুরে থাকা অবস্থাতেই কবি সিদ্ধান্ত নিলেন নার্গিসক তিনি বিয়ে করবেন। এরপর কিছু দিন পরই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু কবির জীবন নানা বিষাদে ছেয়ে ছিল। তাদের বিয়ে হলেও বাসর হলো না। কোনো এক অজানা অভিমানে বাসর রাতেই নজরুল বাড়ি ছেড়ে চলে যান। কবি জীবনে প্রথম প্রেমের পরিণতি অজানা অভিমানে ইতি টানলেও মনের প্রেম ছিল বর্ণিল। তার জীবনে আসে ফজিলাতুন্নেসা। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকোত্তর মুসলমান ছাত্রী। কবি কাজী নজরুল ফজিলাতুন্নেসাকে মন থেকেই ভালোবেসে গেছেন। কিন্তু এই প্রেম গতিময় ছিল না। কারণ ফজিলাতুন্নেসা নজরুলের প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেননি। ফজিলাতুন্নেসাকে না পেয়ে কবি লিখতে থাকেন একের পর এক চিঠি। নিজ হাতে না দিলেও বন্ধুবর অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনকে দিয়ে পাঠাতেন সে প্রেমময়, যাতনায় বুক ভারি হওয়া নজরুলের প্রেমবাণী। সরাসরি কেন চিঠি পাঠাতেন না, তার কারণও উল্লেখ করেছেন কবি, ‘ঐ এক চিঠি  পেয়েই যত দূর বুঝেছি আমায় তিনি দ্বিতীয় চিঠি দিয়ে দয়া করবেন না।’ ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে কবির পরিচয় হয় ১৯২৮ সালে। কবি মুসলিম সাহিত্যসমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন ঢাকায়। কাজী মোতাহার হোসেন  কবিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফজিলাতুন্নেসার বাসায়। উদ্দেশ্য ছিল হাতগণনা।  

সেই নিরীহ উদ্দেশ্য নিয়ে কাছে এসে কবির চোখে প্রেমসুধা তুলে দিলেন ফজিলাতুন্নোসা। একসময় কবি ঢাকা ছাড়লেন কিন্তু তার মন বন্ধক রেখে গেছেন ফজিলাতুন্নেসার কাছে! তারপর নজরুল তাকে বেশ কয়েকটি প্রেমপত্র পাঠিয়েছিলেন। প্রেমজীবনে রানু সোমের কথাও উঠে এসেছে। সংগীতজ্ঞ দীলিপকুমার রায় রানুকে নজরুলের গান শেখাতেন। সে পরিচয়ের সূত্র ধরে নজরুল নিজেই ঠিকানা খুঁজে ঢাকায় রানুদের বাড়িতে এসেছিলেন। রানুকে তিনি গান শেখাতেন। একপর্যায়ে দুজনের সম্পর্ক প্রণয়ে গড়ায়। শিল্পী কানন দেবীকেও নজরুল গান শিখিয়েছিলেন। আর তাকে ঘিরেও মুখরোচক ঘটনা ছড়িয়েছিল কলকাতায়। নিন্দুকেরা এ সুযোগটিই নিয়েছিল। কিন্তু কবি জীবনে অত্যন্ত সুখকর অধ্যায় রচনা করেন কুমারী প্রমীলা সেনগুপ্তা। তার ডাকনাম ছিল দুলি। এই প্রেম দুজনকে এতটাই কাছে টেনে নেয় যে, কবি প্রমীলাকে জীবনসঙ্গিনী করে নেন। যদিও অনেক নজরুল গবেষক দ্বিমত করেছেন এ ব্যাপারে। এ বিয়ে প্রেম থেকে নয়, পারিবারিক সম্মতিতে স্থির হয়েছিল। কিন্তু নজরুল কুমিল্লায় থাকাকালে প্রমীলার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।  তখন থেকেই তাদের আলাপ-পরিচয় ছিল। প্রমীলাকে নিয়ে কবির প্রেম জড়িয়ে আছে ‘বিজয়িনী’ কবিতায়। প্রমীলার সঙ্গে কবির বিয়ে হয় ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে। বিয়ের সময় কবির বয়স ছিল ২৩, অন্যদিকে প্রমীলার বয়স ছিল ১৪।                

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর